বৃহস্পতিবার, ৪ আগস্ট, ২০১৬ ০০:০০ টা

কিছু বিপথগামী ইসলামের নামে সন্ত্রাস করছে : প্রধানমন্ত্রী

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, পবিত্র ইসলাম শান্তির ধর্ম। এখানে জঙ্গিবাদ, সন্ত্রাসের কোনো স্থান নেই। কিন্তু কিছু বিপথগামী ইসলামের নামে সন্ত্রাস সৃষ্টি করছে। ইসলাম ধর্মকে কলুষিত করার অপচেষ্টাকারী, মানুষ হন্তারক সন্ত্রাসী-জঙ্গি, যারা বিপথে যেয়ে খুন-খারাপি করে আমাদের পবিত্র ধর্মকে হেয় প্রতিপন্ন করছে তাদের বিরুদ্ধে সমগ্র জাতিকে সোচ্চার হতে হবে। বাবা-মাসহ সবাইকে সজাগ থাকতে হবে। গতকাল সকালে উত্তরার আশকোনায় হজ ক্যাম্পে হজ ব্যবস্থাপনা কার্যক্রম-২০১৬ উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী এসব কথা বলেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, কিছু বিপথগামী ইসলামের নাম নিয়ে ঠাণ্ডা মাথায় নিরীহ মানুষ হত্যা করছে তারা মোটেও কোনো ভালো কাজ করছে না। বরং ইসলাম ধর্মকে অন্যের কাছে হেয় করে দিচ্ছে। তারা শান্তির এ ধর্ম সম্পর্কে মানুষের মনে ভীতির সঞ্চার করছে, ধর্মের বদনাম করাচ্ছে। তিনি বলেন, আমি চাই আমাদের শান্তির ধর্ম ইসলামের মর্যাদা যেন সবসময় সমুন্নত থাকে। পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ ধর্ম হিসেবে ইসলাম ধর্ম যেন তার স্থান ও মর্যাদায় থাকে সেটাই সবসময় আমার কামনা। বাংলাদেশ একটা শান্তিপূর্ণ দেশ। এখানে জঙ্গি-সন্ত্রাসের কোনো ঠাঁই হবে না। আর ইসলাম ধর্মও সে অনুমতি দেয় না। তিনি বলেন, এদের কারণে আমরা যারা ধর্মপালন করি, তাদের পৃথিবীতে বসবাস করা কঠিন হয়ে যাচ্ছে। অন্য ধর্মের মানুষের কাছে তারা পবিত্র ইসলামের ভুল বার্তা দিচ্ছে। শেখ হাসিনা বলেন, সুষ্ঠুভাবে পবিত্র হজ পালনে সব ধরনের ব্যবস্থা নিয়েছে সরকার। কেউ যেন হজের নাম করে সৌদি আরবে থেকে না যায় এ বিষয়ে নজর দেওয়া হয়েছে। তিনি বলেন, দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে হজ ব্যবস্থাপনায় বাংলাদেশ ভালো অবস্থানে আছে। সৌদি আরবের হজ মন্ত্রণালয় এ জন্য প্রশংসা করেছে। আমরা এই সুনাম অব্যাহত রাখতে চাই। ধর্মমন্ত্রী অধ্যক্ষ মতিউর রহমানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বক্তৃতা করেন—বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটনমন্ত্রী রাশেদ খান মেনন, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও স্থানীয় এমপি অ্যাডভোকেট সাহারা খাতুন, ধর্ম মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি বজলুল হক হারুন, ধর্ম মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. আবদুল জলিল ও বাংলাদেশে সৌদি আরবের রাষ্ট্রদূত আবদুল্লাহ এইচ এম আল মুতাইয়িরি। প্রধানমন্ত্রী ১৯৭৫-এর ১৫ আগস্টের বিয়োগান্তক অধ্যায় স্মরণ করে বলেন, আগস্ট শোকের মাস। এ মাসেই আমি মা-বাবা, ভাই, ভাইয়ের অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রীসহ পরিবারের সব সদস্যকে হারিয়েছি। বিদেশে ছিলাম বলে আমি ও আমার ছোট বোন শেখ রেহানা বেঁচে যাই। তিনি বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু আমাদের স্বাধীনতা এনে দিয়েছিলেন বলেই আজ আমাদের দেশ থেকে এক লাখ এক হাজার ৭৫৮ জন হজ যাত্রী হজে যেতে পারছেন। স্বাধীনতার পর পরই দেশ থেকে যেন সবাই হজে যেতে পারেন সেই উদ্যোগ গ্রহণ করেন বঙ্গবন্ধু। হিজবুল বাহার নামে একটি জাহাজও ক্রয় করেন। তার নেতৃত্বেই আমরা ওআইসি’র সদস্য পদ লাভ করি। তিনি দেশে ঘোড়দৌড়, জুয়া, মদ এগুলো নিষিদ্ধ করেন এবং মুসলিম বিশ্বের সঙ্গে একটা সৌহার্দপূর্ণ সম্পর্ক তখনই তৈরি হয়। প্রধানমন্ত্রী বলেন, বঙ্গবন্ধু ইসলাম ধর্মকে একবারে তৃণমূল পর্যায়ে প্রচারের জন্য ইসলামিক ফাউন্ডেশন ও মাদ্রাসা বোর্ড প্রতিষ্ঠা করেন এবং জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমের জন্য জমি বরাদ্দ করে যান। বিশ্ব ইজতেমার জায়গা, কাকরাইল মসজিদের জন্যও জায়গা দিয়ে যান এবং রেডিও টিভিতে সম্প্রচার শুরুর আগে কোরআন তেলাওয়াতের ব্যবস্থা করেন। ইসলাম ধর্ম শান্তির ধর্ম, সৌহার্দের ধর্ম—সেই ধর্মের মূল বাণীটা যেন দেশবাসী জানতে পারে জাতির পিতা তার উদ্যোগে সেই ব্যবস্থা করে যান। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আরও বলেন, আমাদের সরকার সৌদি আরবের সঙ্গে মিলে হাজীদের সুবিধার জন্য যাতায়াতের বিমান, সেখানে বাসা-বাড়ি, ট্রান্সপোর্টসহ সবরকমের উন্নয়নের পদক্ষেপ নিয়েছে। আগে হজ অফিস শুধু জেদ্দায় ছিল। আমরা মক্কা শরিফে বাংলাদেশ মিশনের সামনেও হাজীদের সুবিধার্থে হজ অফিস নির্মাণ করে দিয়েছি। আমরা পাঁচ বছর মেয়াদি জাতীয় হজ ও ওমরাহ নীতি প্রণয়নের কাজ করছি। প্রধানমন্ত্রী সৌদি বাদশাহকে ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, যেহেতু আমাদের এখান থেকে বেশিসংখ্যক লোক হজে যেতে চান তার ব্যবস্থা সৌদি সরকার করে দিয়েছে। এ জন্য তাদের কৃতজ্ঞতা জানাই, ধন্যবাদ জানাই। প্রধানমন্ত্রী হজ যাত্রীদের শুভেচ্ছা জানিয়ে বলেন, যে নিয়তে হজে যাচ্ছেন সেই নিয়ত পুরো করে সুস্থ শরীরে যেন ফিরে আসতে পারেন—সেই কামনাই করি। তিনি এ সময় সমগ্র দেশ ও জাতির জন্য হজযাত্রীদের কাছে দোয়া কামনা করেন।

সর্বশেষ খবর