বৃহস্পতিবার, ৪ আগস্ট, ২০১৬ ০০:০০ টা

জঙ্গিবাদ দমন না করে এসডিজি অর্জন সম্ভব নয়

নিজস্ব প্রতিবেদক

জঙ্গিবাদ দমন না করে এসডিজি অর্জন সম্ভব নয়

ড. খলীকুজ্জমান আহমদ

দেশে জঙ্গিবাদ দমন না করা গেলে টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা—এসডিজি অর্জন করা সম্ভব নয় বলে মন্তব্য করেছেন প্রখ্যাত অর্থনীতিবিদ ড. কাজী খলীকুজ্জমান আহমদ। তিনি বলেন, সহস্রাব্দ উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা—এমডিজি অর্জনে বিশ্বে বাংলাদেশ যে উদাহরণ সৃষ্টি করেছে, এসডিজিতেও তা সম্ভব। তবে এসডিজি বাস্তবায়নে সরকারের রাজনৈতিক অঙ্গীকার থাকতে হবে। ড. কাজী খলীকুজ্জমান আহমদ গতকাল জাতীয় প্রেসক্লাবে বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ উন্নয়ন পরিষদ—বিইউপি আয়োজিত ‘কার্যকর এসডিজি বাস্তবায়নে বাংলাদেশ’ শীর্ষক গোলটেবিল আলোচনায় বক্তৃতা করছিলেন। অনুষ্ঠানে আরও বক্তৃতা করেন বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক ডেপুটি গভর্নর খোন্দকার ইব্রাহিম খালেদ, বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠান—বিআইডিএসের প্রফেসরিয়েল ফেলো ড. মো. আসাদুজ্জামান, রিসার্চ, ট্রেনিং অ্যান্ড ম্যানেজমেন্ট (আরটিএম) ইন্টারন্যাশনালের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. আহমেদ আল কবীর, কৃষিবিদ ড. জাহাঙ্গীর আলম প্রমুখ। বিইউপি ভাইস চেয়ারম্যান ড. রেজাউল করিমের সভাপতিত্বে গোলটেবিল আলোচনায় স্বাগত বক্তব্য দেন সংস্থাটির নির্বাহী পরিচালক ড. নিলুফার বানু। ঢাকা স্কুল অব ইকোনমিক্স (ডিএসই) ড. কাজী খলীকুজ্জমান আহমদ বলেন, এসডিজি বাস্তবায়নে সরকারের রাজনৈতিক অঙ্গীকার আছে। এ জন্য প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে এসডিজি বাস্তবায়ন সেল গঠন করা হয়েছে। তিনি বলেন, এসডিজি বাস্তবায়নের জন্য উন্নয়ন প্রশাসনকে গণমুখী করতে হবে। কারণ দেশে এখন সবচেয়ে বড় ক্ষতি হলো— দুর্নীতি-অনিয়ম। কিন্তু এসডিজি বাস্তবায়নের প্রথম পদক্ষেপ হিসেবে মানুষের মধ্যে সাম্য ও মানবাধিকার প্রতিষ্ঠা, মানব মর্যাদা এবং ন্যায়বিচার নিশ্চিত করতে হবে। এ জন্য স্থানীয় সরকারকেও শক্তিশালী করতে হবে। উন্নয়ন প্রশাসনকে জনমুখী করতে হবে। তিনি বলেন, টেকসই উন্নয়নে দরিদ্র, ক্ষুধা এবং বৈষম্য দূর করতে হবে। অথচ দেশের উন্নয়নে মানুষের কল্যাণে আগে যে অর্থ ব্যয় করা হতো, এখন সেই অর্থ অস্ত্র কেনার কাজে ব্যবহার করতে হচ্ছে। পুরো বিশ্বেই অস্ত্রের জন্য অর্থ ব্যবহারের পরিমাণ বেড়ে গেছে। তার মতে, ব্যবসা-বাণিজ্যে সাধারণ মানুষকে সম্পৃক্ত করতে হবে। কারণ ব্যবসা-বাণিজ্যে জনসাধারণের সম্পৃক্ততা ছাড়া এসডিজি বাস্তবায়ন করা যাবে না।

খোন্দকার ইব্রাহিম খালেদ বলেন, টেকসই উন্নয়ন করতে হলে সরকারকে ঘিরে থাকা অর্থ সন্ত্রাস নির্মূল করতে হবে যা কেবল জনগণের দ্বারাই সম্ভব। এর পাশাপাশি দেশে একমুখী শিক্ষাব্যবস্থা চালু করা এবং স্থানীয় সরকারকে স্বাধীন করতে হবে। তার মতে, সংবিধানে লিপিবদ্ধ আছে— রাষ্ট্রের মালিক জনগণ। সরকারের দায়িত্ব সময়ের সঙ্গে জনগণের ক্ষমতায়ন নিশ্চিত করা। কিন্তু সরকার তা করছে না। তিনি বলেন, সম্প্রতি দেশে জঙ্গি-সন্ত্রাসের কথা বারবার উঠে আসছে। কিন্তু অর্থ সন্ত্রাসীদের কথা কেউ বলছে না। দেশের উন্নয়নের স্বার্থে অর্থ সন্ত্রাসীদের রুখে দিতে হবে। পাশাপাশি স্থানীয় সরকারকে আরও ক্ষমতাবান করা দরকার। না হলে এসডিজি বাস্তবায়ন সম্ভব নয়। ড. মো. আসাদুজ্জামান বলেন, এসডিজি বাস্তবায়নে অর্থ জোগানের জন্য বাংলাদেশ ব্যাংককে আকর্ষণীয় সুদে করমুক্ত বন্ড ছাড়তে হবে। সরকারকে তখন আর অর্থের চিন্তা করতে হবে না, জনগণই অর্থের সরবরাহ করবে। আর এসডিজি বাস্তবায়নে যে রাজনৈতিক অঙ্গীকার প্রয়োজন, তার প্রতিফলন বাজেট বরাদ্দে থাকা চাই। ড. আহমেদ আল কবীর বলেন, বাংলাদেশ এখন উন্নয়নের মহাসড়কে অবস্থান করছে। বিগত কয়েক বছরে অভাবনীয় উন্নয়ন করতে সক্ষম হয়েছে বাংলাদেশ। এসডিজির জন্য আলাদা কোনো বাজেট করার প্রয়োজন নেই। সব মন্ত্রণালয় সঠিকভাবে কাজ করলেই এসডিজি অর্জন সম্ভব। ড. নিলুফার বানু বলেন, এমডিজির আটটি লক্ষ্যমাত্রার ভিতর বাংলাদেশ সাতটি অর্জনে সক্ষম হয়েছে। দারিদ্র্য কমেছে। স্বাস্থ্যসেবার মান অনেক উন্নত হয়েছে। বর্তমান অবস্থান থেকে দেশকে আরও এগিয়ে নিতে সরকার এসডিজির জন্য নতুন লক্ষ্যমাত্রা স্থির করেছে। ২০৩০ সালের মধ্যে দারিদ্র্য ও ক্ষুধা পুরোপুরি দূর করতে এসডিজি ঘোষণা করা হয়েছে।

সর্বশেষ খবর