শিরোনাম
বৃহস্পতিবার, ৪ আগস্ট, ২০১৬ ০০:০০ টা
ছাড়তে হবে বাড়ি

ত্রিশ দিনের মধ্যে রিভিউ করতে পারবেন মওদুদ

নিজস্ব প্রতিবেদক

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদের গুলশানের বাড়িসংক্রান্ত মামলায় আপিল বিভাগের দেওয়া রায়ের পূর্ণাঙ্গ অনুলিপি প্রকাশিত হয়েছে। সংশ্লিষ্ট বিচারপতিদের স্বাক্ষর শেষে গতকাল সুপ্রিমকোর্টের ওয়েবসাইটে এই রায় প্রকাশ করে আপিল বিভাগের সংশ্লিষ্ট শাখা। এখন ৩০ দিনের মধ্যে এই রায়ের বিরুদ্ধে রিভিউ আবেদন করতে পারবেন মওদুদ আহমদ। সাবেক বিএনপি সরকারের আইনমন্ত্রী ব্যারিস্টার মওদুদের বিরুদ্ধে গুলশানের একটি বাড়ি আত্মসাতের অভিযোগে দুর্নীতি দমন কমিশনের মামলা মঙ্গলবার বাতিল করে আপিল বিভাগ। তবে মওদুদের ভাই মনজুর আহমদের নামে ওই বাড়ির মিউটেশন (নামজারি) করতে হাইকোর্টের দেওয়া রায় বাতিল করে রাজউকের আপিল গ্রহণ করা হয়। হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে রাজউক ও রাষ্ট্রপক্ষের করা তিনটি আপিল মঞ্জুর করে মঙ্গলবার প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কমার সিনহার নেতৃত্বে আপিল বিভাগের পাঁচ বিচারপতির বেঞ্চ এ রায় দেয়। আইনজীবীরা জানান, আপিল বিভাগের এই রায়ের ফলে ব্যারিস্টার মওদুদকে গুলশান-২ নম্বর সেকশনের ১৫৯ নম্বর প্লটের ওই বাড়িটি হারাতে হচ্ছে। নিজের ভাই মনজুরের নামে থাকা এক বিঘা ১৩ কাঠার ওই বাড়িতে বিগত প্রায় তিন দশক ধরে বসবাস করছেন বিএনপি নেতা ব্যারিস্টার মওদুদ। প্রকাশের আগে রায়ের পূর্ণাঙ্গ লিপিতে স্বাক্ষর করেন প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহাসহ বেঞ্চের সংশ্লিষ্ট পাঁচ বিচারপতি। অন্য বিচারপতিরা হলেন— বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন, বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী, বিচারপতি মির্জা হোসেইন হায়দার ও বিচারপতি মো. নিজামুল হক। ৮০ পৃষ্ঠার এই রায়টি লিখেছেন প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহা। তার সঙ্গে একমত পোষণ করেছেন অন্য বিচারপতিরা। এ মামলায় আদালতে মওদুদের পক্ষে ব্যারিস্টার রোকনউদ্দিন মাহমুদ, মওদুদ আহমদ নিজে, কামরুল ইসলাম সিদ্দিকী ও ব্যারিস্টার এ এম মাহবুব উদ্দিন খোকন শুনানি করেন। রাজউক ও রাষ্ট্রপক্ষে শুনানি করেন অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম, সঙ্গে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল একরামুল হক টুটুল। দুদকের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী খুরশীদ আলম খান। বাড়িটি অবৈধভাবে দখল ও আত্মসাতের অভিযোগে ২০১৩ সালের ১৭ ডিসেম্বর গুলশান থানায় মওদুদ ও তার ভাইয়ের বিরুদ্ধে দুদক এই মামলা করে। দুদকের করা মামলার অভিযোগে বলা হয়, বাড়িটির প্রকৃত মালিক ছিলেন পাকিস্তানি নাগরিক মো. এহসান। ১৯৬৫ সালে বাড়ির মালিকানার কাগজপত্রে এহসানের পাশাপাশি তার স্ত্রী অস্ট্রিয়ার নাগরিক ইনজে মারিয়া প্লাজের নামও অন্তর্ভুক্ত হয়। ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে স্ত্রীসহ ঢাকা ত্যাগ করেন এহসান। তারা আর ফিরে না আসায় ১৯৭২ সালে এটি পরিত্যক্ত সম্পত্তির তালিকাভুক্ত হয়। এরপর ১৯৭৩ সালের ২ আগস্ট মওদুদ আহমদ তার ভাই মনজুরের নামে একটি ভুয়া আমমোক্তারনামা তৈরি করে বাড়িটি সরকারের কাছ থেকে বরাদ্দ নেন বলে মামলায় অভিযোগ করে দুদক। ২০১৪ সালের ১৪ জুন এ মামলায় অভিযোগ আমলে নেয় বিচারিক আদালত। ওই অভিযোগ আমলে নেওয়ার আদেশের বিরুদ্ধে হাইকোর্টে মওদুদ আহমদ ফৌজদারি রিভিশন আবেদন করেন। শুনানি শেষে গত বছরের ২৩ জুন হাইকোর্ট আবেদন খারিজ করে। হাইকোর্টের সেই রায়ের বিরুদ্ধে মওদুদ আপিলের আবেদন করলে আপিল বিভাগ তা মঞ্জুর করে। মঙ্গলবার আপিল বিভাগ তা নিষ্পত্তি করে দেওয়ায় মওদুদ আহমদ ও তার ভাই মামলা থেকে অব্যাহতি পান। এক আবেদনের শুনানি নিয়ে ২০১০ সালের ১২ আগস্ট ওই বাড়িটি মনজুর আহমদের নামে মিউটেশন করার জন্য হাইকোর্ট রায় দেয়। রাজউক এ রায়ের বিরুদ্ধে লিভ টু আপিল দায়ের করে ২০১১ সালের ৩ ফেব্রুয়ারি। ২০১৪ সালের ৯ মার্চ আপিল বিভাগ রাজউককে আপিলের অনুমতি দেয়। এরপর চলতি বছর এ মামলার শুনানি শেষে রায়ের জন্য অপেক্ষমাণ রাখে।

সর্বশেষ খবর