শুক্রবার, ৫ আগস্ট, ২০১৬ ০০:০০ টা

স্ত্রী-সন্তান নিয়ে উৎকণ্ঠায় বিদেশিরা

আগস্টের মাঝামাঝি যে কোনো সিদ্ধান্ত

নিজস্ব প্রতিবেদক

স্ত্রী-সন্তান নিয়ে উৎকণ্ঠায় বিদেশিরা

নিরাপত্তা নিয়ে ভীষণ উদ্বিগ্ন ঢাকায় থাকা বিদেশিরা। বিশেষ করে স্ত্রী-সন্তানদের নিয়ে উৎকণ্ঠায় দিন কাটছে তাদের। নিজ নিজ দফতরে এ নিয়ে তারা কথাও বলেছেন। ঢাকাস্থ বিভিন্ন দূতাবাস ও মিশনের কূটনীতিক, কর্মকর্তা ও স্টাফরা তাদের পরিবারের সদস্যদের দেশে ফেরত পাঠাতে চাচ্ছেন। তবে ইতিমধ্যে যুক্তরাষ্ট্র, কানাডাসহ পশ্চিমা কূটনীতিক ও স্টাফদের অনেকে পরিবার সরিয়ে নিয়েছেন। জার্মানি, ফ্রান্সসহ ইউরোপের অন্তত চারজন কর্মকর্তা ঢাকায় আর না ফেরার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। তাদের সিদ্ধান্তের বিষয়টি সংশ্লিষ্টদের অবহিতও করেছেন।

সংশ্লিষ্ট একটি সূত্র এসব তথ্য দিয়ে বলেছে, বাংলাদেশ থেকে সব কূটনীতিকের পরিবার-পরিজন সরিয়ে নেওয়ার চূড়ান্ত সিদ্ধান্তটি নিতে পারে তারা চলতি মাসের মাঝামাঝিতে। বিদেশিদের এমন সিদ্ধান্তে বাংলাদেশ সরকারকেও ভাবিয়ে তুলেছে। তবে সরকারি সূত্রগুলো বলছে, বিদেশিদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সরকার কার্যকর ব্যবস্থা নিয়েছে। বুধবার বাংলাদেশে নিযুক্ত ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) রাষ্ট্রদূত পিয়েরে মায়াদু বিবিসিকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে বলেছেন, নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগের কারণে ঢাকায় তাদের বিদেশি কর্মকর্তারা নিজেদের পরিবার  দেশে ফেরত পাঠানোর কথা বিবেচনা করছেন। তিনি বলেন, গুলশান হামলার পর বাংলাদেশের নিরাপত্তা পরিস্থিতি নিয়ে তাদের উদ্বেগ এখনো কাটেনি। তিনি আশঙ্কা করছেন, গুলশান হামলার মতো ঘটনা বাংলাদেশে ভবিষ্যতে আরও ঘটতে পারে।

এদিকে নিরাপত্তা নিয়ে বিদেশীরা যখন চিন্তিত ঠিক তখনই বাংলাদেশে নিজ নাগরিকদের আবারো ভ্রমণ সতর্কতা জারি করেছে ব্রিটেন। গত বুধবার এই সতর্কবার্তায় বলা হয়, বাংলাদেশে আরও সন্ত্রাসী হামলার বড় হুমকি রয়েছে। এতে বিদেশিরা, বিশেষ করে পশ্চিমারা সরাসরি টার্গেটে পরিণত হতে পারেন। তাই তাদেরকে বড় ধরনের জনসমাবেশ হয় এমন সব স্থানে কম যেতে পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। বলা হয়েছে, তাদেরকে চলাচল করতে হবে সতর্কতার সঙ্গে। একই সঙ্গে এতে ঢাকায় হযরত শাহজালাল (র.) আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের নিরাপত্তার বিষয়টি তুলে ধরা হয়েছে। ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) রাষ্ট্রদূত পিয়েরে মায়াদু বিবিসিকে আরও বলেন, গত বছর ইতালির নাগরিক তাবেলা সিজার ও জাপানের নাগরিক হোশি কোনিও হত্যার মধ্য দিয়ে যে উদ্বেগ সৃষ্টি হয়েছিল, তা গুলশান হামলার পর সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌঁছেছে। ঢাকায় বিভিন্ন দূতাবাসের বিদেশি কর্মীরা এখন প্রকাশ্যে চলাফেরা পর্যন্ত করছেন না। এমন অবস্থায় ঢাকায় ইইউয়ের পক্ষে যেসব বিদেশি নাগরিক কাজ করছেন, তাদের পরিবারের সদস্যদের নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বিগ্ন পিয়েরে মায়াদু। ইইউ দূতাবাসের কর্মীদের পরিবারের সদস্যদের দেশে ফেরত পাঠাতে বলা হবে কি না, জানতে চাইলে পিয়েরে মায়াদু বলেন, ‘এটা আমাদের বিবেচনার মধ্যে আছে। আমাদের সদর দফতর থেকে এরই মধ্যে একজন নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞ ঢাকায় এসেছেন। আগামী সপ্তাহের মধ্যে নিরাপত্তা নিয়ে আমাদের মূল্যায়ন কার্যক্রম শেষ হবে। আমরা নির্ণয় করার চেষ্টা করব, কীভাবে আমাদের কর্মকর্তা ও তাদের পরিবারের সদস্যদের জন্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করা যায়।’ পিয়েরে মায়াদু আরও বলেন, ‘আমাদের কিছু সহকর্মী এরই মধ্যে তাদের পরিবারের সদস্যদের নিজ নিজ দেশে পাঠিয়ে দিয়েছেন। বাকিরা এখনো অপেক্ষা করছেন কী সিদ্ধান্ত আসে, সেটি দেখার জন্য। আমি জানি, অনেক বিদেশি মিশন তাদের কর্মীদের পরিবারের সদস্যদের দেশে ফেরত পাঠিয়ে দিতে বলেছে। আমরা কয়েক দিনের মধ্যেই সিদ্ধান্ত নিতে যাচ্ছি। চলতি মাসের মাঝামাঝি ঢাকায় ইন্টারন্যাশনাল স্কুলগুলো খুলতে যাচ্ছে। সুতরাং এখন আমাদের সিদ্ধান্ত নিতেই হবে।’ বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকে যথেষ্ট নিরাপত্তাব্যবস্থা নেওয়ার দাবি প্রসঙ্গে জানতে চাইলে ইইউ রাষ্ট্রদূত বলেন, যথেষ্ট নিরাপত্তা নেওয়া হয়েছে ঠিকই, কিন্তু উদ্বেগ কাটছে না। কূটনৈতিক সূত্রগুলো জানিয়েছে, যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা, ফ্রান্সসহ বিভিন্ন দেশের ঢাকাস্থ মিশন তাদের কূটনীতিক, কর্মকর্তা-কর্মচারীর পরিবারের সদস্যদের জন্য ‘ভলান্টারি রিপেট্রিয়েশন বা ইচ্ছা করলে চলে যাওয়ার সুযোগ অবারিত করেছে। এরই মধ্যে গত এক মাসে কূটনীতিক ও স্টাফ মিলে অন্তত অর্ধশত পরিবার ঢাকা ছেড়ে গেছে। অস্ট্রেলিয়া অবশ্য গত বছরের শেষ দিকে তাদের ঢাকাস্থ হাই কমিশনের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ‘চাইলে চলে যাওয়া’র সুযোগ দেয়। দেশটির বেশিরভাগ কূটনীতিক ও কর্মকর্তার পরিবার সুযোগটি নিয়েছে, তারা তখনই ঢাকা ছেড়েছেন। সেই সময়ে বাংলাদেশে সন্ত্রাসী হামলার আশঙ্কায় ক্যানবেরার পক্ষ থেকে ধারাবাহিকভাবে ‘নিরাপত্তা সতর্কতা’ হালনাগাদ করা হয়। বিদেশিদের ওপর হামলার আশঙ্কায় অস্ট্রেলিয়া এমন সিদ্ধান্ত নেয়। গুলশান ও শোলাকিয়ায় পরপর দুুটি জঙ্গি হামলার ঘটনায় বাংলাদেশে থাকা বিভিন্ন দেশের কূটনীতিক ও স্টাফরা ‘সর্বোচ্চ সতর্ক’ অবস্থায় রয়েছেন। অনেকে গ্রীষ্মকালীন ছুটিতে দেশে গেছেন। তারা বাইরে থাকলেও ঢাকা পরিস্থিতির ওপর প্রতিনিয়ত নজর রাখছেন। চলতি মাসের মাঝামাঝিতে গ্রীষ্মকালীন ছুটি শেষ হওয়ার কথা রয়েছে। কিন্তু এরই মধ্যে কূটনৈতিক পল্লী থেকে যে খবর বেরিয়েছে তাহলো— নিরাপত্তা পরিস্থিতি বিবেচনায় অনেকের ছুটির মেয়াদ বাড়তে পারে। এর মধ্যে জার্মানির এক কূটনীতিক এবং দেশটির দূতাবাসের একজন উন্নয়ন কর্মকর্তা আর ঢাকায় না ফেরার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। তারা তাদের ঊর্ধ্বতন মহলে তা জানিয়েছেন। ঢাকায় নিযুক্ত জার্মান রাষ্ট্রদূত ড. থমাস প্রিঞ্জ সম্প্রতি এক সাক্ষাৎকারে এটি নিশ্চিত করেন। বলেন, হলি আর্টিজানে জঙ্গি হামলাপরবর্তী পরিস্থিতি আগের চেয়ে সম্পূর্ণ ভিন্ন। এ ঘটনার পর অনেকেই বাংলাদেশ ছাড়ছেন। বিশেষ করে যাদের শিশু-সন্তান রয়েছে। তবে ঠিক কতজন একেবারে ছেড়ে গেছেন তা এখনই বলা যাবে না। গ্রীষ্মকালীন ছুটি শেষ হলেই পুরো চিত্র পাওয়া যাবে জানিয়ে রাষ্ট্রদূত ড. প্রিঞ্জ বলেন, আমার দুজন সহকর্মী আর ফিরবেন না বলে জানিয়েছেন। তিনি অবশ্য ওই ঘটনার পর সরকারের নিরাপত্তা উদ্যোগের প্রশংসা করেছেন। বলেন, নিঃসন্দেহে আগের চেয়ে নিরাপত্তা অনেক বেড়েছে। কিন্তু এটাও সত্য গুলশানে অনেক লোকের বাস। এখানে বাইরে থেকে অনেকে আসেন। এ রকম একটি এলাকাকে শতভাগ নিরাপদ করা হয়তো সম্ভব নয়।

সর্বশেষ খবর