শুক্রবার, ৫ আগস্ট, ২০১৬ ০০:০০ টা

আক্কেলজ্ঞান কম সরকারের

নিজস্ব প্রতিবেদক

আক্কেলজ্ঞান কম সরকারের

বিশিষ্ট কলামিস্ট ও গবেষক সৈয়দ আবুল মকসুদ বলেছেন, জনগণের প্রতিনিধি সরকার খুব দক্ষতার সঙ্গে দেশ পরিচালনা করছে। তবে সরকারের আক্কেলজ্ঞান কম। সাধারণ মানুষের চিন্তা না করে সরকার মালিকদের স্বার্থ রক্ষা করতে চাইছে। গতকাল রাজধানীর সিরডাপ মিলনায়তনে এক আলোচনা সভায় তিনি এসব কথা বলেন। ‘পরিবহন ভাড়া বৃদ্ধি ও সিএনজির মূল্য বৃদ্ধি থামাও’ শীর্ষক আলোচনা সভায় বাংলাদেশ সিএনজি ফিলিং স্টেশন অ্যান্ড কনভারশন ওয়ার্কশপ ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মাসুদ খানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠান সঞ্চলনা করেন অর্থনীতিবিদ এম এম আকাশ। অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন স্থপতি মোবাশ্বের হোসেন, অধ্যাপক বদরুল আলম, অধ্যাপক এম শামসুল আলম, অধ্যাপক মোহাম্মদ এহসান প্রমুখ। আলোচনা সভায় আবুল মকসুদ বলেন, সরকার যদি নিজেদের মনে করে জনগণের প্রতিনিধি, তাহলে তাদের কথা চিন্তা করতে হবে। অন্ধের মতো সরকার চালালে হবে না। বাংলাদেশে একমাত্র অব্যবস্থাপনার কারণে সব ক্ষেত্রেই অতিরিক্ত খরচ হচ্ছে। এটা দুর্নীতি। সরকার এখন যেভাবে গ্যাসের দাম বাড়াতে চাইছে তা যৌক্তিক নয়। সরকার খুবই যোগ্য। তবে আক্কেল কম। সরকারকে কাণ্ডজ্ঞানসম্পন্ন হতে হবে। অপরিকল্পিত ব্যয়ের বোঝা জনগণ কেন বহন করবে। সরকারের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘আপনি যুক্তিবাদী হন। সাধারণ মানুষের দুর্ভোগ হয় এমন সিদ্ধান্ত নেবেন না। সিএনজির দর কয়েক বছর ধরে বাড়ানো হচ্ছে। যে যুক্তি দিয়ে এখন আবার দর বাড়ানোর কথা বলা হচ্ছে তা অযৌক্তিক। এর আগেও যখন সরকার দর বৃদ্ধি করেছে, আমরা বিরোধিতা করেছি। এখনো বিরোধিতা করছি।’ এম এম আকাশ বলেন, দেশে উৎপাদিত গ্যাসের ৫ ভাগের কম ব্যবহার করে সিএনজি খাত সরকারকে মোট গ্যাসমূল্যের ২২ ভাগের বেশি রাজস্ব দিচ্ছে। এতে দেশীয় সম্পদ ব্যবহারের মাধ্যমে জ্বালানি নিরাপত্তা নিশ্চিত করা সম্ভব হচ্ছে এবং হাজার হাজার কোটি টাকার বৈদেশিক মুদ্রা সাশ্রয় হচ্ছে। তাই দর বৃদ্ধির বিষয়ে সরকারকে যুক্তিসঙ্গত সিদ্ধান্ত নিতে হবে। জ্বালানি বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক বদরুল ইমাম বলেন, ‘বাংলাদেশে গ্যাস শেষ হয়ে যাচ্ছে— এ অজুহাতে দাম বাড়াতে চাইছে সরকার। দেশে গ্যাস নেই এটি ঠিক নয়। বঙ্গোপসাগরে গ্যাসকূপ অনুসন্ধানে কোনো উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে না এমন অভিযোগ না করে কূপ খননে রাষ্ট্রায়ত্ত তেল-গ্যাস অনুসন্ধান ও উত্তোলন কোম্পানি বাপেক্সের সক্ষমতা বাড়ানোর ওপর গুরুত্ব দিতে হবে। সরকার তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাসের (এলএনজি) সঙ্গে দাম সমন্বয় করতে সিএনজির দাম বাড়াতে চাইছে। সরকারের বিরোধিতা করতে চাই না। তাদের অদক্ষতার বিষয়টি তাদের উপলব্ধি করাতে চাই। সমুদ্রজয়ের পর মিয়ানমার দুটি গ্যাসকূপ আবিষ্কার করেছে তাদের অঞ্চলে। কিন্তু বাংলাদেশের সমুদ্রসীমানায় এ-সংক্রান্ত কোনো কার্যক্রমই নেই।’ সংগঠনের সভাপতি মাসুদ খান বলেন, পরিবহনে ব্যবহূত গ্যাসের দর বৃদ্ধি করা হলে সারা দেশে সিএনজি স্টেশন বন্ধ করে দেওয়া হবে। বর্তমান বাস্তবতায় সরকারকে ভ্যাট, ট্যাক্স দিয়ে এ ব্যবসা এখন টিকিয়ে রাখাই কঠিন। সেখানে সরকার আবারও গ্যাসের দর বৃদ্ধি করতে চাইছে। গত সেপ্টেম্বরে সিএনজির মূল্য ২৬ শতাংশ বাড়ানোয় পরিবহন ভাড়া দেড়গুণ বেড়েছে। এবার বৃদ্ধির প্রস্তাব করা হয়েছে ৮৩ শতাংশ। এ প্রস্তাব বাস্তবায়িত হলে পরিবহন ভাড়া আবার বেড়ে দ্বিগুণের বেশি দাঁড়াবে। একই সঙ্গে পণ্য পরিবহন খরচ বেড়ে পণ্যের দামও বাড়বে।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর