শিরোনাম
শনিবার, ৬ আগস্ট, ২০১৬ ০০:০০ টা

জঙ্গিবিরোধী কমিটির খবর নেই আওয়ামী লীগ ও ১৪ দলে

সরকারি দল ব্যস্ত ব্যবসা-বাণিজ্যে, শরিকরা তাকিয়ে থাকে ক্ষমতাসীনদের দিকে

রফিকুল ইসলাম রনি

গুলশান ও শোলাকিয়ায় হামলার বিরুদ্ধে সোচ্চারে প্রবল হয়ে সন্ত্রাস-জঙ্গি বিরোধী কমিটি গঠনে মাঠে নামে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। এজন্য দলের পক্ষ থেকে চিঠি পাঠানো হয় জেলা-উপজেলায়। অন্যদিকে কেন্দ্রীয় ১৪ দল বৈঠক, মানববন্ধনসহ বেশ কিছু কর্মসূচি পালন এবং পাড়া-মহল্লায় সন্ত্রাস প্রতিরোধ কমিটি গঠনের নির্দেশ দেয়। প্রধানমন্ত্রীও পাড়া-মহল্লায় কমিটি গঠনের নির্দেশ দেন। প্রথম দিকে জোর তত্পরতা দেখা গেলেও পড়েছে সন্ত্রাস-জঙ্গি বিরোধী কমিটি গঠনের কাজ যেন মুখ থুবড়ে রয়েছে। আন্দোলন-সংগ্রামের সূতিকাগার রাজধানীতেই হয়নি এ কমিটি। দলীয় সভানেত্রীর নির্দেশ, কেন্দ্রের চিঠি-১৪ দলের আহ্বানকে এখন পর্যন্ত আমলে নেননি প্রায় ৪০ জেলার নেতারা। জেলা কমিটি দূরে থাক, উপজেলা ও ইউনিয়ন কমিটিও গঠন করতে আগ্রহ দেখাননি কেউ কেউ। তৃণমূল নেতা-কর্মীদের অভিযোগ, ক্ষমতাসীন দলের জেলার শীর্ষস্থানীয় নেতারা রাজনীতির চেয়ে নিজেদের ব্যবসা-বাণিজ্য নিয়ে বেশি ব্যস্ত। এমন অভিযোগ উঠেছে কেন্দ্রের কিছু নেতার বিরুদ্ধেও। তারা সাংগঠনিক কাজের চেয়ে নিজেদের ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে সময় বেশি দিচ্ছেন। সন্ত্রাস প্রতিরোধ কমিটি গঠনসহ সাংগঠনিক কাজে মনোযোগ নেই। অন্যদিকে ১৪ দলের শরিকরা তাকিয়ে রয়েছে আওয়ামী লীগের দিকে। তারা বলছে, জোটের প্রধান রাজনৈতিক দল হিসেবে আওয়ামী লীগের দায়িত্বটা বেশি। এজন্য তারাও দলগতভাবে বা পৃথক কোনো কমিটি গঠনের উদ্যোগ নেয়নি। দলীয় সূত্রমতে, গুলশানে জঙ্গি হামলার পর আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জেলা ও উপজেলা আওয়ামী লীগকে সন্ত্রাস-জঙ্গি বিরোধী কমিটি গঠনের নির্দেশনা দিয়ে চিঠি ইস্যু করেন। ওই চিঠিতে বলা হয়, গত ২১ জুলাইয়ের মধ্যে কমিটি গঠনের কাজ শেষ করতে হবে। এরপর ২৩ জুলাই আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী সংসদের সভায়ও দ্রুততম সময়ের মধ্যে সন্ত্রাস প্রতিরোধ কমিটি গঠনের নির্দেশ দেন দলীয় সভানেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। দলীয় হাইকমান্ডের এমন নির্দেশনায়ও কানে পানি যায়নি জেলা নেতাদের। অভিযোগ উঠেছে, জেলায় জেলায় আওয়ামী লীগের সভাপতির সঙ্গে সাধারণ সম্পাদকের দ্বন্দ্বের কারণে এখনো পর্যন্ত বৈঠকই ডাকা হয়নি। অন্যদিকে জেলা নেতার সঙ্গে স্থানীয় এমপিদের দ্বন্দ্বের প্রভাবে মুখ থুবড়ে পড়েছে সন্ত্রাস-জঙ্গি বিরোধী কমিটি গঠন প্রক্রিয়ার কাজ।

আন্দোলন-সংগ্রামের প্রাণকেন্দ্র হিসেবে পরিচিত রাজধানী ঢাকা। প্রচলন রয়েছে, ঢাকা দখল যার, দেশ দখল তার। সেই ঢাকাতেই এখন পর্যন্ত সন্ত্রাসপ্রতিরোধ কমিটি আলোর মুখ দেখেনি। অবশ্য ঢাকার দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতারা দাবি করছেন, থানা ও ওয়ার্ডে কমিটি গঠন হচ্ছে। তারা জনগণের ব্যাপক সমর্থন পাচ্ছেন। এ প্রসঙ্গে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শাহে আলম মুরাদ বলেন, এখন আমরা থানা, ওয়ার্ড ও ইউনিয়ন পর্যায়ে কমিটি করছি। এগুলো চূড়ান্ত হওয়ার পর দলীয় সভানেত্রীকে অবহিত করব। পরবর্তী নির্দেশনা অনুযায়ী প্রয়োজনে কেন্দ্রীয় (মহানগর কমিটি) গঠন করব। উত্তরের সাধারণ সম্পাদক সাদেক খান বলেন, ঢাকা মহানগরের উত্তরে কমিটি গঠনের কাজ শুরু করছি। আশা করছি শিগগিরই তা ঘোষণা করতে পারব।

রাজধানীর পর বন্দরনগরী চট্টগ্রাম ও নারায়ণগঞ্জে এখন পর্যন্ত সন্ত্রাস-জঙ্গি বিরোধী কমিটি ঘোষণা করা হয়নি। চট্টগ্রামের নেতারা কয়েক দফা বৈঠক করলেও এখন পর্যন্ত কমিটি গঠনের প্রক্রিয়া শেষ করতে পারেননি বলে জানা গেছে। ঢাকার অদূরেই গাজীপুর। সেখানেও হয়নি কমিটি। এ প্রসঙ্গে গাজীপুর জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট আজমত উল্লাহ বলেন, ওয়ার্ড, থানায় কমিটি গঠনের কাজ চলছে। জেলায় কমিটি হয়নি। জেলা সভাপতি দেশে না থাকায় কমিটি গঠন করা যায়নি। একই অবস্থা ময়মনসিংহ জেলায়। এ জেলায় আওয়ামী লীগের কমিটি ঘোষণা না হওয়ায় কে উদ্যোগ নেবে কমিটি গঠনের এ নিয়েই ঘোর কাটছে না নেতাদের মধ্যে। একই অবস্থা ফেনীতে। এখন পর্যন্ত ঘোষণা করা হয়নি কমিটি। তবে কয়েক দফা নিজেদের মধ্যে কমিটি গঠনের প্রক্রিয়া নিয়ে বৈঠক করেছেন বলে দাবি করেছেন জেলার এক শীর্ষ নেতা। তবে উপজেলা ও ইউনিয়ন কমিটি গঠনের কাজ শেষ পর্যায়ে রয়েছে বলে জানা গেছে। যশোর জেলায় কমিটি গঠন তো দূরের কথা এখন পর্যন্ত বৈঠক ডাকা হয়নি। পিরোজপুর জেলা আওয়ামী লীগের নেতারা বলেছেন, জেলা সভাপতি ও সংসদ সদস্য এম এ আউয়ালের প্রভাবের কারণেই এখনো জঙ্গি  প্রতিরোধ কমিটি গঠন করা যাচ্ছে না।  জেলার সর্বত্রই তার পরিবার প্রভাব বিস্তার করে। এ কমিটি গঠন হলে তিনি আবারও প্রভাব বিস্তার করবেন এমন আশঙ্কায় কমিটি গঠনে আগ্রহী নন জেলার নেতারা। একই অবস্থা সিলেট মহানগর ও জেলা, গাজীপুর মহানগর, রংপুর মহানগর, রাজবাড়ী, নাটোর, শেরপুর, শরীয়তপুর, ঝিনাইদহ, হবিগঞ্জ, সুনামগঞ্জ, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, বরগুনা, পটুয়াখালী, ঝালকাঠি, চুয়াডাঙ্গা, মেহেরপুর, নড়াইল, বাগেরহাট, কুষ্টিয়ায়ও কমিটি গঠনের কাজ শেষ হয়নি বলে জানা গেছে। তবে তারা নিজেদের মধ্যে কয়েক দফা বৈঠক করেছেন, কমিটি গঠনের কাজও শেষ পর্যায়ে নিয়ে এসেছেন বলে জানা গেছে। দলীয় সভানেত্রী ও ১৪ দলের কেন্দ্রীয় নেতারা কমিটি গঠনের নির্দেশনা দেওয়ার পরও কমিটি গঠন করতে না পারা দুঃখজনক বলে অভিহিত করেছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা।  এ প্রসঙ্গে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ভিসি ও সাবেক ইউজিসি চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. এ কে আজাদ চৌধুরী বলেন, প্রধানমন্ত্রী যে নির্দেশনা দিয়েছেন তা প্রত্যেক নেতা-কর্মীকে মেনে চলতে হবে। কারণ নেত্রীই আমাদের শেষ ভরসাস্থল। তার আহ্বানে সাড়া দিয়ে জেগে উঠতে না পারলে জঙ্গিবাদ-সন্ত্রাস মোকাবিলা সম্ভব নয়।

সর্বশেষ খবর