শনিবার, ৬ আগস্ট, ২০১৬ ০০:০০ টা

খালেদার সঙ্গে ঐক্য করতে যাইনি

নিজস্ব প্রতিবেদক

খালেদার সঙ্গে ঐক্য করতে যাইনি

কাদের সিদ্দিকী

বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার সঙ্গে  কোনো ঐক্য করতে যাননি বলে জানিয়েছেন কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের সভাপতি কাদের সিদ্দিকী। তিনি বলেন, ‘দেশের পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা করতে খালেদা জিয়ার বাসায় গিয়েছিলাম। জামায়াতকে নিয়ে কোনো রাজনীতি করব না বলেও জানিয়েছি।’

গতকাল দুপুরে রাজধানীর মতিঝিলে কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে কাদের সিদ্দিকী এ কথা বলেন। শুরুতেই কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য নাসরিন সিদ্দিকী বলেন, ‘খালেদা জিয়া আমাদের ডেকেছিলেন, আমরা গিয়েছিলাম  দেশে যাতে জঙ্গি দমন হয়, সে কারণে একটি ঐক্য করতে। আমার স্বামী মুক্তিযুদ্ধ করেছেন, জামায়াতকে নিয়ে তিনি কোনো ঐক্য করবেন না। এটাই উনি বলেছেন। দেশের  যে অবস্থা চলছে আমি মনে করি, স্বাধীনতার সপক্ষের শক্তি একত্র হয়ে কাজ করলে জঙ্গি দমন হবে। আর জঙ্গি উত্থান হয়েছে কোত্থেকে, সেটা সরকারকে দেখতে হবে।’ এরপর বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী বলেন, ‘আমার স্ত্রী খুব সহজ-সরল সাদামাটা মানুষ। সেজন্য অনেক কথা কূটনৈতিক বা রাজনৈতিকভাবে চিন্তা করেননি। আমরা খালেদা জিয়ার সঙ্গে কোনো ঐক্য করতে যাইনি। আমরা দেশের পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা করতে গিয়েছিলাম। দেশের চলমান পরিস্থিতিতে সার্বিকভাবে একটি জাতীয় ঐক্য গঠনের প্রচেষ্টা নেওয়া দরকার। সেখানে যেমন জামায়াত থাকবে না,  সেখানে  তেমনি বঙ্গবন্ধুর সরকারকে উত্খাতের জন্য দেশকে অস্থিতিশীল করার জন্য গণবাহিনীও থাকবে না।’ কৃষক শ্রমিক জনতা লীগ সভাপতি বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু ছাড়া রাজনীতি করব না। জামায়াতকে নিয়ে রাজনীতি করব না। খালেদা জিয়াকে জাতীয় নেতৃত্ব দিতে হলে প্রথম স্পষ্টভাবে বলতে হবে, জামায়াত আর জোটে নেই। বঙ্গবন্ধুকে বাদ দিয়ে তাকে অবহেলা করে কেউ রজনীতি করলে তার সঙ্গে কৃষক শ্রমিক জনতা লীগ থাকবে না। ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধুর মৃত্যুর দিনে খালেদা জিয়ার যদি প্রকৃত জন্মদিনও হয়, সেটা পালন করা চলবে না।’

তিনি বলেন, ‘আমি গর্বের সঙ্গেই বলতে চাই, ১৯৭১ সালে বঙ্গবন্ধু যেমন ছিলেন একজন অবিসংবাদিত  নেতা,  কেউ মানুন আর না-ই মানুন, আজকে শেখ হাসিনাও  সে অবস্থানে এসেছেন। তিনি বাংলাদেশের প্রধান জাতীয় নেতা। তবে খালেদা জিয়াকে একেবারে বাদ দিয়ে নয়।’ জোট থেকে জামায়াতকে ছাড়ার বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক এমাজউদ্দীন আহমদের বক্তব্য উল্লেখ করে কাদের সিদ্দিকী বলেন, ‘এমাজউদ্দীন আহমদ যে মতামত ব্যক্ত করেছেন, তারপরে জামায়াতের ওইরকম ঔদ্ধত্য সহ্য করা যায় না।’ দলের প্রস্তাবে খালেদা জিয়া কী বলেছেন—জানতে চাইলে কাদের সিদ্দিকী বলেন, ‘একটি মানব সন্তান পেতে হলেও আমাদের ১০ মাস অপেক্ষা করতে হয়। এত তাড়াহুড়ার কি, আমরা প্রস্তাব দিয়েছি, দেখা যাক।’ জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে একই ধরনের আহ্বান সরকার পক্ষ থেকে আসলে যাবেন কি না, এমন প্রশ্নের জবাবে কাদের সিদ্দিকী বলেন, ‘আমি যাব তো দূরের কথা, আমি তো যেয়েই আছি। আন্তরিকভাবে বাংলাদেশকে রক্ষার জন্য যে কোনো কাজে, জামায়াত ছাড়া আর জঙ্গি গণবাহিনী ছাড়া যাদের কাছে গিয়ে মনে হবে সত্যিকার অর্থে কিছু হবে, আমি তো সেখানে যেয়েই আছি।’ বিএনপি চেয়ারপারসনকে ১৫ আগস্ট জন্মদিন পালন করা থেকে বিরত থাকার আহ্বান জানিয়ে কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের সভাপতি বলেন, ‘১৫ আগস্ট বাংলাদেশের হৃদয়  চৌচির হয়ে গেছে। অঙ্গহানি হয়েছে। অঙ্গ ছেদন হয়েছে। বঙ্গবন্ধুর মৃত্যুর ওইদিনে খালেদা জিয়ার প্রকৃত জন্মদিন হলেও তা পালন করা চলবে না। সেটা মানুষকে বলে করতে হবে। বলতে হবে, এই রকম একজন মহান নেতার মৃত্যুতে আমরা মর্মাহত, দুঃখিত। বঙ্গবন্ধুকে গালাগাল করা যাবে না। তার রাজনীতি নিয়ে যদি কোনো কথা হয়, তাহলে রাজনীতির সীমায় থেকে করবেন। আমরা প্রস্তাব করেছি। তারা নিশ্চয় বিবেচনা করবেন। তবে কখন করবেন, তারা জানেন।’ ভারতের বিতর্কিত ইসলামী বক্তা জাকির নায়েকের পিস টিভির সম্প্রচার বাংলাদেশে বন্ধের পর অনুমোদনহীন পিস স্কুল বন্ধের যে নির্দেশ সরকার দিয়েছে, তারও সমালোচনা করেন কাদের সিদ্দিকী। তিনি বলেন, ‘সরকার বলছে দেশে শান্তি আছে, স্থিতি আছে। হলি আর্টিজানের ঘটনায় সেটা একটা গোলমাল হল বলে সব বন্ধ করে দিবেন? স্কুল-কলেজ বন্ধ করে দেওয়া, বাঙালি জাতিকে ভয় পাইয়ে দেওয়া ঠিক হবে না।’ জনাকীর্ণ সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন— কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের সাধারণ সম্পাদক হাবিবুর রহমান তালুকদার বীরপ্রতীক, সাংগঠনিক সম্পাদক শফিকুল ইসলাম দেলোয়ার, কেন্দ্রীয় নেতা এএইচএম আবদুল হাই, অ্যাডভোকেট রফিকুল ইসলাম, যুব আন্দোলনের আহ্বায়ক হাবিব-উন নবী সোহেল প্রমুখ।

সর্বশেষ খবর