রবিবার, ৭ আগস্ট, ২০১৬ ০০:০০ টা

মিশ্র প্রতিক্রিয়ার কমিটি

ফালুর পদত্যাগ, তারেকের মতামত উপেক্ষিত, জ্যেষ্ঠতা লঙ্ঘন, অপরিচিত মুখের ছড়াছড়ি, কিছুই জানতেন না সিনিয়র নেতারা, বিদায়ের প্রস্তুতি অনেকের

মাহমুদ আজহার

মিশ্র প্রতিক্রিয়ার কমিটি

ডাকসুর সাবেক ভিপি আমান উল্লাহ আমান। সদ্যঘোষিত কমিটিতে তাকে করা হয়েছে চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা। সর্বশেষ কমিটিতে তিনি ছিলেন এক নম্বর যুগ্ম মহাসচিব। বিগত আন্দোলন-সংগ্রামে নিষ্ক্রিয়তার অভিযোগে তাকে এই গুরুতর শাস্তি দেওয়া হলো। ’৯০-এর স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনের আরেক নেতা ডাকসুর সাবেক এজিএস নাজিম উদ্দিন আলমকে আন্তর্জাতিকবিষয়ক সম্পাদক থেকে সরিয়ে করা হয়েছে নির্বাহী কমিটির সদস্য। সাবেক ছাত্রনেতা ফজলুল হক মিলনকে কোনো পদোন্নতি দেওয়া হয়নি। সাংগঠনিক সম্পাদকের পদেই তাকে বহাল রাখা হয়েছে। অর্থাৎ চার খলিফার মধ্যে শুধু খায়রুল কবির খোকনকেই পদোন্নতি দিয়ে যুগ্ম মহাসচিব করা হয়েছে। ছাত্রনেতা আবুল খায়ের ভূঁইয়ারও ঠাঁই হয়েছে চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা পরিষদে। তিনি ছিলেন বিএনপির সমাজকল্যাণ সম্পাদক। রাজশাহী অঞ্চলের প্রভাবশালী নেতা মিজানুর রহমান মিনুকে পাঠানো হয়েছে উপদেষ্টা পরিষদে আর নাদিম মোস্তফাকে শুধু নির্বাহী কমিটির সদস্য পদেই রাখা হয়েছে।

এদিকে কমিটি ঘোষণার পরপরই সারা দেশে বিএনপির নেতা-কর্মীদের মধ্যে শুরু হয় মিশ্র প্রতিক্রিয়া। পুরো কমিটিই ছিল অগোছালো। নামের বানানে ভুলের পাশাপাশি ঠিকমতো করা হয়নি পদবিন্যাসও। জ্যেষ্ঠতা মানা হয়নি কমিটিতে। চার ঘণ্টার মাথায় পদত্যাগ করেন নবগঠিত কমিটির ভাইস চেয়ারম্যান মোসাদ্দেক আলী ফালু। নবগঠিত কমিটির আরেক সহ-প্রচার সম্পাদক শামীমুর রহমান শামীমও অব্যাহতি চেয়ে দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের কাছে  চিঠি পাঠিয়েছেন। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকেও কমিটি নিয়ে চলছে নেতিবাচক প্রতিক্রিয়া। সাবেক ছাত্রনেতা ফেরদৌস মুন্না গতকাল সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে এক প্রতিক্রিয়ায় বলেন, ‘যে বা যারা কমিটির নামগুলো সাজিয়েছেন, তাদের পলিটিক্স করার অভিজ্ঞতা নিয়ে আমার প্রশ্ন আছে। ম্যাডাম বা তারেক রহমান নিশ্চয়ই সিরিয়াল করেননি। সদস্য তালিকায় কিছু সাবেক ছাত্রনেতাকে তাদের কর্মীদেরও পেছনে জায়গা দেওয়া হয়েছে। আর এই সাধারণ সৌজন্যতাটুকু যারা দেখাতে পারেন না, তাদের কমিটির পদবিন্যাস করার দায়িত্বই বা দেওয়া হয় কেন? কাউকে প্রাপ্য সম্মান না দিতে পারেন কিন্তু অপমান করার অধিকার নিশ্চয়ই আপনাদের কেউ দেয়নি। আর যাদের ওপরের দিকে পদ দিয়েছেন, তারা কিন্তু নিচের সিনিয়র মানুষগুলোর পেছনে পদ পেলে মোটেই মনঃক্ষুণ্ন হতেন না। এর দায় কে নেবে?’ ফেসবুকে এই ছাত্রনেতার প্রতিক্রিয়াকে সাধুবাদ জানিয়ে অনেকে লাইক ও কমেন্ট দিয়েছেন। খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে, গতকাল ঘোষিত বিএনপির ৫০২ সদস্যের ঢাউস কমিটিতে লঘুদণ্ডে গুরুতর শাস্তি দেওয়া হয়েছে বাঘা বাঘা অনেক নেতাকেই। প্রভাবশালী মহলবিশেষের রোষে পড়ার কারণে অনেকের রাজনীতিই শেষ হয়ে গেছে। আবার বিএনপির রাজনীতি না করেও অপ্রত্যাশিতভাবে পেয়েছেন গুরুত্বপূর্ণ পদ। রাগে-ক্ষোভে আরও অনেকেই পদ ছাড়ার হুমকি দিয়েছেন। বাংলাদেশ প্রতিদিনের কাছে অনেকেই নাম না প্রকাশের শর্তে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেন। এরই মধ্যে ভাইস চেয়ারম্যান পদ থেকে পদত্যাগ করেছেন মোসাদ্দেক হোসেন ফালু। তিনি গতকাল নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে তার পদত্যাগপত্র পাঠিয়ে দেন। শারীরিক কারণ দেখিয়ে পদত্যাগ করলেও ক্ষুব্ধতা থেকেই তার এ সিদ্ধান্ত বলে জানা গেছে। নতুন কমিটিতে তিন নম্বর সহ-প্রচার সম্পাদক শামীমুর রহমান শামীমও দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের সঙ্গে দেখা করে লিখিতভাবে অব্যাহতি চেয়েছেন। তিনি বাংলাদেশ প্রতিদিনকে জানান, বিএনপির একজন কর্মী হিসেবেই কাজ করবেন। সহ-প্রচার সম্পাদক পদে কাজ করার ইচ্ছা নেই। শুধু শামীমই নন, তার মতো পদাবনতি হওয়া অনেক নেতাই সরে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। কেউ কেউ নিষ্ক্রিয় হওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন। চট্টগ্রাম ও বরিশাল বিভাগের দুজন ভাইস চেয়ারম্যানও যে কোনো সময় পদত্যাগ করতে পারেন বলে তাদের ঘনিষ্ঠজনেরা জানিয়েছেন। কমিটিতে কেউ কেউ বিএনপির প্রাথমিক সদস্য না হয়েও সম্পাদকীয় পদও পেয়েছেন। কমিটিতে দেখা গেছে অপরিচিত মুখের ছড়াছড়ি। ১১৩ জনই নতুন মুখ। বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানের মতামত উপেক্ষা করে এ কমিটি করা হয়েছে। তার তালিকাকেও কাটছাঁট করা হয়েছে। গুলশান কার্যালয়ের এক প্রভাবশালী ব্যক্তির অনুসারীরা কমিটি জুড়েই। এ নিয়ে কেউ ভয়ে কোনো কথা বলতে পারছেন না। জানা যায়, কমিটি নিয়ে আগাগোড়া বিএনপির সিনিয়র নেতারা কিছুই জানতেন না। স্থায়ী কমিটির কোনো সদস্যই কমিটির ব্যাপারে কোনো কিছু জানেন না। গতকাল সংবাদ সম্মেলনের আগমুহূর্তে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের হাতে কমিটির তালিকা হস্তান্তর করা হয়। একটি মহলবিশেষের ছত্রচ্ছায়ায় মামলায় সাজাপ্রাপ্ত আসামি, দুর্নীতিবাজসহ নানাভাবে বিতর্কিতরা কমিটিতে জায়গা করে নিয়েছেন। বিশাল কমিটি দিয়ে সবাইকে খুশি রাখার চেষ্টা করা হলেও বরং বেশির ভাগ নেতারই ক্ষুব্ধ মনোভাব লক্ষ্য করা গেছে। ত্যাগীদের যথাযথ মূল্যায়ন না হওয়ায় মাঠ পর্যায়ের নেতা-কর্মীরাও হতাশ। নেতা-কর্মীরা বলাবলি করছেন, এই কমিটি দিয়ে ভবিষ্যতে সরকারবিরোধী আন্দোলন চালানো কঠিন হবে। বিগত আন্দোলন-সংগ্রামে ভূমিকা রাখা বিএনপির প্রচার সম্পাদক জয়নুল আবদীন ফারুককে উপদেষ্টা পরিষদে রাখা হয়েছে। বিএনপির অর্থনীতিবিষয়ক সম্পাদক আবদুস সালামকেও উপদেষ্টা করা হয়েছে। বিশেষ সম্পাদক করা হয়েছে ড. আসাদুজ্জামান রিপনকে। নিষ্ক্রিয় করার জন্যই তাকে ওই পদ দেওয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে। আবার ওই পদে থাকা নাদিম মোস্তফাকে করা হয়েছে নির্বাহী কমিটির সদস্য। দুজনই অখুশি। অবশ্য গতকাল আক্ষেপ প্রকাশ করে আসাদুজ্জামান রিপন বাংলাদেশ প্রতিদিনকে শুধু এটুকুই বলেন, ‘আল্লাহর তরফ থেকে হয়তো মঙ্গলের জন্যই আমাকে ওই পদ দেওয়া হয়েছে। আমি এতে যারপরনাই খুশি।’ অ্যাডভোকেট নাদিম মোস্তফা বলেন, ‘কমিটি নিয়ে মন্তব্য করার কিছু নেই। আল্লাহর ইচ্ছায়ই এমনটা হয়েছে। বান্দাকে কীভাবে ভালো রাখবেন তা তিনিই জানেন।’ ডা. ফাওয়াজ হোসেন শুভ। ইউনাইটেড হাসপাতালের অন্যতম লিভার বিশেষজ্ঞ। একজন ব্যস্ত চিকিৎসক। সাবেক এই ছাত্রনেতা এর আগে ড্যাবের রাজনীতি করতেন। এখন তিনি বিএনপির স্বাস্থ্যবিষয়ক সম্পাদক। এর আগে ওই পদে ছিলেন ডা. মাজহারুল ইসলাম দোলন। তাকে পদাবনতি দিয়ে নেওয়া হয়েছে নির্বাহী কমিটির সদস্যপদে। একই অবস্থা ডা. মহসিনেরও। এর আগে বিএনপির কেন্দ্রীয় কোনো পদে না থাকলেও তিনি এখন সরাসরি পরিবারকল্যাণবিষয়ক সম্পাদক। সাংবাদিক কাদের গনি চৌধুরী। বিএনপির কোনো পদ-পদবিতে না থাকলেও তিনি নতুন কমিটিতে সহ-তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক হয়েছেন। শুধু এই কয়েক নেতাই নন, প্রায় অর্ধশত নেতা রয়েছেন, যারা অপ্রত্যাশিতভাবে গুরুত্বপূর্ণ পদ পেয়েছেন। এদিকে স্থায়ী কমিটিতে পদ না পেয়ে হতাশ দলের অনেক নেতাই। তাদের ঘনিষ্ঠজনদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, সাদেক হোসেন খোকা, শাহ মোয়াজ্জেম হোসেন, আবদুল্লাহ আল নোমান, আবদুল আউয়াল মিন্টু, অ্যাডভোকেট খন্দকার মাহবুব হোসেন, মেজর হাফিজউদ্দিন আহমদ (অব.) প্রত্যাশিত পদ না পাওয়ায় চরম ক্ষুব্ধ ও হতাশ। এদের মধ্যে কেউ কেউ রাজনীতি ছেড়ে দেওয়ারও চিন্তাভাবনা করছেন। কেউ কেউ পদত্যাগও করতে পারেন। নিষ্ক্রিয় থাকার কথাও বলেছেন কেউ কেউ। অবশ্য স্থায়ী কমিটির দুই পদ শূন্য রয়েছে। ওই পদ পাওয়ার জন্য শেষ চেষ্টাও চালাবেন কেউ কেউ। দলের ভাইস চেয়ারম্যান পদের এক নেতা জানান, ‘যাদের বিএনপিতে যোগদান করিয়েছি, কর্মী হিসেবে কাজ করেছে, তারা যদি স্থায়ী কমিটির সদস্য হয়, তাহলে আমরা রাজনৈতিক আত্মহত্যার পরিস্থিতিতে পৌঁছে গেছি। তাই, রাজনীতি করব না পদত্যাগ করব— তা নিয়ে নতুন করে ভাবতে হচ্ছে।’ নতুন কমিটিতে ভাইস চেয়ারম্যান পদ পেয়েছেন এমন এক নেতা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, “১৯ মার্চের কাউন্সিলে দলীয় গঠনতন্ত্র সংশোধন করে ‘এক নেতা এক পদ’ ধারা যুক্ত করা হয়েছে। নতুন কমিটিতে তা মানা হয়নি।” জানা যায়, কমিটি গঠনের ক্ষেত্রে বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানের মতামতও গুরুত্ব পায়নি। সম্প্রতি তারেক রহমান ছাত্র ও যুবদলের সাবেক ৪২ জনের একটি তালিকা প্রতিনিধির মাধ্যমে খালেদা জিয়ার কাছে পাঠালেও তা খুব একটা আমলে নেওয়া হয়নি। তা ছাড়া দফতরসহ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ পদে তারেক রহমান কিছু নেতার নাম উল্লেখ করে দিয়েছেন, তারাও সে পদ পাননি। তবে কমিটি ঘোষণা দেওয়ার পর সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘অত্যন্ত ভাইব্রেন্ট একটি কমিটি হয়েছে, ডায়নামিক একটি কমিটি হয়েছে, যেসব কোয়ালিটি একটি সংগঠনের জন্য প্রয়োজন, প্রতিটি বিষয়ের ওপর ভিত্তি করে এ কমিটি গঠন করা হয়েছে। আমরা মনে করি, এ কমিটি বাংলাদেশের রাজনীতিতে এবং দেশে গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে উপযোগী ইতিবাচক ভূমিকা রাখবে।’ এত বড় কমিটি কেন— প্রশ্ন করা হলে মির্জা ফখরুল বলেন, দেশের যে সামগ্রিক পরিস্থিতি, এটা একটা কারণ। আর বিগত দিনগুলোয় বিএনপি যে বিকাশ লাভ করেছে, বিশেষ করে রাজনীতিতে সক্রিয় অংশগ্রহণকারী নেতা-কর্মীর সংখ্যা বেড়ে গেছে, ছাত্রদল-যুবদল থেকে যারা আসছেন, তাদের তৈরি করার জন্য নতুন কমিটিতে আনতে হয়েছে। সেজন্য অবয়বটা বড় হয়েছে।

নতুন মুখ, আছেন নারীরাও : কমিটিতে ঠাঁই পেয়েছেন দেড় শতাধিক নতুন মুখ। এর বড় অংশই ছাত্র ও যুবদলের সাবেক নেতা। শ্রমিক দল, কৃষক দল, মহিলা দলসহ অন্যান্য অঙ্গসংগঠনের নেতারাও নির্বাহী কমিটিতে জায়গা করে নিয়েছেন। কমিটির বিভিন্ন স্তরে নারীদেরও রাখা হয়েছে। স্থায়ী কমিটি থেকে শুরু করে নির্বাহী কমিটির সদস্যপদেও নারীদের অবস্থান লক্ষ্য করা গেছে। এ নিয়ে নারী নেত্রীদের মধ্যে ইতিবাচক মনোভাব লক্ষ্য করা গেছে।

‘নিষ্ক্রিয় সুবিধাবাদী আনফিটরা কমিটিতে’ : নিজস্ব প্রতিবেদক, যশোর জানান, নতুন কমিটিতে যশোরের ১১ জনের নাম রয়েছে। এদের অনেককে নিয়েই তৃণমূলে প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়েছে। নতুন কমিটিতে নির্বাহী সদস্য হিসেবে স্থান পেয়েছেন জেলার আট নেতা। তারা হলেন অ্যাডভোকেট কাজী মুনিরুল হুদা, প্রকৌশলী টি এস আইয়ুব, আবুল হোসেন আজাদ, ফারাজী মতিয়ার রহমান, চমন আরা বেগম, অ্যাডভোকেট সৈয়দ সাবেরুল হক সাবু, সাবিরা ইসলাম মুন্নি ও ফিরোজা বুলবুল কলি। এদের মধ্যে শেষ তিনজন এবারই প্রথম নির্বাহী কমিটিতে স্থান পেলেন। সাবেরুল হক সাবু যশোর জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। আর ফিরোজা বুলবুল কলি জেলা জাতীয়তাবাদী মহিলা দলের সভাপতি। সাবিরা ইসলাম মুন্নি ঝিকরগাছা উপজেলা চেয়ারম্যান।

স্থানীয় নেতা-কর্মীরা জানান, কাজী মুনিরুল হুদা কার্যত রাজনীতি থেকে নির্বাসিত। এলাকার সঙ্গে তার কোনো যোগাযোগ নেই। চমন আরা বেগম শারীরিকভাবে ‘আনফিট’। আবুল হোসেন আজাদ আন্দোলন-সংগ্রামে ভূমিকা রাখেন না। দলের সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানের দণ্ডাদেশের প্রতিবাদে দল থেকে যখন সারা দেশে প্রতিবাদ বিক্ষোভের কর্মসূচি দেওয়া হয়, তখন তিনি সপরিবারে আমেরিকা সফর নিয়ে ব্যস্ত ছিলেন। দলের প্রতি সাবিরা ইসলাম মুন্নির কমিটমেন্ট নিয়েই প্রশ্ন আছে নেতা-কর্মীদের। স্থানীয় নেতা-কর্মীরা বলছেন, নিষ্ক্রিয়, সুবিধাবাদী, আনফিটদের কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটিতে স্থান দেওয়ার মাধ্যমে প্রমাণিত হয়েছে, দলটির নীতিনির্ধারকরা তৃণমূলের খোঁজখবর রাখেন না। যারা হামলা-মামলা, জেল-জুলুম মোকাবিলা করে আন্দোলন-সংগ্রামের মাঠে রয়েছেন, এ অবস্থায় তারা নিজেদের বঞ্চিত মনে করছেন।

ভাঙনের পদধ্বনি চট্টগ্রাম বিএনপিতে : চট্টগ্রাম থেকে বিশেষ প্রতিনিধি রিয়াজ হায়দার জানান, ভাঙনের পদধ্বনি চট্টগ্রাম বিএনপিতেও। কেন্দ্র ও মহানগরে মূল্যায়নের ক্ষেত্রে জ্যেষ্ঠতা লঙ্ঘনের কারণে ক্ষোভ-অসন্তোষ সৃষ্টি হয়েছে নেতা-কর্মীদের মনে। গণপদত্যাগও ঘটতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন দলের ত্যাগী-বঞ্চিত নেতাদের অনুসারীরা। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত দফায় দফায় বঞ্চিত নেতাদের বিক্ষুব্ধ অনুসারীদের বৈঠক চলছে। উল্লেখ্য, পূর্ববর্তী কমিটি ঘোষণার প্রতিবাদেও চট্টগ্রামের বিক্ষুব্ধ কর্মীরা শীর্ষস্থানীয় নেতাদের কুশপুত্তলিকা দাহসহ অবরোধ কর্মসূচি পালন করেছিলেন। এবার গতকাল ঘোষিত কেন্দ্রীয় কমিটিতে সাবেক মন্ত্রী ও চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপির বিদায়ী কমিটির আহ্বায়ক আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরীকে স্থায়ী কমিটিতে অন্তর্ভুক্ত করা হলেও দলের অপেক্ষাকৃত প্রবীণ ও ত্যাগী নেতা সাবেক মন্ত্রী আবদুল্লাহ আল নোমান ও সাবেক মেয়র মীর মোহাম্মদ নাছির উদ্দিনকে অন্তর্ভুক্ত না করায় তাদের সমর্থকদের মধ্যে দেখা দিয়েছে উত্তেজনা। অন্যদিকে অন্য জ্যেষ্ঠ নেতা গোলাম আকবর খোন্দকারেরও যথার্থ মূল্যায়ন না হওয়ায় ক্ষোভ-অসন্তোষ দেখা দিয়েছে। নোমান, নাছির ও আকবরের সমর্থকরা চরম অসন্তোষ জানিয়ে বলছেন, ত্যাগী সিনিয়র নেতাদের প্রতি দল সুবিচার করেনি। পূর্ববর্তী কমিটিতে গয়েশ্বরচন্দ্র রায়সহ অপেক্ষাকৃত নবীনদের স্থায়ী কমিটিতে অন্তর্ভুক্ত করা হলেও নোমানের ঠাঁই হয়নি। এদিকে দলীয় নির্ভরযোগ্য সূত্রগুলো জানিয়েছে, চট্টগ্রাম থেকে কেন্দ্রে অন্য একাধিক নেতার ক্ষেত্রেও যোগ্য মূল্যায়ন হয়নি। এর মধ্যে গেলবারের বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক ও উত্তর জেলা চট্টগ্রাম বিএনপির সাবেক সভাপতি গোলাম আকবর খোন্দকারের সমর্থকরা আশা করেছিলেন, তাকে অন্তত ভাইস চেয়ারম্যান করা হবে। কিন্তু দলের প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে নিবেদিত এই নেতাকে বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা করে চট্টগ্রাম উত্তর জেলা থেকে যুদ্ধাপরাধে অভিযুক্ত হয়ে ফাঁসিতে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর হওয়া বিএনপি নেতা সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর ছোট ভাই গিয়াসউদ্দিন কাদের চৌধুরীকে ভাইস চেয়ারম্যান করা হয়েছে। এতে দেখা দিয়েছে ক্ষোভ-উত্তেজনা। মহানগর বিএনপির সাবেক যুগ্ম সম্পাদক এম এ সবুর বলেন, ‘দল এভাবে চলতে পারে না।’ বিক্ষুব্ধ অনেকে গণপদত্যাগও করতে পারেন বলে আশঙ্কা করেন তিনি। অন্যদিকে চট্টগ্রাম উত্তর জেলা বিএনপি নেতা এম নাজিম উদ্দিনের মতে, কেন্দ্রে স্থায়ী কমিটিতে নোমান ঠাঁই পেলে তা চট্টগ্রামের রাজনীতির জন্য পরিপূর্ণতা পেত। ভাইস চেয়ারম্যান পদে গোলাম আকবর সংযুক্ত হবেন বলেও কর্মীরা আশা করেছিলেন। কোতোয়ালি থানা বিএনপির একাংশের সাধারণ সম্পাদক আবদুল মান্নান ক্ষোভ-অসন্তোষে দল ত্যাগ করবেন বলে জানান। নোমান সমর্থক অন্য নেতা এ এম নাজিমউদ্দিন বলেন, ‘উদ্ভূত পরিস্থিতি গণপদত্যাগ না অন্য কিছু— বৈঠক করেই আমরা সিদ্ধান্ত নেব।’

সর্বশেষ খবর