রবিবার, ৭ আগস্ট, ২০১৬ ০০:০০ টা

বিতর্কিতদের ছড়াছড়ি

নিজস্ব প্রতিবেদক

বিএনপির নয়া নির্বাহী কমিটিতে বিতর্কিত ব্যক্তিদের ছড়াছড়ি। বেশির ভাগ সদস্য হয় বিতর্কিত, না হয় সম্পূর্ণ অপরিচিত কিংবা সাংগঠনিক কাজে একেবারেই নিষ্ক্রিয়। নতুন এ কমিটি নিয়ে দলের অনেক সিনিয়র নেতার মন্তব্য— ‘কমিটি হয়েছে চেয়ারপারসনের গুলশান কার্যালয়ের ক্ষমতাধর বিতর্কিত এক কর্মকর্তা আর নয়াপল্টন কার্যালয়ের এক নেতার মনমর্জি অনুযায়ী। তাদের অনুগত ব্যক্তিরা বড় বড় পদে অধিষ্ঠিত হয়েছেন। যারা তাদের তুষ্টি অর্জন কিংবা চাহিদা মেটাতে ব্যর্থ হয়েছেন তারাই সাবেক সহ-দফতর সম্পাদক আবদুল লতিফ জনির মতো কমিটি থেকে বাদ পড়েছেন, বাদ পড়েছেন সম্পাদক পদ থেকে। না হয় পদাবনতি হয়েছে জয়নুল আবদিন ফারুক, আমানউল্লাহ আমান কিংবা শামীমুর রহমান শামীমের মতো। নতুন কমিটির ভাইস চেয়ারম্যান মোসাদ্দেক আলী ফালু কমিটি ঘোষণার চার ঘণ্টার মাথায়ই মনের দুঃখে পদত্যাগ করেছেন। এ কমিটি থেকে নিজের নাম প্রত্যাহারের আবেদন করেছেন তিন নম্বর সহ-প্রচার সম্পাদক শামীমুর রহমান শামীম। এ প্রসঙ্গে শামীম বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, দলের কাজ করতে গিয়ে বিগত আন্দোলনে জেল খেটেছি। মামলা হয়েছে কয়েক ডজন। আর তার প্রতিদান হলো এই! আমার প্রতি যে সাংগঠনিক অবিচার করা হয়েছে তার জন্যই আমি এই পদ থেকে নিজের নাম প্রত্যাহারের আবেদন জানিয়েছি। ‘ম্যাডামকে’ সামনে রেখে তার নাম ভাঙিয়ে কতিপয় বিতর্কিত ব্যক্তিই এরকম কমিটির জন্য দায়ী। শামীমের আশঙ্কা, যেসব লোককে কমিটিতে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে আর যা-ই হোক ভবিষ্যতের আন্দোলনে এদের কাউকে রাস্তায় খুঁজে পাওয়া যাবে না। নতুন কমিটির ৫০২ সদস্যের নয়া নির্বাহী কমিটিতে ব্যাপক পদবাণিজ্যের অভিযোগ উঠেছে এবার। একই সঙ্গে বিগত দিনের আন্দোলন-সংগ্রামে যারা ভূমিকা রেখেছেন তাদের উপেক্ষা করে মোটা অংকের অর্থ কিংবা অন্য কোনো সুবিধার বিনিময়ে গুলশান কার্যালয় ও নয়াপল্টনের জনৈক দুই ব্যক্তির অনুগত লোকদের নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। জানা গেছে, ৫০২ সদস্যের কমিটিতে অর্ধেকেরও বেশি ব্যক্তিকে চেনা তো দূরের কথা, নাম পর্যন্ত শোনেননি বিএনপি চেয়ারপারসন। নতুন কমিটিতে পরিষ্কারভাবে উপেক্ষিত হয়েছে দলের সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানের মতামত। লন্ডন থেকে কয়েক দফা তালিকা পাঠালেও হাতেগোনা দু-একটা নাম রেখে বাকি সবকটি নাম ফেলে দিয়েছেন গুলশান কার্যালয়ের এক বিতর্কিত কর্মকর্তা। কেন্দ্রীয় কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, দলীয় নেতা-কর্মীরা কেউ না চিনলেও তদবিরে উপ-কোষাধ্যক্ষ হয়েছেন মাহমুদ হাসান বাবু নামের একজন। ছয় মার্কিন কংগ্রেসম্যানের স্বাক্ষর জালকারী হুমায়ুন কবিরকে করা হয়েছে বিএনপির নয়া কমিটির সহ-আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক। অন্যদিকে লন্ডনে ম্যাকডোনাল্ড নামের একটি ফাস্টফুডের দোকানে সেলসম্যানের চাকরি করেন আনোয়ার হোসেন খোকন। তিনি হয়েছেন সহ-আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক। অথচ যুক্তরাজ্য ও যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থানরত এমন অনেক যোগ্য, পরীক্ষিত, ত্যাগী ও সক্রিয় নেতা রয়েছেন তাদের আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক দূরে থাক কোনো পদেই রাখা হয়নি। বিগত আন্দোলনে পেটে ও বুকে গুলি খেয়ে মৃত্যুর হাত থেকে বেঁচে যাওয়া সাবেক আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক নাজিমউদ্দিন আলমের নাম পাঠানো হয়েছে নির্বাহী সদস্যদের তালিকায়। জানা গেছে, সহ-আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক পদে যে সাতজনের নাম ঘোষণা করা হয়েছে তাদের মধ্যে ব্যারিস্টার রুমিন ফারহানা আর কণ্ঠশিল্পী বেবী নাজনীন এই দুজন ছাড়া বাকি পাঁচজনকেই দেশের ভিতরে বিএনপির কোনো নেতা-কর্মী চিনেন না। অন্যদিকে দলের কোনো প্রাথমিক সদস্য পদেও কখনো না থাকলেও কাদের গনি চৌধুরীকে সহ-তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক এবং দফতর সম্পাদকের গাড়ি সরবরাহকারীকে করা হয়েছে সহ-প্রকাশনা সম্পাদক। এ ছাড়া সিনিয়র নেতাদের অনেকের পুত্র-কন্যাদেরও নতুন কমিটিতে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। আমিনুল হক (এফসিএ), সৈয়দ আলমগীর হোসেন (এমবিএ), ডা. মো. আবদুল কুদ্দুসসহ বেশ কয়েকজনকে চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা করা হয়েছে। যাদেরকে কেন্দ্রের কোনো নেতা বা কর্মী চিনেন না। চারজন সহ-আইন বিষয়ক সম্পাদকের মধ্যে দুজনই অপরিচিত। ইউপি নির্বাচনে মনোনয়ন বাণিজ্যের সঙ্গে জড়িত একজন সাবেক যুগ্ম-মহাসচিবসহ সহ-দফতর সম্পাদক তাইফুল ইসলাম টিপু, বেলাল হোসেনদের পদোন্নতি হয়েছে। এ ছাড়া অর্থের বিনিময়েও বিতর্কিত, অপরিচিত এবং দল বা অঙ্গ সংগঠনের সঙ্গে একেবারেই সংশ্লিষ্টতা ছিল না এমন শতাধিক ব্যক্তিকে নতুন কমিটির বিভিন্ন পদে বসানোর অভিযোগ পাওয়া গেছে। আগের কমিটির একাধিক ভাইস চেয়ারম্যান এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, চেয়ারপারসন ও সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যানকে ব্যানার হিসেবে সামনে রেখে ও তাদের নাম ভাঙিয়ে একটি চক্র এই পদবাণিজ্য করেছে। যারা নিজেরাই বিতর্কিত এবং দলের ভিতরে সরকারের বড় এজেন্ট হিসেবেও পরিচিত। এসব বিতর্কিত ব্যক্তিই এই কমিটি গঠন করেছেন। যে কমিটিতে ত্যাগী, দক্ষ, পরীক্ষিতদের তেমন কোনো স্থান হয়নি। অন্যদিকে দলের জাতীয় স্থায়ী কমিটি নিয়েও আলোচনা-সমালোচনা রয়েছে। পুরনো কমিটির বেশ কয়েকজন অযোগ্য, অথর্ব ব্যক্তির পদ বহাল রাখা ছাড়াও অনেক যোগ্য ও অভিজ্ঞ নেতাকে উপেক্ষা করে নতুন দুটি পদে একই এলাকার দুজন অপেক্ষাকৃত কম বয়সী ব্যক্তিকে নিয়োগ করার হেতু বা যুক্তি খুঁজে পাচ্ছেন না অনেকে। তবে কেউ কেউ তাদের অভিনন্দনও জানিয়েছেন। অন্যদিকে চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপিতেও ডা. শাহাদাৎ হোসেনকে করা হয়েছে সভাপতি। মাত্র কয়েক দিন আগেই তাকে কেন্দ্রীয় বিএনপির চট্টগ্রাম বিভাগের সাংগঠনিক সম্পাদক ঘোষণা করার পর গতকাল আবার চট্টগ্রাম মহানগরীর সভাপতি পদেও তার নাম ঘোষণা করা হয়। অন্যদিকে পুরনো কমিটির সহ-সভাপতি আবু সুফিয়ানকে এ যাত্রায়ও সহ-সভাপতি হিসেবেই রাখা হয়েছে।

সর্বশেষ খবর