সোমবার, ৮ আগস্ট, ২০১৬ ০০:০০ টা

নতুন আলোচনায় হাসনাত-তাহমিদ

নিজস্ব প্রতিবেদক

নতুন আলোচনায় হাসনাত-তাহমিদ

ছাড়া পাওয়ার পর বন্ধুদের সঙ্গে তাহমিদ ও পরিবারের সঙ্গে হাসনাত ছবি : সংগৃহীত

গুলশান হলি আর্টিজান রেস্তোরাঁয় হামলা নিয়ে নতুন করে আলোচনা শুরু হয়েছে। কয়েকটি ছবিকে কেন্দ্র করে জমে উঠেছে এই বিতর্ক। নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষক প্রকৌশলী হাসনাত রেজা করিম ও কানাডার টরেন্টো বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র তাহমিদ হাসিব খানকে নিয়ে নানা রকম মন্তব্য ও বক্তব্য প্রকাশিত হচ্ছে মিডিয়ায়। এ ব্যাপারে গতকাল ঢাকা    মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার ও কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিটের প্রধান মনিরুল ইসলাম বলেন, প্রযুক্তির যুগে অনেক কিছুই করা সম্ভব। আমরা বলব, এ ধরনের ছবি যদি কারও কাছে থাকে তাহলে আমাদের সরবরাহ করতে আহ্বান জানাচ্ছি। তবে আমরা অনেক ছবি পেয়েছি। যেগুলো পর্যালোচনা করা হচ্ছে। মনিরুল আরও বলেন, এই মামলার তদন্তকারী সংস্থা কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিট। হাসনাত করিম এবং তাহমিদকে ৫৪ ধারায় গ্রেফতার করা হয়েছে। তারা বর্তমানে রিমান্ডে আছে। তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। তদন্তসংশ্লিষ্ট কারও সঙ্গে কথা বলা ছাড়া কোনো ‘কথিত অনুসন্ধানী’ প্রতিবেদন প্রকাশ হলে ভুল বোঝাবুঝি হওয়ার অবকাশ দেখা দিতে পারে। এ রকম খবর প্রকাশিত হলে তদন্ত কর্মকর্তা স্বাধীনভাবে যে তদন্ত করছেন সেই তদন্ত কাজে মানসিক চাপ অনুভব করতে পারেন। এর ফলে তদন্ত বিঘ্নিত হতে পারে। তিনি বলেন, ‘আমি অনুরোধ করব তদন্ত কর্মকর্তা বা তদন্ত সংস্থার সঙ্গে আলোচনা ব্যাতিরেকে এই ধরনের ‘কথিত অনুসন্ধানী’ প্রতিবেদন প্রকাশ থেকে সবাই বিরত থাকুন। আমি আশা করব যারা এসব কাজ করছেন তাদের শুভবুদ্ধির উদয় হবে। জানা গেছে, তাহমিদ সে রাতে তার দুই বান্ধবীকে নিয়ে খেতে গিয়েছিলেন হলি আর্টিজানে। পরদিন সকালে ওই দুই বান্ধবীকে নিয়ে মুক্ত হন তাহমিদ। অন্যদিকে একইভাবে স্ত্রী ও সন্তানদের নিয়ে হলি আর্টিজান থেকে বেরিয়ে আসেন হাসনাত করিম। সন্ধ্যার ভিডিও ফুটেজে তাদের এভাবে হলি আর্টিজানে প্রবেশ করতে দেখা গিয়েছিল। বিভিন্ন ভিডিও ফুটেজ পরীক্ষা করে একাধিক সংস্থার পর্যবেক্ষণ হলো, মোট পাঁচ সন্ত্রাসী একের পর এক হলি আর্টিজানে প্রবেশ করে। এই সময় বাইরে দুজনকে সন্দেহজনকভাবে ঘোরাফেরা করতে দেখা গেছে। বার বার টেলিফোন করায় ব্যস্ত ছিলেন একজন,

আরেকজন অন্যদের ইশারা দিচ্ছিলেন। জীবিত উদ্ধারদের মধ্যে একজন ছিলেন দুবাই ফেরত স্ট্রিট কলগার্ল। তাকে একাধিকবার জিজ্ঞাসাবাদ করেছেন তদন্তসংশ্লিষ্টরা। আটকের বিষয়টি স্বীকার না করলেও তাকে নজরদারির মধ্যে রাখা হয়েছে বলে জানিয়েছেন একাধিক কর্মকর্তা। ওই নারীর সম্পৃক্ততা এখন বিভিন্নভাবে খতিয়ে দেখছেন তারা। সূত্র বলছে, একটি ভিডিও ফুটেজে হলি আর্টিজানে প্রথম গুলির সময় মূল সড়কে একজনকে টেলিফোনে কথা বলতে দেখা গেছে। অন্যরা যখন ভয়ে পালাচ্ছিলেন তখন এই ব্যক্তির নির্বিকার ফোন করাটা রহস্যজনক মনে হচ্ছে গোয়েন্দাদের কাছে। জিম্মি ঘোষণা এবং উদ্ধারের আগ পর্যন্ত হলি আর্টিজানের আশপাশে কী হয়েছিল তা বিশ্লেষণ করে দেখছে বিভিন্ন সংস্থা। জানা গেছে, হলি আর্টিজানের ঘটনার দুই দিন আগে তাহমিদ কানাডা থেকে দেশে আসেন তার মায়ের অনুরোধে। ঘটনার দিন দুই বান্ধবীকে নিয়ে হলি আর্টিজানে খেতে যান তাহমিদ। হামলাকারী পাঁচ জঙ্গির দুজন স্কলাস্টিকা স্কুলের ছাত্র ছিল। ছাত্রজীবন থেকে তাহমিদ ও তার বান্ধবীদের ওই সন্ত্রাসীরা চিনত। তবুও তারা তাহমিদকে ছাড় দেয়নি। পিস্তল হাতে দিয়ে ছাদে পাঠায়, স্নাইপার নিয়ে আইন প্রয়োগকারী সংস্থা অবস্থান করছে কিনা তা দেখতে। পরে দুই সন্ত্রাসী ছাদে উঠে তাহমিদের  পেছনে পেছনে। ভিডিও ফুটেজ দেখে তাহমিদের অবস্থান এবং কোন পরিস্থিতিতে তাহমিদের হাতে অস্ত্র দিয়েছিল তা নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। তবে ইতিমধ্যে একাধিকবার তাহমিদের বান্ধবীরা আইন প্রয়োগকারী সংস্থাকে বলেছে, তাকে বাধ্য করা হয়েছিল অস্ত্র হাতে নিতে। অন্যদিকে হাসনাত করিমের মোবাইল থেকে অনেকগুলো অ্যাপস ডাউনলোড করা হয়েছিল এবং তাতে অনেকগুলো ছবি আপলিংক করা হয়েছিল। এর মধ্যে তার মোবাইল থেকে ৩০ মিনিটের মধ্যে শিকাগো ও সানফ্রান্সিসকোতে কল করা হয়েছিল। হাসনাত আইন প্রয়োগকারী সংস্থাকে বলেছেন, তিনি মোবাইলে ওই ছবিগুলো পাঠাতে বাধ্য হয়েছিলেন। হাসনাতের এই বক্তব্য তথ্য প্রযুক্তির বিভিন্ন দিক থেকে খুঁটিনাটি বিশ্লেষণ করে দেখছেন গোয়েন্দারা। নেওয়া হচ্ছে প্রযুক্তিবিদদের সহায়তা। এক কর্মকর্তা বলেছেন, জিজ্ঞাসাবাদের বাইরে হাসনাত এবং তাহমিদের অতীত কর্মকাণ্ড যাচাই করে দেখা হচ্ছে। তবে টরেন্টো বিশ্ববিদ্যালয়ে তাহমিদ ক্রীড়াবিদ এবং সংগীতের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। কাউন্টার টেরোরিজম প্রধান বলেন, গুলশানে হামলা মামলায় এখন পর্যন্ত কাউকে গ্রেফতার করা হয়নি। তবে অনেককেই জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। যেসব পুলিশ সদস্য সেখানে প্রথম গিয়েছিলেন তাদেরও আমরা জিজ্ঞাসাবাদ করেছি। অসংখ্য মানুষের ইন্টারভিউ হচ্ছে। ফাইনালি আমরা যাদের সাক্ষ্য গ্রহণ যোগ্যতা রয়েছে বলে মনে হবে তাদের এই মামলায় সাক্ষী করা হবে। গত বৃহস্পতিবার পুলিশ হাসনাত ও তাহমিদকে ৫৪ ধারায়  গ্রেফতার করে। পরে আদালতের নির্দেশে তাদের প্রত্যেককে ৮ দিন করে রিমান্ডে নেয়।

অর্থ-অস্ত্র-প্রশিক্ষণদাতারা শনাক্ত : হলি আর্টিজান রেস্তোরাঁয় জঙ্গি হামলার ঘটনার তদন্তে অনেক দূর এগিয়ে যাওয়ার দাবি করেছেন ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার মনিরুল ইসলাম। তিনি বলেন, এ ঘটনায় কারা জড়িত কারা জড়িত নয়, কার কোন ধরনের ভূমিকা এই সম্পর্কিত অনেক তথ্যই আমাদের হাতে এসেছে। তবে তদন্ত শেষ হয়নি, গ্রেফতার অভিযানও শেষ হয়নি। অভিযান চলছে। আরও কিছু ব্যক্তিকে  গ্রেফতার করা গেলে আমরা পূর্ণাঙ্গ তথ্য প্রকাশ করতে পারব। তিনি বলেন, আমরা তদন্ত করছি মাসাধিককাল হয়েছে। অর্থায়ন, অস্ত্রের সম্ভাব্য সরবরাহকারী, প্রশিক্ষণদাতাসহ অনেক তথ্যই আমাদের হাতে রয়েছে। আমরা আরেকটু এগোলে বা আরও কয়েকজনকে গ্রেফতার করতে পারলে এ বিষয়ে জানানো যাবে।

তামিম-জিয়া সম্পর্কে তথ্য আসছে : হলি আর্টিজানে হামলার পর থেকেই আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পক্ষ  থেকে বলা হচ্ছে এ ঘটনার সঙ্গে নিষিদ্ধ ঘোষিত জঙ্গি সংগঠন জামা’আতুল মুজাহিদীন বাংলাদেশ-জেএমবির একটি ভগ্নাংশ জড়িত। যারা সরাসরি আন্তর্জাতিক জঙ্গি সংগঠন আইএসের অনুসারী। এই সংগঠনের মাস্টারমাইন্ডদের একজন বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত কানাডিয়ান নাগরিক তামিম চৌধুরী। এ ছাড়া সাম্প্রতিক ধারাবাহিক হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত সেনাবাহিনী  থেকে অভ্যুত্থান চেষ্টার দায়ে চাকরিচ্যুত মেজর সৈয়দ জিয়াউল হক। গত ২ আগস্ট এ দুজনকে ধরিয়ে দিতে পুলিশ প্রধান এ কে এম শহীদুল হক ৪০ লাখ টাকা পুরস্কার ঘোষণা করেছেন। মনিরুল দাবি করেন, পুরস্কার ঘোষণার পর তামিম ও জিয়া সম্পর্কে অনেকেই তথ্য দিচ্ছেন। সেগুলো যাচাই-বাছাই করে অভিযান চালানো হচ্ছে। তবে এখন পর্যন্ত তাদের গ্রেফতার করা যায়নি। তারা এমন কয়েকটি আস্তানা পেয়েছেন, যেখানে তামিম ও জিয়া অবস্থান করেছিলেন এর প্রমাণও তারা পেয়েছেন। তবে অভিযানের আগেই তারা আস্তানা ছেড়ে গেছে।

সর্বশেষ খবর