সোমবার, ৮ আগস্ট, ২০১৬ ০০:০০ টা

জনগণের আস্থা অর্জনে ব্যর্থ দুদক

নিজস্ব প্রতিবেদক

জনগণের আস্থা অর্জনে ব্যর্থ দুদক

ড. ইফতেখারুজ্জামান

টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেছেন, ‘প্রাতিষ্ঠানিক ও আইনগতভাবে অত্যন্ত শক্তিশালী হলেও জনগণের আস্থা অর্জনে পুরোপুরি ব্যর্থ হয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি) মনে করে, দুদকের প্রতি প্রতিনিয়তই আস্থা হারাচ্ছে সাধারণ মানুষ। কেননা জনসাধারণ মনে করে, দুদক দুর্নীতি দমাতে নয়, বরং রাজনৈতিক উদ্দেশ্যেই বেশি ব্যবহূত হচ্ছে।’

২০১৩-২০১৫ সাল পর্যন্ত দুদকের কার্যক্রমের ওপর পরিচালিত তথ্যের ভিত্তিতে করা এক গবেষণা প্রতিবেদনে প্রকাশ করেছে টিআইবি।

 রাজধানীর ধানমন্ডিতে টিআইবির কার্যালয়ে ‘দুর্নীতিবিরোধী প্রতিষ্ঠান শক্তিশালীকরণ উদ্যোগ : বাংলাদেশ দুর্নীতি দমন কমিশনের ওপর পর্যালোচনা’ শীর্ষক ওই গবেষণা প্রতিবেদন গতকাল সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে প্রকাশ করা হয়। সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন টিআইবির ট্রাস্টি বোর্ডের চেয়ারপারসন সুলতানা কামাল, টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান ও উপনির্বাহী পরিচালক সুমাইয়া খায়ের। গবেষক দলের প্রধান ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের লোকপ্রশাসন বিভাগের অধ্যাপক ড. সালাহউদ্দিন এম আমিনুজ্জামান। অনুষ্ঠানে ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, গবেষণায় প্রতিফলিত ফলাফল অনুযায়ী দুদকের কার্যক্রম আশাব্যঞ্জক হলেও প্রতিষ্ঠানটির বিদ্যমান দুর্বলতাগুলো কাটিয়ে উঠতে আরও কাজ করতে হবে। এমন কোনো আইন প্রণয়ন করা যাবে না, যাতে দুদকের বিদ্যমান স্বাধীনতা খর্ব হয়। পাশাপাশি দুদকের স্বাধীনতা যেসব ক্ষেত্রে সীমিত, আইন প্রণয়ন করে সেসব ক্ষেত্রে আরও বেশি স্বাধীনতা নিশ্চিত করতে হবে। দুর্নীতিবিরোধী কোনো প্রতিষ্ঠানের ওপর এ ধরনের গবেষণা সারা বিশ্বে এটাই প্রথম। ফলে অন্য দেশগুলোর সঙ্গে তুলনামূলক বিচার করা সম্ভব হয়নি বলে সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়। টিআইবির প্রকাশিত গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়, প্রাতিষ্ঠানিকভাবে আইনি স্বাধীনতা ও প্রতিরোধমূলক উদ্যোগসহ ২১টি নির্দেশকে দুদকের স্কোর উচ্চপর্যায়ের হলেও ৪৯টির মধ্যে ১৯টিতে মধ্যম ও ৯টিতে নিম্নপর্যায়ের। নির্দেশকগুলোর মধ্যে সর্বোচ্চ স্কোর পেয়েছে আইনি স্বাধীনতা ও অবস্থান এবং সর্বনিম্ন স্কোর করেছে দুর্নীতি নিয়ন্ত্রণ ও প্রতিরোধে দুদকের কার্যকারিতা সম্পর্কে জনগণের ধারণার নির্দেশক। এতে বলা হয়, দুদকের কার্যক্রম ও উন্নতির ক্ষেত্র পর্যালোচনা; দুর্নীতি প্রতিরোধে দুদকের সহায়ক ও বাধাদানকারী প্রভাবক চিহ্নিত করা এবং দুদকের মূল চ্যালেঞ্জগুলোর বাস্তব সমাধান বা সংস্কারের জন্য সুপারিশ করার উদ্দেশ্যেই এ গবেষণা পরিচালিত হয়েছে। গবেষণায় সার্বিক বিবেচনায় দুদক মধ্যম মাত্রার স্কোর পেয়েছে। ১০০ নম্বরের মধ্যে দুদক পেয়েছে ৬১ দশমিক ২২ নম্বর। অ্যাডভোকেট সুলতানা কামাল বলেন, ‘সমাজে যদি দুর্নীতি প্রতিরোধ না হয়, যথাযথ আইনি প্রক্রিয়ায় দুর্নীতির বিচার না হয়, তবে মানুষের মধ্যে এক ধরনের মরিয়া ভাব চলে আসে। সমাজে অস্থিরতা তৈরি হয়। এতে মানুষ আইন নিজের হাতে তুলে নিতে চায়। মানবাধিকার লঙ্ঘনের পথ তৈরি হয়। তাই অনেক সফলতার পরও মানুষের মধ্যে দুদকের প্রতি আস্থা তৈরি করতে না পারাটা দুঃখজনক। মানুষের মধ্যে এ আস্থা তৈরি করতে হবে যে দুদক আছে, তাই দুর্নীতি হবে না।’ গবেষণা প্রতিবেদনে দুদকের নানা দুর্বলতা কাটিয়ে দুর্নীতি দমনে এর কার্যকারিতা বাড়াতে ১১ দফা সুপারিশ করেছে টিআইবি। এগুলো হচ্ছে—দুদকের বাজেট বাড়ানো, সাংগঠনিক কাঠামো ও জনবল বাড়ানোর বিষয়ে পুনর্বিবেচনা করা, চেয়ারম্যান ও কমিশনারদের নিয়োগ প্রক্রিয়ায় স্বচ্ছতা বাড়ানো, অভিযোগ দাখিল ব্যবস্থায় আধুনিকায়ন ও তথ্যপ্রযুক্তির ব্যবহার বাড়ানো, দুর্নীতির মামলায় শাস্তির হার বাড়ানোর ব্যবস্থা করা, সম্পদ পুনরুদ্ধারের জন্য পদক্ষেপ নেওয়া, দীর্ঘমেয়াদি সমন্বিত কৌশলগত পরিকল্পনা প্রণয়ন করা, উন্নত ওয়েবসাইট চালু করা, অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে সমন্বয় ও সহযোগিতা বাড়ানো, জনগণের প্রতিনিধিত্বকারী স্বাধীন তদারকি ব্যবস্থার উদ্যোগ গ্রহণ করা এবং বিভিন্ন ইতিবাচক কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে জনগণের আস্থা অর্জনের চেষ্টা করা। তবে অভ্যন্তরীণভাবে দুদকের অনেক স্বেচ্ছাচারিতা বা রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ সম্পর্কে গবেষণায় সুনির্দিষ্ট কোনো তথ্য উল্লেখ করা হয়নি। এমন এক প্রশ্নের উত্তরে ইফতেখারুজ্জামান বলেন, ‘গবেষণাটি আন্তর্জাতিক কিছু নির্দেশকের ভিত্তিতে করা হয়েছে। এ ছাড়া অনেক অভিযোগ আমরা পেয়েছি, কিন্তু তথ্য-প্রমাণের অভাবে সেগুলো গবেষণায় সংযোজন সম্ভব হয়নি।’ শুধু তথ্য-প্রমাণ ও সুনির্দিষ্ট নির্দেশকের ভিত্তিতে দুদকের কার্যক্রম মধ্যম মানের বলে তিনি জানান।

সর্বশেষ খবর