মঙ্গলবার, ৯ আগস্ট, ২০১৬ ০০:০০ টা

ওরা পাঁচজন বাড়িতে, পুলিশের খাতায় নিখোঁজ

নাটোর প্রতিনিধি

নাটোরে নিজ বাড়িতে থেকেও নিখোঁজ তালিকায় রয়েছেন পাঁচজন। হাফেজ আবদুল বারিক সেলিম। নলডাঙ্গা থানার পশ্চিম সোনাপাতিল গ্রামের আলহাজ তছির উদ্দিন মোল্লার ছেলে অনার্স চতুর্থ বর্ষ ফলপ্রার্থী। স্থানীয় ঘেড়িয়া মসজিদের পেশ ইমাম। পুরো রোজায় এই মসজিদে পড়িয়েছেন তারাবির নামাজ। দেশের কোনো থানায় তার নামে নেই কোনো মামলা। এমনকি একটি জিডিও নেই তার নামে। নিয়মিত বাড়িতেই বসবাস করেন তারপরও নাটোরের পুলিশের খাতায় তিনি নিখোঁজ। একই এলাকার ব্রহ্মপুর গ্রামের সাইদুর রহমান প্রাং। তিনি ব্রহ্মপুর বাজার ও হাট কমিটির সাধারণ সম্পাদক, ব্রহ্মপুর হাফেজি মাদ্রাসা ও এতিমখানা পরিচালনা কমিটির সদস্য, ব্রহ্মপুর বাজার মসজিদ কমিটির সাধারণ সম্পাদক এবং নিজ গ্রামের সমাজের ও ব্রহ্মপুর সরকার পাড়া জামে মসজিদের ক্যাশিয়ার হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। সর্বদা থাকেন নিজের বাড়ি ও এলাকায়। তার নামেও দেশের কোনো থানায় নেই মামলা। এমনকি একটি জিডিও নেই অথচ এই সমাজসেবক সাইদুর রহমান প্রাং নাটোরের পুলিশের খাতায় একজন নিখোঁজ ব্যক্তি। একই থানার বুড়ির ভাগ গ্রামের নজরুল ইসলামের ছেলে আলী আল মাসুদ মিলন নাটোর জেলা ছাত্রশিবিরের সাবেক সভাপতি। গত মাসে নিজবাড়িতে ঘটা করে বিয়ে করেছেন। জুনিয়র আইনজীবী হিসেবে প্র্যাকটিস শুরু করেছেন নাটোর জজ কোর্টে। রাজনৈতিক কারণে কয়েকটি মামলা থাকলেও সেগুলোতে জামিনে আছেন। সেনবাগ এলাকার মো. শরিফুল ইসলাম ঢাকায় চাকরি করেন। মাঝেমধ্যেই বাড়িতে আসেন। তার নামে থানায় জিডি বা মামলা নেই। তাকেও পলাতক দেখানো হয়েছে। একই এলাকার মো. আবদুল খালেক নিজ বাড়িতেই থাকেন অথচ তাকেও পুলিশ পলাতক দেখাচ্ছে। এদের পাঁচজনের পরিবারের কেউ সন্তান নিখোঁজের জন্য থানায় জিডি করতেও যাননি। বা কোনো অভিযোগও করেননি। তারা যার যার পরিবারের সঙ্গেই বসবাস করছেন। তারপরও তাদের নাম জেলা পুলিশের নিখোঁজের তালিকায় তারা তা জানেন না। ঘটনার পর থেকে বিভিন্ন গণমাধ্যমের সংবাদকর্মীরা তাদের বাড়ি যাচ্ছেন পরিবারের সদস্যদের সাক্ষাৎকার নিতে। তবে মিলনের বাবা নজরুল ইসলাম ও সাইদুর রহমানসহ তাদের পরিবারের লোকজন মনে করেন তাদের মানহানি করতেই কেউ পুলিশের নিখোঁজের তালিকায় তাদের নাম দিয়ে দিয়েছে। প্রতিকার পেতে তারা নাটোর শহরে এসে প্রেসক্লাবে সাংবাদিকদের সঙ্গে দেখা করে লিখিতভাবে জানিযে গেছেন। হাফেজ আবদুল বারিক সেলিমের বাবা তছির উদ্দিন মোল্লা বলেছেন, তার ছেলে নিজ বাড়ি থেকে নাটোর এনএস সরকারি কলেজে গত ১০ এপ্রিল থেকে ৬ জুন পর্যন্ত অনার্স চতুর্থ বর্ষ পরীক্ষাও দিয়েছে। ওইদিন রাত থেকে পুরো রোজায় স্থানীয় মসজিদে তারাবির নামাজে ইমামতিও করেছেন। এখনো তিনি বাড়িতেই আছেন তারপরেও কেন নিখোঁজ তালিকায় আছেন? নলডাঙ্গা পৌরসভার এক নম্বর প্যানেল মেয়র ও সাত নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর মো. জামাল উদ্দিন বলেছেন, আলী আল মাসুদ মিলনকে নিয়মিত বাড়িতে অবস্থান করতেই দেখি। পুলিশ কীভাবে তার নাম নিখোঁজের তালিকায় দিল এটা তাদের বোধগম্য নয়। এ ব্যাপারে নাটোরের পুলিশ সুপার শ্যামল কুমার মুখার্জি জানান, পুলিশের তৈরি করা নাটোর জেলার প্রথম তালিকায় ৪৪ জনের মধ্যে নাটোরে জিডিভুক্ত ২৮ জন এবং জিডি ছাড়া নিখোঁজ সন্দেহের তালিকায় ছিল ১৬ জন। পুলিশের তত্পরতায় ইতিমধ্যেই নিখোঁজ সন্দেহের তালিকার অনেকেই তাদের বাড়ি ফিরে জনসম্মুখে উপস্থিত হতে শুরু করেছেন। এখন জেলার সংশোধিত চূড়ান্ত তালিকা অনুযায়ী জিডিভুক্ত এবং জিডি বহির্ভূত নিখোঁজ মোট ১৯ জন ইতিমধ্যেই বাড়ি ফিরে এসেছেন। তিনি আরও জানান, নিখোঁজ ব্যক্তিদের মধ্যে চারজনকে নিয়ে সন্দেহ থাকায় তাদের ব্যাপারে অতিরিক্ত তথ্য সংগ্রহ চলছে।

সর্বশেষ খবর