বুধবার, ১০ আগস্ট, ২০১৬ ০০:০০ টা

আস্থা হারাননি বিদেশিরা

কূটনৈতিক প্রতিবেদক

গুলশান হামলার পর নিজেদের নিরাপত্তা নিয়ে ব্যক্তিগত পর্যায়ে বিদেশিদের শঙ্কা থাকলেও বাংলাদেশের ওপর আস্থা হারায়নি বিদেশি রাষ্ট্র ও উন্নয়ন সংস্থাগুলো। বরং সন্ত্রাসবাদ মোকাবিলা ও জনগণের নিরাপত্তা ইস্যুতে অনেক ক্ষেত্রে নিবিড়ভাবে সহযোগিতার ঘোষণা এসেছে। বিদেশিরা বলছে, গুলশান হামলার পর শোলাকিয়া হামলা প্রমাণ করে শুধু ভিনদেশিরা নয়, বাংলাদেশের সাধারণ জনগণও জঙ্গি টার্গেট। তাই ১৬ কোটি জনগণের নিরাপত্তার জন্য সম্ভব সব ধরনের সহযোগিতায় আগ্রহী বেশির ভাগ দেশ। সরকারও ইতিমধ্যে বৈশ্বিক এই সংকট মোকাবিলায় বাংলাদেশকে বিশ্বের অন্যতম অংশীদার হিসেবে ঘোষণা দিয়েছে। নিশ্চিত করার চেষ্টা চলছে বিদেশিদের সর্বোচ্চ নিরাপত্তা। প্রয়োজনে আইন সংশোধনের কথাও ভাবছে সরকার। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা বলছেন, সবচেয়ে বেশি প্রতিক্রিয়া জানা গেছে আসেম সম্মেলন উপলক্ষে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সর্বশেষ মঙ্গোলিয়া সফরে। সেখানে তিনি জঙ্গিবাদ ও উগ্রবাদের বিষয়ে বাংলাদেশ সরকারের জিরো টলারেন্স নীতির কথা বিশ্বনেতাদের জানিয়েছেন। পাশাপাশি  জঙ্গিবাদ ও সন্ত্রাসে মদদদাতা, অর্থদাতা ও প্রশিক্ষণদাতাদের খুঁজে বের করতে বিশ্বনেতাদের জোরালো আহ্বান জানিয়েছেন। সন্ত্রাসবাদ  মোকাবিলায় বাংলাদেশকে বিশ্ব সম্প্রদায়ের গুরুত্বপূর্ণ অংশীদার হিসেবেও ঘোষণা করেছেন। সেখানে জাপানের প্রধানমন্ত্রী শিনজো আবে, রাশিয়ার প্রধানমন্ত্রী দিমিত্রি মেদভেদেভের সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দ্বিপক্ষীয় বৈঠক হয়। জাপানের প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকে অর্থনৈতিক ও বাণিজ্য উন্নয়নের বিষয়ে দ্বিপক্ষীয় আলোচনার কথা জানান তিনি। বৈঠক হয় ইতালির প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গেও। গুলশান হামলায় ইতালি ও বাংলাদেশের মধ্যে সম্পর্কে কোনো ঘাটতি হবে না বলে জানান। এ ছাড়াও সেখানে জার্মানির চ্যান্সেলর অ্যাঙ্গেলা মেরকেল, সুইজারল্যান্ডের  প্রেসিডেন্ট, মঙ্গোলিয়ার প্রেসিডেন্ট, বেলজিয়াম, ইন্দোনেশিয়া ও সাইপ্রাসের রাষ্ট্র ও সরকারপ্রধানরা সরাসরি বাংলাদেশের পাশে থাকার কথা প্রধানমন্ত্রীকে জানান।

অন্যদিকে, জাপানের নিহত সাত নাগরিকের শোকসভায় অংশ নিয়ে দেশটির প্রধানমন্ত্রী সরাসরি বলেছেন, বাংলাদেশকে দেওয়া সবরকম সহায়তা অব্যাহত রাখবে তার দেশ। সন্ত্রাসবাদের কাছে নতিস্বীকার না করার জন্যই বাংলাদেশকে সহায়তা অব্যাহত রাখা হবে। তিনি বলেন, নিহত ব্যক্তিদের আকাঙ্ক্ষার প্রতি শ্রদ্ধা প্রকাশ হিসেবে নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করার পাশাপাশি বাংলাদেশের প্রতি জাপানের সমর্থন অব্যাহত রাখা উচিত বলে তিনি মনে করেন। একই অনুষ্ঠানে জাপানের আন্তর্জাতিক সহযোগিতা সংস্থা জাইকার প্রেসিডেন্ট শিন-ইচ কিতাওকা তার দেশের উন্নয়ন সাহায্য কর্মীদের নিরাপত্তা জোরদার করে সরকারের সহায়তায় কাজ করে যাওয়ার অঙ্গীকার ব্যক্ত করেন। জানা যায়, বিদেশিদের নিরাপত্তায় স্বল্প এবং দীর্ঘমেয়াদি দুই ধরনের নিরাপত্তা পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। দেশের বিভিন্ন প্রান্তে থাকা বিদেশিদের নিরাপত্তা বাড়ানো হয়েছে। কূটনৈতিক জোন গুলশান-বনানী, বারিধারায় কয়েক স্তরের নিরাপত্তাবেষ্টনী তৈরি করা হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্র, জাপান, স্পেন, ফ্রান্স তাদের কূটনীতিক ও নাগরিকদের নিরাপত্তায় নিয়োজিত বেসরকারি কর্মীদের অস্ত্র ব্যবহারের অনুমতি চেয়ে আবেদন করেছে। সম্প্রতি কানাডা, জাপান, ইতালি ও নেদারল্যান্ডস তাদের দূতাবাসের জন্য বুলেটপ্রুফ ও বিস্ফোরক নিরোধক উন্নত প্রযুক্তি সমৃদ্ধ গাড়ি (আর্মার্ড কার) আমদানির অনুমতি চেয়েছে। ঢাকাস্থ স্পেন দূতাবাস তাদের নিরাপত্তার জন্য অস্ত্র বহনকারী তিন স্প্যানিশ পুলিশ মোতায়েনের জন্য বাংলাদেশের অনুমতি চেয়েছে। দেশের বিদ্যমান আইনে না থাকায় এত দিন বেসরকারি কর্মীদের অস্ত্র ব্যবহারের অনুমতি দেওয়া হয়নি। তবে এখন দেশের বিদ্যমান আইন এবং বিদেশিদের নিরাপত্তাসংক্রান্ত আন্তর্জাতিক  সনদ ও নির্দেশনার সঙ্গে ওই সব আবেদনের সঙ্গতি-অসঙ্গতি খতিয়ে দেখা হচ্ছে। পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম জানিয়েছেন, বিদেশি কূটনৈতিক মিশন ও কূটনীতিকদের নিরাপত্তা জোরদারের জন্য বাংলাদেশের প্রচলিত আইন ও বিধিমালায় ছোটখাটো সংশোধনের প্রয়োজন হলে সরকার তা করার বিষয়টি বিবেচনায় নিয়েছে। তিনি বলেন, প্রতিদিন গড়ে প্রায় এক হাজার নাগরিক বিদেশে যান। আর বাংলাদেশে আসেন দেড় থেকে দুই হাজার মানুষ। এ বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে আসা-যাওয়ার ক্ষেত্রে অস্বাভাবিক কোনো প্রবণতা দেখা যাচ্ছে না। গুলশান হামলার ধীরে ধীরে স্বাভাবিক হয়ে আসা আইনশৃঙ্খলার বর্তমান ধারা যদি অব্যাহত থাকে, তবে খুব শিগগিরই পরিস্থিতি সম্পূর্ণ স্বাভাবিক হবে বলে মনে করেন শাহরিয়ার আলম।

সর্বশেষ খবর