শিরোনাম
বুধবার, ১০ আগস্ট, ২০১৬ ০০:০০ টা

মেট্রোরেলে বদলে যাবে ঢাকা

নিজস্ব প্রতিবেদক

মেট্রোরেলে বদলে যাবে ঢাকা

তীব্র যানজটের যন্ত্রণা থেকে মুক্তি দেবে স্বপ্নের মেট্রোরেল। ফলে বদলে যাবে রাজধানী ঢাকার চিত্র। গুরুত্বপূর্ণ কর্মঘণ্টা নষ্ট করে যানজটে আটকে থাকার দিন শেষ হতে যাচ্ছে শিগগিরই। সেই সঙ্গে নগর ভ্রমণ বা যাতায়াতে নাগরিক জীবনে স্বস্তি আনবে এই মেট্রোরেল। যাত্রীরা মাত্র ৩৮ মিনিটে উত্তরা থেক মতিঝিল পৌঁছাবে তড়িৎ গতিতে। এই প্রকল্প বাস্তবায়িত হলে বিভিন্ন ফ্লাইওভারের মতো রাজধানীবাসীর সময়ের দূরত্ব কমে আসবে। ইতিমধ্যে এ প্রকল্পের মূল কাজের উদ্বোধন করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। উত্তরার দিয়াবাড়ীতে মেট্রোরেলের ডিপো নির্মাণের কাজ শুরু হয়েছে। সম্প্রতি সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের পরিদর্শন করেছেন ডিপো। তিনি বলেছেন, ২০১৯ সালের মধ্যে মেট্রোরেলের লাইন-৬-এর কাজ শেষ হবে। সে বছরই যাত্রী চলাচলের জন্য খুলে দেওয়া হবে মেট্রোরেল। এমন প্রস্তুতি অনুযায়ীই কাজ করছে জাপান আন্তর্জাতিক সহযোগিতা সংস্থা (জাইকা)। তবে গুলশানের হলি আর্টিজানে জঙ্গি হামলার ঘটনায় জাইকার কার্যক্রমে কিছুটা স্থবিরতা বিরাজ করছে। শিগগিরই এ স্থবিরতা কেটে যাবে বলে জানা গেছে। সোমবারও এ প্রকল্পের সার্বিক অগ্রগতি পর্যালোচনায় একটি বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়।

সূত্র জানায়, সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সোমবারের বৈঠকে নিরাপত্তা ইস্যুকে প্রাধান্য দেওয়া হয়। মেট্রোরেল প্রকল্পে কর্মরত বিদেশি নাগরিকদের বিশেষ নিরাপত্তা দেওয়া হচ্ছে বলে বৈঠকে জানানো হয়। এ ক্ষেত্রে সরকারের নেওয়া বিভিন্ন নিরাপত্তামূলক পদক্ষেপের ব্যাপারে জাইকাসহ অন্য উন্নয়ন-সহযোগীরা সন্তোষ প্রকাশ করেছে। মেট্রোরেল প্রকল্পের পরিচালক মো. মোফাজ্জল হোসেন বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, বিদেশি নাগরিকদের নিরাপত্তার বিষয়টিকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। বিশেষ করে যারা বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্পে দায়িত্বরত, এমন বিদেশি নাগরিকদের নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে। পাশাপাশি প্রকল্পের কাজ এগিয়ে চলছে দ্রুতগতিতে। নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যেই কাজ শেষ হবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন। সূত্র জানায়, মাটি পরীক্ষাসহ আনুষঙ্গিক কাজ শেষ হয়েছে। শুরু হয়েছে মূল প্রকল্পের কাজ। রাজধানীর যানজট কমাতে ও যাতায়াত প্রক্রিয়া সহজ করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে এই মেট্রোরেল। ঢাকার যেসব ফ্লাইওভার খুলে দেওয়া হয়েছে সেগুলোর ফল ইতিমধ্যে পেতে শুরু করেছেন রাজধানীবাসী। সেই সঙ্গে মেট্রোরেলের কাজ শেষ হলে যাতায়াত প্রক্রিয়া অত্যন্ত সহজ হবে। ফলে মানুষের সময়ের দূরত্ব কমে আসবে। মেট্রোরেলের মোট লাইন হবে ছয়টি। তবে এখন পর্যন্ত পাঁচটি লাইনের রুট চিহ্নিত করা হয়েছে। একটির রুট এখনো ঠিক হয়নি। এর মধ্যে মেট্রোরেল-৬-এর রুট হচ্ছে উত্তরা থেকে মতিঝিল। লাইন-৫-এর রুট হচ্ছে গাবতলী থেকে ভাটারা। আর লাইন-১-এর রুট কমলাপুর থেকে বিমানবন্দর। বাকি তিনটি লাইনের রুট এখনো চূড়ান্ত হয়নি। পর্যায়ক্রমে এগুলোর কাজ এগিয়ে নিতে চায় সরকার। দ্রুত যাতায়াতের জন্য মেট্রোরেলের দৃশ্যমান কাজ শুরু হয়েছে। মেট্রোরেল লাইন-৬-এর কাজ দ্রুত এগিয়ে চলেছে। প্রাক-সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের কাজ শেষ হয়েছে মেট্রোরেল লাইন-৫-এরও। দ্বিতীয় দফায় এর সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের কাজ শুরু হয়েছে। ২০২৫ সালের মধ্যে এটি খুলে দেওয়ার পরিকল্পনা নিয়েছে সরকার। এ মাসেই শুরু হয়েছে মেট্রোরেল লাইন-১-এর প্রাক-সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের কাজ। লাইন-৬-এর কাজ ২০১৯ সালের মধ্যে শেষ হওয়ার কথা রয়েছে। উত্তরা থেকে মতিঝিল পর্যন্ত ১৬টি স্টেশন থাকবে, যেখানে যাত্রীরা ওঠানামা করতে পারবেন। এ প্রকল্পে অর্থায়ন করছে জাইকা। মেট্রোরেলের সবকটি লাইনের কাজে অর্থায়ন করতে আগ্রহী জাপানের এই সংস্থাটি। ইতিমধ্যে একটি লাইনের কাজ জোরেশোরে শুরু করেছে তারা। অন্য দুটির কাজও শুরু হবে শিগগিরই। এ ছাড়া বাকি তিনটির কাজও তারাই শেষ করতে চায় বলে জানা গেছে। ঢাকা ম্যাস র‌্যাপিড ট্রানজিট ডেভেলপমেন্ট প্রজেক্টের (ডিএমআরটিডিপি) আওতায় প্রায় ২২ হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত মেট্রোরেল লাইন-৬ দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম অবকাঠামো নির্মাণ প্রকল্প। রাজধানীর উত্তরা থেকে মতিঝিল পর্যন্ত ২০ দশমিক ৫ কিলোমিটার দীর্ঘ এই লাইনে মোট স্টেশন থাকবে ১৬টি। কাজ শেষ হওয়ার কথা রয়েছে ২০১৯ সালে। প্রতি ঘণ্টায় উভয় পাশে প্রায় ৬০ হাজার যাত্রী যাতায়াত করতে পারবেন এই মেট্রোরেলের মাধ্যমে। জানা গেছে, গাবতলী-ভাটারা রুটে মেট্রোরেলটি আংশিক উড়ালপথে (এলিভেটেড) ও আংশিক মাটির নিচে (আন্ডারগ্রাউন্ড) নির্মাণ করা হবে। এ ক্ষেত্রে গাবতলী থেকে শুরু হয়ে টেকনিক্যাল মোড়, মিরপুর-১, মিরপুর-১০, মিরপুর-১৪ পর্যন্ত উড়ালপথ নির্মাণ করতে হবে। এরপর মাটির নিচে চলে যাবে রেলপথটি। সেখান দিয়ে কচুক্ষেত, সেনানিবাস, বনানী, গুলশান-২ পেরিয়ে নতুন বাজার হয়ে ভাটারা পর্যন্ত আসবে উড়ালপথে। এই রুটেই স্টেশন থাকবে ১০টি। এর জন্য প্রাথমিকভাবে সম্ভাব্য ব্যয় ধরা হয়েছে ২১ হাজার ৬৫৯ কোটি টাকা। সূত্র জানায়, কমলাপুর থেকে বিমানবন্দর পর্যন্ত এমআরটি-১-এর দৈর্ঘ্য হবে ১২ দশমিক ৬ কিলোমিটার। এর মধ্যে খিলক্ষেত থেকে যমুনা ফিউচার পার্ক হয়ে বারিধারা এবং মালিবাগ থেকে কমলাপুর পর্যন্ত প্রায় ৬ কিলোমিটার হবে মাটির নিচে। বাকি অংশ হবে উড়ালপথে। জাইকার অর্থায়নে এর প্রাক-যোগ্যতাও যাচাই শুরু হয়েছে। মেট্রোরেলের এসব প্রকল্প বাস্তবায়িত হলে ঢাকা হবে বিশ্বের অন্যান্য আধুনিক শহরের মতোই। থাকবে না যানজট। ফলে দেশের অর্থনীতিতে এক ধরনের গতির সঞ্চার হবে, যা কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।

সর্বশেষ খবর