বুধবার, ১০ আগস্ট, ২০১৬ ০০:০০ টা

ক্রিকেটে বিশ্ব বিস্ময় বাংলাদেশ

আসিফ ইকবাল

ক্রিকেটে বিশ্ব বিস্ময় বাংলাদেশ

১৯৯২ সালে বিশ্বকাপজয়ী পাকিস্তান দলের সদস্য আকিব জাভেদ বিসিবির আমন্ত্রণে গত সপ্তাহে ঢাকায় আসেন পেস বোলারদের স্বল্প সময়ের জন্য প্রশিক্ষণ দিতে। ঢাকায় পা রেখে পাকিস্তানের সাবেক পেসার সবার আগে খোঁজ নেন ‘কাটার মাস্টার’ মুস্তাফিজুর রহমানের। এরপর কথা বলেন টাইগারদের ওয়ানডে ও টি-২০ অধিনায়ক মাশরাফি বিন মর্তুজার সঙ্গে। মিডিয়ার উপস্থিতিতে মাশরাফিকে বলেন, বর্তমান সময়ে বাংলাদেশ এখন ক্রিকেট বিশ্বের নতুন পরাশক্তি। বিস্ময়কর এক নাম।

বাংলাদেশ এখন টেস্ট খেলুড়ে দেশ। নিয়মিত খেলছে ভারত, পাকিস্তান, অস্ট্রেলিয়া, ইংল্যান্ডের মতো বিশ্বসেরা দলগুলোর বিপক্ষে এবং জিতছেও। অথচ দেড় যুগ আগে এসব দলের বিপক্ষে খেলতে নামা ছিল কল্পনারও বাইরে।

বাংলাদেশ প্রথম আন্তর্জাতিক ক্রিকেট খেলে ১৯৮৬ সালে এশিয়া কাপে। প্রথম জয়ের স্বাদ পেতে অপেক্ষা করতে হয় এক যুগ। ১৯৯৮ সালের কেনিয়ার বিপক্ষে ঐতিহাসিক জয়ের পরও দ্বিতীয় হাসির জন্য অপেক্ষায় থেকেছিল আরও ৬ বছর। ২০০৪ সালে জিম্বাবুয়েকে হারানোর পর থেকে জেতার অভ্যাস হতে থাকে বাংলাদেশের। ২০০৭ সালের বিশ্বকাপ ক্রিকেট বাংলাদেশকে নিয়ে আসে উজ্জ্বল আলোয়। ক্রিকেট মহাযজ্ঞে বাংলাদেশ হারায় ভারত, দক্ষিণ আফ্রিকার মতো দলগুলোকে। বিশ্বকাপের ওই আসরের পর অল্প অল্প করে পাল্টাতে থাকে বাংলাদেশ ক্রিকেটের খোলনলচে। তবে আমূল পাল্টে যায় ২০১৫ সালের বিশ্বকাপ ক্রিকেটের পর। বিশেষ করে মাশরাফির হাতে পুনরায় দায়িত্বভার পড়ার পর। ২০১৪ সালের ডিসেম্বরে তৃতীয়বারের মতো বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের নেতৃত্বে বসেন মাশরাফি। জিম্বাবুয়েকে হোয়াইটওয়াশ করে সেই যে পথ চলা শুরু, এরপর বিশ্বকাপ ক্রিকেটে ইংল্যান্ডের মতো ক্রিকেট পরাশক্তিকে পেছনে ফেলে প্রথমবারের মতো বিশ্বকাপ ক্রিকেটের কোয়ার্টার ফাইনালে খেলে বাংলাদেশ। বিশ্বকাপ থেকে শুরু করে ২০১৫ সালের পুরোটা সময় ছিল বাংলাদেশর ক্রিকেটের স্বপ্নের। মাশরাফির নেতৃত্বে যেখানে হাত দিয়েছে টাইগাররা, সেখানেই সোনা ফলিয়েছে!

বিশ্বকাপ ক্রিকেট খেলে দেশে ফেরার পর ক্রিকেট বিশ্বকে নিজেদের সরব উপস্থিতি জানায় বাংলাদেশ। পাকিস্তানের বিপক্ষে প্রথম জয় ১৯৯৯ সালে। দ্বিতীয়টির জন্য অপেক্ষা করেছে ১৬ বছর। শুধু দ্বিতীয় জয় নয়, পাকিস্তানকে হোয়াইটওয়াশের লজ্জায় ডোবায় বাংলাদেশ। এরপর হারায় ভারত ও দক্ষিণ আফ্রিকাকে। তিন তিনটি ক্রিকেট পরাশক্তিকে হারিয়ে বাংলাদেশ চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে জায়গা নেয় পাকিস্তান ও ওয়েস্ট ইন্ডিজের মতো দলগুলোকে পেছনে ফেলে। ২০১৫ সালের আত্মবিশ্বাস নিয়ে অংশ নেয় টি-২০ বিশ্বকাপে। আইসিসি সহযোগী দেশ নেদারল্যান্ডস ও ওমানকে হারিয়ে ঠাঁই নেয় দ্বিতীয় রাউন্ডে। অস্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে হারলেও লড়াই করে। দুর্ভাগ্য সঙ্গী হওয়ায় মাত্র ১ রানে হেরে যায় ভারতের কাছে। এর আগে এশিয়া কাপের ফাইনালে ওঠে ভারতের কাছে হেরে রানার্স আপে সন্তুষ্ট থাকতে হয়। এতো গেল দলগত পারফরম্যান্স। ব্যক্তিগত পারফরম্যান্সেও কিন্তু পেছনে পড়ার মতো নয়। সাকিব আল হাসান যাযাবর ক্রিকেটার। সারা বিশ্ব ঘুরে বেড়াচ্ছেন দাপটের সঙ্গে। ‘কাটার মাস্টার’ মুস্তাফিজ ক্রিকেট বিশ্বের মূল কেন্দ্রে। আইপিএল বাজিমাত করে কাউন্টি ক্রিকেট সবে কাঁপাতে শুরু করেছিলেন, তার আগেই কাঁধের ইনজুরিতে ছিটকে পড়েন। এছাড়া ধারাবাহিকভাবে পারফরম্যান্স করছেন আল-আমিন, তামিম ইকবালরা।

ক্রিকেটারদের জমাটি পারফরম্যান্সে বাংলাদেশ এখন ক্রিকেট বিশ্বের নতুন বিস্ময়। নতুন পরাশক্তি। তাইতো আকিব জাভেদ নির্দ্বিধায় বলে গেছেন, অস্ট্রেলিয়া, ভারত, দক্ষিণ আফ্রিকার মতো ক্রিকেট শক্তি থাকার পরও বাংলাদেশ এখন সমীহ আদায়কারী দল। অল্প কয়েকদিনের মধ্যেই ক্রিকেট পরাশক্তি হয়ে উঠবে।         

সর্বশেষ খবর