শিরোনাম
বৃহস্পতিবার, ১১ আগস্ট, ২০১৬ ০০:০০ টা

সাখাওয়াতের ফাঁসি সাতজনের আমৃত্যু কারাদণ্ড

নিজস্ব প্রতিবেদক

সাখাওয়াতের ফাঁসি সাতজনের আমৃত্যু কারাদণ্ড

একাত্তরে মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে যশোর-৬ আসনে (কেশবপুর) জামায়াতে ইসলামীর সাবেক সংসদ সদস্য সাখাওয়াত হোসেনকে মৃত্যুদণ্ড এবং একই মামলার অন্য সাত আসামিকে আমৃত্যু কারাদণ্ড দিয়েছে ট্রাইব্যুনাল। গতকাল বিচারপতি আনোয়ারুল হকের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল এ আদেশ দেয়। সরকার ফাঁসিতে ঝুলিয়ে বা গুলি করে সাখাওয়াতের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করতে পারবে। এ মামলার অন্য সাত আসামি হলেন— মো. বিল্লাল হোসেন, মো. ইব্রাহিম হোসেন, শেখ মো. মজিবুর রহমান, মো. আবদুল আজিজ সরদার, আবদুল আজিজ সরদার, কাজী ওয়াহেদুল ইসলাম ও মো. আবদুল খালেক মোড়ল। এদের মধ্যে কারাগারে রয়েছেন সাখাওয়াত হোসেন ও মো. বিল্লাল হোসেন। বাকি আসামিরা পলাতক। মোট নয় আসামির মধ্যে মো. লুত্ফর মোড়ল গ্রেফতার হওয়ার পর অসুস্থ হয়ে কারাগারে মারা যাওয়ায় তাকে আসামি তালিকা থেকে বাদ দেওয়া হয়েছে। রায়ের সময় গতকাল সাখাওয়াত ও বিল্লালকে ট্রাইব্যুনালে হাজির করা হয়। প্রসিকিউশনের পক্ষে শুনানি করেন প্রসিকিউটর জেয়াদ আল মালুম, রেজিয়া সুলতানা চমন, আসামিপক্ষে ছিলেন আইনজীবী আবদুস সাত্তার পালোয়ান, পলাতক আসামিদের পক্ষে ছিলেন রাষ্ট্রনিযুক্ত আইনজীবী আবদুস শুকুর খান। আসামিদের বিরুদ্ধে প্রসিকিউশনের আনা পাঁচটি অভিযোগই প্রমাণিত হয়েছে। রায়ে সন্তোষ প্রকাশ করেছে প্রসিকিউশন। তবে সাখাওয়াতের আইনজীবী আপিল করার কথা জানিয়েছেন। সাখাওয়াত হোসেন একসময় ছিলেন জামায়াত নেতা। ১৯৯১ সালে জামায়াতের মনোনয়নে যশোর-৬ আসন থেকে তিনি সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। মেয়াদপূর্তির আগেই তিনি জামায়াত ছেড়ে বিএনপিতে যোগ দেন। ১৯৯৬ সালে বিএনপি থেকে নির্বাচন করে পরাজিত হন। ২০০১ সালের সপ্তম সংসদ নির্বাচনে বিএনপির সিদ্ধান্তের বাইরে গিয়ে বিদ্রোহী প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করে আবারও পরাজিত হন। এ সময় তাকে বিএনপি থেকে বহিষ্কার করা হয়। তিনি ২০০৬ সালে কর্নেল অলি আহমদের এলডিপিতে যোগ দিলেও পরের বছর দেশে জরুরি অবস্থা জারি হলে যোগ দেন ফেরদৌস আহমদ কোরেশীর পিডিপিতে। ঘরোয়া রাজনীতি উন্মুক্ত করা হলে এরশাদের জাতীয় পার্টিতে যোগ দেন। তিনি জাতীয় পার্টির ভাইস চেয়ারম্যান ছিলেন। প্রথম অভিযোগে সাখাওয়াত, ইব্রাহিম, মো. এ আজিজ সরদার ও আবদুল আজিজ সরদারকে ২০ বছর করে কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে। প্রথম অভিযোগে বলা হয়, একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে যশোরের কেশবপুর উপজেলার বোগা গ্রামে এক নারীকে অপহরণ, আটক, নির্যাতন এবং ধর্ষণ। দ্বিতীয় অভিযোগ, একই উপজেলার চিংড়া গ্রামের চাঁদতুল্য গাজী ও তার ছেলে আতিয়ারকে অপহরণ, আটক, নির্যাতন ও হত্যা। এই অভিযোগে সাখাওয়াতকে মৃত্যুদণ্ড, অন্য সাতজনকে আমৃত্যু কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে। তৃতীয় অভিযোগ, কেশবপুরের চিংড়া গ্রামের মো. নুরুদ্দিন মোড়লকে অপহরণ, আটক, নির্যাতন। এই অভিযোগে সাখাওয়াত, মজিবুর, আবদুল খালেককে ১০ বছর করে কারাদণ্ড ও ইব্রাহিমকে খালাস দেওয়া হয়েছে। চতুর্থ অভিযোগ, কেশবপুরের হিজলডাঙার আ. মালেক সরদারকে অপহরণ, আটক, নির্যাতন ও খুন। এই অভিযোগে সাখাওয়াতকে মৃত্যুদণ্ড, ইব্রাহিম, মো. এ আজিজ, আবদুল আজিজ সরদার ও আবদুল খালেক মোড়লকে আমৃত্যু কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে। পঞ্চম অভিযোগ, কেশবপুরের মহাদেবপুর গ্রামের মিরন শেখকে অপহরণ, আটক, নির্যাতন এবং ওই গ্রামে অগ্নিসংযোগ ও লুণ্ঠন। এই অভিযোগে সাখাওয়াত, ইব্রাহিম, মো. এ আজিজ, আবদুল আজিজ ও আবদুল খালেককে ১৫ বছর করে কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে। গত বছরের ২৩ ডিসেম্বর আসামিদের বিরুদ্ধে হত্যা, গণহত্যা, ধর্ষণ, অগ্নিসংযোগসহ পাঁচটি মানবতাবিরোধী অপরাধে অভিযোগ গঠন করে ট্রাইব্যুনাল। সাখাওয়াতসহ ১৫ জনের বিরুদ্ধে একাত্তরে মানবতাবিরোধী অপরাধে জড়িত থাকার অভিযোগে ২০০৯ সালে যশোরে মামলা করা হয়। প্রসিকিউশনের আবেদনে ২০১৪ সালের ২৬ নভেম্বর সাখাওয়াত হোসেনের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করে ট্রাইব্যুনাল। পরে ২৯ নভেম্বর রাজধানীর উত্তরখান থেকে সাখাওয়াত হোসেনকে গ্রেফতার করে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। ২০১৪ সালের ১ এপ্রিল এ মামলায় তদন্ত শুরু হয়ে গত বছরের ১৩ জুন তা শেষ হয়। বিচার শেষে ১৪ জুলাই মামলাটি রায়ের জন্য অপেক্ষমাণ (সিএভি) রাখা হয়।

সর্বশেষ খবর