শুক্রবার, ১২ আগস্ট, ২০১৬ ০০:০০ টা

জঙ্গিবাদ ইসলামের পথ নয় : প্রধানমন্ত্রী

নিজস্ব প্রতিবেদক

মুষ্টিমেয় কিছু মানুষ যাতে ধর্মের নাম ব্যবহার করে সন্ত্রাস চালিয়ে সমাজের ক্ষতি করতে না পারে সেজন্য আলেমদের সোচ্চার থাকার আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, সারা দেশে মানুষের মধ্যে সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে একটা চেতনা সৃষ্টি হয়েছে। একে আরও শানিত করতে হবে। মানুষকে আরও ভালোভাবে বোঝাতে হবে যে, জঙ্গিবাদের পথ ইসলামের নয়। কেউ যেন সন্ত্রাসের পথে না যায়। প্রধানমন্ত্রী বলেন, ইসলামের সঠিক শিক্ষাটা যেন সবাই পায় সে ব্যবস্থা আলেম-ওলামাদের নিতে হবে, বিশেষ ভূমিকা রাখতে হবে।

গতকাল রাজধানীর খামারবাড়িতে কৃষিবিদ ইনস্টিটিউট মিলনায়তনে বাংলাদেশ জমিয়তুল উলামা আয়োজিত সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদ প্রতিরোধে ওলামা সম্মেলনে প্রধান অতিথির ভাষণে তিনি এ আহ্বান জানান। সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদ উচ্ছেদে আলেম-ওলামাদের আরও সোচ্চার হওয়ার আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, যখনই কেউ ইসলামিক টেররিস্ট বলে, আমি সঙ্গে সঙ্গে তার প্রতিবাদ করি। আমাদের পবিত্র ধর্মকে তারা মানুষের কাছে হেয় করে দিচ্ছে। তারা কোন ইসলামের শিক্ষা নিচ্ছে? যে ইসলাম হলো শান্তি, সৌহার্দ্য, সহনশীলতার। সেই ধর্মের নাম ব্যবহার করে সন্ত্রাস চালাচ্ছে, মানুষ হত্যা করছে তারা। ইসলামের ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট স্মরণ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ইসলাম শান্তির ধর্ম, মানবতার ধর্ম, শান্তির বাণী ইসলামই প্রথম ছড়িয়েছে, একে আমরা মানুষের কাছে নিয়ে যাব। কারণ ইসলামের যে শৌর্য-বীর্য ছিল, পুরনো ইতিহাস খুললে দেখা যাবে- মানুষের জীবনমান উন্নত করার সব শিক্ষা কিন্তু আমরা সেখান থেকে পেয়েছি। তিনি বলেন, কয়েকটা লোকের জন্য আমাদের এই পবিত্র শান্তির ধর্ম হেয় প্রতিপন্ন হবে তা কাম্য নয়। অবশ্যই এটা কোরআনের বাণী, আমাদের নবী করিম (সা.)-এর বাণী এবং হাদিসে যা আছে তার ভিত্তিতেই আমরা ইসলামের মূল বাণী মানুষের কাছে পৌঁছে দিতে চাই; যাতে করে আর কেউ বিভ্রান্ত না হয়। আমাদের ধর্মকে আর যেন কেউ হেয়প্রতিপন্ন করতে না পারে, বদনাম করতে না পারে। তিনি বলেন, এগুলো যারা করছে তারা তো আমাদের ধর্মকে একেবারে হেয় করে দিচ্ছে। এটা সব থেকে কষ্টের, দুঃখের। তারা কি বুঝে করছে আমি জানি না। তারা কোন বেহেস্ত পাবে জানি না। তবে মানুষ খুন করা যে কত বড় অপরাধ সেটা জানি। কওমি মাদ্রাসাগুলোকে এক কারিকুলাম ও সনদের আওতায় আনার তাগিদ দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, সরকার আরবি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করায় কওমি মাদ্রাসার শিক্ষার্থীরা সেখানে পড়াশোনা করে উচ্চশিক্ষা এবং দেশে-বিদেশে চাকরির সুযোগ পাবে।  আরবি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা এবং এ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সনদ দিতে হলে একটা মিনিমাম কারিকুলাম লাগবে। এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট সবার সহযোগিতা চেয়ে শেখ হাসিনা বলেন, এই সময় এটা খুব দরকার। যাতে কারিকুলামটা প্রণয়ন করে দ্রুত আমরা সনদ দেওয়ার কাজ শুরু করতে পারি। অনুষ্ঠানে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান, ধর্মমন্ত্রী মতিউর রহমান ও শোলাকিয়ার ইমাম মাওলানা ফরীদ উদ্দীন মাসঊদও বক্তব্য দেন। অনুষ্ঠানে ইসলামের দৃষ্টিতে সন্ত্রাস-জঙ্গিবাদ ও আমাদের করণীয় বিষয়ে দেশের এক লাখ আলেম-উলামা স্বাক্ষরিত ফতোয়ার প্রেক্ষাপট তুলে ধরা হয়। আল্লামা ফরীদ উদ্দীন মাসঊদ অনুষ্ঠানে এক লাখ আলেমের স্বাক্ষর সংবলিত ৩০ খণ্ড ফতোয়ার একটি খণ্ড প্রতীকী হিসেবে প্রধানমন্ত্রীর হাতে তুলে দেন। শেখ হাসিনা স্বাক্ষর সংগ্রহকে মহৎ একটি উদ্যোগ উল্লেখ করে বলেন, নিশ্চয়ই এই এক লাখ আলেম কখনো মিথ্যা কথা বলবেন না। তারা সত্য কথা বলেন। কোরআনের কথা বলেন।  মাওলানা ফরীদ উদ্দীন মাসঊদ বলেন, ইসলাম উদারতা ও সহনশীলতার ধর্ম। কিছুসংখ্যক মতলববাজ ইসলামকে ক্ষতিগ্রস্ত করছে। ইসলামে অনর্থক গাছের পাতাও ছেঁড়া নিষেধ। তিনি বলেন, যারা মনে করে, মানুষ হত্যা করে বেহেস্তে চলে যাবে, তারা আসলে জাহান্নামে যাবে। যারা মানুষ হত্যা করে, আত্মহত্যা করে, তারা উভয়ই জাহান্নামি।

সর্বশেষ খবর