শুক্রবার, ১২ আগস্ট, ২০১৬ ০০:০০ টা
ষোড়শ সংশোধনী অবৈধ

দুই বিচারপতির রায় প্রকাশ

নিজস্ব প্রতিবেদক

সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনীকে অবৈধ ঘোষণা করে হাইকোর্টের যে বেঞ্চ রায় দিয়েছিল, সেই বেঞ্চের তিন সদস্যের মধ্যে দুজনের রায়ের লিখিত অনুলিপি প্রকাশিত হয়েছে। গতকাল সুপ্রিমকোর্টের ওয়েবসাইটে এ রায় প্রকাশিত হয়। বেঞ্চের অন্য সদস্যের দেওয়া লিখিত রায় গতকাল পর্যন্ত প্রকাশিত হয়নি।

৫ মে হাইকোর্টের একটি বৃহত্তর বেঞ্চ রিটের পরিপ্রেক্ষিতে জারি করা রুলের শুনানি শেষে সংখ্যাগরিষ্ঠ মতে ষোড়শ সংশোধনী বাতিল ও অবৈধ ঘোষণা করে। বেঞ্চের দুই জ্যেষ্ঠ সদস্য বিচারপতি মইনুল ইসলাম চৌধুরী ও বিচারপতি কাজী রেজা-উল হক ষোড়শ সংশোধনীকে অবৈধ ঘোষণা করলেও বেঞ্চের কনিষ্ঠ সদস্য বিচারপতি মো. আশরাফুল কামাল রুল খারিজ করেন। গতকাল বিচারপতি মইনুল ইসলাম চৌধুরী ও বিচারপতি কাজী রেজা-উল হকের রায় প্রকাশিত হয়েছে। তবে বেঞ্চের আরেক সদস্য বিচারপতি মো. আশরাফুল কামালের দেওয়া রায় প্রকাশিত হয়নি। তিনি বিচারপতি মইনুল ইসলাম চৌধুরী ও বিচারপতি কাজী রেজা-উল হকের সঙ্গে দ্বিমত পোষণ করেছিলেন। ১৬৫ পৃষ্ঠার এ রায়টি লিখেছেন বেঞ্চের সর্বজ্যেষ্ঠ সদস্য বিচারপতি মইনুল ইসলাম চৌধুরী, তার সঙ্গে একমত পোষণ করেন বিচারপতি কাজী রেজা-উল হক। ২০১৪ সালের ১৭ সেপ্টেম্বর উচ্চ আদালতের বিচারপতিদের অপসারণের ক্ষমতা সংসদের কাছে ফিরিয়ে নিতে সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনী আনা হয়। বিলটি পাসের পর ২২ সেপ্টেম্বর তা গেজেট আকারে প্রকাশ করা হয়। সংবিধানের এ সংশোধনীর বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে ওই বছরের ৫ নভেম্বর সুপ্রিমকোর্টের নয়জন আইনজীবী হাইকোর্টে একটি রিট আবেদন দায়ের করেন। প্রাথমিক শুনানির পর ষোড়শ সংশোধনী কেন অবৈধ ও সংবিধান পরিপন্থী ঘোষণা করা হবে না, তা জানতে চেয়ে রুল জারি করে হাইকোর্ট। গত বছরের ২১ মে রুলের শুনানি শুরু হয়। গত ১০ মার্চ রুলের শুনানি শেষে ৫ মে রায়ের জন্য দিন ধার্য করা হয়। রিট আবেদনকারীদের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী মনজিল মোরসেদ। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম ও ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল মো. মোতাহার হোসেন সাজু। এ ছাড়া অ্যামিকাস কিউরি হিসেবে আদালতে বক্তব্য উপস্থাপন করেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী ড. কামাল হোসেন, ব্যারিস্টার এম আমীর-উল ইসলাম, ব্যারিস্টার রোকনউদ্দিন মাহমুদ ও ব্যারিস্টার আজমালুল হোসেন কিউসি। ১৯৭২ সালে মূল সংবিধানে উচ্চ আদালতের বিচারপতিদের অপসারণের ক্ষমতা জাতীয় সংসদের ওপর ন্যস্ত থাকলেও ’৭৫ সালের ২৪ জানুয়ারি সংবিধানের চতুর্থ সংশোধনীর মাধ্যমে সেই ক্ষমতা রাষ্ট্রপতির হাতে ন্যস্ত হয়। পরে সংবিধানের পঞ্চম সংশোধনীর মাধ্যমে জিয়াউর রহমানের শাসনামলে বিচারকদের অপসারণের ক্ষমতা সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিলের কাছে ন্যস্ত হয়। ২০১৪ সালের ১৭ সেপ্টেম্বর সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনীর মাধ্যমে উচ্চ আদালতের বিচারক অপসারণের ক্ষমতা সংসদের কাছে আবার ফিরিয়ে আনা হয়। ষোড়শ সংশোধনীর ৯৬(২) অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে : ‘প্রমাণিত অসদাচরণ বা অসামর্থ্যের কারণে সংসদের মোট সদস্যসংখ্যার অন্যূন দুই-তৃতীয়াংশ গরিষ্ঠতার দ্বারা সমর্থিত সংসদের প্রস্তাবক্রমে প্রদত্ত রাষ্ট্রপতির আদেশ ছাড়া কোনো বিচারককে অপসারিত করা যাবে না।’ ৯৬(৩) অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে : ‘দফা (২) এর অধীন প্রস্তাব সম্পর্কিত পদ্ধতি এবং কোনো বিচারকের অসদাচরণ বা অসামর্থ্য সম্পর্কে তদন্ত ও প্রমাণের পদ্ধতি সংসদ আইনের দ্বারা নিয়ন্ত্রণ করতে পারবে।’ সেই তদন্ত ও প্রমাণের পদ্ধতি এবং অপসারণের প্রক্রিয়া ঠিক করে তৈরি একটি আইনের খসড়ায় গত ২৫ এপ্রিল নীতিগত অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রিসভা।

সর্বশেষ খবর