শনিবার, ১৩ আগস্ট, ২০১৬ ০০:০০ টা

আত্মঘাতী স্কোয়াড নিয়ে উৎকণ্ঠা আস্তানা ঢাকায়

নিজস্ব প্রতিবেদক

রাজধানীতে আস্তানা গেড়েছে জঙ্গিদের আত্মঘাতী দল। ঘুরে বেড়াচ্ছে শহরময়। পরিকল্পনা আঁটছে বড় ধরনের হামলার। এমন তথ্যের পর আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী তাদের তত্পরতা বাড়িয়েছে। আত্মঘাতী এই জঙ্গিদের সন্ধানে পুলিশ ও গোয়েন্দারা এখন মাঠে। রাত-দিন অভিযান চালাচ্ছে রাজধানীর পাড়া-মহল্লা, আবাসিক ভবনের মেস বাড়িতে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, কল্যাণপুরে পুলিশি অভিযানে নয় জঙ্গি নিহত হওয়ার পর উত্তরবঙ্গ থেকে আত্মঘাতী জঙ্গিদের ঢাকায় আনা হয়েছে। ইতিমধ্যে আত্মঘাতী দলের পাঁচ সদস্যকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এখন উৎকণ্ঠা আত্মঘাতীদের নিয়ে। পুলিশের এক কর্মকর্তা জানান, জঙ্গিদের নানা ঘোষণায় ‘আত্মঘাতী বোমাবাজ দল’ গড়ে তোলার যে দাবি করা হয়েছে, তার নজির পাচ্ছে গোয়েন্দারা। গুলশান ও শোলাকিয়ায় জীবন দিয়ে হামলা পরিচালনায় উদাহরণ রেখেছে জঙ্গিরা। জঙ্গিদের একেকজন একেকটি মানববোমায় পরিণত হয়েছিল। এ ধরনের মানববোমা-খ্যাত আত্মঘাতী জঙ্গি মোকাবিলায় পুলিশকে সর্বোচ্চ সক্রিয় করা হচ্ছে। ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি) কমিশনার মো. আছাদুজ্জামান মিয়া বলেন, জঙ্গিবাদ দেশি ও আন্তর্জাতিক সমস্যা। জঙ্গিবাদ মোকাবিলায় সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে। এদের নির্মূলে যা করা দরকার পুলিশ তাই করবে। গুলশান ট্র্যাজেডি এবং শোলাকিয়ার ঘটনা জাতি প্রত্যক্ষ করেছে। এটি বাংলাদেশের জন্য প্রথম। জীবনবাজি রেখে পুলিশ সদস্যরা দায়িত্ব পালন করেছে। ডিএমপি প্রধান বলেন, নগরবাসীর নিরাপত্তা নিশ্চিতে চেকপোস্টের সংখ্যা, তল্লাশি, ব্লক রেইড, পুলিশ পেট্রোল, মোবাইল পেট্রোল, মোটরবাইক পেট্রোলের সংখ্যা বাড়ানো হয়েছে। ডিএমপির কাউন্টার টেররিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম ইউনিট (সিটি) প্রধান অতিরিক্ত কমিশনার মো. মনিরুল ইসলাম বলেন, গুলশান ও কল্যাণপুরে কয়েকজন জঙ্গি নিহত হওয়ায় নিও-জেএমবির কর্মী সংকট দেখা দেয়। তারা উত্তরবঙ্গের বিভিন্ন জেলা থেকে বেশ কয়েকজন নিও-জেএমবির সদস্যকে ঢাকায় নিয়ে আসে। তাদের হামলার বিষয়ে ট্রেনিং রয়েছে। বৃহস্পতিবার রাতে দারুস সালামের টেকনিক্যাল মোড় এলাকায় অভিযান চালিয়ে নিও-জেএমবির পাঁচ সদস্যকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এরা হলেন— আতিকুর রহমান ওরফে আইটি আতিক, মো. আবদুল করিম বুলবুল ওরফে ডা. বুলবুল, মো. আবুল কালাম আজাদ, মো. মতিউর রহমান ও শাহিনুর রহমান হিমেল ওরফে তারেক। এরা প্রত্যেকেই আত্মঘাতী দলের সদস্য। গতকাল দুপুরে ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানানো হয়। পুলিশি জেরায় তারা বলেছে, তারা নিও জেএমবির সদস্য। উত্তরবঙ্গ থেকে ২৫টি ডেটোনেটর ও ৮৭৫ গ্রাম জেল নিয়ে ঢাকার কোনো একটি বাসায় ওঠার জন্য এসেছিল। পুলিশের উপস্থিতি টের পেয়ে ঘটনাস্থল থেকে নান্নু, সজীব, ইমরান ও জিন্সিসহ (সাংগঠনিক নাম) কয়েকজন পালিয়ে যায়। পুলিশ জানায়, গ্রেফতারকৃতরা সারা দেশে নাশকতামূলক ও সন্ত্রাসী কার্যকলাপ সংঘটনের মাধ্যমে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ঘটানোর জন্য ধ্বংসাত্মক কার্যকলাপ পরিচালনার পরিকল্পনা করছিল। আতিকুর নব্য জেএমবির উচ্চপদে রয়েছেন। আটক পাঁচজনের নাম নিখোঁজদের তালিকায় ছিল কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, কয়েক মাস আগে তারা গৃহত্যাগ করেছে বলে জানিয়েছে। এদের ‘নিও জেএমবি’ কেন বলা হচ্ছে—এমন প্রশ্নে মনিরুল বলেন, এক বছর ধরে আমাদের ব্রিফিং যদি ফলো করেন, তাহলে দেখবেন আমরা বলে আসছি জেএমবি দুই ভাগে বিভক্ত হয়েছে। তারা মওলানা সাইদুর রহমানের জেএমবিতে অনুপ্রবেশ করলেও এখান থেকে একটি গ্রুপ বের হয়ে যায়। ওই গ্রুপটি নিউ জেএমবি।

সর্বশেষ খবর