সোমবার, ১৫ আগস্ট, ২০১৬ ০০:০০ টা
কুকুর লেলিয়ে হিমাদ্রী হত্যা

পাঁচজনের মৃত্যুদণ্ড

নিজস্ব প্রতিবেদক, চট্টগ্রাম

পাঁচজনের মৃত্যুদণ্ড

কুকুর লেলিয়ে হিমাদ্রী মজুমদার হিমুকে হত্যার দায়ে পাঁচজনকে   ফাঁসির আদেশ দিয়েছে আদালত। দণ্ডপ্রাপ্তরা হলেন শাহ সেলিম টিপু, জুনায়েদ আহমেদ রিয়াদ, শাহাদাত হোসাইন সাজু, মাহাবুব আলী খান ড্যানি ও জাহিদুল ইসলাম শাওন। গতকাল চট্টগ্রামের চতুর্থ অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ নুরুল ইসলাম এ আদেশ দেন। দণ্ডপ্রাপ্তদের মধ্যে টিপু, সাজু ও শাওন কারাগারে রয়েছেন। রিয়াদ ও শাওন পলাতক।

দেশব্যাপী তোলপাড় করা এ মামলার সব আসামির বিরুদ্ধে ফাঁসির আদেশ দেওয়ায় সন্তুষ্টি প্রকাশ করেছেন নিহত হিমুর বাবা প্রবীর কান্তি মজুমদার। তিনি বলেন, ‘আদালতের এ রায়ে আমরা সন্তুষ্ট। এখন আমাদের প্রত্যাশা, দ্রুততম সময়ের মধ্যে সব প্রক্রিয়া শেষ করে রায় কার্যকর করা হবে। একই সঙ্গে পলাতক আসামিদের গ্রেফতারের দাবি জানাচ্ছি।’ রায় শুনে আদালত প্রাঙ্গণে আসামিদের নির্দোষ দাবি করেছেন শাহ সেলিম টিপুর আইনজীবীরা। তারা এ রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করবেন বলে জানান।

রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী অনুপম চক্রবর্তী বলেন, ‘আসামিদের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ সন্দেহাতীত প্রমাণিত হওয়ায় আদালত পাঁচজনকে ফাঁসির আদেশ দিয়েছে।’ আদালত সূত্রে জানা যায়, হিমু হত্যার ঘটনায় তার মামা প্রকাশ দাশ অসিত বাদী হয়ে পাঁচজনকে আসামি করে হত্যা মামলা করেন। মামলায়  ব্যবসায়ী শাহ সেলিম টিপু, তার ছেলে জুনায়েদ আহমেদ রিয়াদ, শাহাদাৎ হোসাইন সাজু, মাহাবুব আলী খান ড্যানি ও জাহিদুল ইসলাম শাওনকে আসামি করা হয়। এজাহারভুক্ত পাঁচজনকে আসামি করে ২০১২ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর আদালতে চার্জশিট দাখিল করে পাঁচলাইশ থানা পুলিশ। একই বছরের ১৮ অক্টোবর পলাতক আসামিদের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করে আদালত। ২০১৪ সালের ৩ ফেব্রুয়ারি আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করা হয়। ১৮ ফেব্রুয়ারি থেকে শুরু হয় সাক্ষ্য গ্রহণ। ছয়জন সাক্ষী সাক্ষ্য দেওয়ার পর ২০১৪ সালের ২১ জুলাই মামলায় ছয় মাসের স্থগিতাদেশ দেন বিচারপতি নাঈমা হায়দার ও বিচারপতি জাফর আহমদের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ। ৪ আগস্ট স্থগিতাদেশের অনুলিপি বিচারিক আদালতে পৌঁছলে থেমে যায় মামলার বিচারকাজ। ৭ আগস্ট উচ্চ আদালতের একই বেঞ্চ ওই স্থগিতাদেশ প্রত্যাহার করলে ফের শুরু হয় মামলার কার্যক্রম। নির্ধারিত সময়ে বিচার শেষ না হওয়ায় ২০১৫ সালের ১৯ মার্চ মামলাটি চট্টগ্রামের চতুর্থ মহানগর দায়রা জজ আদালতে স্থানান্তর হয়। ২০১৫ সালের ১০ সেপ্টেম্বর হিমু হত্যা মামলায় যুক্তি উপস্থাপন শুরু করে রাষ্ট্রপক্ষ। ২০১৫ সালের ১৯ অক্টোবর রাষ্ট্রপক্ষের যুক্তি উপস্থাপন শেষ হয়। চলতি বছর ৩০ জুন পর্যন্ত মোট ৩২ কার্যদিবস যুক্তি উপস্থাপন করেন মামলার পাঁচ আসামির আইনজীবী। এরপর রায়ের তারিখ নির্ধারণ করে আদালত।

জানা যায়, ২০১২ সালের ২৭ এপ্রিল হিমু বন্ধুদের সঙ্গে রাউজানে মেজবান খাওয়ার জন্য পাঁচলাইশ থানাধীন মাস্টারমাইন্ডের ন্যাশনাল কারিকুলাম স্কুলের সামনে যান। এর আগে মাদক ব্যবসার প্রতিবাদ করায় তার ওপর ক্ষুব্ধ ছিল মাদক ব্যবসায়ী সিন্ডিকেট। ওই দিন একা পেয়ে মাদক ব্যবসায়ীরা তাকে অপহরণ করে রিয়াদের বাসায় নিয়ে যায়। রিয়াদের বাসায় নিয়ে হিমুকে মারধরের একপর্যায়ে চারতলার ছাদে নিয়ে যায় তারা। পরে ছাদে ডোবারম্যান জাতের চার-পাঁচটি কুকুর হিমুকে কামড়ানোর জন্য লেলিয়ে দেয় আসামিরা। একপর্যায়ে ছাদের ওপর থেকে তাকে ধাক্কা দিয়ে নিচে ফেলে দিলে আশঙ্কাজনক অবস্থায় প্রথমে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, পরে সার্জিস্কোপ হাসপাতালে (ইউনিট-২) নেওয়া হয়। অবস্থার আরও অবনতি হলে তাকে ঢাকার স্কয়ার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। ২৬ দিন পর সেখানেই হিমু মারা যান।

সর্বশেষ খবর