যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্ক সিটিতে মসজিদ থেকে ফেরার পথে এক ইমামসহ দুই বাংলাদেশিকে গুলি করে হত্যা করেছে এক দুর্বৃত্ত। স্থানীয় সময় শনিবার দুপুরে জোহরের নামাজের পর কুইন্সের ওজনপার্কে ‘আল ফোরকান জামে মসজিদ’-এর কাছে এ ঘটনা ঘটেছে। খবর : বিবিসি ও এনআরবি নিউজ
নিহতদের মধ্যে মাওলানা আলাউদ্দিন আকুঞ্জি (৫৫) ছিলেন ওই মসজিদের ইমাম। নিহত অপর ব্যক্তি থেরাউদ্দিন (৬৪) তার প্রতিবেশী। ধর্মীয় বিদ্বেষ থেকে এ হত্যাকাণ্ড ঘটানো হয়েছে অভিযোগ করে ঘটনাস্থলে বিক্ষোভ সমাবেশ করেছেন প্রবাসী কয়েকশ বাংলাদেশি। তারা হত্যাকারীকে গ্রেফতার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করেছেন।
আলাউদ্দিনের ছোট ভাই মাশুকউদ্দিন জানিয়েছেন, মসজিদ থেকে হাঁটা পথে ৭/৮ মিনিট দূরত্বে এক বাড়িতে তার ভাই থাকতেন। পাশেই থেরাউদ্দিনের বাসা। দুপুরে জোহরের নামাজের পর মসজিদ থেকে বেরিয়ে বাড়ি ফেরার পথে তারা খুন হন। পুলিশ বলছে, এক ব্যক্তি পেছন থেকে তাদের মাথায় গুলি করে। ঘটনার পর অস্ত্র হাতে একজনকে দ্রুত ওই এলাকা ত্যাগ করতে দেখেছেন প্রত্যক্ষদর্শীরা। গুলির খবর পেয়ে টহল পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে আলাউদ্দিনকে জ্যামাইকা হাসপাতালে এবং থেরাউদ্দিনকে এলমহার্স্ট হাসপাতালে নিয়ে যায়। আলাউদ্দিন হাসপাতালে নেওয়ার পরপরই এবং থেরাউদ্দিন চার ঘণ্টা পর হাসপাতালে মারা যান। সিসি ক্যামেরার ভিডিও এবং প্রত্যক্ষদর্শীদের বরাত দিয়ে কম্যুনিটি লিডার মিসবাহ আবদিন বলেন, ওজনপার্কের লিবার্টি এভিনিউ ও ৭৯ স্ট্রিটে নীল রংয়ের শার্ট ও হাফ প্যান্ট পরিহিত দীর্ঘকায় এক ২৭-২৮ বছর বয়সী যুবক খুব কাছে থেকে বন্দুক তাক করে পরপর পাঁচ রাউন্ড গুলি করে। তারপর সে দৌড়ে চলে যায়। প্রসঙ্গত, হবিগঞ্জের চুনারুঘাটের আলাউদ্দিন আকুঞ্জি পাঁচ বছর আগে ইমিগ্র্যান্ট হয়ে যুক্তরাষ্ট্রে এসেছিলেন। তিন সন্তানের মধ্যে বড় ছেলের বিয়ে উপলক্ষে আগামী সপ্তাহে তার দেশে যাওয়ার কথা ছিল। এছাড়া থেরাউদ্দিনের বাড়ি সিলেটের গোলাপগঞ্জ উপজেলার লক্ষ্মীপাশা ইউনিয়নে। তবে সেখানে পরিবারের আর কেউ থাকেন না। তার এক আত্মীয় জানিয়েছেন, সাড়ে চার বছর আগে নিউইয়র্কে যান থেরাউদ্দিন। তার ছেলেমেয়ে, ভাইবোনসহ পরিবারের সবাই সেখানেই থাকেন। নিউইয়র্ক পুলিশের ডেপুটি ইন্সপেক্টর হেনরি সটনার ঘটনাস্থলে সংক্ষিপ্ত সংবাদ সম্মেলনে বলেন, ‘প্রকাশ্য দিবালোকে এমন পরিস্থিতি সত্যি উদ্বেগের ব্যাপার। এটি হেইট ক্রাইম কি না- তদন্ত শেষ না হওয়া পর্যন্ত তা নিশ্চিত করে বলা যাচ্ছে না।’হবিগঞ্জ প্রতিনিধি জানিয়েছেন, নিহত মাওলানা শাহ আলাউদ্দিন আখঞ্জি হবিগঞ্জের চুনারুঘাট উপজেলার আমুরোড গোছাপাড়া গ্রামের সম্ভ্রান্ত পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতা আমুরোড জামে মসজিদের সাবেক খতিব মাওলানা শাহ সামছুদ্দিন আখঞ্জি। তিনি হবিগঞ্জের বিশিষ্ট সুন্নি আলেম হিসেবে পরিচিত ছিলেন। তিনি প্রথমে শায়েস্তাগঞ্জ রেলওয়ে জামে মসজিদ ও পরে হবিগঞ্জ চৌধুরী বাজার জামে মসজিদের ইমাম ও খতিবের দায়িত্ব পালন করেন। হবিগঞ্জের সাবেক ছাত্রনেতা ও নিউইয়র্ক প্রবাসী আবুল কালাম জানান, আলাউদ্দিন আখঞ্জি একজন জঙ্গিবাদবিরোধী সুন্নি আলেম ছিলেন। জঙ্গিবাদবিরোধী মনোভাবের জন্যই তাকে হত্যা করা হতে পারে।
সিলেট থেকে নিজস্ব প্রতিবেদক জানিয়েছেন, নিউইয়র্কে সন্ত্রাসীর গুলিতে সিলেটের গোলাপগঞ্জ উপজেলার জাঙ্গলহাটা গ্রামের থেরা উদ্দিন ওরফে তেরা মিয়া এলাকায় দানশীল হিসেবে পরিচিত ছিলেন। তার মৃত্যু মানতে পারছেন না স্বজনরা। তার জামাতা ইমরান হোসেন ও চাচাতো ভাই বারিক আলী জানান, এমন মৃত্যু আমরা মেনে নিতে পারছি না। ঘাতকদের শাস্তি চাই।