মঙ্গলবার, ১৬ আগস্ট, ২০১৬ ০০:০০ টা

এসপি বাবুলের পদত্যাগ!

কোনো কিছুই পরিষ্কার করছে না পুলিশ

নিজস্ব প্রতিবেদক

এসপি বাবুলের পদত্যাগ!

আলোচিত এসপি বাবুল আক্তার পদত্যাগ করেছেন। তার হাতের লেখা পদত্যাগপত্র এখন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে। শিগগিরই এ বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হবে। তবে বাবুল আক্তারের পদত্যাগের বিষয়টি এখনো পুলিশের পক্ষ থেকে এড়িয়ে যাওয়া হচ্ছে। তারা বাবুল আক্তারের পদত্যাগ বা পদত্যাগের কারণ সম্পর্কে পরিষ্কার করে কিছু জানাচ্ছে না। ফলে বাবুল আক্তারের পদত্যাগ বা চাকরিতে ফিরবেন কিনা-এমন নানা প্রশ্ন এখন ঘুরপাক খাচ্ছে। এদিকে বাবুল আক্তারের জীবন নিয়ে শঙ্কিত তার শ্বশুর মোশাররফ হোসেন। তার আশঙ্কা, চাকরি থেকে সরে গেলে সন্ত্রাসীরা তাকে হত্যা করবে। তাকে জেলখানায় পাঠানো হলেও নিরাপদ থাকতে পারবে না। সেখানেও তাকে খুন করতে পারে বলে মোশাররফ হোসেনের সন্দেহ।

বাবুল আক্তারের পদত্যাগ সম্পর্কে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান বলেছেন, তিনি এসপি বাবুল আক্তারের পদত্যাগপত্র পেয়েছেন। রবিবার রাতে একটি বেসরকারি টিভি চ্যানেলকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আরও বলেন, বাবুল আক্তার নিজেই পদত্যাগপত্র দিয়েছেন। এ ব্যাপারে পরবর্তী পদক্ষেপ কী নেওয়া যায়, সে ব্যাপারে শিগগিরই সিদ্ধান্ত  হবে। গত ২১ জুলাই পুলিশপ্রধান এ কে এম শহীদুল হক সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে বলেছিলেন, সে (বাবুল) চাকরিতে বহাল আছে, কিন্তু অফিস করছে না। অফিসে আসে না, আমাদের সঙ্গে যোগাযোগও করে না। সে কেন আসে না, সে কথা আমরা বলতে পারব না। স্ত্রী খুন হওয়ার পর আলোচনায় আসেন এসপি বাবুল। কখনো বলা হয়েছে স্ত্রী হত্যার জন্য তিনি দায়ী। কখনো বলা হচ্ছে তার চাকরি নেই। আবার বলা হচ্ছে তিনি পদত্যাগ করেছেন কিন্তু তার পদত্যাগপত্র এখনো গ্রহণ করা হয়নি। এখন তাকে হত্যার আশঙ্কার খবর বেরিয়েছে। সব মিলিয়ে এসপি বাবুলের ঘটনাটি দিন দিন রহস্যজনক হয়ে ওঠে। এমনই এক পরিস্থিতিতে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বাবুলের পদত্যাগপত্র পেয়েছেন বলে স্বীকার করেছেন। ফলে বাবুল আক্তারের চাকরিতে থাকা বা না থাকা নিয়ে যে জটিলতার সৃষ্টি হয়েছিল-তা কিছুটা হলেও নিরসন হয়েছে বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা। পদত্যাগপত্র ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর বক্তব্যের বিষয়ে এসপি বাবুল আক্তারের কোনো বক্তব্য পাওয়া যায়নি। এ ব্যাপারে তার শ্বশুরের প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে তিনি বলেন, বাবুল আক্তারের পদত্যাগ নিয়ে এতদিন বিভিন্ন গণমাধ্যমে খবর দেখেছি। যে সই করেছে বা যে সই নিয়েছে বা দিয়েছে, যাই করেছে তারাই ভালো জানেন। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর বক্তব্যের বিষয়ে জানতে চাইলে মোশাররফ হোসেন বলেন, যদি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এমন কিছু বলে থাকেন তাহলে ভালোই হয়েছে। এতদিন এ বিষয়ে পুলিশ প্রশাসন কিংবা সরকারের পক্ষ থেকে কোনো কিছুই বলা হয়নি। এখন বলছেন। যা ভাগ্যে আছে তাই হবে। তিনি বলেন, সাংবাদিকরা আমাদের কাছে এ বিষয়ে জানতে চান, তারা বিভিন্নভাবে জানার চেষ্টা করছেন। বিষয়টি এতদিন কেউ স্বীকার করেনি। এখন যখন স্বীকার করছেন এটা একদিকে পজেটিভ। চাকরির মূল মালিক তো সরকার। মোশাররফ হোসেন বলেন, মিতু হত্যার ঘটনায় যদি বাবুল আক্তারকে চাকরি হারাতে হয়, তাহলে সন্ত্রাসীরা তাকে মেরে ফেলবে। জেলখানায় গিয়েও সে বাঁচতে পারবে না। সেখানেও সন্ত্রাসীরা তাকে মেরে ফেলবে। তার মৃত্যু অবধারিত। এখন কোনভাবে তার মৃত্যু হবে, সেটা আল্লাহই ভালো জানেন। আপাতত তার বাঁচার উপায় হচ্ছে তার চাকরিটা থাকা। এতে কিছুদিন যদি সে বেঁচে থাকতে পারে। আর সে নিজেও যদি চাকরি ছাড়ে তাহলেও তার জীবন বাঁচবে না। তিনি আক্ষেপ করে বলেন, মিতু হত্যার ঘটনা বাদ দিয়ে অন্য বিষয় নিয়ে মাতামাতি হচ্ছে। স্ত্রী হত্যাকাণ্ডের পর বাবুল আক্তার এ পর্যন্ত কোনো কথা বলেননি। গত ১৩ আগস্ট প্রথম মুখ খোলেন বাবুল আক্তার। তার ফেসবুকে মর্মস্পর্শী এক স্ট্যাটাসে তিনি অনেকটা আক্ষেপের সুরেই লিখেছেন, ‘যখন মা হারানো মেয়েটার অযথা গড়াগড়ি দিয়ে কান্নার শব্দ কেবল আমিই শুনি, তখন অনেকেই নতুন নতুন গল্প বানাতে ব্যস্ত। আমি তো বর্ম পড়ে নেই, কিন্তু কোলে আছে মা হারা দুই শিশু। আঘাত সইতেও পারি না, রুখতেও পারি না।’ স্ট্যাটাসের সব শেষে তিনি লিখেছেন, ‘এরপর আর কোনো ভোর আমার জীবনে সকাল নিয়ে আসেনি। সন্তান দুটো এবং আমি আর স্নেহের ছায়ায় ঘুমাইনি। এরপরই আমি বুঝেছি সংসার কী।’ গত এপ্রিলে এসপি হিসেবে পদোন্নতি পাওয়ার পর তাকে পুলিশ সদর দফতরে সংযুক্ত করা হয়। গত ৫ জুন চট্টগ্রাম নগরীর জিইসি মোড় এলাকায় বাবুল আক্তারের স্ত্রী মাহমুদা খানম মিতু শিশু সন্তানের সামনে দুর্বৃত্তদের হাতে খুন হন। স্ত্রী খুন হওয়ার দিন বাবুল ঢাকাতেই ছিলেন। পরে দুই শিশু সন্তান নিয়ে রাজধানীর বনশ্রীর ভূঁইয়াপাড়ার শ্বশুরের বাসাতেই অবস্থান করছেন। স্ত্রী হত্যার ১৫ দিনের মাথায় গত ২৪ জুন মধ্যরাতে শ্বশুরবাড়ি থেকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য বাবুলকে মিন্টোরোডের গোয়েন্দা কার্যালয়ে নিয়ে যাওয়া হয়। যদিও পরদিন ২৫ জুন প্রায় ১৬ ঘণ্টা পর আবার তাকে বনশ্রীতে শ্বশুরের বাসায় পৌঁছে দেওয়া হয়। ওই সময় তার কাছ থেকে পদত্যাগপত্র নেওয়া হয় বলেও সূত্র জানায়। কেউ বলেন, বাবুল নিজেই চাকরি ছাড়ার শর্তে স্ত্রী হত্যার দায় থেকে বাঁচতে পদত্যাগপত্র জমা দিয়েছিলেন। এরপর গত ৩ ও ৪ আগস্ট পুলিশ সদর দফতরে গিয়ে তিনি একটি লিখিত ব্যাখ্যা দেন। অবশ্য সেই ব্যাখ্যায় পদত্যাগ করেছেন বলে কোনো কথা উল্লেখ নেই।

 

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর