বুধবার, ১৭ আগস্ট, ২০১৬ ০০:০০ টা

অফশোর ব্যাংকিং ঋণ ৩২ হাজার কোটি টাকা

একাংশ পাচারের আশঙ্কা

রুকনুজ্জামান অঞ্জন

অফশোর ব্যাংকিং ঋণ ৩২ হাজার কোটি টাকা

অফশোর ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে বাংলাদেশে বিতরণকৃত মোট ঋণ ও অগ্রিমের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৩২ হাজার কোটি টাকা। এই ঋণের একটি অংশ পাচার হয়েছে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। এরই মধ্যে একটি বেসরকারি ব্যাংকের মাধ্যমে অফসোর ব্যাংকিং সুবিধায় ৩৪০ কোটি টাকা পাচারের বিষয় ধরা পড়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তদন্তে। এ ছাড়া বিদেশে অফসোর কোম্পানি খুলে অর্থ পাচারের যে তথ্য পানামা পেপারস কেলেঙ্কারিতে উঠে এসেছে সেখানে এসব ঋণ  গেছে কিনা সেটিও যাচাই-বাছাই করা হচ্ছে।

অফসোর ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে অর্থ পাচারের অভিযোগ খতিয়ে দেখতে এবং  পানামা পেপারসে যাদের নাম এসেছে তাদের তালিকা ও এ সংক্রান্ত তথ্য সরবরাহ করতে বাংলাদেশ ব্যাংককে নির্দেশ দিয়েছিল জাতীয় সংসদের অর্থ মন্ত্রণালয় সংক্রান্ত সংসদীয় কমিটি। গত মে মাসে অনুষ্ঠিত বৈঠকের এই কার্যবিবরণী ২৫ জুলাই অর্থ মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়। এ বিষয়ে জানতে চাইলে অর্থ মন্ত্রণালয় সংক্রান্ত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি ড. মো. আবদুর রাজ্জাক গতকাল বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কাছে আমরা যে তথ্য চেয়েছিলাম, তা পেয়েছি। কিছু টাকা পাচার হয়েছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, যে ৩২ হাজার কোটি টাকা অফসোর ব্যাংকিংয়ে ঋণ ও অগ্রিম হিসেবে লেনদেন হয়েছে সেখান থেকে কতটা পাচার হয়েছে জানতে চাইলে আওয়ামী লীগ সরকারের সাবেক এই মন্ত্রী বলেন, কাগজপত্র না দেখে এ বিষয়ে কিছু বলা যাবে না। আর পুরো টাকাটা ঋণ হিসেবে যায়নি। যা গেছে তার চেয়ে বেশি ফেরত এসেছে। পানামা পেপারস কেলেঙ্কারি ফাঁস হওয়ার পর বিশ্বব্যাপী অফসোর ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে অর্থ পাচারের বিষয়টি এখন ব্যাপকভাবে আলোচিত হচ্ছে। বাংলাদেশি কয়েকজন নাগরিকের অফসোর কোম্পানির নামে অর্থ পাচারের তথ্য উঠে এসেছে পানামা পেপারসে। জানা গেছে, বিদেশি উত্স্য থেকে আমানত সংগ্রহ করে বিদেশি প্রতিষ্ঠানকে ঋণ দেওয়াই অফসোর ব্যাংকিংয়ের মূল কাজ। তবে এই সুযোগে দেশীয় কিছু অসাধু ব্যক্তি ব্রিটিশ ভার্জিন আইল্যান্ডের মতো যেসব দেশে কর রেয়াত সুবিধা দেওয়া হয়, সেসব দেশে কাগুজে কোম্পানি গঠনের মাধ্যমে অফসোর ব্যাংকিং সুবিধা নিয়ে অর্থ পাচার করেছেন। বাংলাদেশের একটি বেসরকারি ব্যাংক অফসোর ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে চারটি বিদেশি প্রতিষ্ঠানের নামে ৩৪০ কোটি টাকা পাচার করার ঘটনাটি সম্প্রতি কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তদন্তে ধরা পড়ে। ২০১৫ সালের ২৯ জুন থেকে ২৯ ডিসেম্বর সময়ে এসব ঋণ বিতরণ করা হয়। কিন্তু ঋণের কোনো কিস্তি পরিশোধ হয়নি। পানামা পেপারস কেলেঙ্কারি এবং অফসোর ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে দেশের বাইরে অর্থ পাচারের এই বিষয়গুলো সংসদীয় কমিটির বৈঠকের কার্যবিরণীতে উঠে আসে।

বৈঠকে সংসদীয় কমিটির সদস্য টিপু মুন্সি বলেন, অফসোর ব্যাংকিং নীতিমালার বাইরে বাংলাদেশের কিছু লোকের টাকা বিদেশে চলে গেছে। ওই বৈঠকে উপস্থিত কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ফিন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিটের প্রতিনিধি এ সম্পর্কে কমিটিকে জানান, বাংলাদেশে যাদের নাম এসেছে তা নিয়ে ক্যাটাগরিলি কাজ হচ্ছে। যদি অনিয়মের তথ্য পাওয়া যায় তাহলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। অফসোর ব্যাংকিং কার্যক্রম সংক্রান্ত পুরো বিষয়টি কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নজরদারির মধ্যে রয়েছে বলেও জানান তিনি।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক এস এম মনিরুজ্জামানের বরাত দিয়ে কার্যবিবরণীতে উল্লেখ করা হয়, ১৯৮৫ সালে অফসোর ব্যাংকিং কার্যক্রম শুরুর পর প্রথমে ইপিজেড এলাকায় এবং পরে ইপিজেডের বাইরেও তফসিলি ব্যাংকগুলো অফসোর ব্যাংকিং ইউনিট খুলতে শুরু করে। বর্তমানে দেশে ৩২টি ব্যাংকের ৫০টি অফসোর ব্যাংকিং ইউনিট রয়েছে। আর এসব ইউনিটের মাধ্যমে বিতরণকৃত ঋণ ও অগ্রিমের পরিমাণ প্রায় ৩২ হাজার কোটি টাকা।

সর্বশেষ খবর