বুধবার, ১৭ আগস্ট, ২০১৬ ০০:০০ টা

মারজানের বাবাকে আটক নিয়ে বিভ্রান্তি

পাবনা প্রতিনিধি

গুলশান হামলার সন্দেহভাজন মূল পরিকল্পনাকারী নুরুল ইসলাম মারজানের বাবাকে আটকের বিষয়টি নিয়ে বিভ্রান্তি দেখা দিয়েছে। সোমবার রাতে পাবনার আফুরিয়া গ্রামের নিজ বাড়ি থেকে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পরিচয়ে তাকে তুলে নিয়ে যাওয়া হয়েছে বলে দাবি পরিবারের। তবে বিভিন্ন দফতরে যোগাযোগ করেও তার কোনো খোঁজ না পেয়ে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠায় সময় পার করছেন পরিবারের সদস্যরা।

সোমবার সন্ধ্যায় মারজানের পরিচয় জানাজানি হলে তার বাড়িতে ভিড় করেন গণমাধ্যমকর্মীরা। এ সময় মারজানের বাবা নিজাম উদ্দিন তার ছেলের পরিচয় নিশ্চিত করেন। এর কিছু সময় পর গোয়েন্দা পুলিশ পরিচয়ে কয়েকজন সাদা পোশাকধারী জিজ্ঞাসাবাদের জন্য নিজাম উদ্দিনকে নিয়ে যান বলে জানান পরিবারের সদস্যরা। তবে নিজাম উদ্দিনকে আটকের বিষয়টি স্বীকার করেনি পাবনা জেলা পুলিশ। পুলিশের দাবি, এ বিষয়ে তাদের কাছে কোনো তথ্য নেই। পরিবারের দাবি, মারজান অপরাধী হয়ে থাকলে তার প্রাপ্য শাস্তি তাকে দেওয়া হোক। কিন্তু ছেলের অপরাধে বাবা কিংবা স্বজনদের যেন হয়রানি করা না হয়। মারজানের দাদি ইয়ারুন নেসা বলেন, ‘আমার নাতি অপরাধ করে থাকলে তার বিচার হোক। কিন্তু এজন্য আমার ছেলেকে কেন শাস্তি পেতে হবে! ছোট ছোট ৯ ছেলেমেয়ে নিয়ে তার সংসার।’ এক দিন কাজ না করলে এই পরিবারে খাবার জুটবে না বলে দাবি করেন তিনি। পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম নিজাম উদ্দিনকে যারাই ধরে নিয়ে যাক না কেন, দ্রুত তাকে ছেড়ে দেওয়ার দাবি করেন ইয়ারুন নেসা। মারজানের বোন পঞ্চম শ্রেণির ছাত্রী আফিয়া সুলতানা আশা বলে, ‘আমার ভাই জঙ্গি হওয়ার খবর শোনার পর থেকেই মা অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। তাকে হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে। আমার বড় ভাই অসুস্থ। বাবা কাজ না করলে আমাদের সংসার চলে না। আমাদের কে দেখবে, কী খাব’— বলেই কান্না শুরু করে সে। ঘরে গিয়ে দেখা যায়, মারজানের মা চুপচাপ শুয়ে আছেন। পাশে ছোট ছোট ছেলেমেয়েরা বসে আছে। একাধিক প্রতিবেশী বলেন, ‘মারজান অপরাধী হতে পারে। কিন্তু ওর বাবা তো নিরপরাধ। তাকে কেন পুলিশ ধরে নিয়ে গেল, এটাই আমাদের এখন প্রশ্ন।’ তারা জানান, প্রায় বছরখানেক আগে বিয়ে করার পর থেকেই বাড়িতে অনিয়মিত ছিল মারজান। পরিবারের লোকজনের ধারণা ছিল, বিয়ের পর তিনি সংসার নিয়ে ব্যস্ত আছেন তাই বাড়ি আসেন না। আটকের আগে মারজানের বাবা নিজাম উদ্দিন বলেন, ‘আমি খুব কষ্ট করে আমার ছেলেকে পড়াশোনা করাতাম। বেশ কিছুদিন ধরে মারজান পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করত না। আমাদের ধারণা ছিল, বিয়ে করার কারণেই হয়তো সে আমাদের এখানে আসে না। গত সাত মাস সে বাড়ি আসে নাই। পাবনা কামিল মাদ্রাসা থেকে আলিম পাস করার পর সে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হতে চায়। আমি বলেছিলাম, টাকা তো নেই। কী করে তোমারে বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াব। মারজান বলেছিল, কয়েক মাস চালালে আমি টিউশনি ঠিক করে নেব। তখন আর তোমার টাকা দিতে হবে না। খুব ভালো ছাত্র হওয়ায় চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে চান্স পায় সে। ভর্তির প্রথম প্রথম ভালোই যোগাযোগ ছিল। বছরখানেক হলো বিয়ে করে সে। বিয়ের পর থেকেই বাড়িতে কম যাতায়াত করত মারজান। সর্বশেষ সাত-আট মাস আগে সে বাড়ি এসে বউ নিয়ে চলে যায়। এর পর থেকে মারজানের আর খোঁজ ছিল না।’ মারজানের বাবা-মা ও প্রতিবেশীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, আর্থিক অনটনে বেড়ে উঠেছেন মারজান। আফুরিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে পঞ্চম শ্রেণি পাস করে তিনি পাবনা শহরের পুরাতন বাঁশবাজার আহলে হাদিস কওমি মাদ্রাসায় ভর্তি হন। এরপর পাবনা কামিল মাদ্রাসায় ভর্তি হয়ে জিপিএ-৫ পেয়ে দাখিল ও আলিম পাস করেন। ২০১৪ সালে ভর্তি হন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের আরবি বিভাগে। এ ব্যাপারে পাবনা আহলে হাদিস মাদ্রাসার অধ্যক্ষ আবদুর রহমান বলেন, ‘আমি রমজান মাসে এ প্রতিষ্ঠানে যোগ দিয়েছি। এ খবর পেয়ে আমাদের খাতাপত্র ঘেঁটে জানতে পারি, নুরুল ইসলাম ওরফে মারজান এখানকার ছাত্র ছিলেন। ২০১২-১৩ শিক্ষাবর্ষে তিনি লেখাপড়া শেষ করে চলে যান। তবে এখানে থাকাকালে তিনি অত্যন্ত ভদ্র-নম্র ও ভালো ছাত্র ছিলেন। তিনি পর পর দুইবার বিভাগীয় কোরআন তিলোয়াত প্রতিযোগিতায় প্রথম ও দ্বিতীয় স্থান অধিকার করেন। এখান থেকে চলে যাওয়ার পর তিনি কোন কাজে জড়িয়ে পড়েছেন, সে বিষয়ে এখানকার কেউই কিছু বলতে পারেন নাই।’ এদিকে মারজানের বাবা নিজাম উদ্দিনকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য সোমবার রাতে আটক করেছে গোয়েন্দা পুলিশ। তবে পাবনা পুলিশের ঊর্ধ্বতন কেউই স্বীকার করছেন না বিষয়টি। পাবনা ডিবি পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা জাহাঙ্গীর আলম বিষয়টি নিশ্চিত করতে পারেননি। এদিকে পাবনার পুলিশ সুপার আলমগীর কবির বলেন, ‘বিভিন্ন সংস্থা আছে। কারা আসলে এ বিষয়টি নিয়ে কাজ করছে আমাদেরও তা জানা নেই।’ পাবনা জেলা পুলিশ এ কাজে জড়িত নয় বলে দাবি করেন তিনি।

সর্বশেষ খবর