বুধবার, ১৭ আগস্ট, ২০১৬ ০০:০০ টা

সিটিসেল বন্ধের সিদ্ধান্ত, উৎকণ্ঠায় গ্রাহক-পাওনাদার

নিজস্ব প্রতিবেদক

সরকারি-বেসরকারি ব্যাংক, বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানের কোটি কোটি টাকা বকেয়া রেখে বন্ধ হয়ে যাচ্ছে দেশের সবচেয়ে পুরনো ও প্রথম মোবাইল ফোন অপারেটর প্যাসিফিক বাংলাদেশ টেলিকম (সিটিসেল)। বিটিআরসির প্রায় ৫০০ কোটি টাকা বকেয়া ছাড়াও বিভিন্ন বাণিজ্যিক ব্যাংকের ঋণ ও সংস্থার পাওনা নিয়ে তৈরি হয়েছে দুশ্চিন্তা। বকেয়া কোটি কোটি টাকার ভবিষ্যৎ নিয়ে উৎকণ্ঠায় রয়েছে প্রিন্ট-ইলেকট্রনিক-অনলাইনসহ বিভিন্ন গণমাধ্যম। এ টাকা আদায়ের জন্য সিটিসেলের সঙ্গে বার বার যোগাযোগ করেও কার্যকর কোনো সিদ্ধান্ত পায়নি পাওনাদাররা। তাই সিটিসেল চূড়ান্তভাবে বন্ধের আগে বকেয়া পরিশোধের বিষয়ে সুনির্দিষ্ট নির্দেশনা দেওয়ার দাবি পাওনাদারদের।

ডাক ও টেলিযোগাযোগ প্রতিমন্ত্রী তারানা হালিম গতকাল সাংবাদিকদের জানান, ‘সিটিসেলের লাইসেন্স বাতিলের জন্য ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগ নীতিগত সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে। তবে মোবাইল ফোন অপারেটরটির কার্যক্রম বন্ধ করা হবে কি হবে না— সে সিদ্ধান্ত সরকারই নেবে। বুধবার (আজ) সরকারের কাছে ফাইল পাঠানো হচ্ছে। সরকারের সিদ্ধান্তই চুড়ান্ত। গ্রাহকদের অপারেটর পরিবর্তনের জন্য আরও সাত দিন সময় দেওয়া হয়েছে। সিটিসেলের বকেয়া আদায় কীভাবে হবে— জানতে চাইলে প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘বকেয়া রাজস্ব আদায় করবই, এ বিষয়ে কোনো সন্দেহ নেই। একটি দৃষ্টান্ত হয়ে থাকুক সব অপারেটরের জন্যই যে, আমরা বকেয়ার ব্যাপারে শক্ত পদক্ষেপ গ্রহণ করতে পারি। সিটিসেলের বকেয়া আদায়ের জন্য যত মামলা-মোকদ্দমা করা দরকার, তা আমরা করব,  দ্রুততার সঙ্গে বকেয়া আদায়ের জন্য পদক্ষেপ গ্রহণ করব।’ সিটিসেলের কাছে বিটিআরসির বকেয়ার পরিমাণ ৪৭৭ কোটি ৫১ লাখ টাকা। এর মধ্যে টুজি লাইসেন্সের তরঙ্গ বরাদ্দ ও নবায়ন ফি বাবদ পাওনার পরিমাণ ২২৯ কোটি টাকা। এ ছাড়া রাজস্ব ভাগাভাগির ২৭ কোটি ৪৪ লাখ টাকা, বার্ষিক তরঙ্গ ফি ২৭ কোটি ১৪ লাখ টাকা, সামাজিক সুরক্ষা তহবিলের ৮ কোটি ৯২ লাখ, বার্ষিক লাইসেন্স ফি বাবদ ১০ কোটি টাকা, মূল্য সংযোজন কর (মূসক) বাবদ ৩৯ কোটি ৯২ লাখ টাকা ও বিলম্ব ফি বাবদ ১৩৫ কোটি ৭ লাখ টাকা বকেয়া রয়েছে। এ ছাড়া বেসরকারি  আইএফআইসি ব্যাংকসহ দেশের বিভিন্ন ব্যাংকে সিটিসেলের ঋণের পরিমাণ ১ হাজার কোটি টাকার বেশি। এর বাইরেও সিটিসেলের কাছে দেশের বিভিন্ন প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ায় কোটি কোটি টাকা বকেয়া পাওনা রয়েছে। দীর্ঘ সময় ধরে সিটিসেল পাওনা পরিশোধে গড়িমসি করে আসছিল। মাঝখানে সিঙ্গাপুরের একটি কোম্পানির কাছে বিক্রির জন্য অডিট সম্পন্ন করে প্রতিষ্ঠানটি। তখন বলা হয়েছিল, বিক্রির কার্যক্রম শেষ হলে আর কোনো সমস্যা থাকবে না। প্রায় দুই বছর ধরে অচলাবস্থার মধ্যে থাকা সিটিসেল পাওনাদারদের বার বার আশ্বাস দিয়ে আসছিল। কিন্তু বকেয়া পরিশোধের ব্যবস্থা করতে পারেনি। বর্তমানে যেহেতু সরকারি পর্যায়ে সিটিসেল বন্ধের ঘোষণা দেওয়া হয়েছে সেহেতু পাওনাদারদের বকেয়া পরিশোধের বিষয়টি নিশ্চিত করা দরকার বলে মনে করেন এ খাতের বিশেষজ্ঞরা। এদিকে বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্র জানায়, বেসরকারি আইএফআইসিসহ দেশের বিভিন্ন ব্যাংকে সিটিসেলের ঋণের পরিমাণ ১ হাজার কোটি টাকার বেশি। আইএফআইসি ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক শাহ আলম সারওয়ার বলেন, সিটিসেল আমাদের কাছ থেকে যে ঋণ নিয়েছে তার বিপরীতে পর্যাপ্ত জামানত রয়েছে। নিয়ম অনুযায়ী প্রথমে জামানত বিক্রি করে অর্থ আদায়ের চেষ্টা করা হবে। এভাবে না হলে অর্থঋণ আদালতের মাধ্যমে পাওনা আদায়ের চেষ্টা করা হবে। সিটিসেলে কর্মরত আছেন ৬৫০ জন কর্মী। গত কয়েক বছর ধরে প্রতিষ্ঠানটির বেতন-ভাতা অনিয়মিত হয়ে পড়েছিল। নিয়মিত বেতন না পাওয়া এমন একজন কর্মী নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ‘এত দিন কয়েক মাস পরপর বেতন পেতাম। কার্যক্রম পুরো বন্ধ হয়ে গেলে বকেয়া বেতন পাব কিনা বুঝতে পারছি না। দেশের প্রথম মোবাইল কোম্পানি হিসেবে ১৯৮৯ সালে লাইসেন্স পায় সিটিসেল। শুরুর দিকে সংযোগসহ সিটিসেলের একটি ফোনের দাম রাখা হতো লাখ টাকার বেশি। সিটিসেলে বর্তমানে ৫৫ ভাগ শেয়ারের মালিক দেশীয় শিল্পগোষ্ঠী প্যাসিফিক মোটরস ও ফার-ইস্ট  টেলিকম। বাকি ৪৪ দশমিক ৫৪ শতাংশ শেয়ারের মালিক সিঙ্গাপুরভিত্তিক টেলিযোগাযোগ সেবাদাতা প্রতিষ্ঠান সিংটেল। প্যাসিফিক মোটরস ও ফার-ইস্ট টেলিকমের কর্ণধার সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী ও বিএনপি নেতা এম মোর্শেদ খান।

সর্বশেষ খবর