বৃহস্পতিবার, ১৮ আগস্ট, ২০১৬ ০০:০০ টা

হজযাত্রী পরিবহনে অনিশ্চয়তা

উড়োজাহাজ ভাড়া করতে পারেনি বিমান

মির্জা মেহেদী তমাল ও মোস্তফা কাজল

বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স ৫৮৬ আসনের বড় উড়োজাহাজ দিয়ে হজ ফ্লাইট পরিচালনার সিদ্ধান্ত নেয়। সে অনুযায়ী লিজিং প্রতিষ্ঠান ঈগল এক্সপ্রেসের সঙ্গে উড়োজাহাজ ভাড়া করতে চুক্তি করা হয়। সৌদি আরব থেকে ১১২টি স্লটও (বিমান অবতরণের সংখ্যা) অনুমোদন নেয় বিমান। কিন্তু লিজিং কোম্পানির দুর্নীতি আর বিমানের পরিকল্পনা বিভাগের অজ্ঞতার কারণে সেই ভাড়ার এয়ারক্রাফট আসেনি। তড়িঘড়ি রিসিডিউল করে ৪ আগস্ট থেকে ৪১৯ আসনের উড়োজাহাজ দিয়ে ফ্লাইট পরিচালনা শুরু করতে বাধ্য হয় বিমান। এতে প্রতি ফ্লাইটেই ১৬৭ হজ যাত্রী সৌদি আরব যেতে পারছেন না। এ ছাড়া হজের বিমান টিকিট নিয়ে ঘুষ বাণিজ্যের কারণে গড়ে প্রতি ফ্লাইটে ২৫ থেকে ৩০ সিট খালি যাচ্ছে। সব মিলিয়ে প্রতি স্লটে প্রায় ২০০ আসন খালি যাচ্ছে বিমানের। যাত্রীর অভাবে ইতিমধ্যে ১০টি ফ্লাইট বাতিল করা হয়েছে।

সংশ্লিষ্টরা বলছে, আগামী ৫ সেপ্টেম্বরের  মধ্যে নির্দিষ্ট সংখ্যক স্লট দিয়ে ৫৫ হাজার হজ যাত্রী পরিবহন নিয়ে অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে। এসব সমস্যা সমাধানে মন্ত্রণালয়ে হজ এজেন্সিসহ সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে আজ বৈঠক হওয়ার কথা রয়েছে। সূত্র জানায়, আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে বিমান যদি বড় উড়োজাহাজ ভাড়া করতে না পারে তাহলে নির্ধারিত সময়ে ৫ থেকে সাড়ে পাঁচ হাজার হজ যাত্রী পরিবহন সম্ভব হবে না। এ জন্য বাড়তি স্লট নিতে হবে। শেষদিকে প্রতিদিন তিনটির পরিবর্তে ৪টি ফ্লাইট চালাতে হবে। কিন্তু হজের সময় সব দেশ থেকে জেদ্দা বিমানবন্দরে উড়োজাহাজ অবতরণ ও উড্ডয়ন করে। এ কারণে ইচ্ছা থাকলেও ধারণ ক্ষমতার অতিরিক্ত স্লট বরাদ্দ দিতে পারবে না  সৌদি সিভিল এভিয়েশন। ফলে হজ যাত্রী পরিবহনে বড় ধরনের বিপর্যয় অপেক্ষা করছে বিমানের জন্য। বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এম মোসাদ্দিক আহমেদ বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, সরকারি ও বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় এ পর্যন্ত বিমান ৩৬টি ফ্লাইট পরিচালনা করেছে। তিনি বলেন, প্রথম দফায় লিজিং কোম্পানি ঈগল এক্সপ্রেসের মিথ্যা তথ্য দেওয়ার কারণে হজের জন্য বড় উড়োজাহাজ সংগ্রহ করা সম্ভব হয়নি। এসব কারণে দ্বিতীয় দফায় এয়ারক্রাফটের জন্য বিশ্বের সব উড়োজাহাজ কোম্পানি, লিজিং প্রতিষ্ঠানের কাছে সরাসরি চিঠি দেওয়া হয়েছে। বেশকিছু প্রতিষ্ঠান দর প্রস্তাব জমাও দিয়েছে। তিনি বলেন, হজ যাত্রীর স্বল্পতার কারণে বেশকিছু ফ্লাইট বাতিল করতে হয়েছে। সমস্যা সমাধানে হজ এজেন্সিসহ সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে আজ বৈঠক করা হবে। এদিকে, সব হজ এজেন্টদের গতকাল থেকে পরবর্তী ৭২ ঘণ্টার মধ্যে বিমানে তাদের আসন নিশ্চিত-পূর্বক প্রয়োজনীয় টিকিট সংগ্রহ করার জন্য আহ্বান জানিয়েছে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স। বিমান বাংলাদেশের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ আহ্বান জানানো হয়। বলা হয়, যাত্রী স্বল্পতার কারণে বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স এ পর্যন্ত মোট ১০টি হজ-ফ্লাইট বাতিল করেছে। বাতিলকৃত ফ্লাইটের কারণে বিমানের হজ যাত্রী পরিবহনে পাঁচ হাজার আসনের ক্যাপাসিটি খোয়া গেছে। ৪ আগস্ট থেকে শুরু হওয়া হজফ্লাইট পরিচালন কার্যক্রমের আওতায় এ পর্যন্ত বাতিলকৃত ফ্লাইটের কারণে আর্থিক ও মারাত্মক যাত্রী সংকটের মুখোমুখি হয়েছে বিমান। উল্লেখ্য, বাংলাদেশ থেকে হজ পালনে এ বছর যাবার কথা ১ লাখ ১ হাজার ৭৫৮ জন হজ যাত্রী। ৪ আগস্ট থেকে যৌথভাবে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স ও সৌদি এয়ারলাইন্স হজ যাত্রী পরিবহন শুরু করে। গতকাল এক সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশ হজ এজেন্সিজ ওনার্স এসোসিয়েশনের প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম বাহার ও মহাসচিব শেখ আবদুল্লাহ বলেছেন, অন্তত পাঁচ হাজার যাত্রীর হজ যাত্রা অনিশ্চিত। তারা অবিলম্বে এই জটিলতা নিরসনে প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন। বিমানের মতিঝিল সেলস অফিস সূত্র জানায়, ভিসা থাকার পরও হজ যাত্রীদের সৌদি আরবে পাঠাতে গড়িমসি করার অভিযোগ উঠেছে কিছু হজ এজেন্সির বিরুদ্ধে। এদিকে, হজ এজেন্সি ও ট্রাভেল এজেন্ট সূত্র জানায়, এ বছর বিমানের প্রতিটি হজ টিকিট বিক্রি হয়েছে গড়ে ২ থেকে ৩ হাজার টাকা ঘুষ নিয়ে। পছন্দের কিছু এজেন্সিকে বিমানের বেশির ভাগ টিকিট দিয়ে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। এসব কারণে এখন ট্রাভেল এজেন্টদের ওই সিন্ডিকেট টিকিট প্রতি গড়ে ৫ থেকে ৬ হাজার টাকা অতিরিক্ত নিচ্ছে। এতে প্রথম দিকে অনেক হজ যাত্রী টিকিট না পাওয়ায় প্রতিদিনই আসন খালি নিয়ে ফ্লাইট ছাড়তে হচ্ছে বিমানকে। আশকোনা হজক্যাম্পের হজ অফিসার ড. সালেহ্ মোস্তফা কামাল বলেন, আমাদের কাছে পর্যাপ্ত ভিসা আছে। কতিপয় হজ এজেন্সি যাত্রীদের সৌদি পাঠাতে গড়িমসি করছে এবং যাত্রীদের কাছ থেকে অতিরিক্ত ফি আদায় করছে। একটি এয়ারলাইন্সের বিরুদ্ধেও ঘুষ নিয়ে টিকিট বিক্রির অভিযোগ তিনি পেয়েছেন। বিষয়টি সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়, দফতর ও হজ অ্যাসোসিয়েশনকে (হাব) জানানো হয়েছে। হজ ক্যাম্প সূত্র জানায়, মঙ্গলবার রাত পর্যন্ত সরকারি-বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় সৌদি দূতাবাস থেকে ৬৩ হাজার ২১২ হজ যাত্রীর ভিসা ইস্যু করা হয়েছে। হাব সভাপতি ইব্রাহিম বাহার বলেন, বাড়ি ভাড়ার নির্ধারিত সময়ের আগে হজ যাত্রী পাঠানো যাচ্ছে না।

হাবের সংবাদ সম্মেলন : গতকাল রাজধানীর একটি হোটেলে সংবাদ সম্মেলনে  হজ এজেন্সিজ ওসার্স এসোসিয়েশন অব বালাদেশের প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম বাহার ও মহাসচিব শেখ আবদুল্লাহ পাঁচ হাজার হজ যাত্রীর হজপালনের জটিলতা নিরসনে প্রধানমন্ত্রী ও ধর্মমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন। এ ছাড়া সংকটের জন্য পরিচালক হজ-কে দায়ী করে তারা বলেছেন, বাংলাদেশ বিমানের সঙ্গে হজ এজেন্টদের বিভেদ সৃষ্টি করতেই এমন জটিল পরিস্থিতি সৃষ্টি করা হয়েছে।

সর্বশেষ খবর