শুক্রবার, ১৯ আগস্ট, ২০১৬ ০০:০০ টা

যুদ্ধাপরাধীমুক্ত আমির করছে জামায়াত

প্যানেলে মকবুল মজিবুর শফিকুর

শফিকুল ইসলাম সোহাগ

একাত্তরের মহান মুক্তিযুদ্ধে যুদ্ধাপরাধের অভিযোগ নেই এমন একজনকে আমির নির্বাচিত করতে যাচ্ছে জামায়াতে ইসলামী। কঠোর গোপনীয়তার মধ্য দিয়ে জামায়াতের আমির নির্বাচনে বুধবার ভোট গ্রহণ সম্পন্ন হয়েছে। সারা দেশের প্রায় ৪২ হাজার রুকনের কত শতাংশ ভোটে অংশ নেয় তা জানা সম্ভব হয়নি। দলের গঠনতন্ত্র অনুযায়ী দলের মজলিসে শূরা ১০ আগস্ট আমির নির্বাচনের প্যানেল গঠন করে। প্যানেলে রয়েছেন দলের ভারপ্রাপ্ত  আমির মকবুল আহমাদ, নায়েবে আমির সাবেক এমপি মুজিবুর রহমান ও ভারপ্রাপ্ত সেক্রেটারি জেনারেল ডা. শফিকুর রহমান। এ তিনজনের যে কোনো একজনকে ভোট দেন রুকনরা। দলের অন্যতম নেতা এটিএম মাসুমের নেতৃত্বে তিন সদস্যের প্রতিনিধি দল নির্বাচন পরিচালনার দায়িত্ব পালন করেছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক মজলিসে শূরার এক সদস্য বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, জামায়াতের গঠনতন্ত্র অনুযায়ী আমির নির্বাচিত হয়ে থাকে। সে ধারায় তিনজনের প্যানেল নির্বাচন সম্পন্ন হয়। ভোট গণনা সম্পন্ন হওয়ার কয়েক দিন পর নতুন নির্বাচিত আমিরের নাম ঘোষণা করা হবে। জানা যায়, ভোট গ্রহণের দিন আগেভাগে ঘোষণা করে আনুষ্ঠানিক বুথ বানিয়ে ভোট গ্রহণ করা হলে পুলিশ ধরপাকড় শুরু করত। রুকনরা ভোট দিতে পারতেন না। এ কারণে কঠোর গোপনীয়তা রক্ষা করা হয়। কেন্দ্রের তরফ থেকে ধারণা দেওয়া হয়েছিল, ঈদের পর ভোট হবে। কিন্তু কৌশল হিসেবে আগেভাগেই ভোট গ্রহণ করা হয়। প্যানেল নির্বাচনে মকবুল আহমাদ মজলিসে শূরার সর্বোচ্চ ভোট পান, দ্বিতীয় হন শফিকুর রহমান, তৃতীয় স্থানে ছিলেন মুজিবুর রহমান। নেতা-কর্মীরা ধারণা করছেন, মকবুল আহমাদই হচ্ছেন আমির। নির্বাচিত হলে ছয় বছরের ভারপ্রাপ্ত আমির মকবুল আহমাদই হবেন স্বাধীনতার পর জামায়াতের তৃতীয় আমির। ফেনী জেলা থেকে কেন্দ্রীয় রাজনীতিতে আসা মকবুল আহমাদের বিরুদ্ধে মুক্তিযুদ্ধের বিরোধিতার অভিযোগের কথা শোনা গেলেও মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলা নেই। তবে আমির প্যানেলে থাকা তিনজনের বিরুদ্ধে নাশকতা ও সহিংসতার অভিযোগে অনেক মামলা আছে। রাজশাহীর সাবেক এমপি মুজিবুর রহমান ও সিলেটের নেতা শফিকুর রহমান এসব মামলায় দীর্ঘদিন হাজতবাস করেছেন। বর্তমানে তারা জামিনে রয়েছেন। ২০১১ সালের সেপ্টেম্বর থেকেই আত্মগোপনে রয়েছেন মকবুল আহমাদ। ২০১০ সালে যুদ্ধাপরাধের বিচার শুরুর পর থেকেই কোণঠাসা অবস্থায় রয়েছে জামায়াত। বিচার ঠেকাতে হরতালে সহিংসতার মামলায় কেন্দ্র থেকে তৃণমূল পর্যায়ের প্রায় সব নেতা হয় কারাগারে, নয়তো আত্মগোপনে। ২০১১ সালের সেপ্টেম্বর থেকে নেই প্রকাশ্য কর্মসূচি। প্রতিকূল পরিস্থিতির কারণে সাত বছর সম্মেলন করতে পারেনি জামায়াত। এ অবস্থায় যুদ্ধাপরাধের কলঙ্ক মুছে ফেলতে চাইছে জামায়াত। একাত্তরের রক্তের দাগ নেই এমন নেতাদের বেছে নিয়ে দলকে নতুন করে সাজাতে চাইছে তারা। এ জন্য তারা যুদ্ধাপরাধের অভিযোগ নেই এমন নেতাদের প্যানেলে বাছাই করেছেন। স্বাধীনতার পর নিষিদ্ধ হয় মুক্তিযুদ্ধের বিরোধিতা করা জামায়াত। এ সময় মাওলানা আবদুর রহিম দলের ভারপ্রাপ্ত আমিরের দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৭৫ সালে রক্তাক্ত পথে ক্ষমতার পটপরিবর্তন হলে জিয়াউর রহমান ১৯৭৭ সালে জামায়াতকে প্রকাশ্যে রাজনীতির সুযোগ দেন। ১৯৭৮ সালে দলের আমির গোলাম আযম দেশে ফেরেন। বাংলাদেশের নাগরিকত্ব না থাকায় প্রকাশ্যে আমিরের দায়িত্ব নিতে পারেননি গোলাম আযম। তবে তিনিই ছিলেন মূল নেতা। এ সময় ভারপ্রাপ্ত আমিরের দায়িত্ব পালন করেন আব্বাস আলী খান। ১৯৯৪ সালে নাগরিকত্ব পাওয়ার পর গোলাম আযম আনুষ্ঠানিকভাবে আমির হন। ২০০০ সালে তিনি রাজনীতি থেকে অবসর নিলে আমির নির্বাচিত হন মতিউর রহমান নিজামী। ২০০৩, ২০০৬ ও ২০০৯ সালের রুকন সম্মেলনে তিনি আমির নির্বাচিত হন।

সর্বশেষ খবর