শনিবার, ২০ আগস্ট, ২০১৬ ০০:০০ টা

মধ্যপাড়া পাথর খনিতে আলো ফিরছে

মো. রিয়াজুল ইসলাম, দিনাজপুর

মধ্যপাড়া পাথর খনিতে আলো ফিরছে

দীর্ঘ প্রতীক্ষার পর আলো ফিরে পাচ্ছে দিনাজপুরের মধ্যপাড়া পাথর খনি। আর এরসঙ্গে দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে ব্যাপক অবদান রাখবে এ পাথর খনি। বিশ্বমানের উৎপাদন যন্ত্র প্রতিস্থাপনের কাজ শেষ হলেই চলতি মাসের শেষ সপ্তাহে কিংবা আগামী মাসের প্রথম সপ্তাহে খনি থেকে পাথর উত্তোলন কার্যক্রম শুরু হতে পারে বলে জানা গেছে। উৎপাদন যন্ত্রের অভাবে  ২০১৫ সালের অক্টোবর মাস থেকে পাথর উত্তোলন বন্ধ করে দেয় খনির ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান জার্মানিয়া ট্রাস্ট কনসোর্টিয়াম-জিটিসি। সম্প্রতি উৎপাদন যন্ত্র আমদানি করে এখন প্রতিস্থাপনের কাজ শুরু হয়েছে। আমদানি করা এ যন্ত্রগুলো আন্তর্জাতিক মানের। যা পৃথিবীর প্রথম শ্রেণির খনিতে ব্যবহার করা হয়। এ যন্ত্র মধ্যপাড়া পাথর খনিতে প্রতিস্থাপন করার ফলে ভূগর্ভের মধ্যে কোনো দুর্ঘটনার আশঙ্কা থাকবে না। এ ছাড়া আগের পাথর উত্তোলনের তুলনায় প্রায় ১০ গুণ উত্তোলন বৃদ্ধি পাবে। এতে খনিটি দ্বিগুণ লাভের মুখ দেখবে বলে সাংবাদিকদের জানান জিটিসির প্রশিক্ষণ পরিচালক ড. ফররুখ আহম্মেদ। জিটিসির মহাব্যবস্থাপক জামিল আহম্মেদ বলেন, কানাডা, বেলারুশ, জার্মানি, রাশিয়া, পোলান্ড, ইউক্রেন, চায়নাসহ প্রায় ২০-২২টি দেশ থেকে আমদানিকৃত রোজবরিং মেশিন, জাম্বু ড্রিলিং মেশিন, মাসকিং লোডার, শাটল কার, মাইনিং ভেন্টিলেশন ফ্যান, ভেন্টিলেশন ডাকট, স্টপার রক ড্রিল ও প্রেসার মেশিন, ভাইব্রেটিং স্কিন ও ফিডারস, স্টিল রেইল ও ফিশপ্লেট, রেল ফাস্টেনার সেট, স্পেয়ার পার্টস ফর পিনিউমেটিক রক ড্রিল, হাইড্রলিক চিজেল বেকার, পার্টস ফর ড্রিল মেশিন সিম্বা জুনিয়র, স্টিল টয়েল সেফটি ফর মাইনিং, টেপার রড অ্যান্ড বাটন বিট, স্পেয়ার পার্টস ফর পুশার লেগ, এয়ার, ওয়াটার, হুস, কপার ট্রলি ওয়ার, পাম্প মোটরসহ ২২৯ প্রকার যন্ত্র আমদানি করা হয়েছে। আমদানি করা যন্ত্রের ৮৫ ভাগের মধ্যে ইতিমধ্যে ৭২ ভাগ যন্ত্র প্রতিস্থাপনের কাজ শেষ হয়েছে। প্রতিস্থাপনের কাজ শেষ হলেই পাথর উত্তোলন শুরু হবে। জিটিসির মহাব্যবস্থাপক জামিল আহম্মেদ ও প্রশিক্ষণ পরিচালক ড. ফররুখ আহম্মেদ বলেন, সে সময়ের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ২০০৬-০৭ সালে যে যন্ত্রগুলো স্থাপন করেছিল তা ৫ (পাঁচ) বছর যেতে না যেতেই অকেজো হয়ে যায়। এ কারণে শতচেষ্টা করেও ওই যন্ত্রগুলো আর সচল করা যায়নি। যার ফলে উৎপাদন বন্ধ করে যন্ত্র আমদানি করতে হয়েছে। উল্লেখ্য, মধ্যপাড়া খনিটি ২০০৮ সালের গোড়ার দিকে বাণিজ্যিকভাবে পাথর উত্তোলন করে। প্রথম অবস্থায় প্রতিদিনের পাথর উত্তোলনের পরিমাণ ২ হাজার থেকে ২ হাজার ৫০০ মেট্রিক টন হলেও ৬ মাস যেতে না যেতে উৎপাদনের পরিমাণ কমতে শুরু করে। ২০১২ সালে প্রতিদিনের উৎপাদন দাঁড়ায় ৫০০ থেকে ৮০০ মেট্রিক টন। এতে খনিটি লোকসানের মুখে পড়ে। এ কারণে লোকসানের হাত থেকে রক্ষা করতে ২০১৩ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর খনির উৎপাদন ও রক্ষণাবেক্ষণের জন্য বেলারুশভিত্তিক জার্মানিয়া ট্রাস্ট কনসোর্টিয়াম (জিটিসি) কোম্পানির সঙ্গে চুক্তি করা হয়। চুক্তি অনুযায়ী, জিটিসি ২০১৪ সালের ফেব্রুয়ারি মাস থেকে পাথর উত্তোলন শুরু করে। পাথর উত্তোলনের ৬ মাসের মাথায় প্রতিদিনের উৎপাদন বৃদ্ধি পেয়ে সাড়ে ৪ হাজার মেট্রিক টনে দাঁড়ায়। কিন্তু উৎপাদন যন্ত্রের অভাবে ২০১৫ সালের ৩০ অক্টোবর পাথর উত্তোলন বন্ধ করে দেয় খনির ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান জিটিসি।

সর্বশেষ খবর