সোমবার, ২২ আগস্ট, ২০১৬ ০০:০০ টা

বিশ্ব চমক মার্গারিটার

অর্জন রাশিয়া ও বাংলাদেশের

আসিফ ইকবাল

বিশ্ব চমক মার্গারিটার

নিভে গেল রিও অলিম্পিকের মশাল। এরপর চার বছরের অপেক্ষাকে দীর্ঘায়িত করে অন্ধকারে ঠাঁই নেবে ‘দ্য গ্রেটেস্ট শো অন আর্থ’ অলিম্পিক। ২০২০ সালে টোকিওতে পর্দা উঠার আগে সবাই ব্যস্ত সময় পার করবেন সাফল্য-ব্যর্থতার কাটাছেঁড়া করতে। রিও অলিম্পিক কি দেয়নি? দুই হাত উজাড় করে দিয়েছে ক্রীড়া বিশ্বকে। চমক দেখিয়েছেন গ্রেট উসাইন বোল্ট, জীবন্ত কিংবদন্তি সাঁতারু মাইকেল ফেলপ্স। শুধুই কি তাই? এই দুই জন ছাড়া হাজার হাজার মাইল দূরে আটলান্টিকের তীরঘেঁষা রিও ডি জেনিরো বাংলাদেশকে দিয়েছে অসাধারণ এক উপহার। যা নিয়ে সরগরম এ দেশের ক্রীড়াঙ্গন। রিও অলিম্পিকে বাংলাদেশকে ‘বিস্ময় মাখা’ উপহার দিয়েছেন মার্গারিটা মামুন! বাংলাদেশি বংশোদ্ভুত মার্গারিটা মামুন রিদমিক জিমন্যাস্টিক্সে অল অ্যারাউন্ড ইভেন্টে সোনা জিতে রাশিয়ার পদক তালিকাকে ভারী করেছেন। একই সঙ্গে বাংলাদেশকে অনন্য উচ্চতায় উপস্থাপন করেছেন ক্রীড়া বিশ্বের দরবারে। রিদমিক জিমন্যাস্টিক্সে সোনা জিতে ২০ বছর বয়সী মার্গারিটা মামুন স্পষ্ট করেই সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, তার এই সোনা জয় বাংলাদেশ ও রাশিয়ার জন্য। চমক দেখিয়ে বিশ্ববাসীর হৃদয় জয় করে নিয়েছেন তিনি। মার্গারিটার জন্ম ১৯৯৫ সালের ১ নভেম্বর। বাবা আব্দুল্লাহ আল মামুন পেশায় ইঞ্জিনিয়ার। মামুনের জন্ম বাংলাদেশের রাজশাহীতে। দীর্ঘদিন ধরে বসবাস মস্কোয়ে। রাশিয়ান মা আন্না এক সময়কার রিদমিক জিমন্যাস্ট। সোভিয়েত ইউনিয়ন ও রাশিয়ার হয়ে বহু আসরে অংশ নেওয়া আন্নার হাতে হাতখড়ি মার্গারিটা মামুনের। আন্না নিজের অভিজ্ঞতা ও মেধা দিয়ে ঘষে মেজে তৈরি করেছেন মেয়ে মার্গারিটাকে। মার্গারিটাও তার প্রতিদান দিয়েছেন বিশ্বসেরা ও অলিম্পিকে সোনা জিতে। বাবা বাংলাদেশি বলে আদর করে মার্গারিটাকে ডাকা হয় ‘দ্য বেঙ্গল টাইগার’ নামে। পরশু রাতে মার্গারিটা মামুন সোনা জিতেন হুপ, বল, ক্লাব ও রিবন- এই চারটি রুটিনে অনবদ্য ক্রীড়া নৈপুণ্য প্রদর্শন করে। সোনা জিতেন তিনবারের বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন স্বদেশি ইয়ানা কুদ্রিয়াভেসভাকে পেছনে ফেলে। ৭৬.৪৮৩ স্কোর গড়ে সোনা জিতে ইতিহাস লিখেন মার্গারিটা মামুন। রুপাজয়ী ইয়ানার স্কোর ৭৫.৬০৮ এবং ব্রোঞ্জ জিতেন ইউক্রেনের গানা রিজাতদিনোভা। সোনা জিতে উচ্ছ্বসিত মার্গারিটা মামুন বিস্মিতও। নামার আগে একবারও মনে হয়নি সোনা জিতবেন। সোনা জিতে উচ্ছ্বসিত মার্গারিটা বলেন, ‘আমি ভাবিনি সোনা জিতব। আমার জেতাটা অপ্রত্যাশিত। এই ইভেন্টে

ইয়ানা আমাকে সব সময়ই হারিয়েছেন।’ অপ্রত্যাশিতভাবে সোনা জেতায় উচ্ছ্বসিত মার্গারিটা খুব ভালো করেই জানেন, বাংলাদেশের লোকজনও তার জয়ে গর্বিত, ‘আমি অত্যন্ত খুশি এই জন্য যে, বাংলাদেশে আমার অনেক ভক্ত রয়েছে। সফল হতে তারা আমাকে প্রতিনিয়ত সমর্থন দিয়েছেন।’ বাংলাদেশের সমর্থনকে জীবনের অনেক বড় প্রাপ্তি বলা মার্গারিটা মামুন জুনিয়র লেবেলে বাংলাদেশের পক্ষে একবার প্রতিনিধিত্ব করেছিলেন, ‘এক সময় আমার দ্বৈত নাগরিকত্ব ছিল। একটি জুনিয়র প্রতিযোগিতায় বাংলাদেশের পক্ষে প্রতিনিধিত্ব করেছিলাম। এখন রাশিয়ার পক্ষে অংশ নিচ্ছি, কারণ এখানেই আমি বাস করি এবং এখানেই আমি অনুশীলন করি।’ বাংলা ভাষা সম্পর্কে বলেন,‘ আমি যখন ছোট ছিলাম, বাবা আমাকে বাংলা শেখাতেন। এখন অবশ্য সব ভুলে গেছি। তবে বাংলায় ১ থেকে ১০ পর্যন্ত গুনতে পারি।’

রাশিয়ার হয়ে লড়েছেন। কিন্তু বাংলাদেশের প্রতি তার ভালোবাসার যে বহিঃপ্রকাশ, সেটা ১৬ কোটি বাঙালির শির উঁচু করেছে গোটা বিশ্বে। পদক জিততে না পারা বাংলাদেশের এটাই সবচেয়ে বড় প্রাপ্তি রিও অলিম্পিক থেকে।

সর্বশেষ খবর