মঙ্গলবার, ২৩ আগস্ট, ২০১৬ ০০:০০ টা

বাংলাদেশের হয়ে খেলতে চেয়েছিলেন মার্গারিটা মামুন

নিজস্ব প্রতিবেদক, রাজশাহী

বাংলাদেশের হয়ে খেলতে চেয়েছিলেন মার্গারিটা মামুন

জয় হলো বাংলার বাঘিনী খ্যাত সেই মার্গারিটা মামুন ওরফে লিটার। ‘বাংলাদেশি কন্যা’ মার্গারিটা মামুন জিতে নিলেন অলিম্পিকের সোনা। বাঙালি-রুশ এই মেয়ে রিদমিক জিমন্যাস্টিকসের ব্যক্তিগত অল-অ্যারাউন্ডে রিও অলিম্পিকে নিজের শ্রেষ্ঠত্ব প্রমাণ করেছেন। স্বদেশি বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন ইয়ানা কুদ্রিয়াভসেভাকে পেছনে ফেলে শনিবার তিনি হয়েছেন অলিম্পিক চ্যাম্পিয়ন। লিটার বাবা আবদুল্লাহ আল মামুন শিপার বর্তমানে মরণব্যাধি ক্যান্সারে ভুগছেন। রবিবার বাংলাদেশ সময় বেলা ১টার দিকে ইমোতে কথা হয় তার সঙ্গে। তিনি জানান, জুনিয়র পর্যায়ে মার্গারিটা কিছুদিন বাংলাদেশের পতাকা তুলে প্রতিযোগিতা করেছেন। সেটি অল্প সময়ের জন্য। মস্কোর মেয়ে শেষ পর্যন্ত সিনিয়র পর্যায়ে মায়ের দেশ রাশিয়াকেই বেছে নিয়েছেন। তবু তার অলিম্পিক সোনা জয়ের কীর্তির গৌরব ছড়িয়েছে বাংলাদেশ ও গ্রামের বাড়ি রাজশাহীর দুর্গাপুরের ক্ষিদ্র কাশীপুর গ্রামে। কারণ বিশ্বজুড়ে তার পরিচিতি এখন ‘দ্য বেঙ্গল টাইগার’। পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম তার ফেসবুক পেজে লিখেছেন, ‘এক-এগারো সরকারের সময় লিটা বাংলাদেশের হয়ে খেলতে আগ্রহ প্রকাশ করেছিলেন। তার বাবা আবদুল্লাহ আল মামুন সে সময় বাংলাদেশ অলিম্পিক অ্যাসোসিয়েশনে যোগাযোগ করেছিলেন বাংলাদেশের হয়ে লিটাকে অংশগ্রহণ করানোর জন্য। কিন্তু সে সময়ের সেনাশাসিত সরকার তার কথায় কোনো রকম পাত্তাই দেয়নি। তবু লিটার এই সাফল্যে বাংলাদেশি হয়ে গর্ব করতেই পারি।’ শনিবার রিও অলিম্পিকে রিদমিক জিমন্যাস্টিকে চ্যাম্পিয়ন হয়ে স্বর্ণপদক পাওয়ায় রাজশাহীর দুর্গাপুরের মেয়ে লিটাকে নিয়ে রীতিমতো দেশি-বিদেশি মিডিয়ায় হৈচৈ পড়ে গেছে। দুর্গাপুরের মেয়ে হয়েও বর্তমানে রাশিয়া কাঁপানো এই জিমন্যাস্টিক কন্যার খেতাব দেওয়া হয়েছিল ‘বাংলার বাঘিনী’।

রিতার বাবা প্রকৌশলী আবদুল্লাহ আল মামুন ওরফে শিপার রাজশাহীর দুর্গাপুর উপজেলার ক্ষিদ্র কাশীপুর গ্রামের ছেলে। ১৯৮৩ সালে শিক্ষাবৃত্তি নিয়ে তিনি রাশিয়ায় যান। পরে সেখানেই স্থায়ী হন। ১৯৯৫ সালের ১ নভেম্বর রাশিয়ার মস্কোতে জন্ম নেওয়া লিটার বাবা বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত আবদুল্লাহ আল মামুন প্রকৌশলী হলেও তার মা রাশিয়ান বংশোদ্ভূত আন্না একজন পেশাদার রিদমিক জিমন্যাস্ট ছিলেন। তাই ছোটবেলা থেকেই জিমন্যাস্টিকস চর্চা চালিয়ে গেছেন লিটা। ব্যক্তিগত জীবনে এখনো বিয়ে করেননি তিনি। তার একটি ছোট ভাইও আছে। নাম ফিলিপস। বর্তমানে তারা সপরিবারে রাশিয়ার মস্কোতে বসবাস করছেন। লিটার বাবা আবদুল্লাহ আল মামুনের বড় ভাই প্রাথমিক বিদ্যালয়ের অবসরপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক এ এস এম খসরু জানান, তাদের বাবা মৃত আবদুল খালেক ছিলেন একজন নামকরা কাপড় ব্যবসায়ী। মা মেহেরুন নিসা ছিলেন গৃহিণী। দুজনই মারা গেছেন। তাদের সাত ভাই-বোনের মধ্যে মামুন সবার ছোট। মেজো ভাই আবদুল মোতালিব জনতা ব্যাংকের প্রিন্সিপাল অফিসার ছিলেন। আরেক ভাই ডা. আবদুল মান্নান নাটোরের বাগাতীপাড়া উপজেলা স্বাস্থ্যকেন্দ্রের মেডিকেল অফিসার। বড় বোন বিনা জহুরা খাতুন পরিবার পরিকল্পনা অধিদফতরে চাকরি করতেন। অন্য দুই বোন জিনাত আরা ও ফজিলা আলম গৃহিণী। লিটার ফুফাতো ভাই শামসুজ্জোহা জানান, রাশিয়ার রিদমিক জিমন্যাস্ট দলের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ সদস্য লিটা। বেশ কয়েক দফা বাংলাদেশে এসেছেন তিনি। ভাঙা ভাঙা বাংলাও বলতে পারেন। ১৯৯৫ সালের ১ নভেম্বর জন্ম নেওয়া লিটা সাত বছর বয়স থেকেই রিদমিক জিমন্যাস্টিকস চর্চা শুরু করেন। ২০০৫ সাল থেকেই আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বিচরণ তার। লিটা জুনিয়র হিসেবে অনেকগুলো আন্তর্জাতিক টুর্নামেন্টে অংশ নিয়েছেন। জুনিয়র পর্যায়ে বাংলাদেশের হয়েও প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছেন তিনি। তবে একপর্যায়ে রাশিয়ার হয়েই এগিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন লিটা। লিটার চাচা এ এস এম খসরু জানান, মেয়ের সাফল্যে তারা খুবই খুশি। গ্রামজুড়ে চলছে আনন্দ। এখনো কথা হয়নি লিটার সঙ্গে। তবে রাশিয়ায় থাকা ভাই মামুনের সঙ্গে তারা কথা বলেছেন। মামুন জানিয়েছেন, তারা বেশ খুশি। তবে বাংলাদেশের হয়ে লিটা এই পদক অর্জন করতে পারলে খুশির মাত্রাটা অনেক বেশি হতো।

সর্বশেষ খবর