বুধবার, ২৪ আগস্ট, ২০১৬ ০০:০০ টা

আবার রাজনীতির আলোয় কবীর হোসেন

কাজী শাহেদ, রাজশাহী

আবার রাজনীতির আলোয় কবীর হোসেন

রাজশাহী মহানগরীর উপশহর এলাকার ৩৭১/৩ নম্বর বাড়িটি প্রবীণ রাজনীতিবিদ অ্যাডভোকেট কবীর হোসেনের। মাঝে অনেকটা নিস্তব্ধ ছিলেন। এখন আবারও সরব। সম্প্রতি বিএনপি ঘোষিত কমিটিতে তাকে দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার উপদেষ্টা করা হয়েছে। আর এরপর থেকেই ভিড় বেড়েছে ওই বাড়িটিতে। এক নেতার এক পদ—বিএনপির এমন ঘোষণার পর জেলা নগর রাজনীতিতে পদ পেতে এখন অনেকে ছুটছেন প্রবীণ এই নেতার বাড়িতে। ফলে আবারও রাজশাহীর রাজনীতির আলোয় কবীর হোসেন। কবীর হোসেনের ফিরে আসাকে ইতিবাচক হিসেবেই দেখছেন স্থানীয় বিএনপি নেতারা। বিএনপির কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক শাহীন শওকত জানান, তিনি প্রবীণ রাজনীতিবীদ। শারীরিক অসুস্থতার কারণে কিছুদিন নিষ্ক্রিয় ছিলেন। কিন্তু সব সময় পরামর্শ দিয়েছেন। এখন নতুন করে রাজনীতিতে সক্রিয় হওয়ায় বিএনপি উপকৃত হবে। বিএনপি সূত্র জানিয়েছে, মিজানুর রহমান মিনুরও রাজনীতিতে উত্থান প্রবীণ নেতা কবীর হোসেনের হাত ধরেই। কিন্তু মিনু বর্ষীয়ান রাজনীতিবিদ কবীর হোসেনকে টপকে রাজশাহী সদরের নিয়ন্ত্রণ নেন। ফলে কবীর হোসেনকে রাজশাহী-৬ (বাঘা-চারঘাট) আসনে সরে যেতে হয়। এরপর আর ফিরতে পারেননি কবীর হোসেন। তবে ২০০৯ সালের নির্বাচনে কবীর হোসেন রাজশাহী-২ (পবা-মোহনপুর) থেকে বিএনপির প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করে পরাজিত হন। এরপর প্রকাশ্য রাজনীতি থেকে সরে যান। বয়সের কারণে তিনি বাইরে চলাফেরাও করতে পারেন না। তবে ঘরে বসে কেন্দ্রের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করেছেন নিয়মিত। এরপরই ফল হিসেবে সদ্য ঘোষিত কমিটিতে তার স্থান হয়েছে উপদেষ্টার তালিকায়। তবে বিএনপির একটি সূত্র জানিয়েছে, কবীর হোসেন নতুন করে রাজনীতিতে আসায় চাঙ্গা হয়েছেন মিনু ও নাদিম বিরোধীরা। জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট কামরুল মনির, সাইফুল ইসলাম মার্শাল, সাবেক ছাত্রদল নেতা ও বর্তমান কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য আবু বকর সিদ্দিক, জেলা বিএনপির সহসভাপতি তোফাজ্জল হোসেন তপু রাজনীতির মাঠে সক্রিয় হয়েছেন। আগামী নির্বাচনে দলের প্রার্থী হতে তারা এখন থেকে মাঠে সক্রিয়। আবার জেলার সভাপতি হতে কেন্দ্রে যোগাযোগ রক্ষা করে চলেছেন কবীর হোসেনের ঘনিষ্ঠ আবু সাইদ চাঁদ। দলের নেতা-কর্মীরা বলছেন, রাজশাহীতে বিএনপির দীর্ঘদিন ধরেই আধিপত্য রয়েছে। কিন্তু মিজানুর রহমান মিনু ও নাদিম মোস্তফাকে মাইনাস করে এ আধিপত্য ধরে রাখা সহজ হবে না। প্রভাবশালী এ দুই নেতাকে কৌশলে আউট করে দেওয়ার পেছনে রিজভীর হাত আছে বলে মনে করছেন মিনু ও নাদিমের অনুসারীরা। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক বিএনপি নেতা জানান, এরশাদের আমলে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র সংসদের ভিপি ছিলেন রিজভী। ছাত্র রাজনীতির সময় থেকেই রিজভী কবির হোসেনের অনুসারী। বিএনপির রাজনীতিতে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেছেন তার ছত্রছায়াতেই। ১৯৮৫-৮৬ সালের দিকে রিজভী যখন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক তখন কবীর হোসেন রাজশাহীতে বিএনপির দাপুটে নেতা। ’৮৮-৮৯ সালে তার সমর্থন নিয়েই রিজভীকে ছাত্রদলের বিশ্ববিদ্যালয়ের সভাপতি করা হয়। রিজভী রাকসুর ভিপি এমনকি ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় সভাপতি নির্বাচিত হন এ নেতার আশীর্বাদেই। ফলে কবীর হোসেনের মাধ্যমে রাজশাহীর রাজনীতিতে রিজভীর ফেরার চেষ্টা বলেও অনেকে মনে করছেন। রাজশাহী সিটি করপোরেশনের বরখাস্ত হওয়া মেয়র মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুল বলেন, ‘দলের চেয়ারপারসন নিশ্চয়ই ভেবেচিন্তেই সঠিক সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। কমিটিতে কে থাকল আর কে থাকল না এ নিয়ে কারও কিছু বলার থাকতে পারে না।’ কবীর হোসেন সিনিয়র নেতা। তিনি রাজনীতিতে সক্রিয় হলে দল উপকৃত হবে বলে মনে করেন তিনি।

সর্বশেষ খবর