বৃহস্পতিবার, ২৫ আগস্ট, ২০১৬ ০০:০০ টা

পদ পেয়েও দায়িত্ব পালনে ব্যর্থদের ভবিষ্যৎ অন্ধকার

মাহমুদ আজহার

পদ পেয়েও দায়িত্ব পালনে ব্যর্থদের ভবিষ্যৎ অন্ধকার

মো. শাহজাহান

পদ পেয়েও যারা দায়িত্ব পালনে ব্যর্থ হবেন তাদের ভবিষ্যৎ ‘অন্ধকার’ বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির সদ্য ঘোষিত কমিটির ভাইস চেয়ারম্যান মো. শাহজাহান। তিনি বলেন, ‘এই মুহূর্তে দলে কী পদ পেলাম, না পেলাম— সেটা মুখ্য নয়। কিছু পাওয়ার চিন্তা না করে কিছু দেওয়ার চিন্তা করাই সময়ের দাবি। যারা এ মুহূর্তে কিছু না পেয়ে দলকে কিছু দেবেন, আমি দৃঢ়ভাবে বলতে পারি, আগামী দিনে তারাই দলের গুরুত্বপূর্ণ পদে আসবেন। কারও পদ চিরস্থায়ী নয়। কারণ, এই ত্যাগীরাই নেতা-কর্মীদের মন জয় করতে পারবেন। নেতা-কর্মীরাও বলবেন, এরা পদ না পেলেও দলের দুঃসময়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন। আর যারা পদ-পদবি পেয়েও ভূমিকা পালনে ব্যর্থ হবেন, তাদের রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ অন্ধকার।’ সম্প্রতি রাজধানীর শাহজাদপুরে নিজ বাসায় বাংলাদেশ প্রতিদিনের সঙ্গে খোলামেলা আলাপকালে এসব কথা বলেন দলের সাংগঠনিক পুনর্গঠনের এই প্রধান সমন্বয়ক। তিনি বলেন, ‘কমিটি করতে গিয়ে দুই-একটা ত্রুটি থাকতে পারে। দলীয় শৃঙ্খলার স্বার্থে সেটা মেনে নিতে হবে। মনে রাখতে হবে, দেশে আজ গণতন্ত্রের লেশমাত্র নেই। মানুষের মৌলিক অধিকার নেই। সরকার জঙ্গিবাদের নামে নিজেদের ক্ষমতা দীর্ঘায়িত করার চেষ্টায় লিপ্ত। আমরা নিজেরাই নিজেদের দ্বারা নিয়ন্ত্রিত না অন্যের দ্বারা নিয়ন্ত্রিত, সেই প্রশ্নও আজ সামনে এসে গেছে। এ অবস্থায় পদ-পদবির কথা চিন্তা না করে দেশ ও দলকে কিছু দেওয়ার কথা ভাবতে হবে সকলকে।’ ‘ঢাউস’ নির্বাহী কমিটি প্রসঙ্গে সাবেক এই হুইপ বলেন, ‘বিএনপি একটি বৃহৎ রাজনৈতিক দল। দেশে যদি একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন হয়, তাহলে বিএনপি নির্দ্বিধায় সংখ্যাগরিষ্ঠ আসনে ক্ষমতায় যাবে। যে দলে ব্যাপক জনসমর্থন রয়েছে, সে দলের নেতৃত্ব লাভের বা অর্জনের প্রত্যাশা অনেকেরই থাকবে— এটাই স্বাভাবিক। এ কারণে বিএনপির নির্বাহী কমিটির কলেবর কিছুটা বৃদ্ধি পেয়েছে। এ ছাড়া বিগত কয়েক বছর ধরে বিএনপি আন্দোলনে রয়েছে। সেখানে অনেকেই নেতৃত্বে সামনের কাতারে ছিলেন। অতীতে যাদের ওপর দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল, তাদের চেয়ে নতুন মুখগুলো অনেক ক্ষেত্রে ভালো ভূমিকা পালন করেছে। তাদেরও ওপরের সারিতে নেওয়া হয়েছে। ছাত্রদল ও যুবদলের সাবেক অনেক নেতাকেই কমিটিতে নিয়ে আসা হয়েছে। অনেক তরুণ নেতৃত্ব বিএনপির নির্বাহী কমিটিতে এসেছে। এটা ইতিবাচক বলেই মনে করি।’ উদাহরণ টেনে মো. শাহজাহান বলেন, ‘একসময় শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান যখন একটি বড় বাজেট ঘোষণা করেন, তখন সমালোচনা হয়, এত ছোট দেশে বড় বাজেট কেন? তখন জিয়াউর রহমান বলেছিলেন, এ বাজেট অনেক ছোট। বাংলাদেশের সম্ভাবনা আর উন্নয়নে এমন এক সময় আসবে, যখন হাজার হাজার কোটি কোটি টাকার বাজেট আসবে। এই কমিটি নিয়েও অনেকেই অবাক হতে পারেন। কিন্তু এতে অবাক হওয়ার কিছু নেই। আজকে প্রবীণ-নবীন ও ত্যাগীদের সমন্বয় করা হয়েছে কমিটিতে। বিভিন্ন পেশাজীবীকে সম্পৃক্ত করা হয়েছে। সব পর্যায় থেকেই অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগাতেই কমিটির অবয়ব কিছুটা বেড়েছে। আমি মনে করি, আজ বিএনপি যা করেছে, আগামীতে অন্যকে এর অনুসরণ করতে হবে।’ নির্বাহী কমিটি সম্পর্কে মূল্যায়ন করতে গিয়ে বিএনপির এই নেতা বলেন, ‘বিএনপির কমিটিতে তেমন কোনো নেতিবাচক দিক আমি দেখি না। হয়তো আমার চোখে না ধরা পড়লেও অন্যের চোখে দুই-একটি ভুলত্রুটি থাকতেই পারে। ব্যাপক অনিয়ম বা ভুল নেই বলে আমি বিশ্বাস করি। ছোটখাটো ভুলভ্রান্তিকে বড় করে দেখার সুযোগ নেই। যদি থাকে তা সংশোধন করার এখতিয়ারও চেয়ারপারসনকে দেওয়া আছে। তিনি দেখবেন, কোথায় ভুল হয়েছে। চেয়ারপারসন বেশ কিছুদিন চিন্তাভাবনা করে এ কমিটি দিয়েছেন। তিনি আজ পর্যন্ত যেসব সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, তা সঠিক হয়েছে বলেই আমার বিশ্বাস। এখন উচিত হবে, দ্রুত সম্ভব সংগঠনের কাজে নেমে পড়া। একটি মুহূর্ত নষ্ট করা উচিত নয়। দেশ একটি সংকটময় মুহূর্তে আছে।’

কমিটিতে জ্যেষ্ঠতা লঙ্ঘন বা অবমূল্যায়ন প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘এখন কমিটি নিয়ে কিছু সমস্যা হলেও তা সাময়িক। এটা নিয়ে এক স্থানে স্থির থাকা ঠিক নয়। দলে রাজনীতি করার জন্য অনেকেই উৎসাহিত হবে। এক পদের রাজনীতি করার কারণে উৎসাহ-উদ্দীপনা বাড়বে। সংগঠন প্রাণবন্ত ও গতিশীল হবে। আমরা বলছি, যারা দুই পদে আছেন, তাদের একটি রেখে আরেকটি ছেড়ে দিতে হবে শিগগিরই। তারা চেয়ারপারসন বা মহাসচিব বরাবর আবেদন করে এই পদ ছাড়বেন। আর যদি কেউ সিদ্ধান্ত নিতে না পারেন, তাদের ব্যাপারে কেন্দ্রই সিদ্ধান্ত নেবে। সেখানে বেশ কিছু পদ শূন্য হবে। তা ছাড়া বিষয়ভিত্তিক উপকমিটিতেও জায়গা হবে অনেকেরই।’মো. শাহজাহান বলেন, ‘সময় ও যুগের সঙ্গে তাল মিলিয়ে দলের নেতৃত্ব তৈরি করতে হবে। নতুন নতুন কাঠামো সৃষ্টি করতে হবে। এ বিষয়ে আমরা যে কাছাকাছি পৌঁছেছি, তা বলব না। আমাদের কিছু ভুলভ্রান্তি থাকলেও চেষ্টা আছে, ভাবনা আছে। এরই বহিঃপ্রকাশ ৫০২ সদস্যের নির্বাহী কমিটি।’ চলমান জঙ্গিবাদ ইস্যুতে তিনি বলেন, ‘দেশে জঙ্গিবাদ যতটুকু না আছে, জঙ্গিবাদ সৃষ্টি করে তার ওপর ভর করে ক্ষমতাকে দীর্ঘায়িত করার চেষ্টায় লিপ্ত সরকার। জঙ্গিবাদকে ঢাল হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে। জঙ্গিবাদকে ব্যবহার করে ক্ষমতায় থাকার যে চিন্তা সরকার করছে, আমি মনে করি, সাপের লেজ নিয়ে সরকার কান চুলকাচ্ছে।’

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর