বৃহস্পতিবার, ২৫ আগস্ট, ২০১৬ ০০:০০ টা

ধর্মঘটের দ্বিতীয় দিনেও অচল নৌ যোগাযোগ

নিজস্ব প্রতিবেদক

মজুরি বৃদ্ধিসহ ১৫ দফা দাবিতে নৌ শ্রমিকদের ডাকা অনির্দিষ্টকালের ধর্মঘটের দ্বিতীয় দিনে গতকালও সারা দেশে নৌ চলাচল ব্যাহত হয়েছে। ফলে চট্টগ্রাম বন্দরের বহির্নোঙ্গরে সব ধরনের পণ্য খালাস বন্ধ ছিল। বরিশাল নদী বন্দর থেকে লঞ্চ, কার্গো এবং তেলবাহী জাহাজ চলাচল করেনি। সারা দেশে অন্যান্য নৌপথেও নৌযান চলাচল বন্ধ ছিল। গত সোমবার দিনগত মধ্যরাত থেকে এ ধর্মঘট শুরু হয়েছে।

এদিকে আকস্মিক ধর্মঘটের ফলে অচল হয়ে পড়েছে নৌপথে সব ধরনের যোগাযোগ ব্যবস্থা। এ অবস্থায় গতকাল রাত সাড়ে ৭টায় নৌ পরিবহন শ্রমিক ও মালিক বিভিন্ন সংগঠনের নেতাদের নিয়ে শ্রম অধিদফতরে বৈঠক করেছেন শ্রম মন্ত্রণালয় কর্তৃক মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্তি সচিব মিয়া আবদুল্লাহ মামুনের নেতৃত্বে গঠিত পাঁচ সদস্যের কমিটি। আমাদের চট্টগ্রাম অফিস জানিয়েছে, চার দফা বাস্তবায়নের দাবিতে গতকাল দ্বিতীয় দিনের মতো অনির্দিষ্টকালের ধর্মঘট পালন করেছেন নৌযান শ্রমিকরা। এ কারণে চট্টগ্রাম বন্দরের বহির্নোঙ্গরে সব ধরনের পণ্য খালাস বন্ধ ছিল। বাংলাদেশ নৌ শ্রমিক সংগ্রাম পরিষদের আহ্বায়ক ওয়েজুল ইসলাম বুলবুল জানান, মালিকরা সরকার ঘোষিত মজুরি কাঠামো বাস্তবায়ন না করায় অনির্দিষ্টকালের ধর্মঘট কর্মসূচি চলছে। বরিশাল থেকে নিজস্ব প্রতিবেদক জানিয়েছেন, নৌযান শ্রমিক সংগ্রাম পরিষদের ধর্মঘটের দ্বিতীয় দিনে গতকাল স্থানীয় রুটে যাত্রীবাহী লঞ্চ, মালবাহী কার্গো ও জ্বালানিবাহী অয়েল ট্যাংকার চলাচল বন্ধ ছিল। তবে ঢাকা থেকে দক্ষিণাঞ্চলের বিভিন্ন রুটে সীমিত আকারে কিছু বিলাসবহুল লঞ্চ চলেছে। অভ্যন্তরীণ রুটের লঞ্চ চলাচল বন্ধ থাকায় সাধারণ যাত্রীদের ভোগান্তি পোহাতে হয়। যাত্রীদের অনেকে বাধ্য হয়ে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে ট্রলার-স্পিডবোটে গন্তব্যের উদ্দেশ্যে গেছেন। এদিকে মালবাহী কার্গো চলাচল না করায় ব্যবসায়ীরাও পড়েছেন বিপাকে। জানা গেছে,  বরিশালের পদ্মা, মেঘনা ও যমুনা ডিপোতে জ্বালানি তেল পৌঁছানো যায়নি। ধর্মঘট অব্যাহত থাকলে বরিশালের তেলভিত্তিক বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্রেও উৎপাদন ব্যাহত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। এদিকে দাবি আদায়ের সমর্থনে গতকাল সকাল ১১টায় বরিশাল নদী বন্দরে সমাবেশ করেছেন ধর্মঘটি নৌযান শ্রমিকরা। দাবি না মানা পর্যন্ত তারা ধর্মঘট অব্যাহত রাখার কথা বলেন। বাগেরহাট প্রতিনিধি জানান, মংলা বন্দরে ১২টি দেশি-বিদেশি বাণিজ্যিক জাহাজের পণ্য বোঝাই-খালাস ও পরিবহন কাজ সম্পূর্ণ বন্ধ রয়েছে। পণ্য ও যাত্রীবাহী নৌযান চলাচল বন্ধ থাকায় মংলা বন্দরের সঙ্গে সারা দেশের নৌ যোগাযোগও বন্ধ রয়েছে। ধর্মঘটের কারণে লাইটারেজ জাহাজ না পাওয়ায় মংলা বন্দরে জাহাজের পণ্য খালাসে শ্রমিক নিয়োগ দেওয়া যায়নি। মংলা বন্দর চ্যানেলে পণ্য খালাসের অপেক্ষায় অলস পড়ে রয়েছে এসব বিদেশি জাহাজ। নৌযান শ্রমিকরা মংলার পশুর, শরণখোলার বলেশ্বর ও মোরেলগঞ্জের পানগুছি নদীতে নোঙ্গর করে রেখেছেন কয়েকশ কার্গো, কোস্টার, বার্জসহ লাইটারেজ জাহাজ। পণ্য পরিবহন বন্ধ থাকায় মংলা বন্দরের শিল্প এলাকায় বিভিন্ন কল-কারখানার উৎপাদন ব্যাহতের আশঙ্কা করছেন সংশ্লিষ্টরা। ব্রাহ্মণবাড়িয়া প্রতিনিধি জানান, ধর্মঘটের দ্বিতীয় দিনে আশুগঞ্জ বন্দর থেকে যাত্রীবাহী লঞ্চ, বাল্কহেড, তেলবাহী ট্যাংকার, বালুবাহী নৌকা, লাইটার জাহাজসহ সব ধরনের নৌযান চলাচল বন্ধ ছিল। সিরাজগঞ্জ প্রতিনিধি জানান, বাঘাবাড়ী নৌবন্দর ধর্মঘটের দ্বিতীয় দিনেও অচল ছিল। কোনো জাহাজ নোঙ্গর করেনি এবং কোনো জাহাজ ছেড়ে যায়নি। মালামাল লোড-আনলোড করছেন না কোনো নৌযান শ্রমিক। নারায়ণগঞ্জ প্রতিনিধি জানান, নারায়ণগঞ্জ বন্দর থেকে নৌযান চলাচল বন্ধ রয়েছে। নারায়ণগঞ্জ থেকে স্বল্প দূরত্বের কিছু লঞ্চ ছেড়ে গেলেও দূরপাল্লার লঞ্চগুলো চলাচল করেনি। অয়েল ট্যাংকারগুলো হরতালের আওতামুক্ত থাকলেও বিভিন্ন ধরনের পণ্যবাহী নৌযান চলাচল করছে না। আর দূরপাল্লার যাত্রীবাহী লঞ্চ চলাচল বন্ধ থাকায় যাত্রীরা দুর্ভোগে পড়েছেন। এদিকে গতকাল বিকালে নারায়ণগঞ্জ শহরে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করেন নৌযান শ্রমিকরা।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর