শুক্রবার, ২৬ আগস্ট, ২০১৬ ০০:০০ টা
ইতালিতে নিহত ২৪৭

১৭ ঘণ্টা পর উদ্ধার হলো জীবিত শিশু

প্রতিদিন ডেস্ক

১৭ ঘণ্টা পর উদ্ধার হলো জীবিত শিশু

শক্তিশালী ভূমিকম্পে মধ্য ইতালির একটি শহর প্রায় নিশ্চিহ্ন হয়ে গেছে। শহরজুড়ে এখন শুধু ধ্বংসস্তূপ। ধারণা করা হচ্ছে, ধ্বংসস্তূপের ভিতরে আছে অনেক লাশ। প্রায় চার হাজার কর্মী দিনরাত উদ্ধার অভিযান চালনা করছেন। সেই ধ্বংসস্তূপ থেকে উদ্ধারকারীরা গত রাতে উদ্ধার করেছেন ৮ মাস ও ৯ বছর বয়সী দুই শিশুর লাশ। মা-বাবার সঙ্গে তারাও ভবনচাপা পড়ে মারা গেছে। তাদের লাশ দেখে সেখানে উপস্থিত লোকজন কান্না ধরে রাখতে পারেননি। সেই কান্না যেন পুরো ইতালিকে গ্রাস করেছে। যারা বেঁচে আছেন তাদের বাঁচার আকুতি। কেন এমন হলো? স্বজন হারানো মানুষের মাতম আর আহতদের আর্তনাদে সেখানকার আকাশ-বাতাস ভারি হয়ে উঠেছে।

 এর মধ্যে নিহতের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে কমপক্ষে ২৪৭-এ। এর মধ্যে রেইতি প্রদেশ থেকে ১৯০ এবং আসকোলি পিসেনো প্রদেশে থেকে ৫৭ লাশ উদ্ধার হয়েছে। এখনো অসংখ্য মানুষ নিখোঁজ। আহত অনেকের অবস্থা আশঙ্কাজনক। ফলে নিহতের সংখ্যা আরও বাড়ার আশঙ্কা রয়েছে। জরুরি ভিত্তিতে আক্রান্তদের কীভাবে সহায়তা দেওয়া যায় তা নির্ধারণে গতকাল জরুরি মন্ত্রিপরিষদের সভা করেন প্রধানমন্ত্রী মাত্তিও রেনজি। অনেক এলাকায় জরুরি অবস্থাও জারি করা হয়েছে। মঙ্গলবার রাতের শেষভাগে ৬.২ মাত্রার ভূমিকম্প বিরানভূমি করে দিয়েছে ইতালির মধ্যাঞ্চল। আমাত্রিস শহরে প্রখ্যাত হোটেল রোমা ধসে পড়েছে। এতে ছিলেন ৭০ জন অতিথি। সেখান থেকে মাত্র ৭টি মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। বাকিদের এখনো কোনো হদিস  মেলেনি। এ শহরের মেয়র বলেছেন, এবারের ভূমিকম্পে এ শহরটিই সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। মাটির সঙ্গে মিশে গেছে  লোকালয়। রাস্তাগুলোতে মারাত্মক সব ফাটল দেখা দিয়েছে। ফলে  যোগাযোগ বিঘ্নিত হচ্ছে। এটি পাহাড়ি এলাকা হওয়ায় ভূমিধসের সমূহ আশঙ্কা করা হচ্ছে। যারা বেঁচে আছেন তাদের অবস্থাও নাজুক। হাজার হাজার মানুষ অবস্থান করছেন তাঁবুতে। আশ্রয় নেওয়া আলেসান্দ্রো গাব্রিয়েলি বলেন, রাতগুলো হবে আমাদের কাছে সবচেয়ে ভীতিকর। প্রতিটি তাঁবুতে অবস্থান করছেন ১২ জন করে মানুষ। এমন তাঁবু পাতা হয়েছে খোলা আকাশের নিচে, পার্কিং এলাকায়। আলেসান্দ্রো বলেন, মঙ্গলবার রাতে আমাদের ঘুম  ভেঙেছে বিকট শব্দে। মনে হচ্ছিল বিকট শব্দে বোমা বিস্ফোরিত হয়েছে কোথাও। ইতালির এ ভূমিকম্পে সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হয়েছে ল্যাজিও ও মারচে অঞ্চলে। সবচেয়ে বেশি মানুষ মারা গেছেন ল্যাজিওতে। ভূমিকম্পে পার্শ্ববর্তী আমব্রিয়াও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এ তিনটি অঞ্চলেই দীর্ঘদিন ধরে কয়েক শতাব্দীর পুরনো ভবনকে চিহ্নিত করা হয়েছে। বলা হয়েছে এগুলো ভূমিকম্পের জন্য ঝুঁকিপ্রবণ।

১৭ ঘণ্টা পর জীবিত শিশু উদ্ধার : ভয়াবহ ভূমিকম্পের পর মধ্য ইতালির পেসকারা দেল ত্রোনতো এলাকায় একটি ধসে পড়া ভবনে উদ্ধারকাজ চালাচ্ছিলেন এক দল কর্মী। হঠাৎ ধ্বংসস্তূপের মধ্যে কিছু একটা শুনতে পেলেন এক উদ্ধারকর্মী। চিৎকার করে সবাইকে চুপ থাকতে বললেন ওই কর্মী। তারপর দ্রুত শব্দের উত্পত্তি খুঁজতে শুরু করলেন। এক সময় ধ্বংসস্তূপের নিচে পাওয়া গেল ছোট্ট একটি শিশুর খোঁজ। তাকে দেখে চিৎকার করে ওঠেন এক উদ্ধারকর্মী। ‘সে বেঁচে আছে’ বলে বার বার চিৎকার করতে থাকেন তিনি। বিরাট ভবনের নিচে ধ্বংসস্তূপের মধ্যে পুরো ১৭ ঘণ্টা আটকে থাকার পর জীবিত উদ্ধার করা হয় ১০ বছর বয়সী এই মেয়েশিশুটিকে। অবাক করার মতো বিষয় হলো, এই দীর্ঘ সময়েও খুব বেশি আহত হয়নি সে।  উদ্ধারকাজের প্রকাশিত এক ভিডিওচিত্রের বরাত দিয়ে মেইল অনলাইন জানিয়েছে, ধীরে থীরে ধুলার আবরণে ঢাকা ছোট্ট শিশুটিকে সাবধানে উদ্ধার করে আনেন উদ্ধারকর্মীরা। দ্রুত শিশুটিকে কোলে করে জরুরি চিকিৎসার জন্য নিয়ে যান এক কর্মী। এ সময় উল্লাসে ফেটে পড়েন ঘটনাস্থলে উপস্থিত মানুষ। এএফপি, বিবিসি

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর