শুক্রবার, ২৬ আগস্ট, ২০১৬ ০০:০০ টা

আওয়ামী লীগে তত্পরতা বিএনপিতে অনিশ্চয়তা

ডিসেম্বরে জেলা পরিষদ নির্বাচন

মাহমুদ আজহার ও রফিকুল ইসলাম রনি

ডিসেম্বরে অনুষ্ঠিত হবে জেলা পরিষদ নির্বাচন। ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনের পর এবার জেলা পরিষদ নির্বাচনও দলীয় প্রতীকে করা হচ্ছে। ওই নির্বাচনের খসড়াও প্রস্তুত। চলছে সীমানা নির্ধারণের কাজ। এ নিয়ে ব্যস্ত জেলা প্রশাসকরা। সীমানা নির্ধারণে গণবিজ্ঞপ্তিও জারি করা হচ্ছে। আওয়ামী লীগের মনোনয়নপ্রত্যাশীরা দৌড়ঝাঁপ শুরু করেছেন। নেতাদের অনেকেই এখন ঢাকায়। প্রভাবশালী নেতাদের দ্বারে দ্বারে ঘুরছেন তারা। তদবিরে এগিয়ে অনির্বাচিত জেলা পরিষদের প্রশাসকরা। তবে এ নির্বাচনে আগ্রহ নেই বিএনপির। এর পরও পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। অন্যদিকে সংসদের বিরোধী দল জাতীয় পার্টি এ নির্বাচনে অংশ নেবে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে।

২০০৯ সালে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন মহাজোট সরকার গঠন করলে বিদ্যমান আইন অনুযায়ী ২০১১ সালের ১৫ ডিসেম্বর দেশের তিন পার্বত্য জেলা বাদে বাকি ৬১টি জেলা পরিষদে অনির্বাচিত প্রশাসক নিয়োগ দেওয়া হয়। এদের সবাই ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের নেতা। এর পর থেকে এভাবেই চলছে স্থানীয় সরকারের এ গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠান। তবে এখন সরকার নির্বাচিত প্রতিনিধি করতে প্রয়োজনীয় আইন তৈরি করছে। জানা যায়, বেশ কিছু বিধান অন্তর্ভুক্ত করে জেলা পরিষদ (সংশোধন) অধ্যাদেশ, ২০১৬-এর খসড়া চূড়ান্ত করেছে স্থানীয় সরকার বিভাগ। এতে বলা হয়েছে, ‘কোনো জনপ্রতিনিধি জেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান অথবা সদস্যপদে প্রার্থী হতে পারবেন না। এ ছাড়া ফৌজদারি মামলায় অভিযোগপত্র গৃহীত হলে তিনিও অংশ নিতে পারবেন না। একইভাবে জনস্বার্থ পরিপন্থী কোনো কাজ করলে সংশ্লিষ্ট চেয়ারম্যান ও সদস্যকে সাময়িক বরখাস্ত করতে পারবে সরকার। পাশাপাশি জেলা পরিষদের কোনো সম্পত্তি অর্জন ও হস্তান্তর করতে সরকারের অনুমতি নেওয়া বাধ্যতামূলক।’

আওয়ামী লীগ : ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে দলীয় প্রতীকে ভালো ফল পাওয়ার পর জেলা পরিষদ নির্বাচন দলীয় প্রতীকে করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। ২২ জুলাই আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী সংসদের বৈঠকে এ সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়। দলীয় সূত্রমতে, বিএনপিকে ব্যস্ত রাখতেই অনেকটা এ নির্বাচনের পথে হাঁটছে সরকার। তাই নির্বাচন দিয়ে তাদের মাঠে ব্যস্ত রাখতে ৬৪টি জেলা পরিষদ নির্বাচনকে ‘ট্রাম্পকার্ড’ হিসেবেই দেখছেন তারা। এ নির্বাচন ধাপে ধাপে করলে ডিসেম্বর থেকে আগামী মার্চ মাস পর্যন্ত লেগে যাবে। এ ছাড়া সামনে নারায়ণগঞ্জ ও কুমিল্লা সিটি করপোরেশন নির্বাচন রয়েছে। এ নির্বাচনগুলো পার করতে বিএনপি আন্দোলন থেকে সরে আসবে। সরকারও আয়েশে উন্নয়ন কর্মকাণ্ড পরিচালনা করতে পারবে। জানা যায়, জেলা পরিষদ নির্বাচনে প্রার্থী হতে ইতিমধ্যে জেলার নেতারা দৌড়ঝাঁপ শুরু করেছেন। তারা এখন ঢাকায় যোগাযোগ করছেন প্রভাবশালী নেতা ও দলের নীতিনির্ধারকদের সঙ্গে। নানাভাবে দলীয় সভানেত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণেরও চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন তারা। গত তিন দিন আওয়ামী লীগ সভানেত্রীর ধানমন্ডির কার্যালয়ে এবং সিনিয়র নেতাদের বাসা-অফিসে বিভিন্ন জেলা নেতাদের পদচারণ দেখা গেছে। এ প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর কবির নানক বলেন, দলের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের সভায় জেলা পরিষদ নির্বাচন করার সিদ্ধান্ত হয়েছে। দলীয়ভাবে প্রার্থী দেওয়া হবে কি না জানতে চাইলে নানক জানান, অবশ্যই দল থেকে প্রতিটি জেলায় চেয়ারম্যান পদে প্রার্থী দেওয়া হবে। আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য, গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন বলেন, ‘বর্তমান সরকারের আমলে উপজেলা, পৌরসভা ও ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচন সম্পন্ন হয়েছে। এসব নির্বাচনে বিজয়ীদের সিংহভাগ জনপ্রতিনিধিই আমাদের দলের নেতা-কর্মী। এখন জেলা পরিষদ নির্বাচন হলে আমাদের প্রার্থীরাই বিজয়ী হবেন। এ ছাড়া প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তৃণমূল পর্যায়ে জবাবদিহি নিশ্চিত করতে চান বলেই জেলা পরিষদ নির্বাচনের উদ্যোগ গ্রহণ করা হচ্ছে।’ এই সিনিয়র নেতার মতে, এ নিয়ে পরবর্তী সময়ে পার্টির কার্যকরী ফোরামে আরও আলোচনা করে পুরো নির্বাচনী পদ্ধতি নির্ধারণ করা হবে। উপজেলা ও সিটি করপোরেশন নির্বাচনের মতো জেলা পরিষদ নির্বাচনেও দলীয় প্রতীক ব্যবহার ও প্রার্থী দেওয়া হবে। এ জন্য প্রয়োজনীয় আইন সংশোধনের জন্য কাজ শুরু করতে সংশ্লিষ্ট শাখায় নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।

বিএনপিতে অনিশ্চয়তা : জেলা পরিষদ নির্বাচনে অংশগ্রহণ নিয়ে বিএনপিতে অনিশ্চয়তা বিরাজ করছে। এ নিয়ে দলের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ে কোনো সিদ্ধান্ত না হলেও জেলা পর্যায়ের অনেক নেতাই ব্যক্তিগতভাবে এ নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে চান। তারা কেন্দ্রের সবুজ সংকেতের অপেক্ষায় আছেন। তবে এ সরকারের আমলে স্থানীয় সরকার নির্বাচনে অংশ নেওয়ার বিরূপ অভিজ্ঞতায় জেলা পরিষদ নির্বাচনে দলটি অংশগ্রহণ নাও করতে পারে। দলের একাধিক সিনিয়র নেতার সঙ্গে কথা বলে এমন আভাস পাওয়া গেছে। অবশ্য তারা এও বলেছেন, পরিবর্তিত পরিস্থিতিও বিবেচনায় নেওয়া হবে। দলের কেন্দ্রীয় নেতারা জানান, শেখ হাসিনার অধীনে ভবিষ্যতে কোনো নির্বাচনই সুষ্ঠু হবে না। তা স্থানীয় সরকার হতে পারে, হতে পারে জাতীয় নির্বাচন। তাই এ নির্বাচনে অংশ নেওয়ার কোনো প্রয়োজনই নেই। সর্বশেষ ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে এর তিক্ত অভিজ্ঞতা পাওয়া গেছে। তবে জেলা পরিষদ নির্বাচন নিয়ে পরিবর্তিত পরিস্থিতি বিবেচনায় নিয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। এ প্রসঙ্গে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান মো. শাহজাহান বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘জেলা পরিষদ নির্বাচন নিয়ে বিএনপি এ মুহূর্তে কিছুই ভাবছে না। বিএনপি এখন দল গোছানো আর জাতীয় সংকট নিয়েই কাজ করে যাচ্ছে। যেহেতু স্থানীয় সরকারের নির্বাচিত প্রতিনিধিরাই ওই নির্বাচনে ভোটাধিকার পাবেন, সে ক্ষেত্রে বিএনপির অংশগ্রহণের সম্ভাবনা এখনই স্পষ্ট করে বলা যাবে না। কারণ বিগত সব স্থানীয় সরকার নির্বাচনে জনমতের প্রতিফলন ঘটেনি। অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন না হওয়ায় বিএনপির প্রতিনিধিও কম।’

অংশ নেবে জাপা : জেলা পরিষদ নির্বাচনে অংশ নেবে জাতীয় পার্টি। দলের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের সূত্রগুলো জানায়, জাতীয় পার্টি নির্বাচনে অংশ নেওয়ার প্রস্তুতি শুরু করেছে। জেলা পর্যায়ের প্রার্থিতাও গোপনে খোঁজা হচ্ছে। এ নিয়ে শিগগিরই উচ্চপর্যায়ের বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে। এর পরই আনুষ্ঠানিকভাবে নির্বাচনযুদ্ধে নামবেন জাতীয় পার্টির প্রার্থীরা।

এ প্রসঙ্গে জাতীয় পার্টির মহাসচিব রুহুল আমিন হাওলাদার বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘জাতীয় পার্টি নির্বাচনে বিশ্বাসী। আমরা মনে করি নির্বাচনের মাধ্যমেই নেতা নির্বাচন করা যায়। এরই অংশ হিসেবে আগামীতে সব নির্বাচনেই জাতীয় পার্টি অংশ নেবে। তবে এ নিয়ে শিগগিরই দলের হাইপ্রোফাইল বৈঠকে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।’

অধ্যাদেশে যা আছে : জেলা পরিষদ প্রস্তাবিত অধ্যাদেশের খসড়ায় বলা হয়েছে, নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের জেলা পরিষদের সব পদে প্রার্থী হওয়ার সুযোগ রহিত করা হয়েছে। বিদ্যমান আইনে শুধু জাতীয় সংসদ সদস্য প্রার্থী হতে পারবেন না বলে উল্লেখ আছে। তবে স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানের জনপ্রতিনিধিদের বিষয়ে কোনো কিছু বলা নেই। প্রস্তাবিত অধ্যাদেশে উল্লেখ করা হয়, জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান, সদস্য ও সংরক্ষিত মহিলা আসনের সদস্যপদে বাংলাদেশের যে কোনো নাগরিক প্রার্থী হতে পারবেন। তবে তার বয়স ২৫ বছরের বেশি হতে হবে। পাশাপাশি সংশ্লিষ্ট  জেলার ভোটার তালিকায় তার নাম থাকতে হবে। এ ছাড়া প্রজাতন্ত্রের বা পরিষদের বা অন্য কোনো স্থানীয় কর্তৃপক্ষের কোনো কর্মে লাভজনক সার্বক্ষণিক পদে অধিষ্ঠিত ব্যক্তিরা এসব পদের প্রার্থী হিসেবে যোগ্য বলে বিবেচিত হবেন না। ভোটার কারা হবেন এ বিষয়ে বিদ্যমান আইনের ধারাই বহাল রাখা হয়েছে প্রস্তাবিত অধ্যাদেশে। জেলা পরিষদের নির্বাচনে স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানের সব জনপ্রতিনিধিই ভোটার থাকবেন। তবে জনপ্রতিনিধিদের পদের নাম-সংক্রান্ত কিছু বিষয় সংশোধন করা হয়েছে। বিদ্যমান আইনে উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যানরা ভোটার ছিলেন না। নতুন অধ্যাদেশে সিটি করপোরেশন ও পৌরসভার ‘ওয়ার্ড কমিশনারে’র বদলে ‘কাউন্সিলর’ শব্দ যোগ করা হয়েছে। পাশাপাশি পৌরসভার ‘চেয়ারম্যানে’র জায়গায় স্থলাভিষিক্ত করা হয়েছে ‘মেয়র’।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর