রবিবার, ২৮ আগস্ট, ২০১৬ ০০:০০ টা

মাস্টারমাইন্ড তামিমসহ নিহত তিন জঙ্গি

অন্য দুজন কল্যাণপুরের পলাতক ইকবাল ও মানিক

নিজস্ব প্রতিবেদক ও নারায়ণগঞ্জ প্রতিনিধি

মাস্টারমাইন্ড তামিমসহ নিহত তিন জঙ্গি

অভিযানের পর নিহত তিন জঙ্গির লাশ নিয়ে যায় পুলিশ। নিহত মাস্টারমাইন্ড তামিম (ডানে) —বাংলাদেশ প্রতিদিন

গুলশান ও শোলাকিয়ায় জঙ্গি হামলার দুই মাস্টারমাইন্ডের একজন কানাডাপ্রবাসী তামিম চৌধুরী তার দুই সহযোগীসহ নিহত হয়েছেন। গতকাল নারায়ণগঞ্জের পাইকপাড়া কবরস্থানের কাছের তিন তলা ‘দেওয়ানবাড়ি’তে জঙ্গি আস্তানার সংবাদে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা অভিযান চালান। এ সময় তুমুল সংঘর্ষ বাধে। জঙ্গিরা তিন তলার উত্তর দিকের একটি ফ্ল্যাট থেকে পুলিশকে লক্ষ্য করে গ্রেনেড ছুড়ে মারে। একে-২২ রাইফেল ও পিস্তল দিয়ে গুলি চালায়। পুরো তিন তলা ভবন ঘিরে থাকা অত্যাধুনিক সব অস্ত্রশস্ত্রে সজ্জিত ডিএমপির কাউন্টার টেররিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম ইউনিট (সিটি) ও সোয়াতের প্রশিক্ষিত সদস্যরা পাল্টা গুলি ছুড়তে থাকেন। সকাল ৯টা ৩৫ মিনিট থেকে ১০টা ৩৫ মিনিট পর্যন্ত ১ ঘণ্টা ধরে চলে ‘অপারেশন হিট স্ট্রং-টোয়েন্টি সেভেন’ নামের এ অভিযান। গুলিতে ঝাঁঝরা হয়ে যাওয়া ফ্ল্যাটের দরজা ভেঙে ভিতরে ঢুকে পড়েন পুলিশ সদস্যরা। ভিতরে পড়ে থাকা তামিমসহ তিন জঙ্গির রক্তাক্ত লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। অভিযানের আগে এ তিন জঙ্গিকে আত্মসমর্পণের জন্য হ্যান্ডমাইকে পুলিশ আহ্বান জানায়। পুলিশ জানিয়েছে, ‘অপারেশন হিট স্ট্রং-টোয়েন্টি সেভেন’ নামের সফল এ অভিযানের মধ্য দিয়ে খতম হলো সাম্প্রতিক সময়ের ‘মোস্ট ওয়ান্টেড’ জঙ্গি নেতা তামিম চৌধুরী। তাকে ধরতে ইতিমধ্যে ২০ লাখ টাকা পুরস্কার ঘোষণা করেছে পুলিশ সদর দফতর। নিহত অন্য দুই জঙ্গি দুর্ধর্ষ জঙ্গি মানিক ও ইকবাল। এদের মধ্যে মানিক কল্যাণপুরের ঘাঁটিতে অভিযান চলাকালে অস্ত্রসহ পালিয়ে যান। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর টার্গেটে এখন আরেক মাস্টারমাইন্ড মেজর (বরখাস্ত) জিয়া।

অভিযানের পর পুলিশ ওই ফ্ল্যাট থেকে জঙ্গিদের ব্যবহূত একে-২২ রাইফেল, ১টি পিস্তল ও ৪টি তাজা গ্রেনেড উদ্ধার করেছে। এ ছাড়া উদ্ধার করেছে পুড়ে যাওয়া কিছু নথিপত্র ও ল্যাপটপ। জিজ্ঞাসাবাদের জন্য পুলিশ দেওয়ানবাড়ির মালিক ও তার স্ত্রী-সন্তানসহ ১০ জনকে আটক করেছে। সন্ধ্যার পর তিন জঙ্গির লাশ নেওয়া হয় নারায়ণগঞ্জ সদর হাসপাতালে। এর আগে রাজধানীর কল্যাণপুরে জঙ্গি আস্তানায় ‘স্টর্ম-২৬’ নামে অভিযান পরিচালনা করেছিল পুলিশের কাউন্টার টেররিজম ইউনিট ও পুলিশ সদর দফতরের এলআইসি শাখা। ওই অভিযানে নয় জঙ্গি নিহত হয়। এরও আগে রাজধানীর গুলশানে হলি আর্টিজান রেস্তোরাঁয় হামলার পর সেনাবাহিনীর নেতৃত্বে অপারেশন ‘থান্ডার বোল্টে’ ছয় জঙ্গি নিহত হয়। গতকালের অভিযান শেষে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন। তিনি এ সময় বলেন, তামিম চ্যাপ্টার ক্লোজড।

ঘটনাস্থলে আইজিপি এ কে এম শহীদুল হক সাংবাদিকদের বলেন, অপারেশন ‘হিট স্ট্রং-টোয়েন্টি সেভেন’ নামে পুলিশের কাউন্টার টেররিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ইউনিট পরিচালিত এ অভিযানে তিন জঙ্গি নিহত হয়েছেন। তিনি আরও জানান, নিহতদের মধ্যে একজনের চেহারার সঙ্গে পুলিশের পুরস্কার ঘোষিত এক জঙ্গির চেহারার হুবহু মিল রয়েছে। তিনি গুলশান ও শোলাকিয়াসহ জঙ্গি হামলার পরিকল্পনাকারী, কানাডাপ্রবাসী বাংলাদেশি নাগরিক তামিম আহমেদ চৌধুরী। তিনি সিরিয়া থেকে প্রশিক্ষণ নিয়ে এসে বাংলাদেশে জঙ্গি কার্যক্রম চালাচ্ছিলেন।

কাউন্টার টেররিজম ইউনিটের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার সানোয়ার হোসেন জানিয়েছেন, পাইকপাড়ার ‘বড় কবরস্থান’-এর পাশের ওই বাড়ির তৃতীয় তলায় ভাড়া থাকত জঙ্গিরা। গতকাল সকালে অভিযানের শুরুতে কাউন্টার টেররিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ইউনিটের একটি দল তৃতীয় তলা অবরুদ্ধ করে রাখে। আরেকটি দল বাড়ির মালিকের সঙ্গে কথা বলে নিশ্চিত হয়, তিন তলায় কারা কারা অবস্থান করছে। জঙ্গিরা অবস্থান করছে, এমন তথ্য নিশ্চিত হওয়ার পর হ্যান্ডমাইকের মাধ্যমে জঙ্গিদের আত্মসমর্পণ করতে বলা হয়। কিন্তু জঙ্গিরা তাতে সাড়া না দিয়ে উল্টো গ্রেনেড নিক্ষেপ করে।

এ সময় পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে ঘটনাস্থলে পুলিশ ও র‌্যাবের অতিরিক্ত সদস্য মোতায়েন করা হয়। এর আগে পুলিশের একটি সূত্র নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানিয়েছিল, ‘গুলশানের ঘটনায় আটকদের তথ্যের ভিত্তিতে এখানে অভিযান চলছে।’ অভিযান চলাকালে ওই বাড়ি থেকে কয়েকশ গজ দূরে পুলিশ বেষ্টনী দিয়ে এলাকাবাসীর চলাচল বন্ধ করে দেয়।

পুলিশের আরেকটি সূত্র জানিয়েছে, ময়মনসিংহ থেকে গ্রেফতার এক জঙ্গির তথ্যের ভিত্তিতে নারায়ণগঞ্জে অপারেশন ‘হিট স্ট্রং-টোয়েন্টি সেভেন’ পরিচালনা করা হয়।

যেভাবে অভিযান : অভিযানসংশ্লিষ্ট পুলিশ কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে শুক্রবার রাত আড়াইটার দিকে পাইকপাড়ায় অবস্থান নেন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা। সেখানে তিন তলা ‘দেওয়ানবাড়ি’র তৃতীয় তলার দুটি ফ্ল্যাটে জঙ্গিদের অবস্থান নিশ্চিত হওয়ার পর বাড়িটির আশপাশের বাড়ি থেকে লোকজনকে সরিয়ে নেওয়া হয়। গতকাল ভোর ৫টা থেকে সাড়ে ৫টার মধ্যে বাড়ি ঘিরে ফেলে পুলিশ। অভিযানের অংশ হিসেবে প্রথমে বাড়ির মালিক নুরুদ্দীন দেওয়ানসহ বাকি চারটি ইউনিটের ভাড়াটিয়াদের কৌশলে নিরাপদ দূরত্বে সরিয়ে নেওয়া হয়।

এরপর সেখানে পুলিশের স্পেশাল সোয়াত টিম, নারায়ণগঞ্জের স্থানীয় পুলিশ মোতায়েন করে পুলিশের সিটি ইউনিট অভিযান শুরু করে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে ঘটনাস্থলে র‌্যাবের অতিরিক্ত সদস্যও মোতায়েন করা হয়। অভিযানের একপর্যায়ে নারায়ণগঞ্জের পুলিশ লাইনস থেকে বিপুলসংখ্যক পুলিশ ঘটনাস্থলে আসে। তারা পুরো এলাকা ঘিরে রাখে। এলাকার ইন্টারনেট সংযোগও বন্ধ করে দেওয়া হয়। মূল অভিযান শুরু হয় সকাল ৯টা ৩৫ মিনিটে। তিন তলার দিকে পুলিশ এগিয়ে গেলে তাদের লক্ষ্য করে গুলি ছোড়ে জঙ্গিরা। জঙ্গিদের আত্মসমর্পণের জন্য হ্যান্ডমাইকে আহ্বান জানায় পুলিশ। কিন্তু তারা তাতে সাড়া না দিয়ে গ্রেনেড ছুড়ে মারে। এরপরই উভয় পক্ষের মধ্যে গুলিবিনিময় চলতে থাকে। এরই মধ্যে বাড়িটির পেছন দিক থেকে পুলিশের আরেকটি চৌকস দল অভিযান চালিয়ে সকাল ১০টা ৩৫ মিনিটের দিকে অভিযান সম্পন্ন করে। সফল এ অভিযানে তারা স্নাইপার রাইফেল ব্যবহার করে। পরে বাড়িটির ভিতর তিনজনের লাশ পড়ে থাকতে দেখা যায়।

গোয়েন্দারা জানতে পেরেছেন, এই বাসা থেকে মূলত জঙ্গিরা আদমজী ইপিজেডে কর্মরত বিদেশিদের টার্গেট করেছিল। অভিযান শেষে ওই বাড়িতে তল্লাশি চালানো হয়।

নারায়ণগঞ্জের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (অপারেশন) ফারুক হোসেন জানান, পাইকপাড়া বড় কবরস্থান এলাকার তিন তলা ওই ভবনের তৃতীয় তলায় জঙ্গিরা অবস্থান নিয়েছিল। সকালে অভিযানের বিষয়টি টের পেয়ে তারা তাদের সব ডকুমেন্ট ও আলামত আগুন দিয়ে পুড়ে ফেলে। তিনি আরও জানান, অভিযানের সময় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের লক্ষ্য করে জঙ্গিরা একের পর এক গ্রেনেড ছুড়ে মারে ও ভারী অস্ত্র দিয়ে গুলি করে।

নারায়ণগঞ্জের পাইকপাড়ায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর অভিযানের সময় পাল্টা গ্রেনেড ছোড়ে সন্দেহভাজন জঙ্গিরা। সে সময় ‘আল্লাহু আকবর’ বলে স্লোগান দেয় তারা। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক প্রত্যক্ষদর্শী এ কথা জানিয়েছেন।

পাইকপাড়ার বাড়িটি তিন তলা। জঙ্গিরা তিন তলার ফ্ল্যাটটি ভাড়া নেয়। এ বাড়ির আশপাশে টিনের কয়েকটি বাড়ি রয়েছে। বাড়িটির মালিকের নাম নুরুদ্দীন দেওয়ান। মালিকের চাচাতো ভাই সালাউদ্দিন বলেন, তার ভাই জাপানে থাকতেন। দেশে ফিরে এ বাড়িটি করেছেন। তিনি বলেন, তিন তলার ভাড়াটিয়াদের তিনি কাউকে চিনতেন না।

বাড়িওয়ালাসহ ১০ জন আটক : ঘটনাস্থল দেওয়ানবাড়ির মালিক ও ভাড়াটিয়াসহ ওই বাড়ির ১০ জনকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করা হয়েছে। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন নারায়ণগঞ্জের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ডিএসবি) ফারুক হোসেন। বিকালে তাদের আটক করে পুলিশ হেফাজতে নেওয়া হয়েছে। ফারুক হোসেন জানিয়েছেন, আটকদের মধ্যে বাড়ির মালিক নুরুদ্দীন দেওয়ানসহ তার পরিবারের পাঁচজন সদস্য এবং বাকিরা ওই বাড়ির ভাড়াটিয়া। তিনি জানান, তাদের জিজ্ঞাসাবাদে কোনো তথ্য পাওয়া গেলে পরে তা গণমাধ্যমকে জানানো হবে।

জুলাইয়ে বাসা ভাড়া : আটক হওয়ার আগে বাড়ির মালিক নুরুদ্দীন দেওয়ান জানান, জুলাইয়ে জঙ্গিরা মুরাদ ও রানা নামে বাসাটি ভাড়া নেয়। তারা নিজেদের পরিচয় দেয় ওষুধ কোম্পানির চাকরিজীবী হিসেবে। বাড়িওয়ালা বলেন, ‘ভাড়া দেওয়ার পর আমি একাধিকবার ওই বাসায় গিয়েছি। গিয়ে দেখেছি, তারা কেউ রান্না করছেন, কেউ শুয়ে আছেন।’ তিনি আরও বলেন, ‘গত দেড় মাসে তাদের সন্দেহজনক কিছু আমার চোখে পড়েনি।’

স্নাইপারের গুলিতে নিহত : পাইকপাড়ার অভিযানে পুলিশের স্নাইপার রাইফেলের গুলিতেই নিহত হয়েছেন তামিম আহমেদ চৌধুরীসহ তিন জঙ্গি। আত্মসমর্পণের সুযোগ দেওয়া হলেও তারা সে সুযোগ না নিয়ে পুলিশের ওপর গুলি ও গ্রেনেড হামলা চালান। এ সময় পুলিশ স্নাইপার রাইফেল দিয়ে জঙ্গিদের গুলি করে। অভিযানে থাকা সোয়াত টিমের সদস্যরা অন্যান্য অস্ত্রের সঙ্গে স্নাইপার রাইফেলও ব্যবহার করেন। স্নাইপার রাইফেলে সংযুক্ত টেলিস্কোপের সাহায্যে টার্গেটে নির্ভুলভাবে গুলি করা সম্ভব হয়। এই রাইফেল দিয়ে দ্রুত শক্তিশালী বুলেট ছোড়া যায়। ছবিও তোলা যায় ওই টেলিস্কোপ দিয়ে।

গুলশান, কল্যাণপুর, নারায়ণগঞ্জ— একই অস্ত্র জঙ্গিদের : গুলশান, কল্যাণপুর ও নারায়ণগঞ্জের পাইকপাড়ায় একই অস্ত্র ব্যবহার করে জঙ্গিরা। অভিযানের পর গুলশান ও পাইকপাড়া থেকে একে-২২ রাইফেল উদ্ধার করে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। একই সঙ্গে পিস্তল, ধারালো অস্ত্র, বাইনোকুলারসহ অন্যান্য সরঞ্জামও উদ্ধার করা হয়। আর কল্যাণপুরে অভিযান শেষে জঙ্গি আস্তানা থেকে একই ধরনের পিস্তল ও গ্রেনেড উদ্ধার করা হয়। রাজধানীর গুলশান, কল্যাণপুর ও নারায়ণগঞ্জের পাইকপাড়ার অভিযানে অংশ নেওয়া পুলিশ কর্মকর্তারা জানান, ১ জুলাই গুলশানের হলি আর্টিজান বেকারিতে হামলার ঘটনায় জঙ্গিরা একে-২২ রাইফেল ব্যবহার করে। এ ছাড়া তারা নাইন এমএম পিস্তল ও হাতে তৈরি গ্রেনেড ব্যবহার করে। কল্যাণপুরেও জঙ্গিরা হ্যান্ড গ্রেনেডসহ স্মল আর্মস ব্যবহার করেছিল। সর্বশেষ পাইকপাড়া থেকেও একে-২২ রাইফেল, পিস্তলসহ অন্যান্য আগ্নেয়াস্ত্র উদ্ধার করা হয়।

লাশ হাসপাতালে : তামিমসহ তিন জঙ্গির লাশ ময়নাতদন্তের জন্য নারায়ণগঞ্জের ১০০ শয্যাবিশিষ্ট হাসপাতালে নেওয়া হয়েছে। সন্ধ্যা সোয়া ৬টার দিকে তাদের লাশ হাসপাতালে নেওয়া হয়। নারায়ণগঞ্জ মডেল থানার পরিদর্শক আবদুর রাজ্জাক এ তথ্য নিশ্চিত করেন। এদিকে জঙ্গিদের লাশের ময়নাতদন্তের জন্য তিন সদস্যের একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটির প্রধান নারায়ণগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসক (আরএমও) ডা. আতাবুজ্জামান।

আত্মসমর্পণের আহ্বানে উল্টো গুলি-গ্রেনেড ছুড়েছে : নারায়ণগঞ্জের পাইকপাড়ায় অভিযান শুরুর আগে আত্মসমর্পণের আহ্বান জানানো হলেও জঙ্গিরা সাড়া দেননি বলে জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল। গতকাল সকাল সাড়ে ১০টার দিকে অভিযান শেষের পর জানানো হয়, ওই আস্তানায় পুলিশের গুলিতে ‘নব্য জেএমবি’র প্রধান গুলশান হামলার ‘হোতা’ তামিম আহমেদ চৌধুরীসহ তিনজন নিহত হয়েছেন। অভিযান শেষে ঘটনাস্থল পরিদর্শনে যাওয়া স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সাংবাদিকদের বলেন, ‘তাদের সারেন্ডার করতে বলা হয়েছিল। কিন্তু তাতে সাড়া না দিয়ে গ্রেনেড ও গুলির মাধ্যমে তারা তাদের আত্মপ্রকাশ করেছিলেন। পুলিশ ও সোয়াত বাহিনী চরম ধৈর্যের পরিচয় দিয়ে পরে ফায়ার ওপেন করে।’

ঘটনাস্থলে উপস্থিত পুলিশপ্রধান এ কে এম শহীদুল হকও সাংবাদিকদের বলেন, ‘জঙ্গিরা “আক্রমণাত্মক” ছিলেন। আমি তাদের সঙ্গে কথা বলার নির্দেশ দিয়েছিলাম। তাদের বলা হয়েছিল, তারা যেন হাত উঁচু করে দরজা খুলে বেরিয়ে আসে। অর্থাৎ তাদের সারেন্ডার করার সুযোগ দেওয়া হয়েছিল। সেই সুযোগ তারা গ্রহণ না করে পুলিশের দিকে ৪-৫টি গ্রেনেড ছোড়েন ও গুলি চালান। পুলিশ বাধ্য হয়ে অ্যাকশনে গেছে।’

ময়নাতদন্ত ঢাকা মেডিকেলে : নারায়ণগঞ্জে নিহত তিন জঙ্গির ময়নাতদন্ত নারায়ণগঞ্জে হচ্ছে না। গত রাত পৌনে ৯টায় নারায়ণগঞ্জ ১০০ শয্যাবিশিষ্ট হাসপাতাল প্রাঙ্গণে নারায়ণগঞ্জ জেলা সিভিল সার্জন ডা. আশুতোষ দাস জানান, যেহেতু ঘটনাটি বেশ স্পর্শকাতর ও সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড সম্পর্কিত, সেহেতু নিহতদের ডিএনএ ও নিহত পরিবারের ডিএনএ সংরক্ষণসহ আলামত সংগ্রহ করতে স্বয়ংস্পূর্ণ হচ্ছে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল। সে কারণেই লাশ তিনটি ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। সেখানেই ময়নাতদন্ত হবে।

জঙ্গি তামিমের মৃত্যুতে কলঙ্কমুক্তির উচ্ছ্বাস : নারায়ণগঞ্জের পাইকপাড়ায় অভিযানে গুলশান ও শোলাকিয়া জঙ্গি হামলার মাস্টারমাইন্ড তামিম আহমেদ চৌধুরী নিহতের খবরে উচ্ছ্বসিত নিজ এলাকার লোকজন। শুধু এলাকার লোকজনই নন,  এতে স্বস্তি প্রকাশ করেছেন তামিমের স্বজনরাও। এই মৃত্যুর মাধ্যমে এলাকার লোকজন ও স্বজনরা কলঙ্কমুক্ত হয়েছেন বলে মনে করছেন। তামিমের লাশ আনতে দেশে থাকা তার স্বজনদের কেউ যাবেন না বলে জানিয়েছেন তারা। নিহত জঙ্গি তামিমের গ্রামের বাড়ি সিলেটের বিয়ানীবাজার উপজেলার দুবাগ ইউনিয়নের বড়গ্রামে। কানাডিয়ান পাসপোর্টধারী তামিম ওই গ্রামের শফি আহমদ চৌধুরীর ছেলে। তিন সন্তানের জনক তামিমের পুরো পরিবার দীর্ঘদিন ধরে স্থায়ীভাবে কানাডায় বসবাস করছেন। তামিমের মৃত্যুতে কোনো আফসোস বা দুঃখ নেই দেশে থাকা তার স্বজনদের। বরং তার মৃত্যু স্বস্তি এনে দিয়েছে তাদের। দেশে থাকা তামিমের চাচাতো ভাই ফাহিম আহমদ চৌধুরীর বক্তব্যেই ফুটে উঠেছে এমন স্বস্তির আভাস। তিনি বলেন, ‘তামিমের মৃত্যুতে আমাদের পরিবার কলঙ্কমুক্ত হলো! এলাকার লোকদের কাছে আমরা লজ্জায় মুখ দেখাতে পারিনি এতদিন। পুলিশ, র‌্যাব, গোয়েন্দা সংস্থা, দেশ-বিদেশের বিভিন্ন মিডিয়ার ফোনে আমাদের পরিবারের সদস্যদের ঘুম হারাম হয়ে গিয়েছিল।’ ফাহিম চৌধুরী আরও জানান, তার বাবা নজরুল ইসলাম (তামিমের চাচা) গত রবিবার মারা গেছেন। বাবার মৃত্যুতে তাদের পরিবার শোকাহত। আর তামিম কখন-কবে দেশে এসেছে এটাও তাদের জানা নেই। তিনি (ফাহিম) কোনো দিন তামিমকে দেখেননি। তাদের পরিবারের কারও সঙ্গে তামিমের পরিবারের যোগযোগ ছিল না। তামিমের লাশ আনতেও পরিবারের কেউ যাবে না।’ গতকাল শনিবার সকালে তামিমের মৃত্যুর খবর পৌঁছার পর এলাকায় তামিমকে নিয়ে আলোচনা শুরু হয়। তার মৃত্যুতে খুশি এলাকার লোকজন। তামিমের জঙ্গি সংশ্লিষ্টতার কারণে দেশ-বিদেশে এলাকার দুর্নাম হয়েছে বলে মনে করছেন তারা। এ ব্যাপারে বিয়ানীবাজারের দুবাগের বাসিন্দা ও বিয়ানীবাজার উপজেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি নাজিম উদ্দিন জানান, তামিমের মৃত্যু সংবাদ তারা বিভিন্ন টেলিভিশন চ্যানেলে দেখেছেন। তার মৃত্যুতে এলাকার মানুষের আক্ষেপ নেই। তার লাশ আনতে গ্রাম থেকে কেউ যাবে না। দুবাগ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আবদুস সালাম বলেন, ‘পাঁচ বছর আগে তামিম আহমদ চৌধুরী নিখোঁজ হন বলে এলাকাবাসীর মুখে শুনেছি। এরপর পরিবারের সঙ্গে তার কোনো যোগাযোগ নেই বলেই জানেন এলাকার লোকজন। তবে তার মৃত্যুতে দেশে থাকা তার আত্মীয়স্বজনসহ এলাকার লোকজন খুশি।’

সর্বশেষ খবর