সোমবার, ২৯ আগস্ট, ২০১৬ ০০:০০ টা

সবার চোখ জন কেরির সফরে

১০ ঘণ্টায় বৈঠক হবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, রওশন এরশাদ ও খালেদা জিয়ার সঙ্গে

কূটনৈতিক প্রতিবেদক

সবার চোখ জন কেরির সফরে

বহুল আকাঙ্ক্ষিত সফরে আসছেন মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী জন কেরি। ঝটিকা সফরে সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত বাংলাদেশের রাজনৈতিক সব পক্ষের সঙ্গে কথা বলবেন পরাক্রমশালী যুক্তরাষ্ট্রের এই দ্বিতীয় ক্ষমতাধর ব্যক্তি। সাক্ষাৎ করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, বিরোধীদলীয় নেত্রী রওশন এরশাদ ও বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার সঙ্গে। বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে করবেন দ্বিপক্ষীয় বৈঠক। এসব বৈঠকের এজেন্ডায় উঠে আসবে নিরাপত্তা, গণতন্ত্র ও মানবাধিকারের মতো ইস্যু। সাম্প্রতিক জঙ্গি হামলার পরের উদ্ভূত পরিস্থিতি এবং বাংলাদেশের কয়েক বছরের চলমান রাজনৈতিক ঘটনাবলিতে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে জন কেরির এই সফর। বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্রের রাজনৈতিক সম্পর্ক কোন দিকে গড়ায় সেটাই রয়েছে আগ্রহের কেন্দ্রবিন্দুতে। তাই সবার দৃষ্টি এখন জন কেরির সফরের দিকে। এখন দেখার বিষয়, অমীমাংসিত ইস্যুগুলোর আলোচনা কোন দিকে যায়।

জানা যায়, জন কেরির ঢাকা সফর ঘিরে প্রস্তুতি চলছে কঠোর গোপনীয়তায়। শেষ মুহূর্তেও সফরসূচিতে চলছে নানান কাটছাঁট। সরকারি কর্মসূচিগুলোর বাইরে সবই নির্ধারণ করছে মার্কিন দূতাবাস। সেগুলো জানানোও হচ্ছে না। তারপরও বিভিন্ন কূটনৈতিক সূত্রের খবর অনুসারে, মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রীকে বহনকারী ইউএস এয়ারফোর্সের বিশেষ বিমানটি জেনেভা থেকে আজ সকাল সাড়ে ৯টায় এসে পৌঁছবে হযরত শাহজালাল (রহ.) আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে। পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী তাকে স্বাগত জানাবেন। উপস্থিত থাকবেন বাংলাদেশে যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত বার্নিকাটসহ দুই  দেশের কূটনীতিকরা। পরে সকাল সাড়ে ১১টার দিকে জন কেরি যাবেন ধানমন্ডি ৩২ নম্বরে বঙ্গবন্ধু স্মৃতি জাদুঘরে। সেখানে জাতির পিতা শেখ মুজিবুর রহমানের স্মৃতির প্রতি সম্মান জানানো শেষে দুপুর ১২টায় প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সাক্ষাৎ করবেন জন কেরি। শেখ হাসিনার সঙ্গে বৈঠক শেষে দুপুর ১টায় রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন পদ্মায় পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাহমুদ আলীর সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বৈঠক করবেন কেরি। পরে তার সম্মানে বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর আয়োজনে মধ্যাহ্নভোজে অংশ নেবেন। এরপর বিকাল ৩টায় জন কেরি যাবেন মিরপুরে একটি গার্মেন্ট কারখানা পরিদর্শনে। সেখান থেকে ইএমকে সেন্টারে উদীয়মান তরুণ ও সুশীল সমাজের প্রতিনিধিদের সঙ্গে মতবিনিময় করবেন। পরে বিকাল ৫টায় মার্কিন দূতাবাস কর্মীদের সঙ্গে আলোচনা করবেন জন কেরি। এরপর বিকাল পৌনে ৭টায় হযরত শাহজালাল (রহ.) আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে নয়াদিল্লির উদ্দেশ্যে ঢাকা ছাড়বেন কেরি। এসব সফরসূচি জানা গেলেও এর বাইরে বেশ কিছু কর্মসূচিতে অংশ নেবেন কেরি। এর মধ্যে রয়েছে বিএনপি চেয়ারপারসন ও জাতীয় সংসদের বিরোধীদলীয় নেত্রীর সঙ্গে সাক্ষাতের মতো সূচি। দূতাবাস এসব কর্মসূচি নির্ধারণ করছে এবং সর্বোচ্চ গোপনীয়তা রক্ষা করে চলছে। কূটনৈতিক সূত্রগুলো বলছে, জন কেরি এমন এক সময় ঢাকা সফর করছেন যখন দেশটিতে নির্বাচন এবং নেতৃত্ব পরিবর্তন আসন্ন। তাই আগামী দিনে দুই দেশের সম্পর্ক কেমন হবে?— তা নিয়ে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী জন কেরির সফরে আলোচনা হবে। সেখানে সন্ত্রাসবাদ ও সহিংস-চরমপন্থা মোকাবিলায় পারস্পরিক সহায়তার বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে আলোচনায় আসবে। মার্কিন পররাষ্ট্র দফতরের আনুষ্ঠানিক বিবৃতিতে বলা হয়েছে,  বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যকার দীর্ঘমেয়াদি ও বিস্তৃত সম্পর্ক আরও জোরদারে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বাংলাদেশ সফর করছেন। সফরকালে বিভিন্ন বৈশ্বিক বিষয়ে দুই দেশের ক্রমবর্ধমান সহযোগিতা নিয়ে তিনি আলোচনা করবেন। সেখানে গণতন্ত্র, উন্নয়ন, নিরাপত্তা এবং মানবাধিকার বিষয়ে দুই দেশের দীর্ঘমেয়াদি দ্বিপক্ষীয় অংশীদারিত্ব আরও শক্তিশালী করার ওপরে জোর দেবেন জন কেরি। ‘ফ্যাক্ট শিট : ইউএস বাংলাদেশ রিলেশনশিপ’ শিরোনামে মার্কিন দূতাবাসের এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, যুক্তরাষ্ট্র ও বাংলাদেশের পারস্পরিক সহযোগিতার ইতিহাস দীর্ঘদিনের। সহিংস জঙ্গিবাদ, জলবায়ু পরিবর্তন, স্বাস্থ্য ও খাদ্য নিরাপত্তার মতো বৈশ্বিক চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় অভিন্ন প্রচেষ্টার মাধ্যমে আমাদের দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক জোরালো হয়েছে। অনেক চ্যালেঞ্জ সত্ত্বেও বাংলাদেশ দুই দশক ধরে অসামান্য অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি অর্জন করেছে। এ ছাড়া, দারিদ্র্য নিরসন, মাতৃস্বাস্থ্য ও শিশু স্বাস্থ্য উন্নয়নে অসাধারণ অগ্রগতি অর্জন করেছে বাংলাদেশ। মধ্যআয়ের দেশ হওয়ার লক্ষ্যে বাংলাদেশের এই ধারাবাহিক অগ্রগতিতে সহযোগিতা দিতে পেরে গর্বিত অংশীদার যুক্তরাষ্ট্র। ঢাকার কূটনৈতিক সূত্রগুলো বলছে, জঙ্গি দমনে যুক্তরাষ্ট্রের সহযোগিতার জন্য একটি প্যাকেজ প্রস্তাব দিতে পারে বাংলাদেশ। এ প্যাকেজের আওতায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর জন্য প্রশিক্ষণ, জিসার্ফসহ বিভিন্ন তহবিল থেকে সহায়তা, সাইবার ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে জঙ্গিবাদ প্রসার ঠেকাতে কারিগরি সহায়তা, ডিএনএ পরীক্ষার সরঞ্জামসহ বিভিন্ন চাহিদা অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। স্বল্পোন্নত অপরাপর দেশের মতো বাংলাদেশও যুক্তরাষ্ট্রের কাছে বাণিজ্য সুবিধা চাইবে। এ ছাড়া সপরিবারে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে হত্যার দায়ে মৃত্যুদণ্ডে দণ্ডিত যুক্তরাষ্ট্রে রাজনৈতিক আশ্রয় পাওয়া রাশেদ চৌধুরীকে ফেরত চাইবে বাংলাদেশ। যুদ্ধাপরাধের দায়ে অভিযুক্ত আশরাফুজ্জামান খানকেও ফেরত চাইবে বাংলাদেশ। জানা যায়, পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাহমুদ আলী গত বছরের ফেব্রুয়ারিতে যুক্তরাষ্ট্র সফরে গিয়ে এক বৈঠকে জন কেরিকে বাংলাদেশ সফরের আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন। তখনই তিনি বাংলাদেশ সফর করবেন বলে জানিয়েছিলেন। এরপর তার কাছে আনুষ্ঠানিক আমন্ত্রণপত্র পাঠানো হয়। কিন্তু ফ্রান্সে সাইকেল চালাতে গিয়ে কেরি আহত হলে তখন আর তিনি ঢাকায় আসতে পারেননি। এখন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের আগেই যেসব দেশ সফর করবেন বলে সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন; ওইসব দেশ সফরে বেরিয়েছেন। গুলশানে গত পহেলা জুলাই জঙ্গি হামলার পর মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার পক্ষ থেকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে টেলিফোন করেছিলেন জন কেরি। তখন টেলিফোনে জঙ্গি ও সন্ত্রাস দমনে বাংলাদেশের পাশে থাকার প্রতিশ্রুতি ব্যক্ত করেছিলেন কেরি। প্রায় চার বছর ধরে পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিসেবে কাজ করা জন কেরির এটিই প্রথম বাংলাদেশ সফর। ২০১২ সালে তৎকালীন মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ও বর্তমানে দেশটির প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ডেমোক্রেট দলের প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় থাকা হিলারি ক্লিনটন সর্বশেষ ঢাকা সফর করেছিলেন।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর