সোমবার, ২৯ আগস্ট, ২০১৬ ০০:০০ টা

গুরুত্বপূর্ণ অনেক বিষয়ে আলোচনার সুযোগ

-----------হুমায়ুন কবির

জিন্নাতুন নূর

মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী জন কেরির সফরে বাংলাদেশের চলমান সম্ভাবনাগুলো বিস্তৃত করা এবং এ বিষয়ে সহযোগিতার কাঠামো শক্তিশালী  করার ওপর জোর দিতে হবে। যুক্তরাষ্ট্র বহুমুখী ও বহুমাত্রিক সম্পর্কের দেশ। আর মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রীর এই সফরে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাংলাদেশের বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে আলোচনার সুযোগ আছে। বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্র নিরাপত্তা, রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, আন্তর্জাতিক নিরাপত্তা, স্বাস্থ্য, জলবায়ু, জাতিসংঘের শান্তি রক্ষা বাহিনীর কর্মকাণ্ড এবং বঙ্গোপসাগরের বিশাল এলাকার সমুদ্র নিরাপত্তা ইত্যাদি বিষয়ে বাংলাদেশের সঙ্গে কাজ করছে। আর জন কেরির এই সফরে চলমান এই সম্ভাবনার ক্ষেত্রগুলোতে আলোচনার ভিত্তিতে বাংলাদেশের উন্নয়নের সুযোগ আছে। গতকাল বাংলাদেশ প্রতিদিনকে দেওয়া একান্ত সাক্ষাৎকারে যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশের সাবেক রাষ্ট্রদূত হুমায়ুন কবির এসব কথা বলেন। হুমায়ুন কবির মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রীর বাংলাদেশ সফরকে ইতিবাচক বলে মনে করছেন। তিনি বলেন, ‘আমি মনে করি মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রীর বাংলাদেশ সফর একটি উল্লেখযোগ্য বিষয়। তার এই সফরে চলমান সমস্যাগুলোকে গুরুত্ব দেওয়া উচিত হবে।’ তিনি বলেন, জন কেরির সফরে রাজনৈতিক পর্যায়ে যে আলাপ-আলোচনা হবে তার ইতিবাচক দিক আছে। বাংলাদেশ সফরের মধ্য দিয়ে কেরি এখানকার রাজনৈতিক অবস্থা নিজেই বুঝতে পারবেন। একই সঙ্গে তিনি সরকার ও মানুষের প্রত্যাশাও বুঝতে পারবেন। আর কোন জায়গাগুলো যুক্তরাষ্ট্র-বাংলাদেশের একসঙ্গে কাজ করতে হবে—তা ঠিক করতে পারবেন। তবে কেরির সফরে চলমান বিভিন্ন ইস্যুর বাইরেও যুক্তরাষ্ট্রের আসন্ন নির্বাচন এবং এই নির্বাচন বাংলাদেশের অর্থনৈতিক সম্পর্কে কীভাবে প্রভাব ফেলবে, আঞ্চলিক বিষয় এবং দুদেশের যোগাযোগ ব্যবস্থা ইত্যাদি বিষয়েও আলোচনা হতে পারে বলে তিনি ধারণা করছেন। হুমায়ুন কবির বলেন, জঙ্গি দমনে যুক্তরাষ্ট্রের কাছ থেকে বাংলাদেশ বেশ কয়েকটি বিষয়ে সহযোগিতা নিতে পারে। বিশেষ করে বিভিন্ন ইন্টেলিজেন্স বা গোয়েন্দা তথ্যের ব্যাপারে যুক্তরাষ্ট্রের কাছ থেকে আমরা সহযোগিতা নিতে পারি। আমরা তাদের কাছ থেকে জঙ্গি বিষয়ে আগাম তথ্য নিতে পারি। এ ছাড়া বাংলাদেশের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাবাহিনীর অনুসন্ধান ও তদন্ত কার্যক্রমের দক্ষতা বৃদ্ধির ব্যাপারেও আমরা দেশটির কাছ থেকে সহযোগিতা নিতে পারি। এই কূটনীতিক বলেন, এর বাইরে বিভিন্ন সংস্থার মধ্যে সমন্বয় বৃদ্ধি করা এবং আন্তর্জাতিক বিভিন্ন জঙ্গি সংস্থা যেমন—আল-কায়দা (একিউআইএস) ও ইসলামিক স্টেট (আইএস) সম্পর্কে তথ্যসংগ্রহ এবং এই জঙ্গি সংগঠনগুলোর সংশ্লিষ্টতা বাংলাদেশে আছে কিনা বা তারা কোনো কৌশলে আমাদের দেশে প্রবেশের চেষ্টা করছি কিনা তা জানার জন্য যুক্তরাষ্ট্রের সহযোগিতা নেওয়া যেতে পারে। তিনি বলেন, নিরাপত্তা ইস্যুতে বাংলাদেশের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের সহযোগিতা বিদ্যমান রয়েছে। আর এই কাজে বাংলাদেশের দক্ষতা বৃদ্ধির জন্য যুক্তরাষ্ট্র, বাংলাদেশকে বিভিন্ন পর্যায়ে সাহায্যও করছে। সাম্প্রতিক সময়ে বিভিন্ন ঘটনায় বাংলাদেশের সন্ত্রাসবিরোধী কার্যক্রম জোরদার করা প্রয়োজন হয়ে পড়ছে। আর যুক্তরাষ্ট্র সেই আলোকেই বাংলাদেশকে সহযোগিতা করতে চেয়েছে। এখন বাংলাদেশকে ঠিক করতে হবে যুক্তরাষ্ট্রের কাছ থেকে তারা কী ধরনের সহযোগিতা নিতে ইচ্ছুক। যেহেতু এ বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সক্ষমতা বেশি সে কারণে বাংলাদেশ তার নিজস্ব প্রয়োজনের ওপর ভিত্তি করে যুক্তরাষ্ট্রের কাছ থেকে কী ধরনের সহযোগিতা নিতে পারে তা ঠিক করতে হবে। তিনি বলেন, জন কেরির এই সফরে বাংলাদেশ অবশ্যই যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে বাংলাদেশি পণ্যের অবাধ বাজার সুবিধা (জিএসপি) প্রত্যাহার যেন দ্রুত তুলে নেওয়া হয় তা প্রত্যাশা করবে। তিনি আরও বলেন, এ কথা ঠিক যে, আমাদের পোশাক কারখানাগুলোর নিরাপত্তার কাজ অনেকদূর এগিয়েছে। তবে শ্রম অধিকারের জায়গায় বাংলাদেশ এখনো ভালো অবস্থায় পৌঁছাতে পারেনি। ইপিজেডগুলো শ্রমিকদের সংগঠন করার দাবি মেনে নিয়েছে কিন্তু এগুলোর বাস্তবায়ন করাই মূল চ্যালেঞ্জ। আর এই ইস্যুগুলোতে আমরা যুক্তরাষ্ট্রকে নিজেদের অবস্থান কতটা বোঝাতে সক্ষম হব তার ওপরই জিএসপি সুবিধা ফিরে পাওয়ার বিষয়টি নির্ভর করছে। তবে এ বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের প্রশাসন এককভাবে সিদ্ধান্ত নেবে, এমন নয়। এর সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্র কংগ্রেস ও শ্রমিক সংগঠনগুলোর সিদ্ধান্তও জড়িত। বাংলাদেশ যদি যুক্তিগ্রাহ্য তথ্যউপাত্ত যুক্তরাষ্ট্রের প্রশাসনসহ সংশ্লিষ্ট জায়গাগুলোর সঙ্গে ভাগাভাগি করার সমন্বিত পদক্ষেপ গ্রহণ করে তবেই জিএসপি বিষয়ে আমরা ইতিবাচক ফলাফল আশা করতে পারি। তবে সাবেক এই কূটনীতিক বলেন, জন কেরির এই সফরে বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া নিয়ে তার সঙ্গে আলোচনা করার চাইতে আমরা নিজেরাই যদি আমাদের গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া শক্তিশালী করার বিষয়ে সজাগ হই, তবেই তা ইতিবাচক ফল বয়ে আনবে।

সর্বশেষ খবর