সোমবার, ২৯ আগস্ট, ২০১৬ ০০:০০ টা

তিন জঙ্গিরই মাথায় গুলি

তামিম ছাড়া অপর দুজন তাওসিফ ও রাব্বী বাড়ির মালিক গ্রেফতার

বিশেষ প্রতিনিধি

তিন জঙ্গিরই মাথায় গুলি

নারায়ণগঞ্জে গত শনিবার সকালে জঙ্গিবিরোধী অভিযানে নিহত তিন জঙ্গি মারা যায় মাথায় গুলিবিদ্ধ হয়ে। অভিযানে নিহত গুলশান হামলার মাস্টারমাইন্ড-খ্যাত কানাডা প্রবাসী নিউ জেএমবি প্রধান তামিম চৌধুরী ছাড়াও অন্য দুজনের পরিচয় পাওয়া গেছে। তারা হলো ধানমন্ডির ডা. আজমল হোসেনের ছেলে তাওসিফ হোসেন ও যশোরের কাজী হাবিবুল্লাহর ছেলে কাজী ফজলে রাব্বী। এই তিনজনের মধ্যে শুধু তামিমের নাম উল্লেখসহ নিহত অপর দুজন এবং অজ্ঞাত আরও কয়েকজনকে আসামি করে সন্ত্রাস দমন আইনে একটি মামলা হয়েছে। সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আসাদুজ্জামান বাদী হয়ে ওই মামলা করেন। ভাড়াটিয়াদের তথ্য গোপন করার অভিযোগে পাইকপাড়ায় জঙ্গি আস্তানা বাড়ির মালিক নুরুদ্দীন দেওয়ানকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। ওই বাড়ির পাশের আরেকটি ভবন থেকে সন্দেহভাজন এক শিবির কর্মীকে আটক করা হয়। এদিকে জঙ্গিবিরোধী অভিযানে পুলিশের গুলিতে নিহত তামিম চৌধুরী ও তার দুই সহযোগী কাজী ফজলে রাব্বী এবং তাওসিফ হোসেনের লাশের ময়নাতদন্ত গতকাল দুপুরে ঢাকা মেডিকেল কলেজ মর্গে সম্পন্ন হয়েছে। ময়নাতদন্ত শেষে চিকিৎসকরা সেখানে উপস্থিত সাংবাদিকদের জানান, তিনজনের মধ্যে দুজনের শরীরে স্প্লিন্টার ও গুলির চিহ্ন ছিল। ঢাকা মেডিকেল কলেজের ফরেনসিক বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ড. সোহেল মাহমুদ জানান, নিহত তিন জঙ্গিরই মাথায় গুলির আঘাত পাওয়া গেছে। গতকাল বেলা ১১টায় ওই তিন জঙ্গির ময়নাতদন্ত শুরু হয়। বেলা ১টার দিকে ময়নাতদন্ত শেষ হয়। সোহেল মাহমুদ সাংবাদিকদের বলেন, দুজনের শরীরে স্প্লিন্টার ও গুলির চিহ্ন ছিল। গুলির কারণেই তাদের মৃত্যু হয়েছে। মাথার সামনে দিয়ে গুলি প্রবেশ করে পেছন দিয়ে বেরিয়ে গেছে। তবে তামিমের শরীরে শুধু গুলির চিহ্ন পাওয়া গেছে। তিনি আরও জানান, জঙ্গিদের শরীর থেকে ঊরুর মাংস, চুল এবং রক্তের নমুনা মহাখালীর রাসায়নিক পরীক্ষাগারে পাঠানো হয়েছে। গতকাল এক ব্রিফিংয়ে নারায়ণগঞ্জ জেলা পুলিশ সুপার মঈনুল হক বলেন, শনিবার রাতে ওই বাড়ি থেকে মালিক নুরুদ্দীন দেওয়ানসহ ১০ জনকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করা হয়। জিজ্ঞাসাবাদ শেষে ৯ জনকে ছেড়ে দেওয়া হলেও গ্রেফতার করা হয়েছে বাড়ির মালিককে।

জঙ্গি তাওসিফও মোনাশের ছাত্র ছিল : নারায়ণগঞ্জে জঙ্গি আস্তানায় পুলিশের অভিযানে নিহত জঙ্গি তাওসিফও মালয়েশিয়ার মোনাশ ইউনিভার্সিটির ছাত্র ছিল। ছুটিতে মাঝে মাঝে সে দেশে আসত। এ বছর এমনই এক ছুটিতে দেশে ফিরে ৩ ফেব্রুয়ারি নাস্তা করার কথা বলে সে ধানমন্ডির ১৫ নম্বর সড়কের ১৯/২ নম্বরের বাসা থেকে বের হয়ে যায়। তারপর থেকেই সে নিখোঁজ ছিল। এ বাসার চারতলার একটি ফ্ল্যাটে বাবা-মার সঙ্গে থাকত তাওসিফ। তাওসিফ মালয়েশিয়াতেই থাকত বেশির ভাগ সময়। ছুটিতে দেশে এলে এ বাসাটিতেই বাবা-মার সঙ্গে থাকত। তার গ্রামের বাড়ি রাজশাহীর বোয়ালিয়া থানার রামচন্দ্রপুরে। র‌্যাব থেকে সর্বশেষ প্রকাশিত নিখোঁজের তালিকার সাত নম্বরে ছিল তাওসিফের নাম। নিখোঁজ হওয়ার পর তার বাবা ধানমন্ডি থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেছিলেন। ওই ঘটনায় নিহত অপর জঙ্গির নাম ফজলে রাব্বী। বাড়ি যশোর সদর উপজেলার কিসমত নোয়াপাড়ায়। সে যশোরের এমএম কলেজের পদার্থবিজ্ঞানের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র ছিল। গত এপ্রিল থেকে সে নিখোঁজ ছিল। এ বিষয়ে রাব্বীর বাবা গত ৭ এপ্রিল যশোরের কোতোয়ালি থানায় একটি জিডি করেন। সম্প্রতি যশোরের পুলিশ পাঁচ ব্যক্তিকে জঙ্গি আখ্যা দিয়ে শহরে পোস্টার লাগায়। ওই পাঁচজনের একজন ছিল রাব্বী।

ছেলে আমারই : নারায়ণগঞ্জে জঙ্গিবিরোধী অভিযানে নিহত একজনের ছবি দেখে তাকে নিজের ছেলে বলে দাবি করেছেন যশোরের কাজী হাবিবুল্লাহ। হাবিবুল্লাহর বাড়ি সদর উপজেলার কিসমত নোয়াপাড়া গ্রামে। গতকাল সকালে নিজ বাড়িতে সাংবাদিকদের কাছ থেকে ছবি দেখে হাবিবুল্লাহ তার ছেলেকে শনাক্ত করেন। হাবিবুল্লাহ সাংবাদিকদের বলেন, ছবিতে যাকে দেখা যাচ্ছে, সে আমারই ছেলে। আমরা লাশ নিতে কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করব। তিনি বলেন, সকালে গোয়েন্দা সংস্থার দুজন কর্মকর্তা তার বাড়িতে এসেছিলেন। তারা বিভিন্ন তথ্য সংগ্রহ করে চলে গেছেন।

সর্বশেষ খবর