বুধবার, ৩১ আগস্ট, ২০১৬ ০০:০০ টা

প্রাণভিক্ষার প্রক্রিয়া শেষ হলেই কার্যকর করা হবে : আইনমন্ত্রী

নিজস্ব প্রতিবেদক

একাত্তরের কুখ্যাত আলবদর বাহিনীর নেতা মীর কাসেম আলী প্রাণভিক্ষা চাইলে বিদেশে বসেই রাষ্ট্রপতি তার নিষ্পত্তি করতে পারবেন বলে জানিয়েছেন আইনমন্ত্রী  আনিসুল হক। গতকাল সচিবালয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে আইনমন্ত্রী এ কথা বলেন। তিনি বলেন, মীর কাসেমের রাষ্ট্রপতির কাছে ক্ষমা চাওয়ার অধিকার আছে। তা যদি তিনি চান, তবে তা রাষ্ট্রপতির কাছে পৌঁছবে। সে প্রক্রিয়া শেষ হলেই রায় কার্যকর হবে। আইনমন্ত্রী বলেন, বিদেশে থাকলে রাষ্ট্রপতি নথি দেখতে পারবেন না, এ রকম বিষয় আইনের মধ্যে নেই। তারা যদি ক্ষমা চেয়ে আবেদন করেন, সেটাকে দ্রুত নিষ্পত্তি করার ব্যবস্থা আইনে যা আছে, সেটাই করা হবে। স্বাস্থ্য পরীক্ষার জন্য রবিবার যুক্তরাজ্য গেছেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ। ৪ সেপ্টেম্বর তার দেশে ফেরার কথা রয়েছে। আইনমন্ত্রী বলেন, ‘প্রাণভিক্ষার আবেদনের জন্য সাত দিনের অপেক্ষা আমরা করে থাকি। আমাদের কাছে মনে হয়, সাত দিন অত্যন্ত যুক্তিসংগত সময়।’ মন্ত্রী বলেন, দণ্ড কার্যকরের জন্য রায়ের অনুলিপি আপিল বিভাগ থেকে বিচারিক আদালত হয়ে কারাগারে যেতে হবে, সেজন্য অপেক্ষা করতে হবে। রিভিউ রায়েও মীর কাসেমের মৃত্যুদণ্ড বহাল থাকায় সন্তোষ প্রকাশ করে আইনমন্ত্রী বলেন, ‘আজ আমাদের সবার জন্য একটি স্বস্তির দিন। সবার জন্য স্বাধীনতা আরও ভালোভাবে ভোগ করার দিন। বাংলাদেশের জনগণের সঙ্গে আমিও আজ স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলছি।’ আপিল বিভাগে এ মামলার শুনানির সময় প্রসিকিউশন ও তদন্ত সংস্থার কাজ নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করেন প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহা। এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে আইনমন্ত্রী বলেন, প্রধান বিচারপতি যখন কোনো মন্তব্য করেন, তখন সেটা প্রণিধানযোগ্য, সেটাকে বিবেচনা করা উচিত। কিন্তু বিবেচনারও একটা সময় দিতে হয়।

আমরা স্বস্তি পেয়েছি : মীর কাসেম আলীর ফাঁসির রায় বহালে সন্তোষ প্রকাশ করেছেন অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম। তিনি বলেছেন, এ রায়ে আমরা স্বস্তি পেয়েছি। অন্যান্য যুদ্ধাপরাধীর মতো মীর কাসেমের মৃত্যুদণ্ডের রায় বহাল থাকে কিনা তা নিয়ে উদ্বিগ্ন হওয়া স্বাভাবিক। মৃত্যুদণ্ড বহাল না থাকলে আমরা হতাশ হতাম। তাই এ নিয়ে আমি উদ্বিগ্ন ছিলাম। সেই উদ্বেগের অবসান ঘটেছে। রিভিউ খারিজের পর গতকাল নিজ কার্যালয়ে অ্যাটর্নি জেনারেল সাংবাদিকদের এ কথা বলেন। মাহবুবে আলম বলেন, ফাঁসি বহাল থাকায় এখন পুরো জাতিই খুশি, সবাই সর্বোচ্চ সাজা কার্যকরের অপেক্ষায়। তিনি বলেন, এ রায়ের মধ্য দিয়ে মামলার আইনি লড়াই শেষ হয়েছে। মীর কাসেমকে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে রায় কার্যকরে এখন আর কোনো অসুবিধা বা বাধা নেই।

তবে তিনি যদি মনে করেন তবে রাষ্ট্রপতির কাছে প্রাণভিক্ষা চাইতে পারবেন। তার কাছে জানতে চাওয়া হবে তিনি প্রাণভিক্ষা চাইবেন কিনা। প্রাণভিক্ষা চাইলে রায় কার্যকরের প্রক্রিয়া থেমে থাকবে। আর প্রাণভিক্ষা না চাইলে বা চাওয়ার পর আবেদন নাকচ হলে সরকারের সিদ্ধান্তে ফাঁসি কার্যকর করবে কারা কর্তৃপক্ষ।

আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউটর তুরিন আফরোজ বলেন, অসাধারণ ভালো লাগছে। মামলার ধরন আলাদা ছিল। আন্তর্জাতিকভাবে বিচার প্রক্রিয়ায় তদন্ত ও আইনি লড়াইয়ের চ্যালেঞ্জ ছিল। সবকিছু মোকাবিলা করে কাঙ্ক্ষিত রায়ে সন্তুষ্টি প্রকাশ করছি। শেষ অবধি রিভিউ রায় বহাল থাকায় আমরা সন্তুষ্ট। আমাদের চূড়ান্ত বিজয় হয়েছে। তিনি বলেন, মীর কাসেম জামায়াতে ইসলামীর প্রধান অর্থলগ্নিকারী ব্যক্তি। তিনি দেশি-বিদেশি লবিস্ট নিয়োগ করেছিলেন। রায় ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করার চ্যালেঞ্জ সব সময়ই ছিল। সে কারণে আমরা রায় নিয়ে উদ্বিগ্ন ছিলাম। ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থার সমন্বয়ক আবদুল হান্নান খান বলেন, মীর কাসেমের রায়কে কেন্দ্র করে অনেক জল  ঘোলা করা হয়েছে। আমি বলব, ভাইরাসে ধরেছিল। তবে শেষ ভালো যার, সব ভালো তার।

সর্বশেষ খবর