বুধবার, ৩১ আগস্ট, ২০১৬ ০০:০০ টা
বিশেষজ্ঞ অভিমত

নতুন মাত্রা রাজনৈতিক যোগাযোগে

কূটনৈতিক প্রতিবেদক

মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী জন কেরির ঢাকা সফরে বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্রের রাজনৈতিক যোগাযোগ নতুন মাত্রা পেয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে। পররাষ্ট্র দফতরের কর্মকর্তা ও কূটনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, বাংলাদেশের বাস্তবতা অনুধাবন করতে পেরেছেন জন কেরি। ফলে বঙ্গবন্ধুর আত্মস্বীকৃত খুনিদের ফিরিয়ে আনাসহ বাণিজ্যিক সুবিধার বিষয়গুলো নতুনভাবে চিন্তা করার প্রয়াস পেতে পারে যুক্তরাষ্ট্র। সেই সঙ্গে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রীর কণ্ঠে বাংলাদেশ ও বঙ্গবন্ধুর প্রশংসা নতুন ধরনের আমেজ তৈরি করতে পারে দুই দেশের সম্পর্কে। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা বলছেন, এ সফরের মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে দুই দেশের মধ্যে রাজনৈতিক যোগাযোগ বৃদ্ধি করা। আমরা এ বিষয়ে সফল হয়েছি। সন্ত্রাসবাদে সহযোগিতা, বাণিজ্যে সহযোগিতা বা উন্নয়ন সহযোগিতার আগে যেটি সবচেয়ে বড় প্রয়োজন, সেটি রাজনৈতিক সম্পর্ক উন্নয়ন। আমরা সেই জায়গায় কাজ করছি। এ সফরে দুই দেশের নেতৃত্বের মনোভাব ছিল ইতিবাচক। আমরা এ সফরের বিভিন্ন বিষয় নিয়ে যথেষ্ট প্রস্তুতি নিয়েছি। এই সফরের পরে যোগাযোগ আরও বৃদ্ধি পাবে। এর আগে যুক্তরাষ্ট্রের কোনো নেতৃত্ব ধানমন্ডি ৩২-এ বঙ্গবন্ধু স্মৃতি জাদুঘরে যাননি। কেরিকে বঙ্গবন্ধু জাদুঘরে নিয়ে যাওয়াটা বাংলাদেশের জন্য একটি বড় প্রাপ্তি।  সেখানে কেরি লিখেছেন, বঙ্গবন্ধুর ভিশনে বাংলাদেশ এগিযে যাচ্ছে এবং যুক্তরাষ্ট্র তার ভিশনের একজন জোরালো সমর্থক। এর আগে যুক্তরাষ্ট্রের কোনো নেতৃত্ব এ কথা বলেননি। বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্রের সহযোগিতার অনেক ক্ষেত্র আছে। যেমন নিরাপত্তা, বাণিজ্য, জলবায়ু পরিবর্তন ইত্যাদি। এ সহযোগিতা আগেও ছিল এবং স্ব স্ব মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে চলমান প্রক্রিয়া হিসেবে এর গতি বাড়বে বলে তিনি মনে করেন। উদাহরণ হিসেবে জন কেরির সফর শেষের টুইটার বার্তার কথা তুলে ধরে কর্মকর্তারা বলছেন, জন কেরি নিরাপত্তা ইস্যুতে গুরুত্বপূর্ণ কথা হয়েছে উল্লেখ করা ছাড়াও শেষ টুইটে জলবায়ু ও ক্লিন এনার্জি ইস্যুতে কাজ করার কথা বলেছেন। সোমবার রাতে জন কেরি তার শেষ টুইট বার্তায় বলেছেন, ‘জলবায়ু পরিবর্তনজনিত কারণে ২০৫০ সালের মধ্যে দেড় কোটি মানুষ বাস্তুচ্যুত হতে পারে।  এ সমস্যা মোকাবিলায় বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্র যৌথভাবে স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরিয়ে আনতে ও ক্লিন এনার্জি নিয়ে ভবিষ্যতে কাজ করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। যুক্তরাষ্ট্রে নিযুক্ত বাংলাদেশের সাবেক রাষ্ট্রদূত হুমায়ুন কবির মনে করছেন, যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সফর কোনো সহজ কাজ নয়। সব দিক দেখে মনে হচ্ছে, বাংলাদেশের প্রস্তুতি ভালো ছিল। দুই দেশ ভালো একটি পরিবেশে আলোচনা করেছে। দুই দেশের রাজনৈতিক সম্পর্কের উন্নতি ঘটানোর জন্য এ সফরটি জরুরি ছিল। জন কেরির এই সফরের ফলে ঢাকা-ওয়াশিংটনের মধ্যকার সম্পর্ক আরও বাড়বে। সবার শরীরী ভাষা অত্যন্ত ইতিবাচক ছিল। এতে বোঝা যায় সহযোগিতার যেসব ক্ষেত্র দুই পক্ষের জন্য প্রযোজ্য সেসব বিষয় আলোচনা হয়েছে। এটি অত্যন্ত ইতিবাচক। এর ফলে বিস্তারিত আলাপ আলোচনার সুযোগ তৈরি হয়। নিরাপত্তা বিষয়ে তিনি বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আমাদের এ বিষয়ে দীর্ঘদিনের সহযোগিতা আছে এবং এটি একটি চলমান প্রক্রিয়া। তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশের সঠিক প্রস্তুতি দেখে বোঝা যায়, সরকার এ আলোচনায় সন্তুষ্টি বোধ করেছে। নিরাপত্তা বিশ্লেষক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) সাখাওয়াত হোসেন বলেন, নিরাপত্তা বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সহযোগিতাকে ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গিতে দেখা উচিত। বাংলাদেশের সন্ত্রাসীদের সঙ্গে বিদেশের সন্ত্রাসীদের একটি যোগাযোগ আছে। বাংলাদেশের মতো একটি দেশে এ ধরনের ঘটনা যুক্তরাষ্ট্রসহ অন্যান্য পশ্চিমা দেশগুলোর উদ্বেগের কারণ হবে— এটি স্বাভাবিক। শিক্ষিত এবং উচ্চবিত্তের সন্তানরা এ ধরনের সন্ত্রাসী ঘটনায় জড়িয়ে পড়ছে। এটি আরও বেশি উদ্বেগের বিষয়। আগামী কয়েক মাসের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রে প্রেসিডেন্ট নির্বাচন এবং এ সময় বাংলাদেশ বিষয়ে নীতির কোনো পরিবর্তন যুক্তরাষ্ট্র করবে না বলে মনে করেন এই নিরাপত্তা বিশ্লেষক।

সর্বশেষ খবর