বুধবার, ৩১ আগস্ট, ২০১৬ ০০:০০ টা

কেরির সাক্ষাৎ পাননি রওশন এরশাদ

শফিকুল ইসলাম সোহাগ

কেরির সাক্ষাৎ পাননি রওশন এরশাদ

বিরোধীদলীয় নেত্রী বেগম রওশন এরশাদের সঙ্গে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রীর কোনো আলাদা বৈঠক বা সাক্ষাৎ হয়নি। তারপরও বিরোধীদলীয় নেত্রীর কার্যালয় থেকে সাক্ষাতের দাবি করে সংবাদ বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হয়েছে। জাতীয় সংসদের বিরোধীদলীয় নেত্রীর অফিশিয়াল প্যাড ব্যবহার করে দেওয়া এই বিজ্ঞপ্তিতে কিছু কল্পিত বক্তব্যও জুড়ে দেওয়া হয়েছে। সংবাদ বিজ্ঞপ্তি অনুসরণ করেই গতকাল দেশের বিভিন্ন গণমাধ্যমে তা প্রকাশও হয়েছে। কিন্তু গতকাল মূল সত্য বেরিয়ে এসেছে। কেরির সফর কাছ থেকে দেখা একাধিক ব্যক্তির তথ্য মতে, সোমবার জন কেরি ঢাকা সফরকালীন দুপুর আড়াইটার দিকে ধানমন্ডির ইএমকে সেন্টারে উপস্থিত হন জাতীয় পার্টির সিনিয়র কো-চেয়ারম্যান রওশন এরশাদ। তখনো জন কেরি সেখানে উপস্থিত হননি। এরপর কিছু সময় সেখানে দাঁড়িয়ে থাকতে হয় তাকে। কারণ তার বসার কোনো নির্দিষ্ট স্থান পাচ্ছিলেন না। পরে বাংলাদেশের সুশীল সমাজের প্রতিনিধি ও উদীয়মান তরুণদের উদ্দেশ্যে যে কক্ষে জন কেরির বক্তব্য দেওয়ার কথা ছিল সেখানে থাকার চেয়ারগুলোর দ্বিতীয় সারিতে একটি খালি আসনে বসতে দেওয়া হয় বাংলাদেশের বিরোধীদলীয় নেতাকে। পরে সেখানে উপস্থিত সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের এক নারী উপদেষ্টা রওশন এরশাদকে প্রথম সারির একটি চেয়ারে বসার সুযোগ করে দেন। অবশ্য জন কেরি তার নির্ধারিত বক্তব্য ও দুটি প্রশ্নের উত্তর দেওয়া শেষে ইএমকে সেন্টার থেকে বেরিয়ে যাওয়ার সময় রওশন এরশাদকে শুধু পরিচয় করিয়ে দেওয়া হয়েছে। জবাবে মুচকি হেসে হেঁটে চলে যান কেরি। রাষ্ট্রদূত বার্নিকাট এ সময় উপস্থিত ছিলেন। ঘটনাস্থলে উপস্থিত বিশিষ্ট ব্যক্তিরা নিজেদের মধ্যে এ ঘটনায় প্রটোকল অবমাননায় আয়োজন কর্তৃপক্ষ ও বিরোধীদলীয় নেতার কার্যালয়ের সমালোচনা করেন। এ সময় সেখানে উপস্থিত একটি বেসরকারি সংস্থার প্রধান মন্তব্য করেন, ‘আমাদের রাজনৈতিক নেতারা বিদেশি কাউকে দেখলে নিজেদের প্রটোকলের কথা ভুলে যান। কোথায় কীভাবে সাক্ষাৎ হবে সেটা না বুঝে শুধু দেখা করার চান্সে থাকেন। তবে সবকিছু ছাপিয়ে গেছে বিরোধীদলীয় নেতার কার্যালয় থেকে তথ্য ও জনসংযোগ কর্মকর্তা মামুন স্বাক্ষরিত সংবাদ বিজ্ঞপ্তি। এতে জন কেরির সঙ্গে রওশন এরশাদের সাক্ষাতের দাবি করে বলা হয়, রওশন এরশাদ কেরিকে নারী উন্নয়নে ভূমিকা নেওয়াসহ নানান কথা বলেন। জবাবে কেরি সম্মতি দেন। এ প্রসঙ্গে জাতীয় পার্টির একজন প্রেসিডিয়াম সদস্য বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী জন কেরির সঙ্গে বৈঠক না হওয়া সত্ত্বেও সংবাদ বিজ্ঞপ্তির বরাতে গণমাধ্যমে বৈঠকের তথ্য প্রদানের ঘটনায় আমরা লজ্জিত। সারা দেশের নেতা-কর্মীরা আমাদের কাছে জানতে চাইছেন, বৈঠক না হওয়া সত্ত্বেও কেন বৈঠকের মিথ্যা সংবাদ প্রচার করা হয়েছে। এভাবে দলকে আমরা কোথায় নিয়ে যাচ্ছি। তিনি বলেন, রওশন এরশাদের সঙ্গে থাকা কয়েকজন নেতা মিথ্যার আশ্রয় নিয়ে দলকে ধ্বংসের দিকে ঠেলে দিচ্ছেন। তিনি বলেন, বিরোধীদলীয় নেতা রওশন এরশাদের সঙ্গে আনুষ্ঠানিক কোনো বৈঠক করেননি জন কেরি। ওইদিন ধানমন্ডির এডওয়ার্ড এম কেনেডি সেন্টার ফর পাবলিক সার্ভিস অ্যান্ড আর্টস (ইএমকে সেন্টার) মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত নাগরিক সমাজের প্রতিনিধি ও তরুণদের উদ্দেশে কেরির বক্তব্য অনুষ্ঠানে অন্যদের সঙ্গে রওশনও আমন্ত্রিত ছিলেন। কেরি সেই অনুষ্ঠানে যাওয়ার পর সেখানে উপস্থিত ঢাকায় নিযুক্ত যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত মার্শা স্টিফেনস ব্লুম বার্নিকাটের মাধ্যমে রওশন তাকে (কেরিকে) নিজের একটি ভিজিটিং কার্ড পাঠিয়ে কথা বলার সুযোগ চান। কেরির বক্তব্য শেষে সেই সুযোগ করে দেন বার্নিকাট। বক্তব্যের পরে কেরি হাঁটতে-হাঁটতে দু-তিন মিনিট রওশনের সঙ্গে কথা বলেন। বিরোধীদলীয় নেতার তথ্য ও জনসংযোগ কর্মকর্তা মামুন হাসান বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেছেন, ‘ম্যাডামের নির্দেশনায় সংবাদ বিজ্ঞপ্তি তৈরি করে গণমাধ্যমে পাঠানো হয়েছে’।

সর্বশেষ খবর