শিরোনাম
বৃহস্পতিবার, ১ সেপ্টেম্বর, ২০১৬ ০০:০০ টা

সাত দিনের মধ্যে মীর কাসেমের ফাঁসি

নিজস্ব প্রতিবেদক ও গাজীপুর প্রতিনিধি

সাত দিনের মধ্যে মীর কাসেমের ফাঁসি

আগামী সাত দিনের মধ্যেই ফাঁসিতে ঝোলানো হবে একাত্তরের যুদ্ধাপরাধী জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য মীর কাসেম আলীকে। অপরাধ স্বীকার করে রাষ্ট্রপতির কাছে ক্ষমা চাওয়ার জন্য এই সময় পর্যন্ত অপেক্ষা করা হবে। রাষ্ট্রপতির কাছে প্রাণভিক্ষার আবেদন না করলে এরপর আর এই যুদ্ধাপরাধীকে সময় দেওয়া হবে না। সরকারের সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলোও বলছে, প্রাণভিক্ষার জন্য মীর কাসেমকে একটি যৌক্তিক সময় দেওয়া হবে। তবে সেই সময় অবশ্যই সাত দিনের বেশি নয়। গতকাল সকালেই কাশিমপুর কারাগার-২-তে মীর কাসেমকে রায় পড়ে শোনানো হয়েছে। এদিকে রাষ্ট্রপতির কাছে প্রাণভিক্ষার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে নিজের ‘নিখোঁজ’ ছেলে মীর আহমদ বিন কাসেমের সঙ্গে পরামর্শের শর্ত দিয়েছেন মীর কাসেম। পরিবারের সদস্যদের নিয়ে গতকাল কারাগারে স্বামীর সঙ্গে সাক্ষাত্ শেষে মীর কাসেমের এমন ইচ্ছার কথা জানিয়েছেন তার স্ত্রী খন্দকার আয়েশা খাতুন। তবে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেছেন, ছেলের জন্য মীর কাসেমের দণ্ড কার্যকর থেমে থাকবে না। তার ছেলে আত্মগোপনে থাকতেই পারে। এদিকে গতকাল সন্ধ্যায় গাজীপুরের কাশিমপুর কারাগার পরিদর্শন করেছেন কারা মহাপরিদর্শক (আইজি প্রিজন) ব্রিগেডিয়ার জেনারেল সৈয়দ ইফতেখার উদ্দিন। আইজি প্রিজন রাত ৮টা ২০ মিনিটে কারাফটকে অপেক্ষমাণ সাংবাদিকদের বলেন, মীর কাসেম আলী প্রাণভিক্ষার সিদ্ধান্তের ব্যাপারে কিছু জানাননি। আগামীকাল (আজ) সকালে তার কাছে সিদ্ধান্ত জানতে চাওয়া হবে। এর আগে দুপুরে কারাগার পরিদর্শন করেন গাজীপুরের পুলিশ সুপার (এসপি) মোহাম্মদ হারুন অর রশিদ। উল্লেখ্য, জামায়াতে ইসলামীর আর্থিক খাতের কোষাধ্যক্ষ হিসেবে পরিচিত মীর কাসেম আলী ১৯৭১ সালে ছিলেন স্বাধীনতাবিরোধী জামায়াতে ইসলামীর ঘাতক সংগঠন আলবদর বাহিনীর চট্টগ্রাম অঞ্চলের প্রধান। পরে ইসলামী ছাত্রশিবিরের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন তিনি। বর্তমানে তিনি জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদের অন্যতম সদস্য। ঘাতক বাহিনী আলবদরে নেতৃত্ব ও প্রভাব বিবেচনায় তার অবস্থান ছিল শীর্ষ দুই যুদ্ধাপরাধী মতিউর রহমান নিজামী ও আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদের পরেই। আর বিশেষভাবে তিনি ছিলেন চট্টগ্রাম অঞ্চলে বদরবাহিনীর প্রধান। এ মামলার শুনানিতে রাষ্ট্রপক্ষ মীর কাসেমকে আখ্যায়িত করে পাকিস্তানের খান সেনাদের সঙ্গে মানবতাবিরোধী অপরাধে লিপ্ত হওয়া ‘বাঙালি খান’ হিসেবে। স্বাধীনতার পর জামায়াতে ইসলামীকে আর্থিকভাবে শক্তিশালী করতে কাজ করেন এই আলবদর নেতা। বহু আর্থিক, বাণিজ্যিক ও চিকিত্সা প্রতিষ্ঠানের উদ্যোক্তা, পরিচালক মীর কাসেম আলী দিগন্ত মিডিয়া করপোরেশনের চেয়ারম্যান।

পরিবারের সাক্ষাৎ, ছেলেকে চাই : কাশিমপুর কেন্দ্রীয় কারাগারে মীর কাসেম আলীর সঙ্গে পরিবারের সদস্যরা সাক্ষাত্ করেছেন। গতকাল দুপুর দেড়টার দিকে মীর কাসেমের স্ত্রী খন্দকার আয়েশা খাতুন, দুই কন্যা সুমাইয়া রাবেয়া ও তাহেরা তাসনীম, দুই পুত্রবধূ শাহেদা তাহমিদা ও তাহমিনা আক্তার, এক ভাতিজা হাসান জামান খান ও চার শিশু নাতনি কারাগারে তার সঙ্গে সাক্ষাত্ করেন। সাক্ষাত্ শেষে তারা বিকাল পৌনে ৪টার দিকে কারাগারস্থল ত্যাগ করেন। সাক্ষাত্ শেষে কারাফটকে মীর কাসেম আলীর স্ত্রী খন্দকর আয়েশা খাতুন সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমাদের ছেলে ও মীর কাসেমের আইনজীবী ব্যারিস্টার মীর আহমদ বিন কাসেমকে ফিরে না পেলে কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়া যাবে না। আমরা আমাদের ছেলেকে ফিরে পেতে চাই। আর এটা শুধু মীর কাসেমের দাবিই নয়, আমাদের পুরো পরিবারের দাবি।’ তিনি বলেন, ‘এই দেখাই শেষ দেখা নয়। শেষ কাজগুলো আমরা কীভাবে করব সেই পরামর্শের জন্যও এসেছি।’ মীর কাসেমের স্ত্রী বলেন, ‘আজ ২২ দিন ধরে আমার ছেলেকে পাচ্ছি না। সাদা পোশাকধারী লোকেরা তাকে বাসা থেকে উঠিয়ে নিয়ে গেছে। এখন পর্যন্ত আমরা তার সম্পর্কে কিছুই জানি না। যেহেতু সে আমাদের ল ইয়ার ছিল সেহেতু তার সঙ্গে পরামর্শ আমাদের খুব জরুরি।’ তিনি বলেন, মীর কাসেম বলেছেন, ‘আমার মতামত জানানোর জন্য ছেলেকে ফিরে পেতে চাই।’ এর আগে সকাল সাড়ে ৭টার দিকে রিভিউ আবেদন খারিজের রায় মীর কাসেমকে পড়ে শোনানো হয়েছে। রায় পড়ে শোনার পর তাকে কিছুটা চিন্তিত ও উদ্বিগ্ন দেখা গেছে। এ সময় তিনি রাষ্ট্রপতির কাছে প্রাণভিক্ষার আবেদনের বিষয়ে সময় চেয়েছেন বলে কারাসূত্র জানিয়েছে। কাশিমপুর কেন্দ্রীয় কারাগার-২-এর জেল সুপার প্রশান্ত কুমার বণিক জানান, সকাল সাড়ে ৭টার দিকে মীর কাসেম আলীকে তার রিভিউ আবেদন সুপ্রিমকোর্টের আপিল বিভাগ কর্তৃক খারিজ হওয়ার রায় পড়ে শোনানো হয়। এর আগে মঙ্গলবার রাত ১২টা ৪৮ মিনিটে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে মীর কাসেম আলীর রিভিউ খারিজের রায়ের কপি গাজীপুরে কাশিমপুর কেন্দ্রীয় কারাগার-২-এ এসে পৌঁছায়। মীর কাসেম আলী কাশিমপুর কেন্দ্রীয় কারাগারের ফাঁসির কনডেম সেলে বন্দী রয়েছেন। গ্রেফতারের পর ২০১২ সাল থেকে তিনি এ কারাগারে।

প্রাণভিক্ষায় যৌক্তিক সময় : এদিকে মীর কাসেম আলী রাষ্ট্রপতির কাছে প্রাণভিক্ষা চাইতে ‘রিজনেবল কিছু সময়’ পাচ্ছেন বলে জানিয়েছেন কারা মহাপরিদর্শক (আইজি প্রিজন) ব্রিগেডিয়ার জেনারেল সৈয়দ ইফতেখার উদ্দিন। গতকাল বিকালে পুরান ঢাকায় কারা অধিদফতরে সাংবাদিকদের ব্রিফিংকালে তিনি এ কথা বলেন। আইজি প্রিজন বলেন, মীর কাসেমকে রায়ের কপি পড়ে শোনানো হয়েছে। এরপর তার কাছে প্রাণভিক্ষার বিষয়টি জানতে চাওয়া হয়েছে। তিনি কিছু সময় চেয়েছেন, বলেছেন চিন্তাভাবনা করে জানাবেন। আমরাও তাকে কিছু ‘রিজনেবল সময়’ দেব। তাকে কত সময় দেওয়া হচ্ছে? এমন প্রশ্নের জবাবে সৈয়দ ইফতেখার উদ্দিন বলেন, পরিস্থিতিই বলে দেবে তিনি কত সময় পাচ্ছেন?

জেল কোড অনুসারে একজন ফাঁসির আসামি প্রাণভিক্ষার জন্য সাত দিন সময় পেয়ে থাকেন। মীর কাসেমও তেমন সময় পাচ্ছেন কিনা? এমন এক প্রশ্নের জবাবে আইজি প্রিজন বলেন, এ নিয়ম সাধারণ দণ্ডপ্রাপ্তদের জন্য। মীর কাসেম আলী হলেন যুদ্ধাপরাধে দণ্ডপ্রাপ্ত। তিনি এর আওতাভুক্ত নন। তিনি ‘রিজনেবল সময়’ পাবেন।

কারাগার পরিদর্শন করলেন পুলিশ সুপার : এদিকে হঠাত্ করেই কাশিমপুর কারাগার পরিদর্শন করেছেন গাজীপুরের পুলিশ সুপার (এসপি) মোহাম্মদ হারুন অর রশিদ। গতকাল বেলা সোয়া ২টার দিকে তিনি কাশিমপুর কারাগারে গিয়ে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করেন। কারাফটকের সামনে পুলিশ সুপার জানান, কাশিমপুর কারাগার এলাকাসহ আশপাশ এলাকায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য বাড়ানো হয়েছে। সার্বিক আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি ভালো। এলাকায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় পুলিশ সার্বক্ষণিক কাজ করছে।

সর্বশেষ খবর