শুক্রবার, ২ সেপ্টেম্বর, ২০১৬ ০০:০০ টা

আরও সময় চান মীর কাসেম চারদিকে সর্বোচ্চ নিরাপত্তা

নিজস্ব প্রতিবেদক ও গাজীপুর প্রতিনিধি

আরও সময় চান মীর কাসেম চারদিকে সর্বোচ্চ নিরাপত্তা

প্রাণভিক্ষার আবেদনের বিষয়ে মানবতাবিরোধী অপরাধী মীর কাসেম আলীর সিদ্ধান্ত জানতে ফের তার সঙ্গে দেখা করেছেন কারা কর্মকর্তারা। এ বিষয়ে তিনি ভাবনা-চিন্তা করতে আরও সময় চেয়েছেন বলে জানিয়েছেন কাশিমপুর কেন্দ্রীয় কারাগার-২-এর জেল সুপার প্রশান্ত কুমার বণিক। তিনি বলেন, গতকাল সকালে তিনিসহ কয়েকজন কর্মকর্তা মীর কাসেমের সঙ্গে কনডেম সেলে সাক্ষাৎ করেন। তারা প্রাণভিক্ষার আবেদনের বিষয়ে সিদ্ধান্ত জানতে চাইলে মীর কাশেম ভাবনা-চিন্তার জন্য আরও সময় চান বলে জানান। এদিকে একাত্তরে মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে মৃত্যুদণ্ড পাওয়া জামায়াত নেতা মীর কাসেম আলীর রায় কার্যকর নিয়ে গাজীপুর, ঢাকাসহ সারা দেশে নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে। পুলিশ, র‌্যাব, বিজিবি, এপিবিএনসহ অন্যান্য আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী সর্বোচ্চ সতর্ক অবস্থানে রয়েছে। যে কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে তারা প্রস্তুত। ইতিমধ্যে কারাগারের নিরাপত্তায় নেওয়া হয়েছে বাড়তি ব্যবস্থা। কারা ফটকে অতিরিক্ত কারারক্ষী মোতায়েন ছাড়াও ফটকের সামনে বিপুলসংখ্যক পুলিশ এবং সাদা পোশাকে গোয়েন্দা মোতায়েন রয়েছে। কারা ফটকের রাস্তায় বসানো হয়েছে নিরাপত্তা চৌকি। গতকাল বিকালে গাজীপুরের পুলিশ সুপার (এসপি) মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ কাশিমপুর কারাগার এলাকা পরিদর্শন করেন। এ সময় তিনি কারাগারের সার্বিক নিরাপত্তার বিষয়ে খোঁজখবর নেন। রাষ্ট্রপতির কাছে প্রাণভিক্ষার আবেদন করবেন কিনা— এ বিষয়ে বুধবারও মীর কাসেমের কাছে জানতে চেয়েছিলেন কারা কর্মকর্তারা। সেদিনও তিনি কোনো মতামত না দিয়ে ভাবনা-চিন্তার জন্য সময় চান। ওই দিন আইজি প্রিজন সৈয়দ ইফতেখার উদ্দিন বলেন, জামায়াত নেতা মীর কাসেম আলী প্রাণভিক্ষার আবেদনের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে সময় চেয়েছেন। এর পরিপ্রেক্ষিতে তাকে যৌক্তিক সময় দেওয়া হচ্ছে। প্রাণভিক্ষার আবেদন না করলে ফাঁসির রায় কার্যকরের ব্যাপারে সব প্রস্তুতি রয়েছে।

মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে মৃত্যুদণ্ড পাওয়া মীর কাসেম দেশের সর্বোচ্চ আদালতে রায় পুনর্বিবেচনার (রিভিউ) আবেদন করেছিলেন। মঙ্গলবার সুপ্রিমকোর্টের আপিল বিভাগ সেই আবেদন খারিজ করে দিলে মীর কাসেমের বিচার প্রক্রিয়া শেষ হয়। নিয়ম অনুযায়ী এখন মীর কাসেম রাষ্ট্রপতির কাছে প্রাণভিক্ষার আবেদন করতে পারবেন। প্রাণভিক্ষার আবেদন না করলে অথবা তা নাকচ হলে যে কোনো সময় তার ফাঁসি কার্যকর হতে পারে।

মীর কাসেম আলী গতকাল সন্ধ্যা পর্যন্ত প্রাণভিক্ষার বিষয়ে সিদ্ধান্ত জানাননি। তার সঙ্গে সাক্ষাতের জন্য কারাগারেও কেউ আসেননি। তার ফাঁসির রায় কার্যকরের জন্য গাজীপুর ও কেরানীগঞ্জ দুই কারাগারেই ফাঁসির মঞ্চ ও জল্লাদ প্রস্তুত রাখা হয়েছে। ইতিমধ্যে অনুষ্ঠিত হয়েছে ফাঁসি কার্যকরের মহড়া। এখন শুধু প্রাণভিক্ষা চাওয়া বা না চাওয়ার বিষয়ে মীর কাসেম আলীর সিদ্ধান্তের অপেক্ষা মাত্র।

সারা দেশে সর্বোচ্চ সতর্কতা : মীর কাসেম আলীর রায় কার্যকর করা নিয়ে সর্বোচ্চ সতর্কতায় রয়েছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। নাশকতার আশঙ্কায় গাজীপুর, ঢাকাসহ জামায়াত-শিবির অধ্যুষিত এলাকায় সতর্কতা জারি করা হয়েছে। কারাগারের ভিতরে এবং বেষ্টনীর বাইরে নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে। কারা কর্তৃপক্ষের এ প্রস্তুতির পাশাপাশি সারা দেশে সর্বোচ্চ সতর্ক অবস্থায় থাকার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে পুলিশ, র‌্যাব, বিজিবি, গোয়েন্দা সংস্থাসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে।

ফাঁসির রায় কার্যকর করা হলে জামায়াত-শিবির নাশকতা চালাতে পারে বলে আশঙ্কা রয়েছে। কারা সূত্র বলেছে, সরকারের সবুজ সংকেত পাওয়া গেলে নির্বাহী আদেশে মীর কাসেম আলীর ফাঁসির রায় কার্যকর করা হবে। তবে কখন-কীভাবে ফাঁসির রায় কার্যকর করা হবে, সেই ক্ষণটি কঠোর গোপনীয়তায় রাখা হচ্ছে। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, সারা দেশেই নিরাপত্তা জোরদার করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। বিশেষ নিরাপত্তা-বলয়ের মধ্যে থাকছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল, ট্রাইব্যুনাল-সংশ্লিষ্ট বিচারক ও প্রসিকিউটর, সাক্ষী, আইনজীবী, রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি ও স্থাপনা। সড়ক-মহাসড়কে চেকপোস্ট বসিয়ে তল্লাশি অভিযান চলছে। দেশের সব বিভাগীয় শহরে থাকছে বিশেষ নিরাপত্তা। বিভাগীয় শহরের প্রবেশপথে একাধিক চেকপোস্ট বসিয়ে তল্লাশি শুরু হয়েছে। নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে মাঠে থাকছে পুলিশ, র‌্যাব, বিজিবি, এপিবিএনসহ সাদা পোশাকের গোয়েন্দা।

পুলিশ সদর দফতরের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা বলছেন, পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে প্রয়োজনীয় সব ধরনের ব্যবস্থা নিতে পুলিশকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। যে কোনো ধরনের অরাজক পরিস্থিতি মোকাবিলায় সর্বোচ্চ সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে।

সর্বশেষ খবর