রবিবার, ৪ সেপ্টেম্বর, ২০১৬ ০০:০০ টা
মীর কাসেম আলী ফাঁসি কার্যকর রাত ১০:৩৫

চট্টগ্রামের কসাইয়ের ফাঁসি

কার্যকর করেন চার জল্লাদ দাফন মানিকগঞ্জে

মির্জা মেহেদী তমাল, আহমেদ আল আমীন, আলী আজম ও শেখ সফিউদ্দিন জিন্নাহ্

চট্টগ্রামের কসাইয়ের ফাঁসি

ফাঁসির পর কাশিমপুর কারাগার থেকে মানিকগঞ্জে নিয়ে যাওয়া হয় মীর কাসেমের লাশ —রোহেত রাজীব

একাত্তরের ভয়ংকর খুনিবাহিনী আলবদরপ্রধান ও চট্টগ্রামের কসাই মীর কাসেম আলীর ফাঁসি কার্যকর করা হয়েছে। আইজি (প্রিজন) ব্রিগেডিয়ার জেনারেল সৈয়দ ইফতেখার উদ্দিন বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, শনিবার রাত ১০টা ৩৫ মিনিটে (কারাগারের ঘড়ি অনুযায়ী) গাজীপুরের কাশিমপুর কেন্দ্রীয় কারাগারে স্থাপিত ফাঁসির মঞ্চে দড়িতে ঝুলিয়ে তার মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়। এ সময় কাশিমপুর ঘিরে কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেওয়া হয়।

কারাসূত্র জানায়, জল্লাদ শাহজাহানের নেতৃত্বে ছয়জন জল্লাদ ফাঁসির কাজ সম্পন্ন করেন। ২০ মিনিট ধরে ফাঁসির দড়িতে ঝুলে থাকার পর কাসেমের নিথর দেহ নিচে নামিয়ে আনা হয়। পরে তার পায়ের রগ কেটে দেওয়া হয়। ফাঁসির চার ঘণ্টা আগে পরিবারের সদস্যরা কারাগারে গিয়ে মীর কাসেম আলীর সঙ্গে শেষ সাক্ষাৎ করেন। গাজীপুরের জেলা প্রশাসক এস এম আলম, অতিরিক্তি জেলা প্রশাসক রেহানুল আলম, সিভিল সার্জন ডা. আলী হায়দার খান, আইজি (প্রিজন) ব্রিগেডিয়ার জেনারেল সৈয়দ ইফতেখার উদ্দিন, জ্যেষ্ঠ কারা তত্ত্বাবধায়ক প্রশান্ত কুমার বণিক, জেলার মো. নাশির আহমেদ, ঢাকা রেঞ্জের ডিআইজি এ এস এম মাহফুজুল হক নুরুজ্জামান, গাজীপুরের পুলিশ সুপার হারুন উর রশিদসহ অন্যান্য পুলিশ কর্মকর্তার উপস্থিতিতে ফাঁসির এ দণ্ড কার্যকর করা হয়। এর মধ্য দিয়ে মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে অভিযুক্ত ব্যক্তিদের শাস্তি দিয়ে কলঙ্কমোচনের পথে এগিয়ে গেল দেশ। একাত্তরে মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে এটি ফাঁসি কার্যকরের ষষ্ঠ ঘটনা। মানবতাবিরোধী অপরাধী মীর কাসেম রাষ্ট্রপতির কাছে ক্ষমা চাননি। রায় কার্যকরের পর ধর্মীয় রীতি অনুযায়ী গোসল করিয়ে কাফনের কাপড়ে মুড়িয়ে কফিনে ভরা হয় মরদেহ। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের কড়া প্রহরায় গতকাল রাতেই কাসেমের লাশ নিয়ে যাওয়া হয় তার গ্রামের বাড়ি মানিকগঞ্জে। সেখানে তার লাশ দাফন করা হবে বলে স্ত্রী খন্দকার আয়েশা খাতুন জানিয়েছেন। এদিকে আমাদের মানিকগঞ্জ প্রতিনিধি জানান, মানবতাবিরোধী অপরাধী মীর কাসেম আলীর মরদেহ মানিকগঞ্জে দাফন করতে দেওয়া হবে না বলে দৃঢ় প্রত্যয় ব্যক্ত করেছেন এলাকাবাসী। রাতে কারাগারের গেট দিয়ে কাসেমের লাশবাহী অ্যাম্বুলেন্স বের হলে ‘জয় বাংলা’ স্লোগানে কেন্দ্রীয় কারাগারের আশপাশ প্রকম্পিত করে জনতা। মুক্তিযুদ্ধের ৪৫ বছর পর চট্টগ্রামের এই জল্লাদের ফাঁসির রায় কার্যকর হওয়ার পর মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের মানুষ উল্লাসে ফেটে পড়ে। মহান মুক্তিযুদ্ধে বিজয়ের আগমুহূর্তে বাঙালি জাতিকে মেধাশূন্য করার নীল নকশা হাতে নিয়ে বুদ্ধিজীবী নিধনযজ্ঞ চালিয়েছিল পাকিস্তানি সেনা ও গুপ্তঘাতক আলবদর বাহিনী। সেই গুপ্তঘাতক আলবদর বাহিনীর চট্টগ্রামের জল্লাদ ছিলেন মীর কাসেম। আর তাই স্বাধীনতার পর দীর্ঘ ৪৫ বছর পেরিয়ে গেলেও ফাঁসির দড়িতে তাকে ঝুলতেই হলো। ফাঁসির এ রায় কার্যকরের মধ্য দিয়ে শেষ হলো কুখ্যাত যুদ্ধাপরাধী মীর কাসেম পর্ব।

ফাঁসি কার্যকরের পর জাতীয় ও আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমগুলোতে বেশ গুরুত্ব দিয়ে তা প্রচার করা হয়। ফাঁসির এ সংবাদে মুহূর্তেই উল্লাসে ফেটে পড়ে কাশিমপুর কারাগারের সামনে জাতীয় পতাকা হাতে সমবেত শত শত মানুষ। আনন্দে আত্মহারা তখন গোটা বাংলাদেশ। রাতেই রাজপথে নেমে আসে জনতা। ‘ফাঁসি হলো, ফাঁসি হলো/ মীর কাসেমের ফাঁসি হলো’, ‘জয় বাংলা’ এমন সব স্লোগানে মুখরিত হয় রাজপথ। এর আগে মানবতাবিরোধী অপরাধে দোষী সাব্যস্ত জামায়াতে ইসলামীর আমির মতিউর রহমান নিজামী, সেক্রেটারি জেনারেল আলী আহসান মোহাম্মাদ মুজাহিদ, দুই সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল আবদুল কাদের মোল্লা ও মুহাম্মদ কামারুজ্জামান এবং বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাউদ্দিন কাদের (সাকা) চৌধুরীর ফাঁসির রায় কার্যকর হয়। মানবতাবিরোধী অপরাধে এই পাঁচটি ফাঁসি নাজিমউদ্দিন রোডের ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে কার্যকর হলেও মীর কাসেমের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর হয় কাশিমপুর কারাগারে। কারাগার সূত্র জানায়, বেলা ৩টা ৫০ মিনিটে ফাঁসি কার্যকরের নির্বাহী আদেশ পৌঁছায় কারাগারে। রাত ৮টা ৪৮ মিনিটে কারাভ্যন্তরে প্রবেশ করেন আইজি প্রিজন ব্রিগেডিয়ার জেনারেল সৈয়দ ইফতেখার উদ্দিন। রাত ৯টা ৩৫ মিনিটে কারাগারে প্রবেশ করেন গাজীপুরের জেলা প্রশাসক ও জেলা সিভিল সার্জন। পুলিশের এসপি হারুন উর রশিদ ও অন্য কর্মকর্তারাও এ সময় কারাগারে ঢোকেন। ছিলেন র‌্যাব-১ অধিনায়ক তুহিন মোহাম্মদ মাসুদ। ১০টা ৩৫ মিনিটে ফাঁসি কার্যকরের পর রাত ১১টার দিকে এই কর্মকর্তারা কারাগার থেকে বেরিয়ে যান।

ফাঁসির শেষ প্রস্তুতি : কারা সূত্র জানায়, বিকালে স্বজনরা কারাগারে যাওয়ার পর মীর কাসেম বুঝতে পারেন, তার হাতে আর বেশি সময় নেই। রাতেই তাকে ঝোলানো হবে। সন্ধ্যায় কারাগার থেকে স্বজনরা বের হওয়ার পর থেকেই মূলত তাকে ফাঁসির মঞ্চে নেওয়ার প্রস্ততি শুরু হয়। দুজন কারারক্ষী এ সময় কাশিমপুর কারাগারের পার্ট-২-এর ৪০ নম্বর কনডেম সেলে যান। সেখানে গিয়ে তারা মীর কাসেমকে মঞ্চে যাওয়ার জন্য প্রস্তুতি নিতে বলেন। মীর কাসেম এ সময় দোয়া-দরুদ পড়ছিলেন। তিনি গোসল সেরে বসে থাকেন। এরপর তিনি নামাজ আদায় করেন। রাত ৯টার দিকে কারা মসজিদের পেশ ইমাম মো. হেলাল উদ্দিন তাকে তওবা পড়ানোর জন্য যান। কিন্তু কাসেম আলী নিজেই তওবা পড়বেন বলে জানালে ইমাম সেখান থেকে চলে আসেন। এ সময় একটু শব্দ করে দোয়া-দরুদ পড়তে থাকেন তিনি। ফাঁসি কার্যকরের পর লাশ বহনের জন্য তিনটি অ্যাম্বুলেন্স কারাগারে প্রবেশ করে রাত ৯টায়। সময় যত গড়াতে থাকে টেনশনও বাড়তে থাকে সর্বমহলে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী কঠোর থেকে কঠোরতর নিরাপত্তা-বেষ্টনী গড়ে তোলে। পুলিশ, র‌্যাব ও বিজিবি ঘিরে রাখে কাশিমপুর কারাগারের চারপাশ।

প্রস্তুত জল্লাদ : সূত্র জানায়, ফাঁসি কার্যকর করতে গতকাল দুপুরের পর কারাগারের ভেতরে মঞ্চে চূড়ান্ত মহড়ায় চার জল্লাদ অংশ নেন। এরা হলেন শাহজাহান, দ্বীন ইসলাম, রিপন ও শাহীন। রাতে সাড়ে ৯টায় ফাঁসির মঞ্চে অবস্থান নেন তারা।

ফাঁসির মঞ্চে মীর কাসেম : রাত সাড়ে ৯টায় ফাঁসির মঞ্চের চারপাশে অবস্থান নেন জল্লাদ ও সশস্ত্র কারারক্ষীরা। ১০টার দিকে দুজন জল্লাদ ৪০ নম্বর কনডেম সেলে মীর কাসেম আলীকে আনতে যান। মঞ্চে আনার পর মীর কাসেমকে চার-পাঁচজন জল্লাদ যমটুপি পরিয়ে হাত ধরে ফাঁসির মঞ্চে নিয়ে যান। মঞ্চে তোলার পর তার গলায় ফাঁসির দড়ি পরানো হয়। রাত ১০টা ৩৫ মিনিটে জেলা প্রশাসক ও ম্যাজিস্ট্রেটের সংকেত পেয়ে জ্যেষ্ঠ কারা তত্ত্বাবধায়ক প্রশান্ত কুমার বণিক তার হাতে থাকা রুমাল মাটিতে ফেলে দেন। সঙ্গে সঙ্গে প্রধান জল্লাদ শাহজাহান লিভার টেনে ফাঁসি কার্যকরে সহযোগিতা করেন। সিভিল সার্জন ডা. আলী হায়দার খান মীর কাসেমের মৃত্যু নিশ্চিত করেন।

কারাগারে দিনভর ব্যস্ততা : মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে জামায়াত নেতা মীর কাসেম আলীর মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করতে কারাগারে ছিল দিনভর ব্যস্ততা। কাশিমপুর হাই সিকিউরিটি কারাগারে গতকাল সন্ধ্যার পর থেকে এ পর্যন্ত তিনটি অ্যাম্বুলেন্স ও র‌্যাব পুলিশের মোট ৯টি গাড়ি প্রবেশ করে। রাত ৮টা ৫০ মিনিটে পুলিশ ও র‌্যাবের পাহারায় অ্যাম্বুলেন্সগুলো কারাগারে প্রবেশ করে। অ্যাম্বুলেন্সের সঙ্গে প্রবেশ করেন গাজীপুরের পুলিশ সুপার হারুন উর রশীদ। এদিকে গতকাল বেলা ২টার দিকে কারাগারে প্রবেশ করেন অতিরিক্ত আইজি (প্রিজন) কর্নেল ইকবাল কবির। বিকেল ৪টায় প্রবেশ করেন ঢাকা বিভাগের ডিআইজি গোলাম হায়দার। এ ছাড়া সন্ধ্যা ৭টায় আইজি (প্রিজন) ব্রিগেডিয়ার জেনারেল সৈয়দ ইফতেখার উদ্দিন কারাগারে প্রবেশ করেন। এ সময় একই সঙ্গে গাজীপুরের সিভিল সার্জন আলী হায়দার খানও কারাগারে প্রবেশ করেন বলে জানা গেছে। রাত ৯টা ৩৭ মিনিটে জেলা প্রশাসক এস এম আলম, অতিরিক্তি জেলা প্রশাসক রেহানুল আলম ও সিভিল সার্জন আলী হায়দার খান কারাগারে ঢোকেন। কারাগারের জেলার মো. নাশির আহমেদ জানান, মীর কাসেম আলীর ফাঁসির নির্বাহী আদেশ আজ (গতকাল) বিকাল ৪টা ৫০ মিনিটে কাশিমপুর কারাগারে এসে পৌঁছায়। দণ্ড কার্যকরের আগে কাশিমপুর কারাগারের নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়। কারাগারের আশপাশ এলাকায় নেওয়া হয় কয়েক স্তরের নিরাপত্তা। সকাল থেকেই কারাগার ও আশপাশ এলাকা নিরাপত্তার চাদরে ঢেকে ফেলা হয়। মোতায়েন করা হয় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর বিপুলসংখ্যক সদস্য। কারাগারের মূল ফটক থেকে ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়ক পর্যন্ত প্রায় এক কিলোমিটার সড়কে বসানো হয় কয়েকটি নিরাপত্তা-চৌকি। নাশকতা মোকাবিলায় পুরো গাজীপুরে চার প্লাটুন বিজিবি মোতায়েন করা হয়। সন্ধ্যা ৬টায় জারি করা হয় রেড অ্যালার্ট। তা আজ ভোর ৬টা পর্যন্ত বহাল থাকার কথা। কারাগার এলাকার বাসিন্দা, সাংবাদিক, পুলিশ, র‌্যাব, আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়নের সদস্যসহ নির্বাচিত কিছু মানুষ ছাড়া আর কাউকে ওই এলাকায় ঢুকতে দেওয়া হয়নি। অদূরে উত্সুক জনতা জটলা করে। এ বিষয়ে র?্যাব-১-এর উপসহকারী পরিচালক (ডিএডি) মোহাম্মদ শাহজাহান সাংবাদিকদের বলেন, কয়েকটি স্তরে নিরাপত্তাবলয় সৃষ্টি করা হয়। কাশিমপুর কারাগার থেকে হাইওয়ে পর্যন্ত সড়কে সব ধরনের দোকানপাট বন্ধ করে দেওয়া হয়।

কারাগারে পরিবার : মীর কাসেমের সঙ্গে শেষ সাক্ষাতের জন্যে পরিবারের ৩৮ সদস্য কারাগারে যান। বেলা ৩টা ৩৫ মিনিটে ছয়টি মাইক্রোবাসে করে মীর কাসেমের স্ত্রী, মেয়ে, পুত্রবধূসহ পরিবারের ৪৭ জন সদস্য সাক্ষাতের জন্য কারাফটকে উপস্থিত হন। তাদের মধ্যে ৩৮ জনকে দেখা করতে ভেতরে যেতে দেওয়া হয়। তারা সাক্ষাৎ পান বিকাল ৫টায়। সাক্ষাৎ শেষে সন্ধ্যা ৬টা ৩৮ মিনিটে কারাগার থেকে বেরিয়ে আসেন তারা।

‘তোমাদের জান্নাতে নেব’ : মীর কাসেমের স্ত্রী খন্দকার আয়েশা খাতুন কারাগার থেকে বেরিয়ে সাংবাদিকদের বলেন, তার স্বামী মীর কাসেম আলী বলেছেন, ‘আমি মৃত্যুকে ভয় পাই না। এই মৃত্যুতে আমি বিচলিত নই।’ মীর কাসেম বলেন, ‘আমি আশাবাদী ছিলাম, অন্তত শেষ সময়ে ছেলেকে দেখতে পাব। আমার ছেলেকে দেখা করতে দেওয়া হলো না। এর পরও আমি আশাবাদী, ছেলেকে দেখতে পাব।’ স্ত্রীকে মীর কাসেম বলেছেন, ‘আমি জান্নাতে যাচ্ছি। জান্নাতে গিয়ে তোমাদেরও জান্নাতে নেওয়ার ব্যবস্থা করব। সবার ভাগ্যে শহীদি মৃত্যু জোটে না। আমি সৌভাগ্যবান আমার মৃত্যু শহীদি হবে। যারা আমাকে ফাঁসি দিচ্ছে, তাদের উদ্দেশ্য কখনো সফল হবে না।’ এ সময় মীর কাসেমকে অনেকটা ভারাক্রান্ত দেখা গেছে বলে জানান আয়েশা খাতুন।

হালুয়া খেলেন : পরিবারের সদস্যরা জানান, মীর কাসেমের অতিপ্রিয় খাবার সিলেটের হজরত শাহজালাল (রহ.) মাজারের হালুয়াসহ বাসা থেকে সেমাই, বিরিয়ানি রান্না করে নেওয়া হয়। তিনি হালুয়া খেলেও সেমাই ও বিরিয়ানি খাননি।

ঘটনাক্রম : মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে ২০১২ সালের ১৭ জুন গ্রেফতার হন মীর কাসেম। পরে ট্রাইব্যুনালের নির্দেশে কারাগারে পাঠানো হয় তাকে। ২০১৩ সালের ১৬ মে ট্রাইব্যুনালে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ দাখিল করে প্রসিকিউশন। অভিযোগ গঠনের মধ্য দিয়ে বিচার শুরু হয় ওই বছরের ৫ সেপ্টেম্বর। ৩০ সেপ্টেম্বর ট্রাইব্যুনাল-১ থেকে মামলাটি স্থানান্তর করা হয় ট্রাইব্যুনাল-২-এ। ২০১৪ সালের ২৭ এপ্রিল যুক্তিতর্ক শুরু করে প্রসিকিউশন। মামলাটি ট্রাইব্যুনালে রায়ের অপেক্ষায় রাখা হয় ওই বছরের ৪ মে। ২০১৪ সালের ২ নভেম্বর তাকে মৃত্যুদণ্ড দেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। রায়ের বিরুদ্ধে তিনি আপিল করেন। চলতি বছর ৮ মার্চ মীর কাসেমের মৃত্যুদণ্ড বহাল রাখেন আপিল বিভাগ। সেই রায়ের বিরুদ্ধে তিনি রিভিউ আবেদন করেন। শুনানি শেষে ৩০ আগস্ট রিভিউয়ের আবেদন খারিজ করেন আপিল বিভাগ।

ঘাতক থেকে ধনকুবের : ১৯৫২ সালের ৩১ ডিসেম্বর। মীর কাসেম আলীর জন্ম মানিকগঞ্জের হরিরামপুর উপজেলার চালা গ্রামে। ডাকনাম পিয়ারু ওরফে মিন্টু। বাবার চাকরির সুবাদে ছোটবেলায় থাকতেন চট্টগ্রামে। সেখানে জড়িত হন ইসলামী ছাত্রসংঘের রাজনীতিতে। ১৯৭১ সালের ৭ নভেম্বর পূর্ব পাকিস্তান ইসলামী ছাত্রসংঘের সাধারণ সম্পাদক হন তিনি। ১৯৭৭ সালে নাম বদল করে তার নেতৃত্বে ইসলামী ছাত্রশিবির হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে সংগঠনটি। মীর কাসেম হন শিবিরের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি। পরবর্তী সময়ে তিনি যোগ দেন জামায়াতে ইসলামীতে। একাত্তরে চট্টগ্রামে অবস্থানের সময় টর্চার সেল স্থাপন করেন ডালিম হোটেল নামে পরিচিত স্থানীয় মহামায়া হোটেলে। সেখানে নির্যাতন ও হত্যা করা হয় স্বাধীনতার বহু সমর্থককে। ছাত্রসংঘের বাছাই করা কর্মীদের সমন্বয়ে গঠিত আলবদর বাহিনীর তিনি ছিলেন তৃতীয় কমান্ডার।

পরিস্থিতি স্বাভাবিক, বিশৃঙ্খলা হলে জনগণই প্রতিহত করবে : মানবতাবিরোধী অপরাধে আলবদর নেতা মীর কাসেম আলীর ফাঁসির রায় কার্যকরের পর দেশের পরিস্থিতি স্বাভাবিক আছে, থাকবে বলেই জানালেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল। গত রাত সাড়ে ১০টায় রায় কার্যকরের পর এক ব্রিফিংয়ে মন্ত্রী বলেন, উচ্চ আদালতের রায় অনুযায়ী এ ফাঁসি কার্যকর হয়েছে। জনগণ যা চেয়েছিল তাদের সে আশা পূরণ হয়েছে।

গণজাগরণ মঞ্চের উল্লাস : যুদ্ধাপরাধী মীর কাসেম আলীর ফাঁসির রায় কার্যকর হওয়ায় উল্লাস করেছে গণজাগরণ মঞ্চ। রায় কার্যকরের পর মঞ্চের নেতা-কর্মীরা জয়সূচক ‘ভি’ চিহ্ন দেখিয়ে আনন্দ প্রকাশ করেন। পরে পতাকা মিছিল করেন। মিছিলটি শাহবাগ থেকে শুরু হয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ঘুরে পুনরায় শাহবাগে গিয়ে শেষ হয়। এর আগে গতকাল সন্ধ্যা থেকে মঞ্চের মুখপাত্র ডা. ইমরান এইচ সরকারের নেতৃত্বে শাহবাগ জাতীয় জাদুঘরের সামনে অবস্থান কর্মসূচি পালন করা হয়। এতে বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ অংশ নেন। অবস্থান চলাকালে মঞ্চের নেতা-কর্মীরা মীর কাসেমসহ সব যুদ্ধাপরাধীর ফাঁসির রায় দ্রুত কার্যকরের দাবিতে বিভিন্ন স্লোগান দেন। এ সময় প্রতিবাদী গান পরিবেশন করা হয়।

ফাঁসি কার্যকরে ১৪ দলের সন্তোষ : মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে মীর কাসেম আলীর ফাঁসি কার্যকরে সন্তোষ প্রকাশ করেছে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন ১৪ দলীয় জোট।

ক্ষমতাসীন জোটের নেতারা বলেছেন, এ রায় কার্যকরের মধ্য দিয়ে জাতি কলঙ্কমুক্তির পথে আরেক ধাপ এগিয়ে গেল। গোটা দেশের মানুষ বাকি যুদ্ধাপরাধীদের বিচার ও রায় কার্যকর দেখতে চায়। গতকাল রাতে যুদ্ধাপরাধী মীর কাসেম আলীর ফাঁসি কার্যকরের পর এই প্রতিবেদককে দেওয়া তাত্ক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর কবির নানক বলেন, আমরা যুদ্ধাপরাধীদের বিচার করছি। দেশবাসী এ বিচার ও বিচারের রায় কার্যকর দেখতে চায়। মীর কাসেম আলীর বিচারের রায় কার্যকরের মধ্য দিয়ে জাতি কলঙ্কমুক্ত হলো। 

কাল আধাবেলা হরতাল ডেকেছে জামায়াত : জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য মীর কাসেম আলীর মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ফাঁসি কার্যকরের প্রতিবাদে আগামীকাল সোমবার সকাল ৬টা থেকে বেলা ২টা পর্যন্ত সারা দেশে শান্তিপূর্ণ হরতালের ডাক দিয়েছে জামায়াত। গতকাল রায় কার্যকরের পর এক বিবৃতিতে দলটির ভারপ্রাপ্ত সেক্রেটারি জেনারেল ডা. শফিকুর রহমান এ কর্মসূচি দেন। একই সঙ্গে আজ দেশে-বিদেশে দোয়া পালন করবে দলটি। হাসপাতাল, অ্যাম্বুলেন্স, ফায়ার সার্ভিস, হজযাত্রীদের বহনকারী যানবাহন, সংবাদপত্রের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট গাড়ি এবং ওষুধের দোকান হরতালের আওতামুক্ত রাখার ঘোষণা দেওয়া হয়। শফিকুর রহমান দাবি করেন, মীর কাসেম আলী সম্পূর্ণ নির্দোষ। সরকার জামায়াতকে নেতৃত্বশূন্য করার যে ষড়যন্ত্র করছে তারই অংশ হিসেবে মীর কাসেমকে ফাঁসিকাষ্ঠে ঝুলিয়ে হত্যা করা হয়েছে।

সর্বশেষ খবর