রবিবার, ৪ সেপ্টেম্বর, ২০১৬ ০০:০০ টা

সম্মান প্রদর্শন হলো শহীদদের প্রতি

জিন্নাতুন নূর

সম্মান প্রদর্শন হলো শহীদদের প্রতি

নাসির উদ্দিন ইউসুফ বাচ্চু

মানবতাবিরোধী অপরাধে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামি জামায়াত নেতা মীর কাসেম আলী একাত্তরে আমাদের মুক্তিযুদ্ধের সময় অত্যন্ত ঘৃণ্য হতাকাণ্ডে জড়িত ছিলেন। চট্টগ্রামের ডালিম হোটেলে এই আল-বদর নেতা সাধারণ মানুষদের ধরে এনে হত্যা ও নির্যাতন চালাতেন। অবশেষে আদালতের দেওয়া রায়ে এই শীর্ষ যুদ্ধাপরাধীর ফাঁসি      কার্যকর হচ্ছে। এতে দেশবাসীর সঙ্গে আমিও স্বস্তি প্রকাশ করছি। আর মীর কাসেম আলীর ফাঁসি কার্যকরের মাধ্যমে মুক্তিযুদ্ধে শহীদদের প্রতিও যথাযথ সম্মান প্রদর্শন করা হলো বলে মনে করি। গতকাল মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা হলে লন্ডন থেকে বাংলাদেশ প্রতিদিনের কাছে এভাবেই নিজের প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেন খ্যাতিমান সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব ও মুক্তিযোদ্ধা নাসির উদ্দিন ইউসুফ বাচ্চু। তিনি বলেন, মীর কাসেম আলী ১৯৭১-এ গণহত্যা করার জন্য ডালিম হোটেলকে গারদখানা হিসেবে ব্যবহার করেছিলেন। সংখ্যালঘুদের ওপর আক্রমণ করে, তাদের মা-বোনদের ধরে এনে নির্যাতনও করেছেন। এটি সবাই জানে। তারপরও দেশ-বিদেশে মীর কাসেমের পরিবার ও দল লবিস্ট নিয়োগ করে বিচার ব্যবস্থাকে প্রভাবিত করার চেষ্টা করে। কিন্তু এতকিছুর পর এই যুদ্ধাপরাধীর ফাঁসি কার্যকরের প্রক্রিয়া প্রমাণ করে দেশের বিচার ব্যবস্থা স্বাধীন ও শক্তিশালী।

এই মুক্তিযোদ্ধা বলেন, যুদ্ধাপরাধের রায় বানচাল করার জন্যে মীর কাসেম আলী বিপুল পরিমাণ অর্থ খরচ করেছেন। আমাদের সেই অর্থের উৎস খতিয়ে দেখতে হবে। বিশেষ করে কাসেম আলী ব্যক্তিগত উৎস থেকে এই বিপুল টাকা খরচ করেছেন নাকি ইসলামী ব্যাংক থেকে এই অর্থের জোগান দেওয়া হয়েছে তা বের করতে হবে। আর যদি এটি তার ব্যক্তিগত সম্পদ হয়ে থাকে তবে আমাদের এর উেসর সন্ধানও জানতে হবে। আমার মতে এই যুদ্ধাপরাধীর সম্পদ বাজেয়াপ্ত করে তা রাষ্ট্রীয় কোষাগারে আনার ব্যবস্থা করতে হবে। আর এই উদ্ধারকৃত অর্থ মুক্তিযোদ্ধাদের কল্যাণে ব্যয় করা যেতে পারে। তবে আমি মনে করি শুধু মীর কাসেম আলীর সম্পদ নয়, তার সঙ্গে অন্য যুদ্ধাপরাধীদের সম্পদও বাজেয়াপ্ত করে একই প্রক্রিয়ায় তা মুক্তিযোদ্ধা বা রাষ্ট্রের কল্যাণে ব্যবহার করা যেতে পারে।

নাসির উদ্দিন ইউসুফ বাচ্চু বলেন, মীর কাসেম আলীর রায় নিয়ে মানুষের মধ্যে এক ধরনের আলোচনা-সমালোচনা ছিল। এমনকি এই রায় কার্যকর হওয়া নিয়ে সন্দেহও ছিল। তবে সব জল্পনার অবসান ঘটিয়ে অবশেষে এই মানবতাবিরোধীর ফাঁসি কার্যকর হতে যাচ্ছে। আমি মনে করি কাসেম আলীর যুদ্ধাপরাধের বিচার বানচাল করার বিষয়টি সামাজিক অনাচার সৃষ্টির ক্ষেত্রে প্রভাব রেখেছে। আর তার অপরাধের জন্য মৃত্যুদণ্ড ছাড়া অন্য কোনো শাস্তি হতে পারে না। মীর কাসেম আলীর মামলার চূড়ান্ত রায়ের আগে ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি ও বিভিন্ন মহল থেকে তার এক ধরনের সংশয় প্রকাশ করা হয়। তিনি বলেন, বিষয়টি দুঃখের যে, দেশ স্বাধীনের দীর্ঘ চার দশকেও এই যুদ্ধাপরাধীর বিচারকাজ সম্পন্ন করা যায়নি। আর আমি মনে করি এই ধরনের স্পর্শকাতর ইস্যুতে সামান্য মন্তব্য বা অতি প্রতিক্রিয়া বিচার কার্যক্রমে অনভিপ্রেত পরিস্থিতি সৃষ্টি করতে পারে। এই সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব আরও বলেন, সরকার সফলভাবে একে একে যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের আওতায় এনে তাদের শাস্তি কার্যকর করছে। আর সুষ্ঠুভাবে এই কাজটি সমাধানের জন্য আমার পক্ষ থেকে আমি সরকারকে সাধুবাদ জানাই। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নির্ভীকভাবে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার কাজ এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন এ জন্য তাকে কৃতজ্ঞতা জানাই।

সর্বশেষ খবর