সোমবার, ৫ সেপ্টেম্বর, ২০১৬ ০০:০০ টা

কাসেমের শেষ কয়েকদিন

দাফন হলো মানিকগঞ্জে

নিজস্ব প্রতিবেদক

‘আমাকে কেউ ছুঁতে পারবে না। সরকার বাধ্য হয়েই একসময় আমাকে মুক্তি দেবে।’ গ্রেফতার হওয়ার পর কারা প্রকোষ্ঠে থেকে এসব কথা প্রায়ই উচ্চারিত হতো মানবতাবিরোধী অপরাধী কুখ্যাত রাজাকার মীর কাসেম আলীর মুখ থেকে। এ বিষয়টি নিশ্চিত করে কারাসূত্র জানিয়েছে, তবে মঙ্গলবার মীর কাসেমের আপিলের রিভিউ খারিজ হওয়ার পরই দম্ভের পতন হয়। নাওয়া-খাওয়া ছেড়ে দেন তিনি। লজ্জায় কনডেম সেল থেকেও বের হননি। সারাক্ষণ জায়নামাজে বসেই সময় কেটেছে তার। মাঝে মাঝেই  কেঁদে উঠতেন হাউমাউ করে। তবে ফাঁসির দিন খাওয়া-দাওয়া করেছেন মীর কাসেম আলী। অন্যদিকে ফাঁসি কার্যকরের পর মীর কাসেমের মরদেহ কড়া নিরাপত্তার মধ্য দিয়ে শনিবার রাতেই মানিকগঞ্জের হরিরামপুর উপজেলার ইজদিয়া গ্রামে দাফন করা হয়েছে। মীর কাসেমের ফাঁসির খবরে দেশের বিভিন্ন এলাকায় আনন্দ মিছিলসহ মিষ্টি বিতরণ হয়েছে। কারাসূত্র বলছে, বিপুল পরিমাণ অর্থ খরচ করার পরও ফাঁসি ঠেকানো যাবে না এমনটা ঘুণাক্ষরে কল্পনাও করেননি মীর কাসেম। তার ধারণা ছিল, ফাঁসি ঠেকাতে বিদেশি লবিস্টরা সফল হবেন। কারারক্ষীসহ অন্য কয়েদিদের অনেকটা দম্ভ করেই বলতেন, এ দেশে সবকিছুই সম্ভব। সরকারের অনেকেই তার সঙ্গে যোগাযোগ রাখেন। একসময় বাধ্য হয়েই সরকার তাকে মুক্তি দেবে। এদিকে মরদেহ মানিকগঞ্জের হরিরামপুর উপজেলার ইজদিয়া গ্রামে দাফন করা হয়েছে। শনিবার গভীর রাতে দাফন সম্পন্ন হয়। মীর কাসেম আলীর ফাঁসি কার্যকর হওয়ায় মানিকগঞ্জবাসী খুশি। তবে লাশ মানিকগঞ্জে দাফন হওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করছেন তারা। ফাঁসি শেষে লাশ মানিকগঞ্জে দাফন করা হবে এমন গুঞ্জন শুরু হওয়ার পর থেকে নিরাপত্তার চাদরে ঢেকে ফেলা হয় ইজদিয়া গ্রামে ঢোকার সব রাস্তা। লাশ দাফনের এলাকায় সাংবাদিকদেরও যাওয়ার অনুমতি দেয়নি পুলিশ। প্রায় ৮ কিলোমিটার আগে কলতাবাজার এলাকায় অবস্থান নিতে হয় সাংবাদিকদের। রাত সাড়ে ১০টার দিকে পাঁচটি মাইক্রোবাসে মীর কাসেমের স্বজনরা কলতাবাজারে পৌঁছলে পুলিশ তাদের পথও আটকে দেয়। পরে চারটি মাইক্রোবাসে করে ৪০ জন স্বজনকে যাওয়ার অনুমতি দেওয়া হয়। মীর কাসেমের জন্মস্থান মানিকগঞ্জে হলেও তিনি বড় হয়েছেন চট্টগ্রামে। তার বাড়ি ছিল হরিরামপুর উপজেলার সুতালরি গ্রামে। অনেক আগেই ওই বাড়ি নদীতে ভেঙে যায়। মানিকগঞ্জ-৩ আসন থেকে সংসদ নির্বাচনে অংশ নেওয়ার আশায় উপজেলার চালা ইউনিয়নের ইজদা গ্রামে জায়গা কিনে একটি মসজিদ নির্মাণ করেন তিনি। এলাকাবাসী জানান, পাশেই বাড়ি করার ইচ্ছা পোষণ করেছিলেন মীর কাসেম। জেলা ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির আহ্বায়ক দীপক কুমার ঘোষ বলেন, ‘কুলাঙ্গার মীর কাসেম মানিকগঞ্জে অপকর্ম না করলেও জেলায় অপকর্ম করতে অর্থের জোগানদাতা ছিলেন। দীর্ঘদিন পর হলেও তার জঘন্য অপকর্মের সর্বোচ্চ শাস্তি হওয়ায় মানিকগঞ্জবাসী আনন্দিত। তবে মানিকগঞ্জের মাটিতে কবর হওয়ায় কষ্ট অনুভব করছি।’ মুক্তিযোদ্ধা টাইগার লোকমান বলেন, ‘রাজাকার মীর কাসেম আলীর ফাঁসি হওয়ায় শান্তি লাগছে। তবে এখানে কবর না দিলে ভালো হতো।’

চট্টগ্রামে স্বস্তি উচ্ছ্বাস : চট্টগ্রামের ‘কসাই’ খ্যাত মীর কাসেম আলীর ফাঁসির পর স্বস্তি প্রকাশ করেছেন ‘ডালিম হোটেলে’ নির্যাতিতরা। কুখ্যাত এ রাজাকারের ফাঁসি কার্যকর করার পর থেকে চট্টগ্রামের বিভিন্ন এলাকায় মিষ্টি বিতরণ ও আনন্দ-উল্লাস প্রকাশ করেছেন মুক্তিযোদ্ধা, আওয়ামী লীগ ও অন্যান্য সংগঠনের নেতা-কর্মীরা। এ সময় তারা মীর কাসেমের সম্পদ বাজেয়াপ্ত করে তা মুক্তিযোদ্ধাদের কল্যাণে ব্যয় এবং যুদ্ধাপরাধীদের স্বজনদের নির্বাচনে অংশগ্রহণের সুযোগ বাতিল করার দাবি করেন।

গাজীপুর : ফাঁসির রায় কার্যকরে গাজীপুরে জেলা যুবলীগের পক্ষ থেকে আনন্দ মিছিল ও মিষ্টি বিতরণ করা হয়েছে।

লক্ষ্মীপুর : ফাঁসির রায় কার্যকর করায় লক্ষ্মীপুরে আনন্দ মিছিল করেছে সরকারি কলেজ ছাত্রলীগ। গতকাল বেলা ১টার দিকে ক্যাম্পাস প্রাঙ্গণ থেকে মিছিলটি শুরু হয়ে শহরের প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ করে।

ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় : মীর কাসেম আলীর ফাঁসি কার্যকর হওয়ায় আনন্দ মিছিল করেছে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগ। গতকাল বেলা ১১টার দিকে ক্যাম্পাসে এ আনন্দ মিছিল করে তারা।

সর্বশেষ খবর