শিরোনাম
মঙ্গলবার, ৬ সেপ্টেম্বর, ২০১৬ ০০:০০ টা

মেজর জাহিদের স্ত্রীও জঙ্গি!

গ্রেফতার অভিযানে পুলিশ

নিজস্ব প্রতিবেদক

মেজর জাহিদের স্ত্রীও জঙ্গি!

নব্য জেএমবির সামরিক শাখার গুরুত্বপূর্ণ নেতা সদ্য নিহত মেজর জাহিদের  (অব.) স্ত্রী জেবুন্নাহার ওরফে শিলাকে খুঁজছে গোয়েন্দা পুলিশ। ইতিমধ্যে তার সম্ভাব্য অবস্থান সম্পর্কে খোঁজ পাওয়া গেছে জানিয়ে নামপ্রকাশে অনিচ্ছুক কাউন্টার টেররিজম ইউনিটের এক কর্মকর্তা বলেন, মেজর জাহিদের স্ত্রী শিলা গোয়েন্দা জালের মধ্যেই আছেন। তাকে ধরার চেষ্টা চলছে। শিলা জেএমবির নারী ইউনিটের সদস্য হতে পারেন বলে ধারণা পাওয়া গেছে। জাহিদ নিহত হওয়ার পরপরই সে শ্যামলীর একটি বাসা থেকে গা-ঢাকা দেন। তদন্তসংশ্লিষ্ট এক গোয়েন্দা কর্মকর্তা বলেন, জাহিদ নিহত হওয়ার পর তার স্ত্রী শিলা দুই সন্তানসহ আত্মগোপনে চলে যান। তবে গত শুক্রবার রাতে রাজধানীর রূপনগরে পুলিশের অভিযানে জাহিদ নিহত হওয়ার আগ পর্যন্ত শিলা শ্যামলীর এক আত্মীয়ের বাসায় ছিলেন। তদন্তে শিলার জঙ্গি সম্পৃক্ততার তথ্য পাওয়া গেলে তাকে ধরতে অভিযান শুরু করা হয়। গত দুই দিনে রাজধানীর বেশ কয়েকটি এলাকার পাশাপাশি জাহিদের কুমিল্লার গ্রামের বাড়িতেও অভিযান চালানো হয়। শিলাকে ধরতে পারলে নব্য জেএমবি ও জাহিদ সম্পর্কে অনেক গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পাওয়া যেতে পারে। বিশেষ করে জাহিদের সঙ্গে কোন কোন জঙ্গি নেতার ঘনিষ্ঠতা ছিল, জাহিদ কীভাবে জঙ্গিবাদে জড়ালো, জাহিদের কথামতো শিলাও কেন জঙ্গিবাদে উদ্বুদ্ধ হয়, নব্য জেএমবি নারী জঙ্গি সদস্য কতজন এমন আরও অনেক তথ্য। এই দম্পতি গত এপ্রিল থেকে পরিবার থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে দুই সন্তান নিয়ে পুরোপুরি জঙ্গিবাদের সঙ্গে মিশে যায়। তথ্য রয়েছে, গুলশানের হলি আর্টিজানে তামিমের পরিকল্পনায় জঙ্গি হামলার আগে জাহিদকে সঙ্গে নিয়ে তামিম তার অন্য ঘনিষ্ঠ সহযোগীসহ ঢাকার মিরপুর, মোহাম্মদপুর ও গুলশান এলাকায় একাধিক বৈঠক করেন। এরপর গুলশান হামলা চালানোর দিনও তামিম জাহিদের সঙ্গেই ছিলেন। তামিমদের নির্দেশে নব্য জেএমবির সদস্যদের সামরিক প্রশিক্ষণ দিতেন জাহিদ। শিলার খোঁজ পেতে গোয়েন্দা পুলিশ জাহিদের শ্বশুর মমিনুল হক ও শাশুড়ি জহুরা আক্তারকে জিজ্ঞাসাবাদ করছে। তবে এরা দুজন জিজ্ঞাসাবাদে শিলার খোঁজ জানেন না বলে গোয়েন্দাদের জানিয়েছেন। 

কাউন্টার টেররিজম (সিটি) ইউনিটের এক কর্মকর্তা গতকাল জাহিদ সম্পর্কে বলেন, গত বছর জাহিদ সেনাবাহিনী থেকে চাকরি ছাড়ার আগে থেকেই উগ্রবাদী চিন্তাধারার মধ্যে ছিলেন। আগে থেকেই ধর্মভীরু হওয়ায় তার সঙ্গে উগ্র-মৌলবাদী গোষ্ঠীর নিয়মিত যোগাযোগ ছিল। এরপর চাকরি ছাড়ার পর পুরোপুরি জঙ্গিবাদে জড়িয়ে পড়েন তিনি। এক পর্যায়ে কানাডাপ্রবাসী তামিম চৌধুরীর খুবই ঘনিষ্ঠ হয়ে ওঠেন জাহিদ। তামিমের ডাকে দেশ ছেড়ে কানাডায়ও গিয়েছিলেন জাহিদ। এক পর্যায়ে তারা দুজনই দেশে ফিরে নব্য জেএমবিকে নিজেদের মতো করে সাজাতে থাকেন। তামিম নারায়ণগঞ্জে নিহত হওয়ার আগে নিষিদ্ধঘোষিত কয়েকটি জঙ্গি সংগঠনকে এক কাতারে আনার চেষ্টা চালিয়েছিলেন। 

নব্য জেএমবির বোমার কারিগর ভাগ্নে মাহফুজ, মারজান, মানিক, রিপন, মানিকের সঙ্গেও জাহিদের ঘনিষ্ঠতা ছিল। জাহিদসহ এরা সবাই তামিমের পরিকল্পনা বাস্তবায়নে একসঙ্গে কাজ করত। তবে তামিম ও জাহিদের মৃত্যুর পর ধরা না পড়া জঙ্গিনেতাদের সঙ্গে শিলার যোগাযোগ রয়েছে বলে তথ্য পেয়েছে গোয়েন্দারা।

গোয়েন্দা সূত্রমতে, তামিম ও জাহিদের সঙ্গে নিষিদ্ধঘোষিত জেএমবি, আনসারুল্লাহ বাংলাটিম ও হিযবুত তাহ্রীর-এর শীর্ষ পর্যায়ের নেতাদের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ ছিল। এদের পরিকল্পনাতেই ঢাকাসহ সারা দেশে পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ডের পাশাপাশি ভয়ঙ্কর হামলা চালানোর ছক কষে এগোতে থাকে নব্য জেএমবি। কিন্তু তার আগেই পুলিশের অভিযানে নিহত হওয়ায় আপাতত সেই সম্ভাবনা তেমন একটা নেই বলে জানিয়েছেন ঢাকা মহানগর পুলিশের কাউন্টার টেররিজম ইউনিটের প্রধান মনিরুল ইসলাম।

সর্বশেষ খবর