বুধবার, ৭ সেপ্টেম্বর, ২০১৬ ০০:০০ টা

মানবতা নেই কারাগারে

মানবেতর জীবন বন্দীদের, সময় মতো মেলে না খাবার দিতে হয় নগদ টাকা

নিজস্ব প্রতিবেদক

মানবতা নেই কারাগারে

৫ সেপ্টেম্বর। বেলা ৪টা। কেরানীগঞ্জ কেন্দ্রীয় কারাগারের সামনের চত্বর। ছমিরন বেওয়া নামের এক দর্শনার্থী। এ কারাগারেই বন্দী রয়েছেন তার সন্তানসম আওলাদ। আওলাদ নামের এক পিতৃমাতৃহীন যুবককে সন্তানের মতো করে বড় করেছেন তিনি। মধ্য কেরানীগঞ্জে পান-সিগারেটের দোকান তার। তবে ১২ দিন আগে পুলিশ তাকে গাড়ি ভাঙচুরের একটি পেন্ডিং মামলায় গ্রেফতার করে কারাগারে পাঠিয়ে দেয়। আদালত আওলাদকে জামিনে মুক্তি দিয়েছে। গত ১১ দিনের অভিজ্ঞতার বর্ণনা দিতে গিয়ে কেঁদে ফেলেন ছমিরন বেওয়া। পদে পদেই টাকা দিতে হয় তাকে। তিনি বলেন, প্রথম দিন আওলাদকে খুঁজে বের করার জন্য দিতে হয় ৪০০ টাকা। তবে তাও পরদিন মেলে আওলাদের খোঁজ। তখন ভিতরে খাবারের কষ্টের কথা বলেন আওলাদ। এ জন্য তার পিসিতে দেওয়া হয় ২৫০০ টাকা। আর এ টাকা ঠিকঠাকমতো পৌঁছাতে এক কারারক্ষীকে দিতে হয় অতিরিক্ত ২০০ টাকা। কাশিমপুর হাই সিকিউরিটি কেন্দ্রীয় কারাগারে ছয় মাস ধরে বন্দী যাত্রাবাড়ী থানার অস্ত্র মামলার আসামি মো. হাসান। ঢাকার আদালতে হাজিরা দিতে আসার পর কথা হয় এ প্রতিবেদকের সঙ্গে। একপর্যায়ে তিনি বলতে শুরু করেন তার বন্দী জীবনের অভিজ্ঞতা। প্রচণ্ড গরম অথচ বেশির ভাগ সময়ই থাকে না বিদ্যুৎ। খাবারের মান একেবারেই তলানিতে। কথা বলার একপর্যায়ে চোখ দিয়ে পানি গড়িয়ে পড়ে তার। বলছিলেন, কারাবিধি অনুযায়ী প্রতি বেলায় মাছের পরিমাণ থাকার কথা ৩৬ গ্রাম। তবে জোটে মাত্র ১২ থেকে ১৪ গ্রাম। ডাল ১৪৫ গ্রাম দেওয়ার কথা থাকলেও দেওয়া হচ্ছে ১০ থেকে ১২ গ্রাম। তবে মাছের দেখা মেলে খুব কম। কারা-ক্যান্টিনে সবকিছুর দামই বাইরের তুলনায় দুই থেকে তিন গুণ বেশি।

কেরানীগঞ্জ কেন্দ্রীয় কারাগারের বন্দী বিল্লাল। রাজধানীর তেজগাঁও থানার মাদক মামলার আসামি হয়ে বন্দী আছেন তিন মাস ধরে। তিনি বলছিলেন, ‘ভাতের সঙ্গে দেওয়া ডালের অবস্থা খুবই ভয়াবহ। ওইটা ডাল না পানি বোঝা বড় দায়। লবণের লেশমাত্র নেই। খোলামেলা পরিবেশ হলেও অন্যান্য ভোগান্তি ঠিক আগের মতোই।’ তার ভাষায়, কেরানীগঞ্জ কারাগারের অবস্থা অনেকটা নতুন বোতলে পুরনো মদ।

এ তো গেল মাত্র তিনটি ঘটনা। আদালত থেকে জামিন পাওয়ার পরও কেরানীগঞ্জসহ দেশের বিভিন্ন কারাগারের দুর্নীতিবাজ সদস্যদের হয়রানি থেকে বাঁচতে বন্দীদের পরিশোধ করতে হচ্ছে তাদের চাহিদা অনুযায়ী টাকা। নইলে কারাগারের বাইরে থাকা সংশ্লিষ্ট থানার দুর্নীতিবাজ পুলিশ সদস্যদের মাধ্যমে তাদের পুরনো পেন্ডিং মামলায় ঢুকিয়ে দেওয়ার ভয় দেখানো হচ্ছে। কিছু কারাগারে বন্দীদের সঙ্গে দেখা করার জন্য দর্শনার্থীদের ফ্রি স্লিপের ব্যবস্থা থাকলেও তা শুধু কাগজে-কলমে। অভিযোগ রয়েছে, দায়িত্বরত কারারক্ষীদের অতিরিক্ত টাকা না দিলে অনেক ক্ষেত্রে দেখাও মেলে না। হতাশ হয়ে ফিরেও আসতে হয় ভুক্তভোগী দর্শনার্থীদের। ভিআইপি বন্দীকক্ষে দেখা করতে চাইলে দর্শনার্থীদের গুনতে হয় ১৫০০ থেকে ২৫০০ টাকা। এর চেয়েও অমানবিক চিত্র বিদ্যমান সারা দেশের ৫৮টি কারাগারে। ২৩ আগস্ট কেরানীগঞ্জ কেন্দ্রীয় কারাগার পরিদর্শন শেষে কারাগারে মানবাধিকার লঙ্ঘিত হচ্ছে এমন মন্তব্য করেছিলেন মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান কাজী রিয়াজুল হক। দিয়েছিলেন কিছু সুপারিশ। পরিদর্শন শেষে গণমাধ্যম কর্মীদের তিনি বলেছিলেন, ‘আমরা বিদ্যমান পরিস্থিতি উন্নয়নের জন্য প্রতি তিন মাস অন্তর কারাগার পরিদর্শনে আসব।’

কেরানীগঞ্জ কেন্দ্রীয় কারাগার সূত্র বলছে, এ কারাগারের দুই ডেপুটি জেলার মাজহারুল ও শিরীন সুলতানার নেতৃত্বেই চলছে যাবতীয় অনিয়ম। ঊর্ধ্বতন কর্তাব্যক্তিদের বিশেষভাবে ম্যানেজ করে তারা চালিয়ে যাচ্ছেন কার্যক্রম। শিরীন সুলতানার পোস্টিং কাশিমপুর মহিলা কারগারে হলেও তিনি ঢাকার কেন্দ্রীয় কারাগারে অবস্থান করছেন অদৃশ্য ক্ষমতাবলে। তাদের বিরুদ্ধে কেউ কথা বলতেও সাহস দেখান না। এদিকে কারা অধিদফতর সূত্রে জানা গেছে, সারা দেশের কারাগারগুলোতে বন্দী ধারণক্ষমতা ৩৪ হাজার। তবে এসব কারাগারে গতকাল বন্দীর সংখ্যা ছিল সাড়ে ৭৭ হাজার। এক সপ্তাহ আগে বন্দীর সংখ্যা ছিল ৭৯ হাজার। অতিরিক্ত বন্দীর পানীয় জল, থাকা, খাওয়া ও স্বাস্থ্যসেবা নিয়ে কারা কর্তৃপক্ষ রীতিমতো হিমশিম খাচ্ছে। ফলে কারাগারে দেখা দিয়েছে মানবিক বিপর্যয়। বন্দীরা পড়েছে চরম দুর্ভোগে। এর বাইরে কারাগারের দুর্নীতিবাজ সদস্যদের নানা কায়দার জাঁতাকলে পড়ে জীবন ওষ্ঠাগত বন্দীদের। একদণ্ড শান্তির আশায় বন্দীরা দুর্নীতিবাজ সদস্যদের সব চাহিদা পূরণ করে যাচ্ছেন বলে অভিযোগ রয়েছে।

‘রাখিব নিরাপদ/দেখাব আলোর পথ’— এই স্লোগান নিয়ে কারাগারগুলো চললেও অতিরিক্ত বন্দীর চাপে দিশাহারা সিরাজগঞ্জ কারা কর্তৃপক্ষ। চলছে ভয়াবহ মানবিক বিপর্যয়। ধারণক্ষমতার চেয়ে প্রায় দশগুণ বন্দী এ কারাগারে। পুলিশের চলমান বিশেষ অভিযানসহ বিভিন্ন মামলার প্রায় সাড়ে ১২০০ বন্দী রয়েছে এখানে। এদের মধ্যে মাদক মামলার আসামিই বেশি। এর পরই রয়েছে জামায়াত-বিএনপিসহ বিভিন্ন মামলার আসামি। এ ছাড়া জেলখানাটিতে রয়েছে নিষিদ্ধ জঙ্গি সংগঠনের ২০ জন সদস্য।

জেল খেটে সম্প্রতি বেরিয়েছেন এমন কয়েকজন বন্দীর সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, বন্দীর অতিরিক্ত চাপে কারাগারটিতে চিকিৎসা, পানি, পয়োনিষ্কাশন ও শোয়ার জাগয়ার মহাসংকট তৈরি হয়েছে। একজনের শোয়ার জায়গায় পাঁচ-সাতজনকে থাকতে হচ্ছে। অনেকের রাত কাটছে নির্ঘুম। প্রচণ্ড গরমে অনেকে অসুস্থ হয়ে পড়ছেন বলেও অভিযোগ পাওয়া গেছে। এ অবস্থা চলতে থাকায় মানবিক বিপর্যয় দেখা দিয়েছে। ফলে ক্ষোভ বাড়ছে কারাবন্দীদের। অন্যদিকে একসঙ্গে অনেক স্বজন দেখা করায় ভিড়ের মধ্যে কেউ ভালোভাবে কথা বলতে পারছেন না বলেও অভিযোগ রয়েছে। সদরের ছোনগাছা গ্রামের শেফালী খাতুন বলেন, ‘দুপুরে জামিন হয়েছে। বিকাল ৫টায়ও কাগজ আসেনি। দুপুর থেকে না খেয়ে বসে আছি। কখন আমার স্বজনকে ছাড়া হবে তা বলতে পারছি না।’ একই কথা বললেন শাহজাদপুরের বয়োবৃদ্ধ হারুন।

সিরাজগঞ্জ জেলা কারাগারের জেলার আবুল বাশার জানান, বন্দী বেশি হওয়ায় শোয়ার একটু সমস্যা হচ্ছে। এ ছাড়া অন্য কোনো সমস্যা নেই। সূত্র জানায়, দেশের প্রায় সব কটি কারাগারে গাদাগাদি করে রাখা হচ্ছে বন্দীদের। প্রচণ্ড গরমে বয়স্কসহ শত শত আসামি অসুস্থ হয়ে পড়ছেন। মাপা পানিতে গোসলের সুযোগও হচ্ছে না অনেকের। একসঙ্গে বহু লোক থাকায় চর্মরোগের মারাত্মক প্রাদুর্ভাব দেখা দিয়েছে। বিপুলসংখ্যক বন্দী না ঘুমিয়ে রাত কাটাতে বাধ্য হচ্ছেন। অন্যদিকে ‘বাগেরহাট জেলা কারাগারে টাকায় কথা বলে’ এমন বিষয় সবার মুখে মুখে। যত বেশি টাকা তত বেশি সময় ধরে হাজতি ও কয়েদিরা স্বজনদের সঙ্গে কথা বলতে পারেন। চাহিদামতো টাকা দিলে কারাগারে রান্না করে খাওয়ার অলিখিত ব্যবস্থাও আছে। আর এ কারাগারে টাকায় মেলে মাদকদ্রব্য। টাকা দিলে এখানে থাকা যায় রাজার হালে। গুরুতর অসুস্থ না হয়েও কারাগারের বাইরে হাসপাতালের কেবিনে থাকার সুযোগ মেলে। যাওয়া-আসার সময় আর কোর্ট হাজতে বসে মোবাইল ফোনে কথা বলা যায়। আর যেসব হাজতি ও কয়েদিরা টাকা দিতে পারেন না, তারা যতই অসুস্থ হোন না কেন, ন্যূনতম চিকিৎসা মেলে না। গতকাল দুপুরে তিন ঘণ্টা ধরে বাগেরহাট জেলা কারাগার চত্বর ও কোর্টহাজতখানা ঘুরে হাজতি এবং তাদের স্বজনদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে এসব তথ্য। বাগেরহাটের ফকিরহাট উপজেলার বাহিরদিয়া গ্রামের আবদুল গহর শেখ (৮০) কারাগারে থাকা স্বজনদের সঙ্গে দেখা করার বিষয়ে বলেন, দুপুরে তিনজনের সঙ্গে ২০ মিনিট কথা বলার সুযোগ দেওয়ার জন্য কারারক্ষীদের দিতে হয়েছে ৬০০ টাকা। প্রতি প্যাকেট সিগারেট পাঠানোর জন্য বাড়তি দিতে হয়েছে ৫০ টাকা করে। মাসে দুই হাজার টাকা দিলে একজনকে ভালো খাবার ও থাকার জায়গা দেওয়া হবে বলেও কারারক্ষীরা তাকে জানিয়েছেন। প্রায় একই অভিযোগ করলেন বন্দী স্বজনদের দেখতে আসা পিরোজপুর শহরের মাছিমপুর সড়কের গৃহবধূ আকলিমা বেগম, বাগেরহাটের রামপাল উপজেলার শিবনগর গ্রামের নজরুল ইসলাম, যাত্রাপুর এলাকার তাহমিনা আক্তার, মোরেলগঞ্জের নিমানবাড়িয়া এলাকার একরাম হোসেন।

বাগেরহাট কোর্টহাজতে গতকাল দুপুরে গিয়ে দেখা যায়, মামলায় হাজিরা দিতে আসা দুই আসামি দীর্ঘক্ষণ ধরে মোবাইল ফোনে কথা বলে চলেছেন। এ জন্য কত টাকা দিতে হয়েছে— জানতে চাইলে তারা নিজেদের নাম-পরিচয় প্রকাশ না করে বলেন, দুই-তিনশ টাকা দিলেই যাওয়া-আসাসহ কোর্টহাজতে বসে মোবাইল ফোনে কথা বলা যাচ্ছে। এ দুই হাজতি জানান, কারাগারের কর্মকর্তা-কারারক্ষী ও তাদের দালালদের চাহিদামতো টাকা দিলে কারাগারে রান্না করে খাওয়া ও ভালো জায়গায় থাকা যায়। চাহিদামতো মেলে সব ধরনের মাদক। কারাগারের বাইরে হাসপাতালের কেবিনে থেকে চিকিৎসা নেওয়ার সুযোগ পওয়া যায়। আর যেসব হাজতি ও কয়েদি টাকা দিতে পারেন না, তারা যতই অসুস্থ হোন, তাদের ন্যূনতম চিকিৎসা মিলবে না।

তবে বাগেরহাট জেলা কারাগারের জেলার মোস্তফা কামাল এসব অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, ‘কারাগারে কোনো অনিয়ম নেই। ২০০৮ সালে চালু হওয়া এই কারাগারের ধারণক্ষমতা ৪০০ জনের হলেও বর্তমানে গড়ে ৫০০ জন হাজতি ও কয়েদি এখানে অবস্থান করছেন। তারা ভালোই আছেন। কোনো অসুবিধা নেই।’

এদিকে ঠাকুরগাঁও কারাগার থেকে সম্প্রতি মুক্তি পাওয়া বন্দী মিজানুর রহমান জানান, তিনি ৯ মাস জেল খেটেছেন। আবাসন সংকটের কারণে কোনো দিন সোজা হয়ে ঘুমাতে পারেননি তিনি।

একইভাবে দুই বছরের কারাজীবনের অভিজ্ঞতার কথা ব্যক্ত করতে গিয়ে নাম প্রকাশ না করার শর্তে একটি রাজনৈতিক দলের নেতা বলেন, ‘একদিকে যেমন আবাসন সংকট, অন্যদিকে রয়েছে পানি ও স্যানিটেশনের সমস্যা। একবার টয়লেটে যেতে হলে এক থেকে দেড় ঘণ্টা লাইনে দাঁড়িয়ে থাকতে হয়, যা খুবই অমানবিক।’ যদিও কারা কর্তৃপক্ষের দাবি, কারাগারের প্রতিটি বন্দীকে রাখা হয় নিবিড় পর্যবেক্ষণে। কঠোর অধ্যবসায়ের মাধ্যমে দেখানো হয় স্বাভাবিক জীবনে ফিরে যাওয়ার পথ। এমন মন্তব্য করলেন ঠাকুরগাঁও কারাগারের জেলার নাজিম উদ্দিন। তবে অনুসন্ধানে পাওয়া যায় এর উল্টো চিত্র। এ কারাগারে যার যত বেশি প্রভাব, সে তত বেশি সুবিধা পেয়ে থাকে। আর যাদের প্রভাব নেই, তাদের হতে হয় সাজাপ্রাপ্তদের নির্যাতনের শিকার। তবে কারাগারের বাইরে এসব ঘটনা সাধারণত প্রকাশ করেন না কেউ। কারণ বেশির ভাগ হাজতি বিভিন্ন অপরাধী হওয়ায় তাদের বারবার যেতে হয় কারাগারে।

প্রায় একই চিত্র জামালপুর জেলা কারাগারের। বন্দীদের যেমন দুর্ভোগের অন্ত নেই, তেমনি সাক্ষাত্প্রার্থী স্বজনদেরও ভোগান্তির শিকার হতে হয় নিত্যদিন। জামালপুর জেলা কারাগারের ধারণক্ষমতা সব মিলিয়ে ৩০৭ জনের। কিন্তু বর্তমানে এখানে বন্দী আছেন এর দ্বিগুণ। কারাগারে সর্বশেষ বন্দী ছিলেন ৬০০ জন। পাঁচ টাকা দিয়ে স্লিপ কেটে বন্দীদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করার নিয়ম থাকলেও কারারক্ষীরা আদায় করেন ১০০ থেকে ২০০ টাকা— এমন অভিযোগ করেছেন অনেকেই। স্লিপ কেটে দীর্ঘ সময় অপেক্ষার পর সাক্ষাৎ মেলে। কিন্তু সাক্ষাৎকক্ষের অপর্যাপ্ত পরিসরের কারণে কথা বলা দুষ্কর হয়ে পড়ে। এ ছাড়া জামিন পাওয়া আসামিদের ছাড়া পেতেও গুনতে হয় অর্থ। অনেকেই অভিযোগ করেছেন, আদালত থেকে জামিনের কাগজ জেলগেটে পৌঁছার পর কারাগারের কেরানিকে দিতে হয় আসামিপ্রতি ২০০ থেকে ৫০০ টাকা। এ টাকা না দিলে জামিন পাওয়া বন্দীকে নানা ছুতোয় ওই দিন মুক্তি না দিয়ে ছাড়া হয় পরদিন। ১৮৯৯ সালে প্রতিষ্ঠিত জামালপুর জেলা কারাগারের অফিস ভবনসহ সব ওয়ার্ডই জরাজীর্ণ। এ কারাগারের মহিলা ওয়ার্ডটি ঝুঁকিপূর্ণ থাকায় মহিলা বন্দীদের রাখা হচ্ছে পার্শ্ববর্তী শেরপুর জেলা কারাগারে। মহিলা বন্দীরা জামিন পেলে জামালপুর কারাগার থেকে জামিনের কাগজ ডাকযোগে পাঠানো হয় শেরপুরে। ফলে জামিন পাওয়ার পরও মহিলা বন্দীদের মুক্তি পেতে সময় লেগে যায় দুই থেকে তিন দিন। এসব বিষয়ে কারা অধিদফতরের অতিরিক্ত মহাপরিদর্শক কর্নেল ইকবাল হাসান বলেন, ‘বর্তমানে কারাগারগুলোতে দ্বিগুণেরও বেশি বন্দী রয়েছেন এ কথা সত্য। সীমিত জনবল দিয়েও কারাবিধি অনুযায়ী কয়েদি ও হাজতিদের সুষ্ঠুভাবে থাকা-খাওয়াসহ মানবিক অধিকার রক্ষার চেষ্টা চলছে। তবে ধারণক্ষমতার চেয়ে অতিরিক্ত হওয়ায় বন্দীদের পাশাপাশি কারা কর্মকর্তা-কর্মচারীদেরও কষ্ট পোহাতে হচ্ছে।’

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর