বুধবার, ৭ সেপ্টেম্বর, ২০১৬ ০০:০০ টা
ভবন ঘেরাওয়ে র‌্যাব-পুলিশ

ফের জঙ্গি সন্দেহে আতঙ্ক গুলশানে

হঠাৎ আতঙ্ক

নিজস্ব প্রতিবেদক

ফের জঙ্গি সন্দেহে আতঙ্ক গুলশানে

সাঁজোয়া যান ও ফায়ার ব্রিগেডের গাড়ি নিয়ে গতকাল সকালে রাজধানীর গুলশানের এক ভবন প্রায় তিন ঘণ্টা ঘেরাও করে রাখার পর ভেতরে তল্লাশি চালিয়ে চুরির খবর দেয় আইনশৃঙ্খলা বাহিনী —বাংলাদেশ প্রতিদিন

রাজধানীর গুলশানে আবারও জঙ্গি সন্দেহে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। যদিও সেটা জঙ্গি নয় চোর বলে মনে করছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা। গতকাল ভোরে গুলশান-১ নম্বর গোল চত্বরের পাশে অবস্থিত ৫১ নম্বর উদয় টাওয়ারে এ আতঙ্ক দেখা দেয়। ঘটনার পর পুলিশ ও র‌্যাব সদস্যদের ব্যাপক উপস্থিতি দেখে গুলশানবাসীর মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। পুলিশ বলছে, ওই ভবনে ৩-৪ জন দুর্বৃত্ত প্রবেশ করে বলে জানতে পেরেছি। তবে পুলিশ আসার আগেই তারা জানালার গ্রিল কেটে পালিয়েছে। যদিও পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে দুটি ব্যাগে থাকা ১৭টি মোবাইল ফোনসেট উদ্ধার করেছে। চোররা ওই ভবনের এলজি-বাটারফ্লাই শো-রুম এবং ইউনিরয়্যাল সিকিউরিটিজ লিমিটেড কার্যালয়ের কাগজপত্র তছনছ করেছে। পুলিশ-র‌্যাব ও প্রত্যক্ষদর্শী সূত্র বলছে, উদয় টাওয়ারের নিচে ব্র্যাক ব্যাংকের একটি বুথ আছে। সকালে বুথের একজন নিরাপত্তাকর্মী শো-রুমের ভিতর থেকে গেট কাটার শব্দ শোনেন। নিরাপত্তাকর্মী দেখেন, কেউ একজন ভিতর থেকে গেটের তালা কাটার চেষ্টা করছে। কাছে গেলে ওই নিরাপত্তাকর্মীকে তিনি বলেন, ওপরে আসবি না। আসলে গুলি করব। এরপর ওই নিরাপত্তাকর্মী পুলিশে খবর দেন। ওই নিরাপত্তাকর্মীর নাম সবুর মোল্লা। তিনি বলেন, সকাল পৌনে ৭টার দিকে ভিতর থেকে একজন গেটের তালা কাটার চেষ্টা করছিলেন। কাছে যেতেই ওই দুর্বৃত্ত হুমকি দিয়ে ওপরে চলে যায়। সন্দেহ হওয়ায় বিষয়টি পুলিশকে জানানো হয়। ওই ভবনের কেয়ারটেকার এবং নিচে অবস্থিত লন্ড্রির দোকান মালিক বুলুর বরাত দিয়ে সবুর মোল্লা বলেন, বুলু তিনজন লোককে দেখেছেন। তারা বুলুকে অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে রাখে। জানা গেছে, ওই ভবনের নিচতলায় গ্যারেজ, ব্র্যাক ব্যাংকের এটিএম বুথ ও লি লিহুদ চাইনিজ ড্রাই ক্লিনার্স নামে একটি লন্ড্রির দোকান রয়েছে। দোতলা ও তৃতীয় তলায় এনসিসি ব্যাংক গুলশান শাখা এবং এলজি-বাটারফ্লাইয়ের শো-রুম। চতুর্থ তলায় লি ছয় শিয়ং হাউস ও নেক্সিম নামে দুটি প্রতিষ্ঠান এবং ওই ভবনের কেয়ারটেকার বুলু পরিবারসহ থাকেন। পঞ্চম তলায় ইউনিরয়?্যাল সিকিউরিটিজ লিমিটেডের কার্যালয়। পিঠে ব্যাগ নিয়ে কয়েকজন তরুণ জোর করে ওই ভবনে ঢুকেছে খবর পেয়ে বিপুল সংখ্যক পুলিশ ওই এলাকা ঘিরে ফেললে শুরু হয় আতঙ্ক আর নানা গুঞ্জন। দুই মাস আগের গুলশান হামলার অভিজ্ঞতা মাথায় রেখে ব্যাপক প্রস্তুতি নিয়ে পুলিশ, র‌্যাব ও সোয়াত টিমের সদস্যরা সেখানে উপস্থিত হলে নতুন কোনো সন্ত্রাসী হামলার ঘটনা ঘটছে বলে ধারণা তৈরি হয় গুলশানবাসীর মধ্যে। ডিএমপির ভারপ্রাপ্ত কমিশনার শাহাব উদ্দীন কোরেশী বলেন, কয়েকজন দুর্বৃত্ত উদয় টাওয়ারে প্রবেশ করে বলে জানতে পেরেছি। পরে পুলিশ ঘটনাস্থলে এসে পুরো ভবন নিজেদের নিয়ন্ত্রণে নেয় এবং তল্লাশি চালায়। কিন্তু ভবনের ভিতর কাউকে পাওয়া যায়নি। তবে পরিত্যক্ত অবস্থায় দুটি ব্যাগ পাওয়া গেছে। এটা চুরির ঘটনা বলে মনে হচ্ছে। কিন্তু পুলিশ আসার আগেই দুর্বৃত্তরা পেছনের জানালা দিয়ে পালিয়ে গেছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। এর সঙ্গে জঙ্গিবাদের সম্পর্ক নেই। র‌্যাব-১ এর উপ-অধিনায়ক মেজর শফিউল আজম সিদ্দিকী জানান, পঞ্চম তলায় একটি সিকিউরিটি অফিসের ভিতর পরিত্যক্ত অবস্থায় দুটি ব্যাগ পাওয়া গেছে। ওই ব্যাগের ভিতরে এলজি ব্র্যান্ডের ১৬টি ইনটেক মোবাইলসহ ১৭ মোবাইল সেট পাওয়া গেছে। ধারণা করা হচ্ছে, অনুপ্রবেশকারীরা ওই অফিস থেকে ৩-৪ লাখ টাকা নিয়ে গেছে। সন্দেহভাজন চোরদের ধরতে অভিযান চালানো হচ্ছে। গুলশান থানার পরিদর্শক (তদন্ত) সালাউদ্দিন মিয়া জানান, খবর পেয়ে পুলিশ, র‌্যাব, সোয়াত ও ফায়ার সার্ভিস যৌথ অভিযান চালায়। কিন্তু দুর্বৃত্তদের পাওয়া যায়নি। তবে দুটি পরিত্যক্ত ব্যাগ পাওয়া যায়। পরে ডিবির বোম্ব ডিসপোজাল ইউনিটের সদস্যরা ব্যাগ দুটি খুলে ১৭টি মোবাইল সেট দেখতে পান। ঘটনাস্থল থেকে সিআইডির ক্রাইমসিন ইউনিট বিভিন্ন আলামত সংগ্রহ করেছে।

সর্বশেষ খবর